অতিরিক্ত ওজনের ফলে শারীরিক কু-প্রভাব

গত পর্বের একটি আর্টিকেলে স্বাস্থ্য স্থুল হওয়ার বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। উক্ত আর্টিকেলটি পড়ে আশা করা যায় আপনারা মোটা হওয়ার বিভিন্ন কারণ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। উক্ত কারণগুলো থেকে দূরে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন। তো যাইহোক আজকের আর্টিকেলটিতে মূলত অতিরিক্ত ওজনের কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। তো চলুন আর কোনো রকম ভূমিকা না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করা যাক।

অতিরিক্ত ওজনের ফলে শারীরিক কু-প্রভাব
অতিরিক্ত ওজনের ফলে শারীরিক কু-প্রভাব


মোটা ব্যাক্তিদের ডায়াবেটিস বেশি হয়

স্বাস্থ্য এর দিক দিয়ে যারা স্থুল হয়ে থাকেন তাদের সাধারণ ব্যাক্তিদের তুলনায় অধিক পরিমাণে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থেকে থাকে। ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র অনেক মারাত্মক একটা রোগ। একবার হয়ে গেলে আর চলে যেতে যায় না। তাছাড়া একবার নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।


আমরা কেউই চাই না ডায়াবেটিস এর মাধ্যমে কোন ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যান। ডায়াবেটিস একবার যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তবে ব্যক্তির মৃত্যু আসন্ন। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কোন রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া যায় না। তাছাড়াও প্রতিনিয়ত হাঁটতে বের হওয়া লাগে। শরীরচর্চার উপর থাকতে হয়। এছাড়া সময়মতো ইনসুলিন নিতে ভুল করা যায় না। ডায়াবেটিসের মতো মারাত্মক রোগ একবার হয়ে গেলে এটি অন্যান্য রোগ যাতে সহজে শরীর আক্রান্ত করতে পারে সেই রাস্তা খুলে দেয়।


অর্থাৎ ডায়াবেটিস হওয়াটা এমন একটা বিষয় যেটা একবার শরীরে হয়ে গেলে অন্যান্য যেকোনো রোগ খুব সহজেই শরীরকে আক্রান্ত করতে পারে। তাই ডায়াবেটিস রোগ হোক এটা কেউই চায় না। যাদের ডায়াবেটিস একবার হয়ে যায় তারা মারাত্মক দুশ্চিন্তায় ভোগেন নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে ঝুঁকিতে থাকে। বলা হয়ে থাকে স্থূলকায় ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা সবথেকে বেশি থাকে।


অতিরিক্ত চর্বি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শারিরীক জটিলতার সৃষ্টি হয়

স্থুল ব্যক্তিদের মোটা হওয়ার মূল কারণই হলো দেহে অনেক বেশি পরিমাণে চর্বির উপস্থিতি। আর এই অতিরিক্ত চর্বি শরীরের নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি করে৷ প্রচুর বেশি পরিমাণে চর্বি, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে রক্তনালিতে চর্বি জমে যায়। এই রক্তনালিতে চর্বি জমে যাওয়ার ফলে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। যা হৃদপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর।


রক্তনালির এই চর্বি জমে যাওয়ার ব্যাপারটা পরবর্তীতে হার্ট অ্যাটাক, নিম্ন রক্তচাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট স্ট্রোক ইত্যাদির মতো মারাত্নক জটিলতার সমুখখীন হতে হবে। আপনারা তাহলে এটার ভয়াবহতা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। শুধুমাত্র আপনার শরীরে অতিরিক্ত চর্বি থাকার কারণে আপনার রক্তনালীর পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর এ রক্তনালীর পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে আপনার হৃদপিন্ডে প্রয়োজনমতো রক্তসঞ্চালন হতে পারছে না।


আমাদের রক্ত সারা দেহে অক্সিজেন কার্বন-ডাই-অক্সাইড যেমন আনা-নেওয়া করে তেমনি খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান কোষে কোষে পৌঁছে দেয়। যদি রক্তনালীতে চর্বি জমে বাধাগ্রস্ত হয় তাহলে আমাদের সারা শরীরে পরিমাণমতো প্রয়োজন গ্যাস ও পুষ্টি উপাদান প্রবেশ করতে পারবে না। এটি নির্দ্বিধায় আমাদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।


আরও পড়ুনঃ অন্তঃসত্ত্বা নারীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিয়ে কিছু কথা


মস্তিষ্ক থেকে রক্তক্ষরণ হয়

যারা অতিরিক্ত স্থুল বা মোটা হয়ে থাকেন তাদের মস্তিষ্ক থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। মস্তিষ্ক থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার ব্যাপারটিকে স্ট্রোক বলা হয়। স্ট্রোক হওয়ার ফলে ব্যাক্তির শারীরিক ক্রুটি দেখা দেয়। মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট অংশে রক্তক্ষরণ বা রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে, উক্ত অংশ শরীরের যেই অঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতো সেই অংশ প্যারালাইজড হয়ে যায়। সময়মত চিকিৎসা করানো গেলে প্যারালাইজড রোগী সুস্থ হলেও হতে পারে। কিন্তু যাদের চিকিৎসা সম্ভব হয় না, তারা সারাজীবন প্যারালাইজড জীবন যাপন করে।


স্থুল ব্যক্তিদের এই মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ হওয়ার সমস্যাটা অনেক বেশি হয়ে থাকে। থ্রম্বোসিস হয়ে সেটা বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ব্যাপারটিকে অস্বাভাবিকভাবে দেখে থাকে না। এরকম কিছু হলে শিঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, স্থূলকায় ব্যক্তিদের মস্তিষ্ক থেকে রক্তক্ষরণ হওয়ার মতো সমস্যা অহরহ ঘটে থাকে।


অতিরিক্ত ওজনের ফলে অস্থি সন্ধির উপর চাপ পড়ে

শরীরের অতিরিক্ত ওজনের আমাদের অস্থি দের নিতে হয়। সুতরাং যদি শরীরের ভার অনেক বেশি হয়ে থাকে তবে সম্পূর্ণ হাড়ের ওপর প্রভাব ফেলে। আর এই শরীরের অতিরিক্ত ওজন অস্থিসন্ধির বিভিন্ন পরিবর্তন সাধন করে। অস্থির বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে অস্টিও আর্থ্রাইটিস।


আশা করি বুঝতে পারছেন স্থূলকায় ব্যক্তিদের অস্টিও আর্থ্রাইটিস হয়ে বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। ফলে তাদের চলাফেরায় অনেক সমস্যা হয়ে যায়।

 
আরও পড়ুনঃ কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে কী করবেন? অবশ্যই জেনে নিন


বেশি চর্বির জন্য মাংস পেশীর সংকোচন বাধাগ্রস্থ হয়

আমরা জানি, অতিরিক্ত ওজনের মূল কারণই হচ্ছে চর্বি। আর বেশি চর্বির জন্য মাংসপেশির সংকোচন সমস্যাটা দেখা যায়। ত্বকের নিচে মাংসের সাথে চর্বির উপস্থিতি থেকে থাকে। বেশি চর্বির জন্য পেট এবং পায়ের মাংসপেশীর সংকোচন অথবা সম্প্রসারণে বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে হার্নিয়ার মত রোগ হতে পারে।


যদিও হার্নিয়ার চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু এটা বেশ জটিল। তাছাড়া পায়ের শিরায় ভেলোসিটি এই অতিরিক্ত চর্বির কারণে হয়ে থাকে।

 


পিত্তথলির পাথর

স্থূলকায় ব্যক্তিদের অতিরিক্ত ওজনের জন্য পিত্তথলিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণত এটা সকল বয়সের জন্য প্রযোজ্য না। চল্লিশোর্ধ নারী যাদের ওজন তাদের উচ্চতা অনুযায়ী অনেক বেশি, তাদের এই সময়ের পর পিত্তথলিতে পাথর জমতে শুরু করে।

 


লিভার কোষে চর্বি জমে

স্থূলকায় ব্যক্তিদের সারা শরীরে চর্বির উপস্থিতি থাকে। বাড়তি ওজন যাদের থাকে, তাদের লিভারের কোষে কোষে চর্বি জমতে থাকে। যা শরীরের বিভিন্ন জটিলতা এমনকি সিরোসিস জাতীয় রোগ পর্যন্ত দেখা দেয়।


খাদ্যনালী কোলন লিভার ক্যান্সার

শুধুমাত্র বাড়তি ওজন থাকার কারণে শরীরের চর্বি জমে। যা থেকে খাদ্যনালী কোলন এবং লিভার ক্যান্সার হয়ে থাকে। আমরা জানি একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ক্যান্সারের কোন রকমের প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসা বলতে এখন শুধুমাত্র কেমোথেরাপি। তবুও কেমোথেরাপিও কিন্তু স্বাস্থ্যের জন্য খুব একটা ভালো না।


যাইহোক চিকিৎসা নিয়ে পরে কথা হবে। মূল কথা হচ্ছে বাড়তি ওজনের জন্য খাদ্যনালীতে অথবা লিভারে ক্যান্সার এর মতো মারাত্মক রোগ হতে পারে।

 
আরও পড়ুনঃ মাঝরাতে জলের তৃষ্ণা আমাদের এই রোগগুলি সম্পর্কে জানিয়ে দেয়


মৃত্যুঝুঁকি

বলতে হয়তো ভালো শোনাবে না, তবে এটাই সত্য যে স্থূলকায় ব্যক্তিদের মৃত্যুঝুঁকি সাধারণ ব্যক্তিদের তুলনায় অনেক বেশি থাকে। কেননা স্থূলকায় ব্যক্তিরা জীবনের বেশিরভাগ সময়ে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় মাধ্যমে পার করে। আর এ কারণে তাদের দ্রুত মৃত্যু হার অনেক বেশি।

 সুপ্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলটি এখানেই শেষ হচ্ছে, ধন্যবাদ।