অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম উপায়
সুপ্রিয় পাঠক কেমন আছেন? আশা করি পরম করুনাময়ের অসীম কৃপায় অনেক ভালো আছেন। গত পর্বের একটি আর্টিকেল এ মোটা হওয়ার বিভিন্ন কারণ এবং মোটা হওয়ার যত রকমের কুফল রয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছিল। স্থূলতা বা মোটা হওয়া থেকে রক্ষা পেতে চাইলে ওজন সীমিত রাখা অনেক বেশি প্রয়োজন। কিন্তু অনেকে চাওয়া সত্ত্বেও ওজন সীমিত রাখতে পারেন না। বিভিন্ন কারণে তাদের ওজন বেড়ে চলতে থাকে।

সবথেকে বেশি ওজন বাড়ার মতো সমস্যা হয় খাবার খাওয়ার জন্য। অর্থাৎ অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলে ওজন বৃদ্ধি পেতে থাকে। অনেকেই জানে না কতটুকু খাবার, কোন পরিমাণে, কিভাবে খাওয়া উচিত এবং কোন কোন খাবার খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সে সম্পর্কে অবগত থাকেন না আর ইচ্ছামত খেতে থাকেন। যার ফলে বাড়তি ওজন হয়ে যায়। নানা রকমের জটিলতার পথে এগিয়ে যায়। যাই হোক না কেন আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে ওজন সীমিত রাখতে হলে কি কি করতে হবে। চলুন দেরী না করে শুরু করা যাক
পরিমিত খাবার খাওয়া
আপনার শরীরে যতটুকু খাদ্য গ্রহণ করার প্রয়োজন আপনাকেই ততটুকুই খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি খাবার খেয়ে ফেলেন তবে তো আপনার শরীরের বাড়তি ওজন হিসেবে উল্লেখিত হবে। খাবারের নিয়ম কানুন আলাদা রয়েছে।
যেমন আপনার যখন খিদে পাবে তখন আপনার পাকস্থলীকে তিন ভাগে ভাগ করে ফেলতে হবে। তার মধ্যে এক ভাগ খাবার দ্বারা, দ্বিতীয় ভাগ পানি দ্বারা এবং তৃতীয় ভাগ খালি করে রাখতে হবে। এভাবেই পরিমিত খাদ্য গ্রহণ করার অভ্যাস করতে হবে। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।
কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া
ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার আরেকটি মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত খাবার খাওয়া। ফাস্টফুড জাংক ফুড কোমল পানীয় এবং অ্যালকোহল ইত্যাদি সেবন করার ফলে শরীরে বাড়তি ওজনের সৃষ্টি হয়। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণ হিসেবে অতিরিক্ত ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করাকে দায়ী করা হয়ে থাকে।
যাই হোক না কেন ওজন সীমিত রাখার জন্য এই অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত খাবার বর্জন করতে হবে। শাকসবজি ফলমূল ইত্যাদি খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
আরও পরুনঃ আপনি কি সারাদিন বসে থাকেন? এখুনি সাবধান হয়ে যান
ফাস্টফুড বা বাইরের খাবার একদম খাওয়া যাবে না
স্কুল-কলেজের সামনে বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান থেকে থাকে। শিক্ষার্থীরা স্কুল কলেজ থেকে বেরিয়েই হুমড়ি খেয়ে পড়ে সেসকল ফাস্টফুডের দোকানে। নিজেদের ইচ্ছামত খেতে থাকে বার্গার পিজ্জা পাস্তা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই চিকেন ফ্রাই ইত্যাদির মতন খাবার।
এই সকল খাবারে এত বেশি পরিমাণে ফ্যাট রয়েছে যা অল্প একটু খেলে শরীরে ওজন অনেক বেশি বেড়ে যায়। তাহলে ভেবে দেখুন প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীরা যে পরিমাণে এসকল খাবার খেয়ে থাকে তাদের ওজন তথা শরীরে কি পরিমাণে ফ্যাট জমা হতে পারে?
সীমিত ওজন রাখার জন্য এই সকল ফাস্টফুড খাবার পরিহার করা একান্ত প্রয়োজন। আশা করি ফাস্টফুডের খাবার এর স্বাদকে গুরুত্ব দেওয়া থেকে নিজের স্বাস্থ্যের উন্নতি করাটাকে বেশি প্রয়োজনীয় মনে করবেন।
ভাত পরিমাণে কম খাওয়া
আপনাদের জেনে রাখা ভালো যে, ভাতে রয়েছে শর্করা। শর্করা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে অনেক বেশি সহায়তা করে। যে ব্যক্তি তিন বেলা ভাত খেয়ে থাকেন তার কিন্তু নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। সে বাড়তি ওজনের ভুগতে থাকে। তিন বেলা ভাত কখনও খাওয়া উচিত না। তাছাড়া ভাতের পরিমাণ যত কম খাওয়া যায় তত ভালো।
আপনারা সকালে ভারী প্রাতরাশ সম্পন্ন করে দুপুরের পেট ভরে ভাত খেতে পারেন। অন্যদিকে রাতে ভাত খাওয়ার বদলে রুটি দিয়ে তরকারি খেতে পারেন। মনে রাখবেন রাতের খাবারে খুব বেশি পরিমাণে খাবার রাখবেন না। কেননা রাতের সময়টা ঘুমানোর সময়। ভারী খাবার খেয়ে ঘুমানোর ফলে হজম প্রক্রিয়া সমস্যা দেখা দিতে পারে। যার ফলে বদহজমের সৃষ্টি হয়।
তো যাই হোক না কেন , মূলকথা এটাই যে ভাতের পরিমাণ যত সম্ভব কমিয়ে ফেলুন। আপনার বাড়তি ওজনের মূল কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত ভাত খাওয়া। যদি খাওয়ার পূর্বে শসা কিংবা টমেটো অথবা পেয়ারা খেতে পারেন তবে আপনার পেট ভরা ভরা লাগবে এবং বেশি ভাত খেতে ইচ্ছে করবে না। নিজের মন আপনাকে সায় দেবে না।
এই পদ্ধতি অবলম্বন করেও কিন্তু অতিরিক্ত ভাত খাওয়ার ইচ্ছা থেকে বেঁচে থাকতে পারবেন। অন্যদিকে শসা টমেটো পেয়ারা খাওয়ার ফলে শরীরের উন্নতি সাধন হবে। শসা খেলে ওজন কমে।
আরও পড়ুনঃ স্বাস্থ্যঝুকি কমাতে লেবুর উপকারীতা সম্বন্ধে জেনে নিন
খাদ্যতালিকায় আঁশযুক্ত খাবার রাখুন
সুষম খাদ্যের উপাদান গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে আঁশযুক্ত খাবার। আপনার খাদ্য তালিকায় আঁশযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে রাখা উচিত। এ সকল খাবার হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর মত সমস্যাকে দূরে ঠেলে দেয়। এছাড়া তালিকায় রাখুন বেশি করে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই সকল খাদ্য উপাদান শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি করে না।
এড়িয়ে চলুন চিনি জাতীয় খাবার
চিনি আমাদের শরীরের জন্য কখনোই ভালো না। চিনি নানা রকমের সমস্যার সৃষ্টি করে। যারা অতিরিক্ত চিনি খান বা মিষ্টিজাতীয় খাদ্য বেশি খান তাদের বিভিন্ন সমস্যা লেগেই থাকে। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে হূদরোগ পর্যন্ত কোন কিছু বাদ নেই। তাছাড়া অতিরিক্ত চিনি খাওয়া কিন্তু ওজন বৃদ্ধি করে। সুতরাং যতটুকু সম্ভব চিনি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে চিনি খাওয়া বাদ দিয়ে দিন।চিনি একেবারেই না খেলে খুব একটা কিছু আসে যাবে না, কিন্তু আপনার স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।
যে কোনো উৎসবে পরিমিত খান
দেখা যায় বিভিন্ন উৎসবে মানুষজন যা সামনে পায় তাই খেতে থাকে। স্বাভাবিক, সকলকে খাবার খাওয়ার জন্য অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু আপনি আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি যদি সচেতন হয়ে থাকেন তবে আপনি অনুষ্ঠানে গেলে সামনে যা পাবেন তাই খেয়ে ফেলবেন না। অনুষ্ঠানে গেলেও আপনার ডায়েটিং এর ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন এবং পরিমিত আহার করবেন।
আরও পড়ুনঃ রক্তদান সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা যা আপনাদের জেনে রাখা দরকার
বাড়তি চর্বি জন্য পরিশ্রম করতে হবে
উপরোক্ত সকল পদক্ষেপ গুলো খাওয়া সম্পর্কিত ছিল। কিন্তু এই পদক্ষেপটি চর্বি পোড়ানোর জন্য। ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অতিরিক্ত পরিশ্রমের কোন তুলনা নেই। তাই ওজন সীমিত রাখার জন্য আপনি যেরকম আপনার খাদ্য তালিকা পরিবর্তন করবেন তেমনি বেশি বেশি পরিশ্রমের কাজ করুন। এতে করে আপনার ওজন আসবে।
সুপ্রিয় পাঠক, এভাবে আপনি আপনার ওজন সীমিত করতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলটি তাহলে এখানেই শেষ করছি, ধন্যবাদ।