আব্রাহাম লিংকন: একজন কালজয়ী ব্যক্তিত্বের গল্প জানুন

আব্রাহাম লিংকন ছিলেন আমেরিকার ১৬ তম প্রেসিডেন্ট। ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি এই পদে দায়িত্বরত ছিলেন। দাস প্রথার বিলোপে তাঁর ভূমিকা ছিল অভূতপূর্ব। আজকের লেখাটি জগদ্বিখ্যাত এই মানুষটি সম্পর্কে।

আব্রাহাম লিংকন: একজন কালজয়ী ব্যক্তিত্বের গল্প জানুন
আব্রাহাম লিংকন: একজন কালজয়ী ব্যক্তিত্বের গল্প জানুন

পৃথিবীকে আলোকিত করা মানুষের মধ্যে অন্যতম হলেন আব্রাহাম লিংকন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম করা এই মানুষটির হাত ধরেই আমেরিকা থেকে দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছিল।


সততা, কর্মনিষ্ঠা আর সাহস ছিল তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংকটের সময় তিনি আমেরিকাকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।


আব্রাহাম লিংকন ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার কোনটাকি প্রদেশের একটি ছোট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা টমাস লিংকন এবং মা ন্যান্সি হ্যাঙ্কস লিংকনের দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন তিনি।


তাঁর বাবা ছুতার কাজ করতেন। ছোটবেলা থেকে তিনি অনেক দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়েছেন৷ তাঁর মা মারা যাওয়ার পরে ১৮১৯ সালে তাঁর বাবা সারা বুশ নামের একজন বিধবা মহিলাকে বিবাহ করেছিলেন।


আব্রাহাম লিংকন তাঁর সৎ মাকে 'মা' বলেই ডাকতেন এবং সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ ছিল। সারা বুশের ভাষ্যমতে আব্রাহাম শারীরিক শ্রম উপভোগ করতেন না, তবে পড়াশোনার প্রতি তাঁর ব্যাপক আগ্রহ ছিল।


আব্রাহাম লিংকন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বশিক্ষিত ছিলেন। তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার সময়কাল ছিল এক বছরেরও কম।


কিন্তু পড়ালেখার প্রতি তাঁর আগ্রহ আজীবন বজায় ছিল। কৈশোর বয়সেই লিংকন পরিবারের কাজকর্মের দায়িত্ব নিয়েছিলেন।


১৮৩০ সালে তাঁরা ইলিনয়ের দিকে যান এবং সেখানে আব্রাহাম ছয় বছরের জন্য বাড়ি তৈরি করেন। লিংকন লুইজিয়ানায় ব্যবসা করতে গিয়ে প্রথম দাস প্রথার মুখোমুখি হন।


আব্রাহাম লিংকনকে ব্যবসায়িক কাজে প্রায়ই নিউ অর্লিয়েন্স বন্দরে যেতে হতো। সেখানে ব্যবসায় অনেক লাভ করায় মালিক তাঁকে ম্যানেজার পদে নিযুক্ত করেন।


সেখানেই কাজের ফাঁকে তিনি প্রচুর বই পড়েন। রাজনীতির প্রতি আগ্রহ এখান থেকেই তৈরী হয়। আব্রাহাম লিংকন একসময় আইন শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৮৩৬ সালে তিনি আইন পাশ করেন এবং সততার সাথে আইনজীবী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।


কিন্তু খুব বেশি দিন তিনি এ পেশায় নিযুক্ত থাকতে পারেননি। রাজনীতির প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েন তিনি। ১৮৩৪ সালে প্রথম আব্রাহাম লিংকন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে ইলিনয়ে যান।


কিন্তু তখনও তিনি ততটা পরিচিত ছিলেন না। ১৮৪৬ সালে তিনি নির্বাচনে জিতেছিলেন এবং ইলিনয় প্রতিনিধি দলের একমাত্র হুইগ ছিলেন।


হুইগ পার্টির নেতা হিসেবে তিনি প্রায় ৮ বছর রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে নিযুক্ত ছিলেন। আইনজীবী হিসেবে পুনরায় কাজ শুরু করার পূর্বে তিনি ২ বছর কংগ্রেসে কাজ করেন।


ডেমোক্র্যাটরা প্রেইরি অঞ্চলে দাস প্রথা চালু করলে তিনি পুনরায় ১৮৫৪ সালে রাজনীতিতে আসেন। এসময় তিনি নিউ রিপাবলিকান দলের নেতা হন।


১৮৬০ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হন এবং জয়লাভ করেন। তিনি আমেরিকান কনফেডারেশন রক্ষার জন্য স্বেচ্ছাসেবী ও মিলিশিয়া গঠন করে বিদ্রোহীদের দমনে কাজ করেন।


রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আব্রাহাম লিংকন দাস প্রথার নিকৃষ্টতা খেয়াল করেন এবং তা বিলুপ্তির জন্য কাজ করেন।


১৮৬৩ সালের ১ জানুয়ারি তিনি আইন করে দাস প্রথা বন্ধ করেন। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার লোকেরা এই আইন মেনে নিতে পারেননি।


ফলে তারা আমেরিকাকে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা পরবর্তীতে গৃহযুদ্ধের সূচনা করে। ১৮৬৩ সালের ১-৩ জুলাই পেনসিলভানিয়ার গেটিসবার্গে গৃহযুদ্ধে প্রায় ৮ হাজার মানুষ নিহত হয়।


১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর আব্রাহাম লিংকন গেটিসবার্গে এক স্মরণসভায় তাঁর সেই দুনিয়া কাঁপানো ভাষণটি দেন।


মাত্র ২৭২ শব্দের ও ২ মিনিটের এই এই ভাষণটিই পৃথিবীব্যাপী গেটিসবার্গ স্পিচ নামে পরিচিত। পৃথিবীবিখ্যাত এই ভাষণটির তুলনা এখনো পাওয়া মুশকিল। এই ভাষণেই তিনি বলেন, "Democracy is a form of government of the people, for the people and by the people."


আব্রাহাম লিংকন আমেরিকার উন্নতিতে নিরলসভাবে কাজ করে যান। তিনি ইউনিয়ন সংরক্ষণ, ফেডারেল সরকারকে শক্তিশালী করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আধুনিকায়নে সফলতার সাথে কাজ করেন।


এই মানুষটিই ১৮৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল উইকস বোথ নামের একজন রাজনৈতিক কর্মী দ্বারা গুলিবিদ্ধ হন। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন।


আব্রাহাম লিংকন তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মানবতার কল্যাণে। মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় এবং মানুষে মানুষে সাম্য প্রতিষ্ঠায় তিনি জীবনভর কাজ করেছেন।


গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রাণ পর্যন্ত হারান। তাই আব্রাহাম লিংকন যুগ যুগ ধরে বেঁচে আছেন এবং থাকবেন মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে।


আরও পড়ুনঃ অ্যামেরিকার কালজয়ী প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের একাল সেকাল এর গল্প