অধরাঃ একটি ছোট গল্প
মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, সব পেঁচিয়ে আমার পেছনে লুকিয়ে গেল। গোলগোল চোখ নিয়ে গাধার মতো তাকিয়ে আছে ভাই।

ইচ্ছা হয় মেয়েটার চুল মুঠো করে ধরে সামনে টেনে নি। তারপর দু গালে দু হাত দিয়ে মুখটা ছোট্ট করে সামনে নিয়ে কামড়ে দেই!
মেয়েটা খুব বেয়াদব। কথা বলতেই থাকছে কিন্তু আমার রাগ ক্ষোভ বেড়ে গগন ছুঁই।
এইদিকে আমাকে অযথাই জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী বলতে লাগল - আমি শুনি না।
ওর দাঁত কেলানো আর খিলখিল হাসিতে আমার পিত্তি জ্বলে যায়।
মেয়ে হয়েছে বলে সব অপরাধ করেও পার পাবে! বারে- ধিক্কার!
লাগে আস্তা ধরে একটা আছাড় দেই মাটিতে।
আমার কথার মাঝে চিতকার দিয়ে অঠে তিতি।
শিহ কিসব বলছো! আমাকে এভাবে - বলেই ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো তিতি- আধো কান্না মেশা স্বরে বলতে থাকলো তুমি খুব পচা!
আরে তুমিই তো বললা সব কথার উল্টোটা বলতে-তাই বলছি পাগলী!
বলে হিহি করে হেসে শুয়ে পড়লাম।
কিছুক্ষণ এ দুজনে ঘুমিয়ে গেছি।
একটু পরে উঠে দেখি মেয়েটা জানালা ধরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে, বুঝলাম শরীর আরো খারাপ করেছে।
পরেরদিন মেয়েটা বাবার বাড়ি গেলো। আমি একা শুয়ে আছি ঘরে। দেখলাম একটা নেংটি ইঁদুর, গা ছমছম করছে।
ঘুম আসছিল না, ফোন দিয়ে দেখি সে খুব হাসছে খেলছে,সময় নেই আমার জন্য।
বাইরে ঝুম বৃষ্টি, জানালা হালকা খোলা, ঝাপটা লাগছে।
দুপুরে খাইও নি। এমন সময় নুপুরের ছমছম আওয়াজ পাই।
করিডোরে তাকাতে দেখি দুহাতে মুখ চেপে লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে।
তুমি এখানে কি- আহ ভিজেও গেছো, আসো!
রঙিন স্কার্ট আর জামা পড়া, লাল ওড়না, হেসেই যাচ্ছে আর খুব ব্যর্থ চেষ্টাও করছে হাসি লুকাতে!
বিরক্ত হচ্ছিল, নববিবাহিতা তো নও, আমার সাথে এতো কেন!
আরও মনে হচ্ছিল চুল না শুকিয়ে, টেনে দেই,কান মলে দেই।
তুমি ভাত খেয়েছ!
উহু।
আমিও না
আসো খাই
পালটে নাও!
না খুব খিদা পাচ্ছে- বাচ্চাদের মতো করে বলছে, এতক্ষণের যকে রমণী লাগছিল এখন সে মুহূর্তে বাচ্চা হয়ে গেল।
আচ্ছা আমি মাখিয়ে আনি, তুমি বদলাতে থাকো।
আহহ!
রাগ হয়ে তাকালাম।
আচ্ছা।
খাইয়ে দিচ্ছি মেয়েটাকে, হঠাৎ রুমে ঢুকলো আমার ছোট ভাই...
এই নক না করে কেউ ঢোকে!
মেয়েটা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে, সব পেঁচিয়ে আমার পেছনে লুকিয়ে গেল।
গোলগোল চোখ নিয়ে গাধার মতো তাকিয়ে আছে ভাই।
কিরে যাস না কেন, তোর ভাবি রেডি হচ্ছে তো!
ভাইয়া, ভুলে গেছো আবার? খুব নিচু গলায় বল্লো ভাই।
এখন তুই যাবি না কথাই বলবি? বের হো আগে,শুনছিস!
ভাই বের হলো না, রাগে লাল হয়ে গেলাম আর লজ্জাও লাগছে মেয়েটা কি ভাব্বে- আমাদের বাড়িতেই ও সেইফ না!
ভাই উলটো ফোনে ছবি তুলতে লাগল সব জায়গার!
এই শালা দেখস না তোর ভাবি জামা বদলায় আর তুই আমার সামনে, ছি আমার ভাই না তুই?!
ইচ্ছা হলো ওরে একটা থাপ্পড় দেই।
কিন্তু মেয়েটা পেছনে আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছে।
না সরা যায় না।
আল্লাহ!
ভাই তারপর আমার দিকে ফোনটা বাড়িয়ে দিল। অসহ্য! কি করব আমি?
দেখ, ভাইয়া দেখো!
আমি ফোনে তাকাই, মেয়েটা আরো জোরে চেপে ধরে, ওর নখ আমার পিঠে কাঁধে বিধছে...
ভাইয়া ভাবি নেই, কেউ নেই।শুধু তুমি আর আমি।
আমি অবিশ্বাসের চোখে তাকাই - পাগলে গেছে নাকি!
ভাবি ৩ মাস আগে ছেড়ে গেছে তোমাকে!
আমার পিঠ আর কাঁধে হঠাৎ কোন স্পর্শ অনুভব করতে পারছি না, ঝিম ধরে গেছে যেন, চোখ ফিরিয়ে দেখি-
ওহ কেউ নেই!
কই গেছে তোর ভাবি?
তুমি খুব সন্দেহ করতা, অনেক ভালবাসতা কিন্তু অত্যাচার লাগতো ভাবির কাছে... আমিও দেখেছি।
মানে?!
তোমাকে ছেড়ে দিয়ে ঠিক করেছে, আস্তে করে বলে ভাই, চার মাস পর ওনার বিয়েও...
আমার সব শরীর মুখ গরম হয়ে গেসে, বুকটা ফাঁকা, ঠান্ডা বয়ে যাচ্ছে মেরুদন্ড বরাবর।
আমি সত্য মিথ্যা বুঝি না-
ভাইকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দরজা লাগালাম।
মাটিতে বসে পড়েছি, আশপাশ দেখি অন্ধকার মতোন হচ্ছে, মেয়েটার কলকল হাসি শুনি না, অবয়ব দেখি না!
আমি খুব জোরে মনে করতে চেষ্টা করছি... দেখতে চেষ্টা করি- তিতি আমার তিতি কই?
শুনতে পাই গোঙানির শব্দ, কান্নার অস্ফুট স্বর -
হ্যাঁ মেয়েটাই তো
আমি কান চেপে ধরি, শব্দ আরো তীব্র, তীব্রতর হয়।
আমি চিতকার করি, কিন্তু সব শব্দ ছাপিয়ে শুনি- শুনি মেয়েটার আর্তনাদ। আর মুহুর্তে সে স্বর ভারি হতে থাকে, চিনি না কোন ছেলে!
ছেলেটার অসহায় অনুতাপ একসময় আমার নিস্তব্ধতার সাথে মিশে যায়।
আমি মৃদ্যু হাসি।