আত্মাঃ ভৌতিক গল্প
এমন সময় কে যেন আমার পিছনে এসে তাকায়। দেখি আশা দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেন মুখ করে আছে। মাথার এক পাশে রক্ত লেগে আছে।

তিথি আজ স্কুল থেকে এসে ঘরে মন খারাপ করে বসে আসে। মেয়েটা মা মারা যাওয়ার পর আমি তাকেই মানুষ করছি। কখন কি যে হয় কে জানে। কখনো কিছু বলতে পারি না। কিন্তু তিথি আমার কাছে তো সব কথা বলে। এখন শোনা না গেলেও রাতে খাওয়ার সময় শোনা যাবে।
আমি শুধু ভাবি কবে মেয়েটা বড় হবে। মেয়েটা বড় হলে আমি আমার চিন্তা কমে। আজ আমার মাথা বাথ্যা করছে। আমি উঠে গিয়ে তিথির ঘরে উকি দিলাম। দেখি একটা বই নিয়ে বিছানায় শুয়ে পরছে। আমি কিছু না বলে চলে এলাম।
রাতে খাওয়ার সময় তিথি কোন কথা বলছে না। আমি বললাম আর একটা মাংস দিই।
তিথি বলল না লাগবে না।
আজকে মনে হয় আমার আম্মুর মন খারাপ...?
আমার স্কুল 14 দিন ছুটি দিছে। ভাবছি এই কয়েক দিন কি করব...?
এতে মন খারাপ করার কি আছে। আমরা ছুটি পেলে অনেক খুশি হতাম। তাহলে আমরা এখন প্লান করব এই 14 দিন কি করা যায়।
কি প্লান করবা...?
ভাবছি আমরা এই কয়েক দিন বাইরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি।
ঘুরার কথা শুনে তিথির মুখে হাসি দেখা গেল। তবুও তিথি বলল তাহলে তোমার ব্যাবসার কি হবে...?
এই কয়েক দিনের জন্য আমার ব্যাবসার কিছু হবে না।
তাহলে আমরা কথায় যাব...?
তুমি যেখানে যেতে চাও সেখানে যাব।
আব্বু আমরা তাহলে কক্সবাজার যাই।
ঠিক আছে।
কবে যাব আমরা...? এই কথা বলতে তিথির গলা আটকে এলো। তিথির গলা আবেগে জরিয়ে এলো। সে কিছুক্ষন আগে মন খারাপ ছিল আর এখন আনন্দে দিশেহারা। তাকে দেখে খুবই ভাল লাগছে।
আমি বললাম কাল সব কাজ করে তার পরের দিন যাব।
তিথি তারাতাড়ি খেয়ে নিজের ঘরে যায়।
আজকে আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি। বাবা বাইরে থেকে এলে আমরা চলে যাব কক্সবাজারে। যাওয়ার জন্য আমি সব কিছু গুছিয়ে রেখেছি। সাথে দুইটা গল্পের বই নিয়েছি। কিছু সময় বাবা যখন খবর পড়বে আমি তখন গল্পের বই পড়ব। বাবা এসে গেছে। আমরা এখন কক্সবাজার চলে যাচ্ছি।
কক্সবাজারে গিয়ে আমরা একটা হটেলে উঠি। হোটেলটার পরিবেশ খুব ভাল। চারদিকে অনেক পরিষ্কার। হটেলের সামনে ফুলের বাগান। অনেক গুলো ফুল ফুটে আছে। আমরা উপরে উঠে এলাম। আমার ঘরটা অনেক সুন্দর। একটা বিছানা। বিছানার পাশে জানালা।
জানালা দিয়ে বাইরে পুরো সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। পুরো ছবির মতো দৃশ্য। কিছু সময় পর পর পানির ঢেউ এসে পাড়ে আসড়ে পরে। পানি কল কল শব্দ শোনা যায়। পিছন থেকে কেউ আমাকে ডাক দিল। আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে। মেয়েটা দেখতে বেশ সুন্দর। চুল গুলো কালো কুচকুচে। গায়ের রং দুধে আলতার মতো। আমি তাকে বললাম আমাকে কিছু বললেন...?
জি, তোমার আব্বু তোমাকে ডাকছে। নিচে খেতে আস। আমি কিছু না বলে তার সাথে চলে এলাম। দুপুরে খেয়ে আমি আমার ঘরে গেলাম। জানালার পাশে বসে গল্পের বই পড়তেছি। জানালা দিয়ে ভিতরে অনেক সুন্দর হাওয়া আসছে।
আমি পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না। ঘুম থেকে উঠে দেখি ঐ মেয়েটি আমার পাশে বসে আছে। আমি তাকে বললাম কিছু বলবেন...?
মেয়েটি বলল না। এই কয়েক দিন আমি তোমার কাছে থাকব। আমি তার নাম শুনেছি। তার নাম আশা।
রাতে আমি আর আশা সাদে বসে আছি। এখন অনেক সুন্দর বাতাস বইছে। নাকে ফুলের ঘ্রাণ আসছে। সাদের এক পাশে কিছু ফুল গাছ আছে। চাঁদের আলোয় সবকিছু দেখা যাচ্ছে। আমি আর আশা মিলে অনেক সময় গল্প করলাম।
সে আমাকে বলেছে এ হোটেলে একটা মেয়ে এসে ছিলো বেশ কিছু দিন আগে। তার মাথায় সমস্যা ছিল। সে এক রাতে সাদ থেকে লাফ দিয়ে মারা যায়।
এখন সকাল এগারোটা বাজে। আমি আর বাবা এসে সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিছু সময় পর পর পানির ঢেউ এসে পাড়ে আসড়ে পরে। আমার হাটু পযন্ত ভিজে গেছে। এই পানি অনেক ঠান্ডা। কিছু সময় পর ফিরে আসি।
আজ চার দিন হলো আমরা আছি। এর মধ্যে আশার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক হয়ে গেছে। সে আকটু পর পর আমার কাছে আসে। গল্প করে। তার বিভিন্ন কথা বলে। আশা জানে না তার বাবা মা কে। সে ছোট থেকে এতিম খানায় বড় হয়েছে। তার বাবা মা কোথায় থাকে, কে তার বাবা মা তা সে কিছুই জানে না।
এতিমখানা তার আসল পরিচয়। সে যখন এই কথাগুলো বলছিল তখন আমার খুব মায়া হচ্ছিল। কিন্তু আমার কিছুই করার নেই। সে এখন এ হোটেলে চাকরি করে ভালোই আছে। তার একজন ভালবাসার মানুষ আছে। সে তাকে খুব ভালবাসে। প্রতি সপ্তাহে তাকে দেখতে আসে। আর কিছু দিন পর তারা বিয়ে করবে।
আমি তাকে দেখেনি কিন্তু আশার মুখে তার অনেক কথা শুনেছি। তার নাম রাব্বি। দেখতে ভালই লম্বা প্রায় 5 ফুট 10 ইঞ্চি। গায়ের রং হালকা শ্যামা কিন্তু দেখতে অনেক সুন্দর। চুল গুলো কালো কুচকুচে। তার সাথে অনেক কথা হয়েছে।
রাতে খাওয়ার শেষ করে আমি আমার ঘরে বই নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছি। আর কিছু সময় পর আমি আর আশা মিলে সাদে যাব। দুই জন মিলে প্রতিদিন অনেক সুন্দর গল্প করি। আর সাদে পরিবেশটা অনেক সুন্দর। হঠাৎ বাবা আমার ঘরে আসে। বাবা বলল মা এখানে এসে তোমার কেমন লাগলো.....?
আমি বললাম খুব ভাল।
বাবা বলল এখন যে আমাদের ফিরে যেতে হবে। এ কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেল। এই কয়েক দিন আমার অনেক ভালো লাগছে। বিশেষ করে আশার সাথে কাটানো সময়। আবার অনেক ভালো লাগছে। আবার আমি স্কুল যাব। আমার বান্ধবীদের সাথে এই কয়েক দিনের মজার মজার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।
তা বাবা আমরা কবে ফিরে যাচ্ছি....?
কালকের দিন পর।
ঠিক আছে।
এখন আমি আর আশা মিলে সাদে বসে আছি। আজকে তেমন ভাল চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সুন্দর হাওয়া আসছে। সমুদ্রের পানির কলকোলানি শব্দ শোনা যাচ্ছে। এখন রাত প্রায় এগারো টা বাজে। আশা আমাকে বলল কফি খাবে।
আমি বললাম ঠিক আছে নিয়ে আসেন। তুমি এখানে থাক আমি নিয়ে আচ্ছি। এই বলে আশা চলে গেল। আমি একা সাদে বসে আছি। আমি উঠে সাদের এক কোনায় এসে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের পানির ঢেউ দেখার চেষ্টা করছি।
এমন সময় কে যেন আমার পিছনে এসে তাকায়। দেখি আশা দাঁড়িয়ে আছে। কেমন যেন মুখ করে আছে। মাথার এক পাশে রক্ত লেগে আছে। আমি বললাম আশা। আপনার মাথায় রক্ত কেন...? সে বিশ্রী ভয়ংকর করে বলল আমি আশা না। আমি আশার ছোট বোন।
আশা আমার বাবা মা উপর রাগ করে আমাকে এখান থেকে ফেলে দেয়। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। তার শরীর থেকে দুরগন্ধ আসছে। সে আমাকে জোরে ধাক্কা দেয়। আমি কোনো মতে দৌরে নিজের ঘরে আসি। আমি বিছানায় একা একা বসে আছি।
ভয়ে আমার শরীর কাপছে। ভয়ে ভয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না। ঘুম থেকে উঠে দেখি নিচে অনেক চেচামেচি। আমি তারাতাড়ি নিচে চলে যাই। দেখি বাবা অনেক জোরে জোরে কান্নাকাটি করছে। আমি বাবাকে ডাকলাম কিন্তু বাবা আমার কথা শুনলেন না। দেখি বাবার পাশে আমার মৃতদেহ।