আঁমাতো পরিবারের হত্যা রহস্য উন্মোচন
প্রতিটি মানুষের জীবনেই প্রেম ও ভালোবাসা বিদ্যমান । আবার প্রতিটি ভালোবাসার মধ্যেই লুকায়িত থাকে কিছু পাগলামি । কিন্তু যদি এমন হয় যে, ভালোবাসার পাগলামিতে আপনি আপনার পুরো পরিবারকেই খুন করে ফেললেন? যারা আপনার ভালোবাসা পাওয়ার সবচেয়ে বেশি যোগ্য, তারাই যদি আপনার ভালোবাসা না পেয়ে আপনার ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন কি হবে একবার ভেবে দেখেছেন কি? আজ আমরা এমনই একটি কেস সম্পর্কে জানবো। জানবো যে ভুল মানুষকে ভালোবাসলে জীবন কোথায় গিয়ে অবতরণ করে।

জানুয়ারি ২৫, ২০১৯ সালের দিকে ওরল্যান্ডো রিজিওনাল মেডিক্যাল সেন্টার থেকে একজন ডাক্তার ৯-১-১ ইমার্জেন্সি সার্ভিসে কল করে বলেন, তাদেরই একজন এনেস্থিওলোজিস্ট কোডি আঁমাতো আজকে কাজে উপস্থিত হন নি।
ডাক্তারটি ইমার্জেন্সি সার্ভিসকে আরো জানান, যে কোডি কখনই এর আগে কাজে তার কাজ ফাঁকি দেননি এবং সে এখন তার ফোনও রিসিভ করছেন না।
ডাক্তারটি ইমার্জেন্সি সার্ভিসকে অনুরোধ জানান যে তারা যেন কোডির বাড়িতে গিয়ে একটু খোঁজ করে আসেন।
সকাল ন'টার দিকে ইমার্জেন্সি সার্ভিস থেকে একজন অফিসারকে পাঠানো হয় কোডির বাড়িতে। বলে রাখা ভালো যে কোডি আঁমাতো, তার বাবা চ্যাড আঁমাতো, তার মা মার্গারেট আঁমাতো এবং তার ভাই গ্র্যান্ট আঁমাতো সবাই একই বাড়িতে থাকতেন।
অফিসার কোডির বাড়িতে পৌঁছানোর পর কলিংবেল বাজালেন। বেশ অনেকক্ষণ ধরে তিনি অপেক্ষা করলেও কেউ দরজা খুললো না।
অবশেষে তিনি দরজায় টোকা দিলেন। হালকা টোকা দিতেই দরজা খুলে গেলো। দরজা খুলার পর তিনি যা দেখলেন, সেটা দেখার জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না।
তিনি দেখলেন চ্যাড আঁমাতো (কোডির বাবা) চিৎ হয়ে রান্নাঘরের মেঝেতে পরে আছেন। তার চারপাশ জুড়ে পুরোটা রক্তে মাখামাখি।
অফিসার ধীরে ধীরে পা টিপে টিপে ভিতরের দিকে গেলেন। কিছুটা ভিতরে যেয়েই দেখতে পেলেন কোডি আঁমাতোর মৃতদেহ।
আরও ভিতরে যেয়ে দেখলেন মার্গারেট আঁমাতোর (কোডির মা) মৃতদেহ একটি চেয়ারে উপুড় হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু অফিসার কোডির ভাই গ্র্যান্ট আঁমাতোকে কোথাও দেখতে পেল না।
মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত শেষে জানা গেলো সবচেয়ে আগে খুন হয়েছে মার্গারেট আঁমাতো, তাকে একবার গুলি করা হয়েছে।
তারপর খুন করা হয়েছে চ্যাড আঁমাতোকে। তার মাথায় দুই বার গুলি করা হয়। আর সবশেষে খুন করা হয় কোডি আঁমাতোকে পুলিশ তখনও কোডির ভাই গ্র্যান্ট আঁমাতোকে খুঁজে বেড়াচ্ছিলো।
জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খুনের দিন গ্র্যান্ট আঁমাতো বাড়িতে ছিলেন না।
কিন্তু পুলিশ গ্র্যান্ট আঁমাতোকে যখন জিজ্ঞাসা করলো যে কেন সে একবারও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টাও করেনি, তখন গ্র্যান্ট আশানরূপ কোন উত্তর দিতে পারেনি। ধীরে ধীরে পুলিশের তদন্তে সব ভয়ংকর তথ্য বেরিয়ে আসতে থাকে।
এবার একটু পেছনের দিকে যাওয়া যাক।
কোডির ভাই গ্র্যান্ট আঁমাতো ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন ধরনের ঝড় ঝাপটার সম্মুখীন হয়েছিল। তবে তার সকল ধরনের সমস্যায় তার পরিবার সবসময় তার পাশে থাকতো।
কোডি আঁমাতো এবং গ্র্যান্ট আঁমাতো শুধু দুই ভাই ই ছিল না, বরং তারা একে অপরের খুবই ভালো বন্ধু ছিল।
তারা একই সাথে সব কাজ করতো, একই সাথে জিম ক্লাস, একই সাথে নার্সিং ক্লাস এবং এমনকি তারা একই সাথে এনেসথেসিয়া ক্লাসও করতো।
জুন ২১, ২০১৮ সালে ওরল্যান্ডো শহরের অ্যাডভেন্ট হেলথ সেন্টারে একজন নার্স হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তখন তার সহকর্মীরা গ্র্যান্টের ভিতর বেশ কিছু অস্বাভাবিকতা লক্ষ্য করে।
তারা গ্র্যান্টের কাছ থেকে প্রোপোফল এর অনেকগুলো বোতল পায়। উল্লেখ্য প্রোপোফল হলো এমন একধরনের ঔষধ যা দ্বারা রোগীকে অজ্ঞান করা হয়।
জিজ্ঞাসা করলে গ্র্যান্ট উত্তর দেয় যে সে ডিপ্রেশনে ভুগছিলো এবং এগুলো ব্যবহার করে সে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলো।
ডিপ্রেশন থেকে বাঁচার জন্য গ্র্যান্ট আঁমাতো অনেকটা সময় অনলাইনে থাকতো। তার পড়াশোনা, তার কাজ, সবকিছুই বাদ দিয়ে অনলাইন জগৎ ই তার মূল ধ্যান ধারণা হয়ে উঠে।
এ সময় অনলাইনে তার একটি মেয়ের সাথে পরিচয় ঘটে। মূলত সেই মেয়েটি ওয়েবক্যামে অশালীন ভিডিও বানাতো। ইংরেজিতে যাকে বলা হয় ক্যাম গার্ল (Cam Girl)।
মেয়েটির নাম ছিল সিল্ভিয়া ভেন্টসিস্লাভোভা। সিল্ভিয়া ক্যামেরার সামনে এসে নাচতো, অশালীন অঙ্গভঙ্গি করতো। আর আঁমাতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিল্ভিয়াকে দেখে কাটিয়ে দিত এবং টাকা দিয়ে যেত।
কখনও কখনও আঁমাতো সিল্ভিয়াকে মিনিটে ১০ ডলার করে দিতো। এসব করতে গিয়ে গ্র্যান্টের নিজের সব টাকা শেষ হয়ে যায়।
তারপর সে হাত দেয় পরিবারের টাকার উপর। গ্র্যান্ট তার পরিবারের কাছ থেকে মোট ২ লক্ষ ডলার চুরি করে। সে তার ভাই কোডির কাছ থেকে নেয় ৬০০০০ হাজার ডলার।
এসব জঘন্য ব্যাপার গুলো তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারে এবং তাকে রিহ্যাবিটেশন ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়।
গ্র্যন্ট সেখানে গেলেও দুই সপ্তাহ পর সেখান থেকে পালিয়ে আসে। এতে তার বাবা ভীষণ রকম ক্ষিপ্ত হন এবং বলেন যে আর কখনও যদি কোন ক্যাম গার্লের সাথে গ্র্যান্ট কথা বলে, তবে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হবে।
গ্র্যান্ট আঁমাতো এটা কখনই মেনে নিতে পারে নি। ফলে একে একে সবাই কে গুলি করে হত্যা করে সে।
জুলাই ৩১, ২০১৯ সালে সকল তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে গ্র্যান্ট আঁমাতোকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং আজীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
আরও পড়ুনঃ ইকিগাইঃ জাপানীদের দীর্ঘ ও আনন্দময় জীবনের রহস্য জানুন