আপনার শরীরের বিষ নষ্ট হবে একথালা খিচুড়িতে
শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার জন্য আপনি কিন্তু প্রতিদিনই খেতে পারেন খিচুড়ি। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে আর উপকার পাবেন আপনি ভরপুর মাত্রায়।

খিচুড়ি ভালোবাসে না এমন মানুষ খুবই কম আছে। তার সাথে বেগুন ভাজা। আর আবহাওয়া যদি হয় বর্ষাকাল, তাহলে তো আর কথাই নেই। শরীরের উপকার তো হবেই তাছাড়া এই মুখরোচক খিচুড়িকে না করতে পারবে না কেউই। খেতে ভালো লাগার পাশাপাশি একথালা খিচুড়ি আপনার শরীরকে বিষ মুক্ত করে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে।
এখন প্রশ্ন থাকতেই পারে এই বিষ শরীরে জমা হয় কিভাবে? বিশেষজ্ঞদের মতে শরীরের একটা নিজস্ব মেকানিজম আছে। যার মাধ্যমে দেহ তার ভিতরে জমতে থাকা টক্সিন বের করে দেয়। তবে এই কাজটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিডনি করে থাকে।
বাকিটা ঘাম এবং নিঃশ্বাসের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে যায়। তার পরেও কিছু পরিমাণ বিষ বা টক্সিন আমাদের শরীরের মধ্যে থেকে যায়। যা ভিতর থেকে শরীরকে ধীরে ধীরে নষ্ট করতে শুরু করে। অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ কে ড্যামেজ করতে শুরু করে।
তবে এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো ঘরোয়া টোটকা হলো এই খিচুড়ি। ভালোলাগার পাশাপাশি শরীর কে বিষ মুক্ত করতে অনেকখানি ভূমিকা পালন করে। এই খিচুড়ি শরীরের ভিতরে টক্সিন উৎপাদন কমিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে তাও আবার একেবারে চুপিসারে। খিচুড়ি অনেক রকমের হয়, তাই চলুন শরীরকে সুস্থ রাখতে, ক্ষতিকারক টক্সিনকে শরীর থেকে বের করে দিতে খিচুড়ির উপকারিতা গুলো জানা যাক -
ডিম খাওয়ার কি ক্ষতিকর দিক আছে? জেনে নিন
১) সাবুদানার খিচুড়ি :
জ্বর সর্দি কাশিতে আগেকার মানুষ এই খিচুড়ি প্রায় খেয়ে থাকতেন। এই সাবুদানার খিচুড়ি তে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিজ ভরপুর মাত্রায় থাকে। তার পাশাপাশি শরীরের টক্সিন মুক্ত রাখতে তো বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করেই।
তবে এ ছাড়াও সাবুদানার খিচুড়ি তে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, এবং ক্যালসিয়াম, সহ একাধিক খনিজ। তবে এটি খেতে পারলে শরীরের পুষ্টির অভাব হবে না। তবে অনেকের হয়তো পছন্দ নাও হতে পারে তবে এটা কিন্তু শরীরের পক্ষে বিশেষ উপকারী।
২) সবজি দিয়ে খিচুড়ি :
খিচুড়ি শুধুমাত্র শরীরের বিষ বের করার জন্য নয়, আপনি প্রতিদিনই খেতে পারে ন। কারণটা হলো এই সবজি খিচুড়ি তে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বেশ কিছু খনিজ রয়েছে।
যেগুলো আমাদের শরীরের বিশেষ প্রয়োজন। হজম শক্তি কে বাড়িয়ে তোলে এই খিচুড়ি। তার সাথে সাথে একাধিক রোগের প্রকোপ কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে।
৩) ওটস খিচুড়ি :
ওটস এমনি তেই অনেকেই খেতে পছন্দ করেন। তাই মাঝে মধ্যে ওটস খিচুড়ি খেতে পারেন। শরীরকে ধুয়ে মুছে সাফ রাখার জন্য ওটস খিচুড়ির তুলনা নেই। অন্যান্য খিচুড়ির মতো এই খিচুড়িতে ও কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভরপুর মাত্রায় থাকে।
৪) মুগ ডালের খিচুড়ি :
মুগডাল তো অনেক খেয়েছেন, এবারের মুগডাল দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন প্রতিদিন। বিশেষ করে যারা ওজন কমাতে চান তারা সকালের ব্রেকফাস্ট এ এই মুগ ডালের খিচুড়ি আপনার ডায়েট চার্টে রাখতে পারেন।
আসল কথা হলো একবার খেয়ে দীর্ঘক্ষন পেট ভরা থাকলে খাওয়ার ইচ্ছাটাই চলে যায়। ফলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি প্রবেশ করতে পারে না। তার কারণে শরীর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে না।
৫) কাওনের খিচুড়ি :
এই খিচুড়িতে একটু বেশি মাত্রায় শরীরের উপকারী সব খরচ ভিটামিন প্রোটিন ভরপুর রয়েছে। প্রোটিন, ফাইবার, ফসফরাস, এবং তার সাথে অ্যামাইনো এসিড এ পরিপূর্ণ এই খিচুড়ি। শরীরের একেবারে প্রিয় বন্ধু বলতে পারেন এই কাওণের খিচুড়ি কে।
প্রোটিন ও ফাইবার যেমন একদিকে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে তেমনি অন্যদিকে অ্যামাইনো এসিড এবং ফসফরাস শরীরের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। তার পাশাপাশি শরীরে জমে থাকা টক্সিন উপাদান যেন স্বাভাবিকভবে, ঠিকঠাকভাবে শরীর থেকে বেরিয়ে যেতে পারে সেদিকেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
৬) ডালে চালে সবজিতে খিচুড়ি :
এই খিচুড়ি সচরাচর বর্ষা হলেই প্রায় ঘরেতেই রান্না হয়েই থাকে। বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই কিন্তু খিচুড়ি খেতে ভীষণ পছন্দ করেন। তেমন ব্যয় সাপেক্ষও নয়। তাই মন চাইলেই একথালা খিচুড়িতে মন বসাত পারেন।
শরীর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে, জ্বর থাকলে, মুখে রুচি না থাকলে, মা ঠাকুমাদের একথালা খিচুড়ি মুখের সামনে এনে দেওয়া চাই। যেহেতু সুস্থ হওয়ার জন্য শরীরকে যথোপযুক্ত খাবার দেওয়া প্রয়োজন তাই মুখে রুচির না থাকার কারণে খেতেও পারা যায়না।
তাই এই ডালে চালে সবজিতে মুখরোচক খিচুড়ি অনায়াসে অনেকটাই খাওয়া যায় অন্যান্য খাবারের তুলনায়। সাথে শরীরকে সুস্থ ও শক্তি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে খিচুড়ি। এই খিচুড়িতে ও ভরপুর মাত্রায় প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইডেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, বিভিন্ন রকমের শরীরের উপকারী খনিজ থাকে। যা হজম শক্তি কে বাড়িয়ে তোলে অসুস্থ শরীরকে করে তোলে সুস্থ।
৭) সয়াবিনের খিচুড়ি :
খিচুড়ি মানেই জিভে জল আসার মত একটা রেসিপি। সবজি বেশি না থাকলেও আতপ চাল, মুসুর ডাল, আলু, হাতের কাছে যা সবজি থাকবে তাই দিয়ে পরিমাণমতো সোয়াবিন দিন সেই খিচুড়িতে। সয়াবিন শরীরের পক্ষে কতটা উপকারী সে তো সবাই জানেন। তাই এর উপকারিতা পে, সয়াবিনের খিচুড়ি তৈরি করতে পারেন।
আপনার ঘরে বাচ্চা থেকে বয়স্ক রাও এই খিচুড়ি চেটেপুটে খাবে। তার সাথে এই বর্ষায় শরীরের দিকটাও খেয়াল দেখা হয়ে গেল। শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার বাড়ানোর জন্য এটা কিন্তু একটা অনবদ্য রেসিপি, একেবারে ঘরোয়া টোটকা।
শরীরকে সুস্থ রাখতে বিষমুক্ত রাখতে ঘরে যদি এমন মোক্ষম দাওয়াই থেকে থাকে তাহলে তো আর কথাই নেই তাইনা। না খেতে হলেও কোনো ওষুধ বা অসুস্থ হয়ে বিছানার পরেও থাকতে হলো না বেশিদিন।
তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে কার না ভালো লাগে, বলুন। তাই এইসব খিচুড়ি শুধুমাত্র শরীর অসুস্থ হওয়ার জন্য নয়, সারা বছর এমনকি প্রতিদিনও খেতে পারেন।
রান্নাঘরে হাতের কাছের প্রয়োজনীয় খিচুড়ি তৈরির জিনিস আপনি প্রতিদিনই পেয়ে যাবেন। মন চাইলে করে নিতে পারবেন আপনার মন মত এই খিচুড়ি। প্রতিদিন কোন এক সময় খিচুড়ি আপনার পাতে রাখলে, এতে কোনো রকম কোনো অসুবিধা নেই। নিঃসন্দেহে এত কিছু উপকার পেয়ে যাবেন এক থালা খিচুড়িতে।
তার ওপরে এখনতো বৃষ্টির কোন বিরাম নেই, অনেকেই আছেন বাড়িতে। তাই এই পরিবেশে গরম গরম একথালা খিচুড়ি তে মন বসাতে পারেন। এমনটা হলে কিন্তু মন্দ হয় না। কি বলেন আপনারা!