অটোফ্যাজিয়া: পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর মানসিক রোগ
পৃথিবীতে এমন কিছু ভয়ংকর মানসিক রোগ আছে যেগুলো সম্পর্কে শুনলেই মানুষ আঁতকে ওঠে। এতো ভয়ানক হয় সেই রোগ গুলো। আজ আমি আপনাদের এমনই একটি ভয়ংকর মানসিক রোগ সম্পর্কে জানাবো। চলুন তবে জেনে আসা যাক সেই ভয়ংকর মানসিক রোগ সম্পর্কে।

মানুষের মস্তিষ্কে লুকিয়ে থাকা অন্যতম মারাত্মক একটি মানসিক রোগ ‘অটোফ্যাজিয়া’। এ রোগে আক্রান্ত মানুষদের মানসিক অবস্থা ভৌতিক কাহিনির মতোই হয়ে থাকে।
অদ্ভুত সব আচরণ করতে দেখা যায় তাদের। এটি মূলত এমন একটি সমস্যা, যা মানুষের বোধশক্তির তারতম্যের ওপর নির্ভর করে জন্ম নেয়।
একজন অটোফ্যাজিয়া রোগীর স্থায়ী অনুভবশক্তি বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। ফলে এ রোগে আক্রান্তকারীরা নিজের শরীরকে কামড় দিয়ে ব্যথা দিতে বেশ পছন্দ করে।
যতক্ষণ না ব্যক্তিটি নিজের মাংস বের করতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে মানসিক প্রশান্তি লাভ করে না। এমনকি সে তার নিজের অঙ্গচ্ছেদ করে তা রান্না করে খেতেও মানসিক প্রশান্তি পেয়ে থাকে।
অটোফ্যাজিয়া যখন উচ্চতর লেভেলে পৌঁছায় তখন মানুষ নিজেকে খেতেও দ্বিধাবোধ করে না। তাদের কাছে ব্যাপারটা এমন, তারা মনে করে তাদের বেঁচে থাকার জন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন নেই।
তবে আক্রান্তদের মধ্যে সবাই এ রকম ভয়ংকর কাজ করে না। খুব অল্প ব্যক্তিই ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
দেখা যায়, অনেকে সিদ্ধান্তহীনতার কারণে কিংবা কিছু খুঁজে পায় না বলে নিজের নখ খুঁটতে শুরু করে।
নখ খুঁটা পর্যন্ত ঠিকঠাক, কিন্তু হুট করে একদিন নখ খুঁটতে খুঁটতে কোনো কারণে রাগ সংবরণ করতে না পেরে আঙুলে কামড়ে ফেলে। শুধু তা-ই নয়, আঙুলে কামড় বসিয়ে সেখান থেকে চামড়া তুলেও ক্ষান্ত হয় না।
তারপর হঠাৎ একদিন মনে হবে, তার বাঁ হাতটার কোনো প্রয়োজন নেই। তাই সেটাতে কামড়ে কামড়ে মাংস উঠিয়ে ফেলে।
তারপর ধীরে ধীরে পা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে শুরু করে একদিন নিজেকেই খেয়ে ফেলে। শুনতে অবাক লাগলেও এটিই অটোফ্যাজিয়া।
কারণ
১. মানসিক চাপ বা অতিরিক্ত টেনশন
২. নিজের প্রতি ঘৃণা
৩. নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেকে শাস্তি দেওয়ার চিন্তা
৪. কোনো কারণে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়া প্রভৃতি অটোফ্যাজিয়া হওয়ার কারণ হতে পারে।
লক্ষণ
বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন এই রোগে আবেগপ্রবণতাই কাজ করে বেশি। কিন্তু অটোফ্যাজিয়ার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ নেই বললেই চলে। এ রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায় বৃদ্ধদের মধ্যেই।
ইউএস ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অটোফ্যাজিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর কেসটি নথিভুক্ত করেছে।
একজন ৩৪ বছরের কয়েদি, যে কি-না তার ডান পা প্রায় খেয়ে শেষ করে ফেলেছেন এ রকম অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে জরুরি বিভাগে আনা হয়।
এটিকে যদিও ইচ্ছাকৃত আত্মক্লেশ বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে লোকটির এভাবে নিজেকে মেরে ফেলার কোনো ইচ্ছা ছিল না। সে শুধু খাওয়ার জন্যই তার পা খাচ্ছিল।
রোগীকে প্রশ্ন করার সময়ও সে বেশ শান্ত ছিল আর ঘটনাটি নিয়ে কথা বলার জন্য বিন্দুমাত্র আগ্রহ সে প্রকাশ করেনি।
জেল কর্র্তৃপক্ষ জানায়, এ ঘটনার বছরখানেক আগে সে তার নিজের হাতের মাংস কামড়ে তুলে ফেলে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় তার কেসটি বেশ জটিল আকৃতি ধারণ করে।
এমনকি একজন সাইকিয়াট্রিস্টের দায়িত্বে রাখার পরও তিনি এই রোগ নিয়ে বিস্তারিত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি।
পরে টমোগ্রাফিক স্ক্যান দিয়ে তার মস্তিষ্কের ক্ষয়িষ্ণুতা শনাক্ত করা হয়। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, আত্মক্লেষ, আবেগপ্রবণতা ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকেই এটি শুরু হয়েছিল তার মধ্যে।
গবেষকরা গবেষণা করে দেখেছেন, যেহেতু অটোফ্যাজিয়ার নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ বের করা অসম্ভব, তাই নিজেদের জীবনাচরণে মনোযোগী হওয়া উচিত।
নিজের শরীরের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়। এমনকি নখ খোঁটা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং এ কাজ থেকে অন্যদেরও নিরুৎসাহিত করতে হবে। যদি নিজেকে সংযত করতে ব্যর্থ হোন, তাহলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে।
মানুষের মস্তিষ্ক বড়ই বিচিত্র অঙ্গ। মাঝেমধ্যেই এর ভেতরে দেখা দেয় অদ্ভুত সব সমস্যা।
আর স্বাভাবিক চিন্তাভাবনার বাইরে যখন মস্তিষ্ক নানা রকম কাণ্ডকারখানা চালাতে থাকে তখনই তা চিহ্নিত হয়ে যায় মানসিক সমস্যা হিসেবে।
মানসিক রোগ গুলো সম্পর্কে জানা উচিত। এতে নিজে এবং নিজের পরিবারের দিকে যত্নশীল হওয়া যায়।
কারো কোনো রকম লক্ষণ দেখা দিলে যে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়। তাই বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানুন। নিজে এবং নিজের পরিবারকে ভালো রাখুন।
আজ এই পর্যন্তই। আবারও নতুন কোনো বিষয় নিয়ে হাজির হবো আপনাদের কাছে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং শুভ প্রভাতের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ।
আরও পড়ুনঃ হীনমন্যতায় ভুগছেন? জেনে নিন ইনফিরিওরিটি এবং সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স সম্পর্কে!