অচিন পাখীঃ রোমান্টিক এক প্রেমের গল্প

যার জন্য চোখে ঘুম নেই। দেহে প্রাণ নেই, কাজে মন নেই। তাকে এই অবস্থায় দেখতে হবে? হে দয়াময় এ কেমন খেলা তোমার। আমার অচিন পাখিকে আমি রক্ত দিচ্ছি আমি জানিনা। মন একদিকে উড়ুউড়ু অন্যদিকে দুরুদুরু কাঁপে বুক। 

অচিন পাখীঃ রোমান্টিক এক প্রেমের গল্প
অচিন পাখীঃ রোমান্টিক এক প্রেমের গল্প


সবুজ পাতার ঘোমটা দেওয়া শালুক পাতার গ্রাম। ব্যস্ততার অজুহাতে দেখা হয়নি ঘরের বাহিরে ফেলে দুটি পা। দিপু আর অপু সেই ছোট বেলার খেলার সাথী দুই বন্ধু। অপুর কাকুতি মিনতিতে আজকের বিকালটি তাকেই দিতে হবে। তাই বেশিদূর না গিয়ে গ্রামেই ঘুরব দেখব হাঁটব সিদ্ধান্ত। যেই কথা সেই কাজ। গ্রামের মেঠোপথ  ধরে পিঞ্জিরভাঙ্গা পাখির মতো ছুটে চলা। কত চেনা কত পরিচয় তবু যেনো এক অতিথি পাখি। 


যতো যাচ্ছে ততই টান বাড়ছে গ্রামের প্রতি অপলক নয়নে দেখছে আর হাঁটছে। এতো সুন্দর লালমাটির মেঠোপথ। ছোটছোট ঘর সাজানো মায়াবী চাঁদরে। পাশেই মাচা বাঁধা শিম, লাউ, কুমড়ো ফুলে সাজানো মনোরম দৃশ্য। গৃহস্থালি মাঠে ফসলের বাতাবি সবুজ হাসি। সন্তানের স্নেহের  যত্নে গড়া  নোনাজলের সোনালী ফসল। পুকুর, ডোবা নালায় মাছ আর হাঁসের প্যাকপ্যাক। সূর্যটা লাল আভা ছড়িয়ে টাটা বিদায় জানাচ্ছে রক্তিম আলোয়।

বিমুগ্ধতার বিকিরণ ছড়াচ্ছে সেই আলোয়_ 
উড়াল দিয়ে দুটি আঁখি 
মনের আঁধার করে পাখি
মনের মতো পেয়ে সখা
হৃদয় খুলে মেলে পাখা।


দিপুর মন অচেনা এক পাখি কেড়ে নিল দুটি আঁখি। অপু কথা বলে বলে হাঁটছিল পরক্ষণেই বুঝতে পারলো দিপু স্ট্যাচু হয়ে গেছে। ধাক্কা দিতেই চমকিত শিহরণে বুঝতে পারলো স্বপ্ন নয় বাস্তবতায় মন করেছে জয়। অচিন পাখি অজানা এক সুরে। 


যে সুর কন্ঠে আসেনি কভু। যে তাল মনে বাজেনি আর। হৃদয় গহীনে বাজিছে বীণা। অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটছে দিপুর মন হরনকারীকে জানতে চেষ্টা করলেও জানা হয়নি মেয়েটির পরিচয়। পিছু ফিরে একঝলক জোৎস্না মাখা রূপালী হাসি ছড়িয়ে মহুর্তের মধ্যে মিলিয়ে গেলো সন্ধ্যার সোনালী আলোর ফাঁকে সবুজ বেষ্টনীর আপন নীড়ে। সেদিনের মতো নীড়ে ফিরে আসে দুই বন্ধু। 


পরা দিন সেই অচিন পাখির খুঁজে আবার বিকেলে সেইপথে সেই স্থানে। কোথাও খোঁজ মিলেনি কো আর। না যায় কারো নিকট বলতে কিছু পারা। মন তো আর মানেনা সময় তো আর ফিরে আসেনা। অস্থির সময় কিছুই লাগেনা ভালো অচিন পাখির মন খুঁজে আলো। কাউকে কি'বা পরিচয়ে বলবে নেই সে কথা জানা। পরপর এক সপ্তাহ মনে মনে খুঁজে ফিরে বিমর্ষ বদনে সন্ধ্যার তিলক রূপালী আলো অস্ত দিবাকরে ফিরছিলো ঘরে। দিগন্ত ছুঁয়ে নেমে আসছে মেঘাছন্ন আঁধার। জলছাপে ডেকে যাচ্ছে সবুজ শ্যামল রংধনুর সব রঙ। মিটমিট করে দূরে জ্বলে উঠছে পিদিমের আলো। সেই ক্ষণে পিছন থেকে ডেকে উঠল। অপু এই অপু? কে ডাকলো পিছু ফিরে তাকালো দিপু ও অপু দুই বন্ধু। দেখতে পেলো পরেশ কাকা। পরেশ কাকা কাছে এসে বলল। বাবা তোমরা কোথায় যাচ্ছো আমাকে একটি উপকার করতে হবে। আমি বড়ো বিপদে আছি। ঝরঝরে ঝর্ণার মতো সব কথা বলল লম্বা শ্বাস টেনে। 

দিপু তরি গরি করে উৎসাহিত হয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে বলল। কি সমস্যা কাকা বলেন। পরেশ কাকা বলল আমার ভাগ্নীকে রক্ত দিতে হবে! এই রক্ত কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না! ভয় আর আতঙ্কে কথাগুলো ঠোঁটে বাঁধা পাচ্ছে তোতলানোর মতো বলল পরেশ কাকা। শুঁকনো কন্ঠে কর্কশ শব্দগুলো বাজছে বারবার দিপুর কর্ণে।


দিপু এক পা এগিয়ে জানতে চাইলে, পরেশ কাকা বলল মেয়েটার অবস্থা খুব খারাপ সেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি আছে ("এ-নেগেটিভ) রক্ত কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। কান্নায় ভেঙে পড়লো পরেশ কাকা। দিপু বলল আপনি এক্ষুনি আমাকে নিয়ে চলুন ওপরওয়ালা সহায়ক হলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। দিপু বলল কাকা আমার এ নেগেটিভ ব্লাড। আমি গত মাসে রক্ত দিয়েছি তারপরও দেবো চলুন।


হসপিটালে ব্লাড দিয়ে অপু ও দিপু বিদায় নিতে সম্মতি চাইলে পরেশ কাকা মুখে প্রসন্নতার আভা ফুটিয়ে বলল,

- বাবা এ কেমন কথা বললে। যাকে রক্ত দিলে তাকে না দেখে চলে যাবে?
দিপু ও অপু তারাহুরো ভাব দেখিয়ে ও পরেশ কাকার নিকট থেকে বিদায় নিতে পারলোনা।


ধীরে ধীরে পরেশ কাকার পিছনে হেঁটে কেবিনে প্রবেশ দিপু অপু। নার্স দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে ব্লাড ব্যাগ ষ্ট্যানে টানানো। বেডে অন্য পাশে মুখ ফিরে শুয়ে আছে পাশে বসা মনে হয় তার মা হবে। দিপু ও অপু বিষন্ন দৃষ্টিতে একপলক চোখ বুলিয়ে নিলো। পরেশ কাকা বলল বসো বাবা তোমরা দুজন বসো। দিপু বসতে নারাজ প্রকাশ করে ফিরে আসতে চাইতেই পাশে বসা ভদ্র মহিলা ওঠে এসে কান্নায় ভেঙে পড়লো অশ্রু ভরা বদনে বলল।


বাবা তোমরা আমার মেয়ের যে উপকার করলে এ ঋণে আমি ঋণী। দিপু কথা থামিয়ে বলল না অ্যান্টি আপনি এভাবে বলবেননা। এটা একটা দ্বায়িত্ব সবাই সবার প্রতি। উপরওয়ালার ইচ্ছায় ভালো হয়ে স্বাভাবিক হোক এটাই কামনা। আপনি দোয়া করুন সব ঠিক হয়ে যাবে। এমন সময় কান্না করে ওঠলো উঃ..মা, মাগো।

সবাই ফিরে তাকালো মা এগিয়ে গেলো। নিলা, মা কি হয়েছে তোর। কাঁদেনা মা সব ঠিক হয়ে যাবে শান্তনা দিচ্ছে।


দিপু আবার স্ট্যাচু হয়ে গেলো। এ আমার হৃদয়ে পাখি। এ আমার পরান পাখি, যাকে খুঁজছি এতোদিন ধরে সেই পাখি। আমার অচিন পাখি। যার জন্য চোখে ঘুম নেই। দেহে প্রাণ নেই, কাজে মন নেই।

তাকে এই অবস্থায় দেখতে হবে? হে দয়াময় এ কেমন খেলা তোমার। আমার অচিন পাখিকে আমি রক্ত দিচ্ছি আমি জানিনা। মন একদিকে উড়ুউড়ু অন্যদিকে দুরুদুরু কাঁপে বুক। 


উতালপাতাল বহে ঝড়ো 
একূল ভাঙ্গে ওকূল গড়ো
প্রার্থনায় মন নেতিয়ে পড়ে
অচিন পাখি সুস্থ করো।