আইনস্টাইনের জীবনের কিছু হাস্যরসাত্মক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য

আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জনক বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কিছু হাস্যরসাত্মক কাহিনী নিয়ে এই রম্যরচনা।

আইনস্টাইনের জীবনের কিছু হাস্যরসাত্মক ও চাঞ্চল্যকর তথ্য
ফটো গ্রহণ করা হয়েছে phys.org থেকে

বর্তমানে শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের বিজ্ঞানী, লাখো বিজ্ঞানী-শিক্ষার্থীদের মাথায় জট পাকিয়ে দেওয়া ‘আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’ বা ‘Thoery of Relativity’ এর জনক আলবার্ট আইনস্টাইন।


এই লিখনীতে তুলে ধরবো তারই জীবনের চাঞ্চল্যকর ও রসাত্মবোধক কিছু ঘটনাবলি ও অজানা তথ্য। প্রচন্ড বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন এই বিজ্ঞানীর আপেক্ষিকতা তত্ত্বকে নিজের মস্তিষ্কে ধারণ করতে গিয়ে কম শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় চোখের পানি ঝড়েনি।


কিন্তু মজার ব্যপার হলো, উচ বুদ্ধিমত্তার এই মানুষ, শুধু পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীই নন। তার রসবোধও ছিলো অত্যন্ত উচমানের।


এই মহান বিজ্ঞানীর জন্ম ১৪ই মার্চ (3.14 তারিখ) যা কাকতালীয়ভাবে ‘পাই’ এর ভ্যালু (3.14) এর সাথেও মিলে যায়। বড়ই বিস্ময়কর তাই না?


এই প্রবল বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিজ্ঞানী ছিলেন এতোই ভুলোমনা, যে তিনি নিজের বাড়ি ও টেলিফোন নম্বরও ভুলে যেতেন। একবার আইন্সটাইন ট্রেনে করে যাচ্ছিলেন।


চেকার তার টিকিট চেক করতে আসলে দেখা গেলো চিন্তিত আইনস্টাইন তার টিকিট হারিয়ে পড়ে গেলেন মহা ভাবনাতে।


তিনি আইনস্টাইনকে বললেন, “স্যার, আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনাকে টিকিট দেখাতে হবে না।“


আইন্সটাইন চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন, "না, না। ওটা আমাকে খুঁজে বের করতেই হবে। নইলে আমি মনে করবো কী করে যে আমি কোথায় যাচ্ছিলাম।"


আইনস্টাইন আর সব সাধারণ মানুষের তুলনায় ছোটবেলায় কথা বলতে শেখেন অনেক দেরিতে। এই নিয়ে বেশ চিন্তাগ্রস্ত তার বাবা-মা একদিন সকালে তার সাথে বসে খাচ্ছিলেন।


এমন সময় আইনস্টাইন বলে ঊঠলো, "এই স্যুপটা বড্ড গরম।" ছেলের মুখে প্রথম কথা শুনে যেনো বাবা-মা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন।


তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, "এতদিন তুমি কথা বলোনি কেনো?” উত্তরে আইনস্টাইন কী বললো জানেন ?“ কারণ আগে তো সব ঠিকই ছিলো। স্যুপ এতো গরম ছিলো না।"


একবার ১৯৩১ সালে বিখ্যাত কৌতুক অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানান তার শো দেখার জন্য।


সেখানে চ্যাপলিন তাকে জিজ্ঞাসা করেন, "সবাই তো আমাকে সহজে বোঝে, তাই আমার এতো জনপ্রিয়তা। কিন্তু মানুষ কেনো আপনাকে পছন্দ করে বুঝলাম না।"


উত্তরে আইনস্টাইন সহাস্যে বললেন, "কেউ আমাকে সহজে বুঝতে পারে না বলেই আমার এতো জনপ্রিয়তা।"


প্রচন্ড রসিক এই মানুষটি নিজের খ্যাতি ও তত্ত্ব নিয়ে রসিকতা করতেও ছাড়েননি। একবার আমেরিকাতে তাকে আমন্ত্রণ জানানো হলো।


সেখানে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলো, “আজকাল মেয়েরা কেনো আপনার আপেক্ষিকতা তত্ত্ব নিয়ে এতো আলোচনা করছে?” আইনস্টাইন ব্যঙ্গ করে উত্তর দিলেন, "মেয়েরা বরাবরই নতুন কিছু পছন্দ করে। এ বছরের নতুনত্ব হলো আপেক্ষিক তত্ত্ব।"


তাকে একবার আপেক্ষিকতা তত্ত্বের সহজ ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলো। তিনি বললেন, “আপনার হাতটা একটা জলন্ত চুলার উপর ধরে রাখুন মনে হবে এক ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে।


কিন্তু আপনি একটা সুন্দরী মেয়ের পাশে এক ঘন্টা বসে থাকুন, মনে হবে এক মিনিট পার হলো। এটাই আপেক্ষিকতা।“


মানুষ মাত্রই ভুল। জীবনের গভীর বিষয়গুলোকে এতো সহজ করে উপস্থাপন করা মানুষটাও ভুলের উর্ধ্বে ছিলেন না।


একবার তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, “পড়াশুনা ও গবেষণার জন্য আপনার কী কী দরকার?” প্রতুত্তরে তিনি বললেন, “একটা ডেস্ক, কিছু কাগজ, একটা পেন্সিল। আর একটা ডাস্টবিন। যেখানে ফেলা থাকবে আমার সব ভুল করা কাগজ।


অনেকের কাছে গণিতের আরেক নাম হলো আতঙ্ক। এতো জটিল গাণিতিক সূত্রে ভরপূর আপেক্ষিক তত্ত্বের জনক যিনি, তিনি একদিন এক তরুণীকে বলেন, "গণিতের সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। তোমার কাছে গণিত যতটা কঠিন, আমার কাছে তার চেয়েও কঠিন।"


আপেক্ষিক তত্ত্ব আবিষ্কারের পর যখন তাকে নিয়ে পৃথিবীতে তোলপার তখন তাকে আমন্ত্রিত এক সেমিনারে লেকচার দিতে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে তার ড্রাইভার তাকে বললো, "স্যার, আপনার সব লেকচার শুনতে শুনতে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। আজ আমি একবার আইনস্টাইন সেজে সেমিনারে লেকচার দিতে চাই।"


রসিক মানুষ আইনস্টাইন এরও ব্যপার টা খুব মনে ধরলো। তিনি তার ড্রাইভারকে রাখলেন তার লেকচার এর জায়গার। আর তিনি ছিলেন দর্শকদের সারিতে।


তখনতো মিডিয়ার এত দৌরাত্ম ছিলোনা। তাই কেউ আইনস্টাইনকে চিনতে পারেনি। লেকচার শেষে উপস্থিত এক শ্রোতা এসে ড্রাইভারকে বললো, স্যার আমি এই বিষয়টা বুঝতে পারিনি।


দয়া করে আমাকে একটু বুঝিয়ে দেবেন? ড্রাইভার তখন বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে আইনস্টাইনকে দেখিয়ে বললেন, "এটাতো খুবই সহজ বিষয়। আমার ড্রাইভারই আপনাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে পারবে।"


গুজব আছে, একবার সুন্দরী অভিনেত্রী মেরিলিন মনোরো, আইনস্টাইনকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বললেন, “চলুন আমরা বিয়ে করি।


তারপর আমাদের সন্তান হবে সৌন্দর্য ও জ্ঞানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান। সে হবে আমার মতো বিশ্বসুন্দর আর আপনার মতো বিশ্বজ্ঞানী।"


আইনস্টাইন ব্যঙ্গ করে বললেন, “আর যদি তার উল্টোটা হয়?”


অসামান্য প্রতিভাবান এই জ্ঞানী তার বাস্তব জীবনে ছিলেন অতি সাধারণ। তাকে একবার বেলজিয়ামের রাণী আমন্ত্রণ করলেন তাদের শহর পরিদর্শনের জন্য। তাকে স্টেশন থেকে আনার জন্য গাড়ির বহরও পাঠালেন।


কিন্তু তাকে স্টেশনের কোথাও না পেয়ে গাড়ির বহর ফিরে এলো। আইনস্টাইন একদম সাদাসিধে পোশাকে পুরো রাস্তা বেহালা বাজাতে বাজাতে হেটে আসলেন।


তিনি এসে রাণীকে বললেন, "আমি ইচ্ছে করেই গাড়ির বহর এড়িয়ে গিয়েছি। নইলে এভাবে সাধারণ মানুষের মতো শহরটাকে কীভাবে উপভোগ করতাম।"


আইনস্টাইন এর মেয়ের বিয়ে। তিনি তার মেয়েকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,  "মা তুমি চার্চে যাও আমি কলমটা ল্যাবে রেখে আসছি।"


কিন্তু ৩০ মিনিট হয়ে গেল তিনি ফিরলেন না। বিলম্ব না করে সবাই বিয়ের কাজটা সেরে ফেললো। বিয়ের পর মেয়ে তার বাসায় যেরে মাকে জিজ্ঞেস করলো তার বাবা কোথায়।


তার মা উত্তর দিলো তিনি সেই যে গেলেন। এখনো ফিরে আসেননি। মেয়ে তখন তার ল্যাবে গিয়ে দেখলেন আইনস্টাইনক কলম হাতে তার বোর্ডের সামনে দারিয়ে কী যেনো চিন্তা করছেন।


তার মেয়েকে দেখে তখনও তিনি অন্যমনস্ক হয়ে বললেন, "মা তুমি চার্চে যাও আমি ১০ মিনিটের মধ্যে কাজটা সেরে তোমার বিয়েতে আসছি।"


এই ছিলো মহান বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের কয়েক মিনিটের মধ্যে তার জীবনের কিছু হাস্যরসাত্মক মূহুর্ত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর শরীর নিয়ে অনেক বিজ্ঞানীর মধ্যে জাগে বিপুল রহস্য।


অটোপসি করার সময় কৌশলে তাঁর মস্তিষ্ক সরিয়ে নেন প্যাথলজিস্ট টমাস হার্ভে। কিছুদিন পর প্রকাশিত হয় হার্ভের গবেশণাপত্র।


সেখানে পাওয়া যায় আইনস্টাইন এর মস্তিষ্কের অনেক অজানা রহস্য। তার মস্তিষ্কের ওজন সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কের তুলনায় প্রায় ২০ গ্রাম কম। এমনকি মস্তিষ্কের গঠনেও রয়েছে একটু ভিন্নতা।


আরও পড়ুনঃ মিডিয়ার আধিপত্য (Media Hegemony) - প্রবন্ধ