আমাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নতুন রোজগারের পথ, জানুন এর জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় ?
আজ আমরা জানবো কিভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে অ্যামাজন থেকে আয় করা যায় ঘরে বসেই। আরো জানবো কিভাবে আবেদন করতে হয় অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য অ্যামাজন বর্তমানে সবথেকে জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান। এর কারণ হচ্ছে অ্যামাজন বর্তমানে বিশ্বব্যাপী সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। লাখ লাখ পণ্যের ভান্ডার রয়েছে অ্যামাজনে। সারা বিশ্বব্যাপী পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে অ্যামাজন বছরে আয় করছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। এই অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আপনাকেও দিচ্ছে আয় করার সুযোগ।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি?
অ্যামাজন থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে কিভাবে আয় করা যায় তা জানার পূর্বে চলুন জেনে নেই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে কী বোঝায়। বস্তুত তথ্য প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে এখন আর আমাদের শপিং করার জন্য বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা কিনে ফেলতে পারি আমাদের পছন্দের সামগ্রী। পণ্যটি আবার হোম ডেলিভারির মাধ্যমে চলে আসে আমাদের ঘরে।
যখন আমরা কোনো একটি পণ্য কেনার জন্য ইন্টারনেটে সার্চ করি তখন দেখি যে ওই পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিভিন্ন তথ্য দেওয়া থাকে। যেখান থেকে আমরা পণ্যটি সম্পর্কে জানতে পারি এবং পণ্যটি ক্রয় করার জন্য লিঙ্ক পেয়ে থাকি। একটু সচেতন ভাবে দেখলেই বোঝা যায় যে যে ওয়েব সাইটটি থেকে আমরা পণ্যটি সম্পর্কে জানতে পারি সেটি কিন্তু পণ্য বিক্রয় কারী প্রতিষ্ঠান নয়। বস্তুত হামেশাই আমরা বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্লগ সাইট ইউটিউব ভিডিও অথবা সোশ্যাল মিডিয়ার লিঙ্ক থেকে একটি পণ্য ক্রয় করি। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং।
যারা অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকেন তাদের কে বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার। অর্থাৎ তারা একটি ওয়েবসাইট অথবা ব্লগ অথবা ইউটিউব ভিডিও কিংবা ফেসবুক পেজ তৈরি করে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের হয়ে তাদের পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে থাকে। অতঃপর সবশেষে একটি লিংক প্রদান করে থাকে যেখান থেকে আমরা ঐ প্রতিস্থানে গিয়ে পণ্যটি কিনতে পারব। কোন গ্রাহক যখন ওই লিংকে ক্লিক করে কোনো পণ্য ক্রয় করে তখন তার কমিশন হিসেবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারগণ অর্থ পেয়ে থাকেন।
প্যাসিভ ইনকাম বলতে কী বোঝায়?
যারা অনলাইন কাজের সাথে যুক্ত তারা প্যাসিভ ইনকাম শব্দটি শুনে থাকবেন। মূলত অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করা হয় তা এক ধরনের প্যাসিভ ইনকাম। মনে করুন আপনি একটি অফিসে কর্মরত রয়েছেন এবং মাস শেষে সেখান থেকে স্যালারি পান। অথবা আপনি কোন তিন-চার ঘণ্টা কাজের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন। এ ধরনের ইনকাম কে বলা হয় একটিভ ইনকাম।
অপরদিকে আপনি একটি বাড়ি বানিয়েছেন এবং সেখানে পাঁচজন ভাড়াটে রেখেছেন। এখন কিন্তু আপনি প্রতিমাসে সেখান থেকে আয় করতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে তেমন কিছু করতে হবে না। মূলত একেই বলা হয় প্যাসিভ ইনকাম। প্যাসিভ ইনকাম এর জন্য প্রথমে আপনাকে ইনকামের সোর্স টি তৈরি করতে হয়। ইনকাম সোর্স তৈরি করার জন্য আপনার মেধা এবং শ্রম এর প্রয়োজন হয়। কিন্তু ইনকাম সোর্স তৈরি হয়ে গেলে আপনার পরবর্তীতে তেমন কোন কাজ করতে হয় না। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ও ঠিক একই রকম ভাবে আপনাকে প্যাসিভ ইনকাম এর মাধ্যমে আয় করতে সাহায্য করে।
এখানে আপনি একটি সাইট তৈরী করে পণ্যের বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকবেন। পরবর্তীতে যখনই কোনো ক্রেতা সেই বিজ্ঞাপন থেকে লিংকে গিয়ে পণ্যটি ক্রয় করবে তার থেকে আপনি অর্থ উপার্জন করবেন। বিশ্ব বিখ্যাত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের আমাজন ব্যক্তিকে এইরূপ অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সুযোগ দিয়ে থাকে। ১৯৯৪ সালে যাত্রা শুরু করা অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজস বর্তমানে ধনীদের তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠানের আমাজন প্রতিদিন প্রায় দুই কোটির অধিক পণ্য বিক্রি করে থাকে। ফলে এখান থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে প্যাসিভ ইনকাম করা অত্যন্ত সহজ।
আমাজন এর মাধ্যমে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য সারা বিশ্বব্যাপী অ্যামাজন কে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। কারণ এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এতে রয়েছে লক্ষ লক্ষ পণ্য চালু রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। সারা বিশ্বব্যাপী অ্যামাজন ব্যবহার করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার গণনায় করে থাকেন হাজার হাজার ডলার। মূলত অ্যামাজন সারাবিশ্বের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য তার দুয়ার রেখেছে উন্মুক্ত।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কিভাবে অ্যামাজন থেকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। আপনি অ্যামাজন থেকে বিভিন্ন উপায়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন। এটি হতে পারে ওয়েবসাইট বা ব্লগ সাইটের মাধ্যমে, ভিডিও তৈরি করে অথবা সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমগুলোতে। তবে ওয়েবসাইট তৈরি করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সবচেয়ে ভালো এবং নিরাপদ।
এক্ষেত্রে আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে প্রথমেই একটি নিশ ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। নিশ ওয়েবসাইট হল কোন একটি নির্দিষ্ট পণ্যের জন্য ওয়েবসাইট। মনে করুন আপনি অ্যামাজন থেকে বাইসাইকেল বিক্রি করতে চান। এক্ষেত্রে আপনাকে বাইসাইকেলের ওপর একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। এই ওয়েবসাইটটি হল নিশ ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটটি তৈরি করার জন্য আপনাকে একটি ডোমেইন নেইম ক্রয় করতে হবে।
এরপর সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন ফ্রেন্ডলি করার জন্য আপনাকে কিওশার্ড রিসার্চ করতে হবে। এর মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার ওয়েবসাইট কে জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারবেন। মনে রাখবেন আপনার মূল কাজটি হচ্ছে অ্যামাজনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করা। আর আপনি আপনার ওয়েবসাইটটি দ্বারা সেই কাজটি করে থাকবেন।
কিভাবে আবেদন করবেন?
অ্যামাজনের দারুণ জনপ্রিয় তার মূলে রয়েছে এটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের জন্য দারুন সুযোগ। মূলত আপনি অ্যামাজনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। বিভিন্ন দামের পণ্যের জন্য বিভিন্ন রকম কমিশন তারা দিয়ে থাকে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী পণ্য এবং কমিশনের ধরণ অনুযায়ী সিলেক্ট করবেন।
এরপর সেখানে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লিট করবেন। তবে মনে রাখবেন আপনি যখন আপনার ওয়েবসাইটটিতে পণ্যের লিংক দিবেন তখন অবশ্যই সেটি মূল ওয়েবসাইট থেকে সরাসরি কপি করবেন না। লিংকটি দেওয়ার জন্য আপনি অবশ্যই পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করবেন। ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো তুলে ধরবেন। সুন্দর ছবি আপলোড করবেন। এরপর লিংকটি দিবেন। এতে করে সহজেই আপনার ওয়েবসাইটটি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। যত বেশি ক্রেতা আপনার প্রদত্ত লিঙ্ক থেকে পণ্যটি ক্রয় করবে আপনি ততবেশি কমিশন পাবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের জন্য অ্যামাজন সবথেকে বড় প্ল্যাটফর্ম। এটি অত্যন্ত ফ্লেক্সিবল এবং এটি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটারদের কে দারুন সব সুবিধা দিয়ে থাকে। আপনি কেমন দামের পণ্যটি বিক্রয় করে দিচ্ছেন তার উপর ভিত্তি করে আপনার কমিশনের মাত্রাটি নির্ধারণ হয়। ফলে আপনি খুব অল্পসময়ের মধ্যেই অনেক বেশি টাকা রোজগার করে ফেলতে পারবেন অ্যামাজন থেকে।