আয়নার সম্পর্কে আশ্চর্যজনক কিছু মজাদার তথ্য
আয়না সম্পর্কে এক রহস্য রহস্য ভাব থেকেই যায়। তবে আয়নার কিছু মজাদার তথ্যও আছে। প্রাচীনকালে ধাতব আয়না থেকে কাচের আয়না। আয়না কিন্তু মানুষের প্রয়োজনীয় এক জিনিস। তবে আজও আয়না নিয়ে কুসংস্কার বিরাজমান।

আয়না আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটা জিনিস, তাকে ছাড়া যেন চলেই না। সারাদিনে মানুষ ঘরে থাকলে কতবার আয়নাতে নিজেকে দেখেন সেটা কিন্তু গুনে শেষ করা যাবে না, যেখানেই আয়না চোখে পড়ুক না কেন নিজেকে আয়নাতে একবার হলেও এক ঝলক দেখে নেওয়ার চেষ্টা করেন সবাই।
আয়নাতে মুখ দেখেই আমাদের দিন শুরু হয়। তবে আয়নার উৎপত্তি আজকাল নয়, অনেক প্রাচীন, প্রায় ২ হাজার বছর পুরনো। তখন হয়তো কাচের আয়না ছিল না, তবে চকচকে ধাতু এবং স্থির পরিষ্কার জলের উপর মানুষ নিজের প্রতিবিম্ব দেখতো।
তবে অষ্টাদশ শতকে জাস্টিন ভন লাইবিক ১৮৩৫ সালে স্বচ্ছ কাঁচের একপাশে টিন ও পারদ এর এক ধরনের প্রলেপ দেওয়ার পন্থা আবিস্কার করেন। অনেক আগে আয়না শুধুমাত্র অভি যাতদের ছিল, এবং আয়না থাকা মানে বিলাসবহুল জীবনযাপন করা।
তবে এই কাচের আয়না যবে থেকে চালু হয়েছে তা সকলের হাতের নাগালে আসতে শুরু করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে আরো বড় হতে থাকে এই কাচের আয়নার প্রচলন।
এমনকি বাণিজ্যিকভাবেও চলতে থাকে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আয়না তৈরি। ধীরে ধীরে আধুনিক কাচের আয়না এখন বাজারে অনেক পাওয়া যায়। তার আভাস তো আমরা পেয়েছি।
মজার বিষয় হলো, পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন আয়না সেটি পাওয়া যায় আনাতোলিয়ার ধ্বংসাবশেষ থেকে। এই জায়গাটি বর্তমানে তুরস্কে অবস্থিত। মিশর, মেসোপটেমিয়ার পর চীন দেশের আদি আয়নার উৎপত্তির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।
আয়না এমন এক জিনিস যা চিরকালই মানুষকে কৌতুহলী করে তুলেছে। আর তার উপর ভিত্তি করেই কিন্তু আয়নাকে নিয়ে রয়েছে নানান রকম রূপকথা, অভিশাপ, এবং কুসংস্কারের যত্তসব কাহিনী। তার সাথে আছে চমকপ্রদ কিছু কথাও। আসুন তাহলে জানা যাক আয়না সম্পর্কে এমন কিছু চমকপ্রদ তথ্য -
৪ টি এমন প্রশ্ন যেগুলো করলে মেয়েদের সহজেই ইম্প্রেস করতে পারবেন
১) প্রাচীন রোমে এমন এক বিশ্বাস প্রচলন ছিল যে, আপনি যদি ঘরের কোন পুরনো আয়না কোন কারণে ভেঙে ফেলেন তাহলে আগামী ৭ বছর ধরে আপনার দুর্ভাগ্য কাটবে না।
২) রোমানরা বিশ্বাস করতেন যে, পুরনো আয়নাকে ভেঙে ফেললে নিজের মধ্যে থাকা ভালো সত্তাটাকে ও পবিত্র আত্মা টাকে নষ্ট করে ফেলা। এটাকে তারা অমঙ্গল হিসেবেই মনে করতেন।
৩) অন্যদিকে গ্রিক দেবতা জিউসের অনুসারীরা বাড়িতে কারও মৃত্যু হলে বাড়ির সমস্ত আয়নাকে ঢেকে রাখতেন। তাদের বিশ্বাস ছিল, মৃতদেহ থেকে পবিত্র আত্মা কে আয়না বন্দি করে রাখতে পারে, সেই ক্ষমতা আয়নার আছে। আর কোন রকম ভাবে যদি কোন মৃত ব্যক্তির আত্মা এই আয়নায় বন্দি হয়ে যায়, তাহলে আর কোনদিন ওই আত্মা পরলোকে যেতে পারবেনা।
৪) আয়না শুধুমাত্র ছবি অথবা আপনার প্রতিবিম্ব দেখায়না, শব্দও প্রতিপালন করতে পারে। এই ধরনের আয়না গুলিকে বলা হয় "একুইস্টিক মিরর"। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে এই আয়না গুলি শত্রুপক্ষের বিমানের শব্দ তরঙ্গের নির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত হতো।
৫) আপনি কি জানেন! আয়না আপনাকে নিয়ে যেতে পারে হ্যালুসিনেশন এর দুনিয়ায়। তবে কিভাবে? নিজে নিজেই এই পরীক্ষাটি করতে পারেন, একটা অন্ধকার ঘরে বড় আয়নার সামনে আপনি দাঁড়ান।
শুধুমাত্র হাতে একটা মোমবাতি এমন ভাবে ধরে রাখুন যাতে আপনার মুখের উপর পর্যাপ্ত পরিমাণ আলো পড়তে পারে। এবার আয়না থেকে এক মিটার ব্যবধানে দাঁড়ান। তারপর একটানা দশ মিনিট নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকুন। নিজেকে ছাড়া আর কিছুই দেখতে পাবেন না আপনি।
৬) আয়না এমন এক জিনিস যেখানে নিজেকে দেখা যায়, অথবা আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেকে চিনতে পারা টা স্বাভাবিক বিষয় তাই না, তবে এই বিষয়টা অনেকের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মানেটা হল অনেকেই আয়নায় নিজেকে দেখে চিনতে পারে না।
ছোট বাচ্চাদের কথাই ধরুন না, তারা দু বছর পর্যন্ত বুঝতেই পারেনা আয়নায় কাকে দেখছে! এমনকি সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন অনেক ভিডিও দেখে থাকবেন যে, আয়নাতে বাচ্চারা কি রকম আচরণ করে, এরকম হাস্যকর ও দেখতে লাগে ভীষণ কিউট।
৭) পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানীরা আয়নাতে নিজেকে চিনতে পারার পরীক্ষাটা চালিয়েছিলেন পশু-পাখিদের উপর। আর সেই পরীক্ষাতেই প্রথমবারেই ফেল হয়ে যায় গরিলা। তবে অনেকেই আবার এই পরীক্ষায় পাশ করেছে, শিম্পাঞ্জি, বেবুন, কয়েক প্রকারের পাখি এবং ডলফিন।
আয়না নিয়ে যতই কুসংস্কার থাকুক না কেন, নিত্যদিনের প্রয়োজনে আয়না কিন্তু এক বিশেষ দরকারি জিনিস। আমাদের জীবনে তাই প্রাচীনকাল থেকে এই সব কুসংস্কার চলে আসলেও এখনো এই উন্নত সমাজে কোথাও না কোথাও হালকা কুসংস্কারও রয়ে গেছে।
আয়না ভেঙে গেলে, ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা যায় না, ঘরে না রেখে ফেলে দেওয়া, এমন তো এখনো চলে, হয়তো ভবিষ্যতেও চলবে। আয়না সম্পর্কে অনেক রহস্য আছে, যা রূপকথা হিসেবে বাচ্চা থেকে বুড়ো সকলেই উৎসাহের সাথে শুনতে পছন্দ করেন।