আপনি কি ব্যাংকে অর্থ জমা করছেন? তাহলে সুরক্ষার এই দিক গুলো জেনে নিন
আমরা আমাদের কষ্ট করে অর্জন করা অর্থকে নিরাপদে রাখতেই সাধারণত বিভিন্ন ব্যাংকে একাউন্ট করে সেখানে জমা রাখি।আজকাল ব্যাংকে টাকা রাখার পরেও আমাদের কষ্টার্জিত অর্থ সুরক্ষিত থাকে না। আর তাই ব্যাংকে টাকা জমা করার আগে বুদ্ধিমানের কাজ হবে আগে যাচাই বাছাই করে তারপর অর্থ জমা রাখা। আজ আমরা ব্যাংকে টাকা রাখার সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা করবো। আজকে জেনে নিন আপনার অর্থ ব্যাংকে কতটা সুরক্ষিত থাকবে

অর্থ জমা রাখার পূর্বেই আমাদের জানা জরুরী কোন ব্যাংকের আর্থিক ক্ষমতা শক্তিশালী?
দুর্বল আর্থিক ভিত্তিক ব্যাংক কোনটি ?
সকল প্রকার নিয়ম নিতী কোন ব্যাংক মেনে চলে ?
ব্যাংক বেপরোয়া ভাবে কোন ব্যাংকিং করে কিনা ?
আমানত রাখার জন্য কোন ব্যাংক নিরাপদ ?
ব্যাংক গ্রাহকদের মনে জমা করা এই সব প্রশ্নের উত্তর কিছু দিন পর থেকে পাওয়া যাবে বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর ওয়েবসাইটে, এর জন্য মার্কেট ডিসিপ্লিন নীতিমালা নামে একটি গাইডলাইন তৈরি করার কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক । এ তথ্য জানানো হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে ।
সূত্রটি থেকে আরো জানা গেছে, মার্কেট ডিসিপ্লিন নীতিমালা তৈরির কাজ শেষ হলেই বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোর আর্থিক ক্ষমতার প্রায় ৩৫ ধরনের তথ্য তারা নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে ।
মার্কেট ডিসিপ্লিন নীতিমালা তৈরির সাথে সরাসরি জড়িত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক জন কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালকে জানান,
এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে সাধারণ আমানত জমা কারীসহ অন্যান্য সব মানুষরা ও জেনে নিতে পারবেন, ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য কোন ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সেই সময়ে কী রকম আছে এবং সেই ব্যাংক কতটুকু ঝুঁকি মোকাবেলা করতে পারবে এসব তথ্য। এর ফলে ব্যাংকে আর্থিক লেনদেন করা সকলেই সহজে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কোন ব্যাংকে অর্থ জমা করা অধিক নিরাপদ।
এছাড়াও রিসার্চ করে আরো কিছু তথ্য জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলোকে ব্যাসেল-৩ এর আওতায় তাদের আর্থিক ক্ষমতা এর ৩৫ ধরনের তথ্য নিজস্ব ওয়েবসাইটে জনসমুক্ষে প্রকাশ করতে হবে এছাড়াও প্রতেক তিন মাস, অর্ধবার্ষিক এবং বার্ষিক ভিত্তিতে এসব তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। এই তথ্য গুলোর মধ্যে ব্যাংক গুলোর আর্থিক অবস্থা, ঝুঁকি মোকাবেলা করার ক্ষমতা, মূলধন, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ, খেলাপি ঋণ, রাইট অফ, রাইট অফ লোন রিকোভারি, মার্কেট রিস্ক, ক্রেডিট রিস্ক, অপারেশনাল রিস্ক, লাভ-ক্ষতি, আমানতকারীর সংখ্যা, আমানতের পরিমাণ, শেয়ারহোল্ডারের সংখ্যা, শেয়ারের পরিমাণ, ঋণ গ্রহীতা, ঋণের পরিমাণ, ব্যাংকের আয়-ব্যয়ের সকল প্রকার তথ্য থাকবে। যার ফলে ব্যাংকে লেনদেন করা প্রত্যেকটি ব্যাক্তিই ব্যাংক সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারবেন এবং এর ফলে ব্যাংকে প্রকৃত ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা পেয়ে তারপর তারা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সংগঠন ব্যাংক ও এর আমানত কারীদের সুরক্ষায় ব্যাসেল কমিটি অন ব্যাংকিং সুপারভিশন (বিসিবিএস) ১৯৭৪ সাল থেকে কাজ করে চলেছে এবং এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত নীতিমালা ব্যাসেল-১ ও ব্যাসেল-২ ইতোমধ্যে বাস্তবায়িত করা হয়েছে। এরপর ২০১৬ সাল থেকে ব্যাসেল -৩ বাস্তবায়ন করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে যা ২০২০ সালের মধ্যে পুরোপুরি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে।
এবং আরও তথ্য পাওয়া গেছে যার মাধ্যমে জানা যায়, ব্যাসেল-৩ এর তিনটি পিলার আছে।
যার প্রথম দুইটি পিলার মিনিমাম ক্যাপিটাল রিকয়ারমেন্ট ও সুপারভাইজারি রিভিউ প্রসেস বাস্তবায়ন ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে এবং এর সর্বশেষ পিলারের নাম হল মার্কেট ডিসিপ্লিন।
আরো জানা যায়, ব্যাসেল-৩ এর লক্ষ্য হলো ব্যাংক গুলোর আর্থিক অবস্থা কার্যকরভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি ব্যাংকের অর্থের গুণগত মান ঠিক রাখা এবং এর ধারাবাহিকতা ঠিক রাখা।
ঝুঁকিমূলক পুঁজির সুরক্ষা এবং স্বল্পমেয়াদি তহবিলের ওপর ব্যাংক গুলোর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনাও ব্যাসেল-৩ এর কাজ করার উদ্দেশ্যে।
যে কোনো ব্যাংকের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে কী পরিমাণ মূলধন দরকার হবে তা পিলার-১ এর আওতায় ঠিক করা হবে।
অতঃপর চিহ্নিত ঝুঁকি মোকাবেলা করতে ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণ ঠিক ভাবে হয়েছে কিনা সেটা পিলার-২ এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঠিক করবে এবং পিলার-৩ এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো তাদের ঝুঁকি মোকাবেলা করতে মূলধনের ভিত্তি বাড়ানোর সাথে সাথে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো জনগণকে জানানোর জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সুপার নিউমারারি অধ্যাপক ও পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমদ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, যে কোন ব্যাংক ভালো নাকি খারাপ সেটা জানা যায় কিছু সূচক থেকে এবং ব্যাসেল-১, ব্যাসেল-২ ও ব্যাসেল-৩ আন্তর্জাতিকভাবে গৃহীত নীতিমালার সমষ্টি। কোনো ব্যাংক ও আমানতকারীর স্বার্থে এগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কেট ডিসিপ্লিনের যে নীতিমালা করছে সেটা বাস্তবায়ন হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বাড়বে কারণ, এই নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ব্যাংক গুলোর প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
একটি ব্যাংকের ঋণ খেলাপি, পরিচালন মুনাফার পরিমাণ, প্রভিশন পরিস্থিতি, মূলধন পরিস্থিতি, সরকারকে দেওয়া রাজস্বের পরিমাণসহ আরও কিছু সূচক সাধারণ মানুষ সহজেই জানতে পারবে এই নীতিমালা অনুযায়ী। তিনি আরও বলেন, ব্যাসেল-৩ এর পিলার-৩ উন্নত করতে হলে ব্যাংকের পর্ষদ ও ম্যানেজমেন্টে সঠিক ভাবে শাসন জরুরি এবং এর আর কোনও বিকল্প নেই।
এই নীতিমালা অনুযায়ী ২০১৯ সালের মধ্যে ক্রমান্বয়ে বর্তমানের অতিরিক্ত ২ দশমিক ৫০ শতাংশ বাড়তি মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে ১১ দশমিক ৮৭৫ এবং ২০১৯ সালে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে।
ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের সময়সীমা একবছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের জানুয়ারি করা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক সার্কুলারে এবং ব্যাংক কর্মকর্তাদের ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দক্ষতা বাড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সাথে আরও নির্দেশ দিয়েছেন ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে ব্যাসেল-৩ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার জন্য।
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ব্যাসেল-৩ -এ আমানত কারীদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে এবং তাদের অর্থের সুরক্ষা ও ব্যাংকের বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত করতে ব্যাসেল-৩ এর মাধ্যমে প্রয়োজনীয় মূলধনের থেকেও অতিরিক্ত মূলধন সংরক্ষণের করতে বলা হয়েছে।
মূলধন ভিত্তিসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য আমানতকারীসহ স্টেকহোল্ডারদের জানানোও ব্যাসেল-৩ এর অন্যতম কাজ। তাই বলা যায় বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত নীতিমালা করলে তার মাধ্যমে ব্যাংকে অর্থ জমা করলে আপনার অর্থ কতটা সুরক্ষিত থাকবে সেই ধারণা পেতে আপনাদের কোন অসুবিধা হবে না।