আপনার শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে কিনা বুঝবেন কিভাবে? রইল কিছু উপায়
জল আমাদের শরীরকে সবদিক থেকেই সুস্থ রাখে। পর্যাপ্ত পরিমান জল পান করলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই অনেক শারীরিক সমস্যার সমাধান করতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করা প্রয়োজন।

ছোটবেলা থেকেই শুনতে পাওয়া যায় জলই জীবন। জল ছাড়া মানুষ একটা দিনও পার করতে পারে না। আমাদের শরীর ৭৫ % জল দিয়ে তৈরি। তাই পর্যাপ্ত পরিমান জল না খেলে শরীরে দেখা দিতে পারে জলের অভাব। তার জন্য শরীর শুকিয়ে আসতে বাধ্য। পরিমাণমতো জল না খেলে নানা রকমের রোগ বাসা বাঁধে আমাদের শরীরে।
অনেকেই খাবারের পাশাপাশি জল খাওয়াটা কে বেশি গুরুত্ব দেন না। সামান্য একটু জল সারাদিনে খেয়ে তারা দিন পার করে দেন। কিন্তু অজান্তেই তারা নিজের শরীরকে কতটা বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন হয়তো তারা কোনদিনও বুঝতে পারছেন না। এই বিষয়টাকে স্বাভাবিক হিসাবে নিয়ে অনেকেই দিনের-পর-দিন অপরিমিত জল খাওয়ার জন্য শরীরের নানা রকমের অসুবিধার সৃষ্টি করে চলেছেন। জীবন বাঁচানোর জন্য জলের কিন্তু কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের শরীরে যে জলের ঘাটতি দেখা দেয় তাকে বলা হয় ডিহাইড্রেশন। শরীরের মধ্যে এক অন্যতম সমস্যা। যে কোন অসুখে আক্রান্ত হলে চিকিৎসকরা প্রথমেই কিন্তু আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমান জল খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকবেন। জল খাওয়ার মাধ্যমে শরীর ডিটক্স হয়, শরীর থেকে বিষাক্ত কর টক্সিন বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। শরীরের মধ্যে অক্সিজেনের অভাব দূর হয় এবং ক্লান্তি কেটে যায় অনায়াসেই।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্ততপক্ষে আট গ্লাস জল খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু এমন নিয়ম সবাই মানছে টা কই। দিনের পর দিন পর্যাপ্ত পরিমান জল অনেকেই পান করছেন না। আবার অন্যদিকে তারা এটাও বুঝতে পারছেন না যে, তাদের শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে কি না।
শরীরে জলের ঘাটতি অথবা ডিহাইড্রেশনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ আছে। যেগুলো আপনার শরীরে দেখা দিলে খুব শীঘ্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কি কি লক্ষণ দেখলে বুঝবেন যে আপনার শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেইসব লক্ষণ গুলো -
১. তেষ্টা পাওয়া :
অনেকেরই দেখবেন বারবার গলা শুকিয়ে যেতে থাকে, অথবা তেষ্টা পেতে থাকে। সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে যে আপনার শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে।
তাই আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমান জল অবশ্যই তখন পান করা উচিত। শরীরে জলের ঘাটতি সবথেকে অন্যতম লক্ষণ হলো এই তেষ্টা পাওয়া।
২. প্রস্রাবের রং :
শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিলে প্রস্রাবের রং হলুদ থেকে গাড় হলুদ রং ধারণ করে। দিনে যে পরিমাণ জল খাওয়ার প্রয়োজন আপনি তার পরিবর্তে পরিমাণে অনেক কম জল খান, তাহলে কিন্তু প্রস্রাবের রঙ বদলে যেতে সময় লাগবে না। এমনকি প্রস্রাবের সময় জ্বালাও হতে পারে।
এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে ২০ মিনিট অন্তর অন্তর এক থেকে দুই গ্লাস করে জল পান করুন, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার প্রস্রাবের রং স্বাভাবিক হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি এটা করতে থাকুন। দেখবেন আস্তে আস্তে আপনার শরীরে জলের ঘাটতি মিটে যাবে।
৩. প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা :
শরীরে পর্যাপ্ত পরিমান জল থাকা মানে অক্সিজেনের ঘাটতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। তাই মাথা পর্যন্ত অথবা মস্তিষ্ক পর্যন্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে খুব তাড়াতাড়ি। তাই যখন শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দেবে তখন কিন্তু মাথায় অক্সিজেনের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে।
সেক্ষেত্রে আপনার প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা হতে পারে। এটাও কিন্তু একটা বড় লক্ষ্ন আপনার শরীরের জলের ঘাটতি হচ্ছে কিনা। তাছাড়া চিকিৎসকদের মত অনুসারে ডিহাইড্রেশনের সাথে মাথা যন্ত্রণার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। শরীরের কয়েক শতাংশ জল এর ঘাটতি হলেই কিন্তু মাথা যন্ত্রণার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
৪. রক্তচাপ কমে যাওয়া :
শরীরে জলের ঘাটতি হলে আপনার রক্তচাপ কিন্তু কমে যাবে দ্রুতগতিতে। সেই কারণে মস্তিষ্ক পর্যন্ত অক্সিজেন পৌছাবেনা পর্যাপ্ত পরিমাণ।
এক্ষেত্রে মাথাও কিন্তু আস্তে আস্তে যন্ত্রণা হওয়া শুরু হয়ে যাবে। তাই তখনই ঝটপট কয়েক গ্লাস জল পান করে নিন। এসব অসুবিধা থেকে স্বস্তি পাবেন খুব তাড়াতাড়ি।
৫. স্মৃতি শক্তির ওপর প্রভাব :
পর্যাপ্ত পরিমান জল না খেলে মস্তিষ্কে রক্ত পৌঁছায় না। তখনই তার কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। সে নিস্তেজ হতে শুরু করে, তাই আপনি ভুলে যাওয়ার মতো রোগে আক্রান্ত হতে পারেন খুব তাড়াতাড়ি। যেহেতু মস্তিষ্ক ৭০% জল দিয়ে পরিপূর্ণ।
৬. মুখে দুর্গন্ধ :
শরীরে জলের ঘাটতি দেখা দিলে মুখ এবং জিভ শুকিয়ে আসতে থাকে, তার সাথে গলাও। তার সঙ্গে সঙ্গে স্যালাইভার উৎপাদন কমে যায়। স্বাভাবিকভাবেই মুখগহবরের ভিতরে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ বাড়তে থাকে।
আর সেই কারণেই মুখ থেকে দুর্গন্ধ বের হয়। তার সাথে সাথে পাকস্থলীতেও গ্যাস উৎপন্ন হতে থাকে, পর্যাপ্ত পরিমান জল পান না করলে।
৭. শ্বাসকষ্ট বা হাঁপিয়ে ওঠা :
সামান্য কোন কাজ করলে আপনি হাঁপিয়ে উঠেছেন? তাহলে কিন্তু আপনার শরীর আপনাকে জানান দিচ্ছে যে, আপনার শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে।
তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন। হাঁপিয়ে ওঠার পাশাপাশি হতে পারে শ্বাসকষ্ট।
৮. রক্তের ভলিউম কমে যাওয়া :
শরীরে জলের ঘাটতির প্রকোপে রক্তে ভলিউম কমে যেতে শুরু করে। সেই কারণে হৃদপিণ্ডকে স্বাভাবিক এর থেকেও অনেক দ্রুত কাজ করতে হয়। তার ফলে হার্ট রেট তো বেড়ে যাবেই, তার জন্য শ্বাসকষ্টের মত রোগ আপনাকে চেপে বসতে পারে।
শুধুমাত্র ওষুধ ও খাওয়া দাওয়ার উপরে নির্ভর করেই জীবন যাপন চলে না। পর্যাপ্ত জল খাওয়ার দিকটাও বিশেষভাবে খেয়াল রাখাটা জরুরি। অনেকেই বুঝতে পারেন না যে, তার শরীরে জলের ঘাটতি হচ্ছে কিনা। তবে এইসব লক্ষণগুলো আপনার শরীরে দেখা দিলে একেবারেই অবহেলা নয়।
সাথে সাথেই আপনার শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা করুন। সেটা আপনার হতে পারে কোন লেবুর জল, ডাবের জল, সাধারণ জল, অথবা তরমুজের মতো ফল খেতে পারেন। যেভাবেই জল খান না কেন শরীরে জলের ঘাটতি মেটাতে কখনোই কোল্ড্রিংসের উপর নির্ভর করবেন না। এটা হয়তো মুখরোচক কিন্তু শরীরের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়, বিশেষ করে যখন আপনার শরীরের জলের ঘাটতি দেখা দেবে তখন তো মোটেও নয়।
প্রাকৃতিক এই সমস্ত জলের উপরে নির্ভর করে আপনার শরীরের জল এর ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করুন, আর মুক্তি পেয়ে যান উপরের ঐ সমস্ত স্বাভাবিক শারীরিক অসুবিধা থেকে। শরীরে জলের ঘাটতি মিটিয়ে শরীরকে করে তুলুন আরো বেশি সতেজ। তবে সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে দুগ্লাস জল খেতে ভুলবেন না কিন্তু।
এটা আপনার শরীর এবং ব্রেন দুটোর জন্য ভীষণ উপকারী। একটা মাস ট্রাই করে দেখুন না, ফলাফল আপনি হাতে নাতেই পেয়ে যাবেন। তাহলে আর অবহেলা নয়, জল শরীরের জন্য অমুল্য, এটা ভেবেই তাকে আপন করে নিন।