আমাদের হারিয়ে যাওয়া রঙিন শৈশব - স্মৃতিকথা

আমদের শৈশবের কিছু মনে করার মতো কিছু দিন, কিছু ঘটনা যা মনে থাকবে আজীবন। সেই হারিয়ে যাওয়া শৈশব নিয়ে আজকের এই স্মৃতিকথা।

আমাদের হারিয়ে যাওয়া রঙিন শৈশব - স্মৃতিকথা
আমাদের হারিয়ে যাওয়া রঙিন শৈশব - স্মৃতিকথা

সময়টা ছিল ২০০৬-২০১৩ এর মধ্যে হাতগুলো জামার মধ্যে ঢুকিয়ে নিয়ে বলতাম, আমার হাত নেই। দরজার পেছনে লুকিয়ে থাকতাম কেউ এলে চমকে দেবো বলে। কিন্তু সেই লুকিয়ে এসে উল্টো আমাদের চমকে দিতো।


ভাবতাম আমি যেখানে যাচ্ছি, চাঁদটাও আমার সঙ্গে সঙ্গে যাচ্ছে। তখন আমাদের শুধু একটা জিনিসের খেয়াল
রাখার দায়িত্ব ছিলো, স্কুলে যাওয়ার পর বই-খাতা।


ক্লাসে বসে কলম দিয়ে টোকা টুকি খেলা, খাতায় লিখে ক্রিকেট, ফুটবল, চোর-ডাকাত-বাবু-পুলিশ খেলতাম। স্কুল ছুটির পর আম্মুর কাছে বায়না করতাম দোকান থেকে খাওয়ার কিছু কিনে দেওয়ার জন্য। কিছু খেতে খেতে বাড়িতে চলে আসতাম।


বিকেলে বেরিয়ে যেতাম খেলার জন্য, একজন একজন করে পাড়ার সব বন্ধুদের ডেকে আনতাম মাঠে সবাই মিলে বিভিন্ন কিছু (যেমন:কুতকুত, সাত চেরা, কানামাছি, গোল্লাছুট, বরফ পানি, ফুটবল, ক্রিকেট) খেলতাম, খেলার মাঝে ২/১ জন ছিল ভাইরাসের মতো, খেলা নষ্ট না করলে যেন তাদের পেটের ভাত হজম হত না।


এছাড়া অনেক মজাও ছিল খেলাতে, যখন কেও খেলায় হেরে যেতো তখন সবাই মিলে তাকে খেপাতাম হাসি ঠাট্টা করতাম।


মাঝে মাঝে খেলার সময় প্রাইভেট থাকত তখন মনটা খারাপ থাকতো তারাতাড়ি প্রাইভেট শেষ করতে চাইতাম। খেলা শেষ করে সন্ধ্যার আগেই সবাই নিজের নিজের বাসায় চলে যেতাম, আবার সন্ধ্যা হতে না হতেই বই হাতে নিয়ে পড়তে বসতাম।


ছোট সময় অন্যের গাছ থেকে কোনো ফল চুরি করে খাওয়ার মজাই ছিল অন্যরকম। কারো গাছের আম, কারো গাছের কাঠাল, পেয়ারা, বড়ই পেড়ে খেতে যেন আরেক মজা।মাঝে মাঝে লোকজন লাঠি নিয়ে দৌড়ানী দিত, পালিয়ে চলে আসতাম।


ফলের দানা বীজ খেয়ে ফেললে দুশ্চিন্তা করতাম পেটের মধ্যে এবার গাছ হবে, তারপর সবাইকে ডেকে ডেকে কান্না করতাম আর বলতাম যে পেটের ভিতর গাছ যেন না হয়।


বছরের এক সময় আসত ঈদ। আর ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদের আগের দিন রাতে সবাই মিলে বসতাম মেহেদী দিতে, হোক সে ছেলে অথবা মেয়ে মেহেদী সকলেই দিতাম, তারপর তারাতাড়ি ঘুমিয়ে যেতাম সকালে আগে আগে উঠার জন্য।


সকালে উঠে দেখতাম দেরি হয়ে গেছে, তাড়াতাড়ি মাকে বলতাম গোসল করিয়ে দিতে, তারপর নতুন পাজামা, পাঞ্জাবী পড়ে যেই না নামাযে যাওয়ার জন্য বেরতাম তখনি দেখতাম নামায শেষ করে বাবা চলে আসছে,
মনটা একটু খারাপ হয়ে যেত কিন্তু বাবা এসে বলত যে, বাবার সাথে কোলাকুলি করলে নাকি আমারও নামাজ পড়া হয়ে যাবে, তখন আবার একটু খুশি হতাম।


তারপর সবার থেকে সালামী তুলতাম, ভাবতাম টাকা গুলো দিয়ে একদিন অনেক কিছু কিনবো, কিন্তু রাতেই টাকা গুলো মায়ের কাছে জমা দিয়ে দিতাম।


ঈদের দিন দেখতাম সব বড়রা মিলে ঘুরতে যেত তখন মনে হতো কবে যে বড় হবো আর এইভাবে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবো, ধৈর্য্য সহ্য হতো না যে কবে বড় হবো!


আর এখন মনে করি, কেন যে বড় হলাম, আবার ছোট হয়ে যেতে ইচ্ছা করে, কিন্তু তার আর উপায় নেই। খুব মিস করি দিনগুলো।


ফাইনাল পরীক্ষা যেহেতু শেষ সেহেতু সকালে পড়া নাই, সন্ধ্যায়ও আর পড়তে বসতে হবে না। এত মজা কই রাখি?


নানু বাড়ি, দাদু বাড়ি যাওয়ার এই তো সময় ব্যাডমিন্টন, ক্যারাম, সাপ লুডু না খেললে কি হয়! প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই বাড়ির ভিতর আগুন ছোট করে আগুন ধরাতাম কারন শীতের দিনে আগুনে হাত তাপানোর মজাই আলাদা ছিল।


এভাবেই কেটে যেত সময় তবে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ যত আগাইয়া আসত মনের মধ্যে ভয় তত বাড়ত। ওইদিন যে ফাইনালের রেজাল্ট দিবে।


রেজাল্টের পর ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হতো নতুন ক্লাস, সবাইকে নতুন বই দিত। (নতুন বইয়ের ঘ্রাণ টা সত্যিই অসাধারণ ছিল)।


আবার সেই পড়া, একিভাবেই চলে যেতো আরেক বছর সব কিছুর মধ্য দিয়েই বড় হয়ে উঠলাম। আস্তে আস্তে শৈশব টা হারিয়ে গেলো।


একটু একটু করে বুঝতে শিখলাম জীবনটাকে।এখন মনে হয় যে ছোট সময় জীবনটা রঙিন ছিল! আর এখন ছোট ছেলে মেয়েদের দেখি তারা তাদের শৈশব পার করে দেয় মোবাইল ফোন, টিভি ইত্যাদির মাধ্যমে
তারা বোধহয় জানেনা শৈশব এর মজা, তারা আসক্ত হয়ে গেছে প্রযুক্তির উপর।


যাইহোক, সত্যিই আমাদের শৈশবটা মধুর মতো ছিল!


আরও পড়ুনঃ প্রাইড এন্ড প্রেজুডিসঃ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের নিয়ে জেন অস্টিনের মাস্টারপিস উপন্যাস