আইফোনের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ বিশ্বের জনপ্রিয় দামি কোম্পানি ইতিহাস

অ্যাপল ইনকর্পোরেটেডের আইফোন এখন সারাবিশ্বেই পরিচিত এবং জনপ্রিয়। আইফোনের আবিষ্কার, ইতিহাস এবং জনপ্রিয়তা নিয়েই আজকের এই লেখা।

আইফোনের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ বিশ্বের জনপ্রিয় দামি কোম্পানি ইতিহাস
আইফোনের আবিষ্কার ও ইতিহাস


প্রযুক্তি জগতে যুগান্তকারী আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন। আর মোবাইল ফোনের ইতিহাসে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা নাম আইফোন। ২০১৬ সালের টাইমস ম্যাগাজিনের তালিকা অনুযায়ী এটি সবচেয়ে প্রভাবশালী প্রযুক্তি পণ্য। আইফোনের নতুন ফোন উদ্ভাবনী অনুষ্ঠানের আগেই অগ্রিম বিক্রি হয়। এই ফোনের অ্যাপস, সেবা এবং নতুন নতুন ফিচারের কারণে বিশ্বব্যাপী এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।


আইফোন

আইফোন(iPhone) হলো অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড কোম্পানির তৈরি একটি স্মার্টফোন। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের মতে আইফোন হলো তিনটি বৈপ্লবিক উদ্ভাবনী পণ্যের সমন্বয়। বৈপ্লবিক মোবাইল ফোন, প্রশস্ত পর্দার স্পর্শ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এমন আইপড ও উন্নতমানের ইন্টারনেট যোগাযোগের যন্ত্র,  যেটিতে কম্পিউটারের মতোই মেইল আদান প্রদান, ওয়েব ব্রাউজ সার্চ এবং বিশ্বম্যাপ দেখা যায়।


আইফোনকে ক্যামেরা ফোন, ইন্টারনেট মিডিয়া, সহজে বহনযোগ্য মিডিয়া প্লেয়ার, ভিডিও ক্যামেরা, ভিজুয়্যাল ভয়োস মেইল ক্লায়েন্টসহ ওয়াইফাই এবং থ্রিজি কানেক্টর হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এর পর্দাটি মাল্টি টাচস্ক্রীন প্রকৃতির, যাতে রয়েছে ভার্চুয়াল কিবোর্ডের সুবিধা। আইফোনের রয়েছে নিজস্ব অ্যাপস্টোর যেখান থেকে অ্যাপস ডাউনলোড দিয়ে এটিকে সহজেই খেলাধুলা, টেলিভিশন, চলচ্চিত্র দেখার কাজে ব্যবহার করা যায়।


আইফোনের আবিষ্কার

২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোতে এক অনুষ্ঠানে প্রথম আইফোনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর প্রায় ৬ মাস পরে ২৯ জুন প্রথম আইফোন বাজারে আসে। সেসময় এতে না ছিল কোনো অ্যাপস্টোর আর না ছিল কোনো রেটিনা স্ক্রিন। এটি ছিল প্রথম ভয়েস মেইল সেবা, যেখানে ভয়েস মেইলের লিস্ট থেকে বাছাই করে মেইলটি শোনা যেত। ২০১১ সালে আইফোন ৪ এস আসার আগে এর জন্য অপারেটিং সিস্টেম আইওএস অবমুক্ত করা হয়।


আইফোন আবিষ্কারের ইতিহাস

আইফোনের ইতিহাসের সঙ্গে যে নামটি জড়িয়ে আছে তিনি হলেন স্টিভঘ জবস। তার মস্তিষ্ক থেকেই এসেছে মোবাইল ফোনের যুগান্তকারী আবিষ্কার আইফোনের পরিকল্পনা। আইফোন বানানোর জন্য ২০০৫ সাল থেকে কাজ শুরু করে অ্যাল ইনকর্পোরেটেড। স্টিভ জবস প্রকৌশলীদের টাচস্ক্রীন প্রযুক্তির মোবাইল ফোন তৈরির নির্দেশ দেন।


ট্যাবলেট পিসি ও মোবাইল ফোনের পার্থক্যের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন তিনি। অ্যাপল এবং টেলিকম কোম্পানি এটিএন্ডটি যৌথভাবে আইফোন তৈরি শুরু করে। কোম্পানি দু'টি একটি ৩০ মাসের চুক্তি করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রথম আইফোন বিক্রি শুরু হয় ২৯ জুন ২০০৭ সালে। একই বছর নভেম্বর মাস থেকে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং ফ্রান্সের বাজারে চলে আসে আইফোন।


এরপর দ্বিতীয় প্রজন্মের আইফোন ৩জি'র ঘোষণা আসে ২০০৮ সালের ১১ জুলাই। স্টিভ জবস মারা যাওয়ার পরে প্রথম যে আইফোনটি বাজারে এসেছিল সেটি হলো ষষ্ঠ প্রজন্মের আইফোন ৫। সর্বশেষ আইফোন ১২ এর ঘোষণা এসেছে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর, যেটিতে রয়েছে ফাইভজি নেটওয়ার্ক কানেকশনের সুবিধা।


আইফোনের জনপ্রিয়তা

বিগত এক দশকে আইফোনের চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা আর কোনো মোবাইল ফোন পায় নি। নতুন মডেলের আইফোন বাজারে আসার আগেই কোটি কোটি পিস প্রিঅর্ডার আসে। এমনকি ফোন বাজারে আসার দিন ভোর থেকেই অ্যাপল স্টোরের সামনে হয়ে যায় লম্বা লাইন, অথচ দোকান খোলে ১০ টায়। তবু লাইনের সবাই কিনতে পারে না কারণ তার আগেই স্টক শেষ হয়ে যায়।


আবার এমনও হয়েছে স্টোরে নতুন আইফোন পাওয়াই যায়নি। কেননা প্রিঅর্ডারের জন্য সরবরাহ করতেই শেষ হয়ে গেছে। শুধু আইফোনের ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা যায়। অপেক্ষা করে থাকে কোটি কোটি প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষ। আইফোনের ডিজাইন, সিকিউরিটি, ব্যবহারকারীদের জন্য চমক, টেকসই ফোন এবং অভূতপূর্ব প্রযুক্তির কারণেই এত জনপ্রিয়তা।


আইফোনের মাধ্যমেই বিশ্বের জনপ্রিয় দামি কোম্পানি অ্যাপল

আইফোন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপল ইনকর্পোরেটেড। ১৯৭৫ সালে স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েনের হাত ধরে অ্যাপল প্রতিষ্ঠিত হয়। অ্যাপলের টিভি, ম্যাক ওএস, পিক্সারসহ সব পণ্যই জনপ্রিয় এবং টেকসই। প্রযুক্তিপ্রেমী মানুষেরা অ্যাপলের পণ্যের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।


কিন্তু আইফোনের আবিষ্কার এবং বাজারজাতকরণ অ্যাপলকে সাফল্য এবং জনপ্রিয়তার এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। আইফোন সারাবিশ্বে এতটা জনপ্রিয় হয়েছে যে এর চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে প্রতিষ্ঠানটিকে হিমশিম খেতে হয়।


বর্তমানে অ্যাপলের আয়ের সিংহভাগ আসে আইফোনের মাধ্যমে। আইফোনের আকাশছোঁয়া দামও এতে কোনো প্রভাব ফেলতে পারে না।এটি এত জনপ্রিয় হয়েছে যে অ্যাপল এর দাম না কমালেও, এর চাহিদা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।


আইফোনের কিছু দুর্বল দিক হয়তো আছে কিন্তু এর উপযোগিতার কারণে ব্যবহারকারীদের মাঝে এর চাহিদা হুহু করে বেড়েই চলেছে। আর আইফোনের এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে অ্যাপল হয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয়, দামি কোম্পানি। তবে তার পেছনে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত মানুষগুলোর স্বপ্ন, পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয়।