অতিরিক্ত মেদ বা ভূঁড়ি কমানোর কিছু সহজ উপায়
প্রত্যেক মানুষেরই মনে চায় নিজেকে সবার সামনে স্মার্টনেস হিসেবে তুলে ধরতে। তারই পরিপেক্ষিতে প্রত্যেকেই তার স্ব-স্ব স্থান থেকে চালিয়ে যাচ্ছে সংগ্রাম। উদ্দেশ্য একটাই স্মার্ট হওয়া বা স্লিম হওয়া। তবে প্রত্যেকেই যে সফলতা লাভ করে তা কিন্তু নয়, কারণ সবার প্রচেষ্টা তো এক নয়।

পেটের মেদ একটি বিব্রত ও অস্বস্তিকর বিষয় (সবার জন্য নাও হতে পারে, তবে অনেকের ক্ষেত্রেই)। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবারই যে পেটের মেদ বাড়ায় তা কিন্তু নয়, বেশি ক্যালরিযুক্ত যেকোনো খাবারই পেটের মেদ বাড়াতে পারে। একবার পেটে মেদ জমলে সেটা কাটিয়ে ওঠা যাবে না, এ ধারণাটাও ভুল। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্থ হলে সহজেই মেদ কমিয়ে ফেলা সম্ভব। কারণ মানুষ ইচ্ছা করলে সব কিছুই করতে পারে। তবে তার জন্য প্রয়োজন দুটি জিনিসের তা হলো ক), প্রচন্ড আগ্রহ, খ), সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।
মহামারি করোনায় লকডাউন হওয়ায় বাড়ি বসে ভালো মন্দ খাবার খেয়ে মেদ বেড়েছে অনেকেরই। পছন্দের পোশাক ট্রায়াল দিতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে কিছুতেই তা গায়ে আঁটছে না। ভালো জামা পরলে পেটের মেদের জন্য যেমন বাজে ও অস্বস্তিকর লাগে, তেমনই অনেক পোশাক শুধুমাত্র পেটে এসেই আটকে যায়। ফেলে দিতে হয় টাকার কেনা দামি পোষাক, আর হারিয়ে যায় স্মার্টনেস।
এই খারাপ লাগা থেকে মুক্তি পেতে চান সবাই, কিন্তু কিভাবে মুক্তি পাবেন বা চর্বি দূর করবেন তা জানেন না অনেকেই।
পেটের মেদ কমানোর আগে আমাদের এটা জানা জরুরি যে, কোন ধরনের খাবারের কারণে পেটে মেদ জমতে থাকে।
সাধারণতঃ মদ, মিষ্টিজাতীয় খাবার অতিরিক্ত খাওয়া, ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল ড্রিংকস, অস্বাস্থ্যকর বাহিরের খাবার, নিয়মিত লাল গোশত (রেড মিট) খাওয়া, স্যাচুরেটেড চর্বি গ্রহণ ইত্যাদি আপনার পেটের মেদ বাড়িয়ে তোলার পেছনে খুব মারাত্মক ভূমিকা পালন করে।
অধিক ব্যয়াম করা কি ক্ষতিকারক?
ওয়ের্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা একটি গবেষণা করে বলেন, যখন একই তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, তখন সেখানে ট্রান্সফ্যাট উৎপন্ন হয়। ট্রান্সফ্যাট পেটের মেদ বাড়িয়ে দেয়। পেটের মেদ অতিরিক্ত জমে যাওয়ার আগেই সেটিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।
নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, সতর্কতা ও সঠিক জীবনযাপনের মাধ্যমে আমরা আমাদের শরীরের বাড়তি মেদ জমা বা ভুঁড়ি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারি।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক, পেটের মেদ বা ভুঁড়ি থেকে বাঁচতে আমাদের কী কী করতে হবে।
কিছু ঘরোয়া টিপস মেনে চললেই ৭ দিনে আপনার তলপেটের চর্বি গায়েব। আসুন জেনে নেই কী সেই টিপস-
- খাদ্যতালিকায় ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যেমন—লাল চাল বা লাল আটার তৈরি খাবার এবং শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবারে মিলবে আঁশ।
- রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বা সকালে খালিপেটে কাঁচা রসুনের কয়েকটা কোয়া চিবিয়ে নিন।
রসুন খাওয়ার পর ১ গ্লাস হালকা গরম পানিতে অর্ধেক পাতিলেবুর রস মিশিয়ে খান। লবণ দেবেন না। মধু মেশাতে পারেন, কিন্তু চিনি নয়। এই পানীয় বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে তলপেটের মেদ কমায়। - সাদা ভাত ডায়েট থেকে ছেঁটে ফেলুন। রোজকার খাবারে রাখুন লাল চালের ভাত, গমের রুটি, ওটস-এর রুটি বা ওটস।
- ঝাল খাবার খান। তবে, তেলে-ঝোলে-অম্বলে নয়। রান্নায় ঝাল-এর স্বাদ আসবে দারচিনি, আদা, গোলমরিচ এবং কাঁচালঙ্কা থেকে। এই সমস্ত মশলা স্বাস্থ্যকর। এগুলো শরীরের ইনসুলিন সরবরাহ বাড়ায় এবং রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। ফলে চর্বি কমে অনেক দ্রুত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও এই ধরনের খাবার উপকারি।
- ৭ দিন মাংস, মাছ, ডিম, দুধ খাবেন না। মাছ যদি একান্তই খেতে চান, চামড়া ফেলে খান।প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে ফল ও সবজি খান। পানি রয়েছে এমন ফল বাছাই করুন। এতে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন-এর ঘাটতি পূরণ হবে।
- প্রচুর পরিমাণে পানি খান যা শরীরের বিপাকের হার বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের বিষাক্ত উপাদান বা টক্সিন দূর করে। চিনি জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকুন। এছাড়া মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন চকোলেট, আইসক্রিম ও সব রকমের মিষ্টিকেও ৭ দিনের জন্য বিদায় দিন।
- গ্রিন-টিতে বা সবুজ চা তে আছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা পেটের মেদ কমাতে খুব বেশি কার্যকর। তাই দুধ ও চিনি বেশি দিয়ে চা পানের অভ্যাসকে বদলে নিন গ্রিন-টি বা সবুজ চা।
- আখরোট, কাঠবাদাম ও সামুদ্রিক মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উৎস। তাই এসব খাবার পেটের মেদ কমাতে কার্যকর।
- সকাল শুরু করুন এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে। এতে শরীরের হজমপ্রক্রিয়া ভালো থাকবে এবং শরীরে মেদ জমার প্রক্রিয়া ধীর হবে।
- অতিরিক্ত চিন্তা ও কম উদ্যোগের ফলেও কোমরের চারপাশে বা পেটে মেদ জমতে পারে। তাই ভুঁড়ি কমাতে অবশ্যই চিন্তামুক্ত জীবনযাপন করতে হবে।
- অনেকেই খাবার খাওয়ার পর বসে থাকেন বা শুয়ে পড়েন। তাদের খাবার সঠিকভাবে পরিপাক হয় না, যার ফলে পেটে চর্বি জমতে থাকে। সে জন্য খাবার খাওয়ার পর একটানা শুয়ে-বসে না থেকে কমপক্ষে হলেও ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা করুন।
- যাঁদের সারা দিন টেবিল–চেয়ারে বসে কাজ করতে হয়, তাঁদের পেটে সহজে মেদ জমে যায়। ভুঁড়ি গোল হতে শুরু করে। তাই তাঁদের উচিত ৩০-৪০ মিনিট বসে কাজ করার পর উঠে ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা।
- একবারে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ না করে অল্প অল্প করে বারবার খাবার গ্রহণ করুন। সারা দিনের অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার খাবারকে ৫-৬ বারে গ্রহণ করুন। সেখানে তিনবার প্রধান খাবার ও দুই-তিনবার নাশতাজাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
আশা করি এই নির্দেশনা গুলো ঠিক ঠাকভাবে মেনে চললে আপনার মেদ বা ভুরি অবশ্যই কমে যাবে। ইনশাআল্লাহ।