ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার – ২৬ বছরের পথচলার ইতি

আর মাত্র কয়েকটা দিন। বিদায় নিতে চলেছে একসময়ের জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (Internet Explorer)। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে এই ব্রাউজারটি। শেষ হতে চলেছে একটি অধ্যায়, ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে পথচলা।

ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার – ২৬ বছরের পথচলার ইতি
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার – ২৬ বছরের পথচলার ইতি


আর মাত্র কয়েকটা দিন। বিদায় নিতে চলেছে একসময়ের জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার (
Internet Explorer)। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে এই ব্রাউজারটি। শেষ হতে চলেছে একটি অধ্যায়, ২৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে পথচলা।


সালটা ১৯৯৩। ইন্টারনেটের তখন বয়েস বড়জোর এক দশক। সেই সময় ইন্টারনেটের ব্যবহার কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও কম্পউটার বিশেষজ্ঞরা ছাড়া তেমন কেউ কিছু জানতেন না।


সেই সময়ই কম্পিউটার বিজ্ঞানী টিম বার্নার্স লি উদ্ভাবন করলেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা
www। সমকালীন সময়েই মার্ক অ্যান্ড্রেসেন ও এরিক বিনা বিশ্বের প্রথম গ্রাফিকাল ব্রাউজার মোজাইক তৈরি করলেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই গোটা পৃথিবী জুড়ে ইন্টারনেট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে গেল।


কম্পিউটার যারা ব্যাবহার করেন তারা সকলেই মাইক্রোসফট আর বিল গেট্‌স নাম দু’টির সাথে খুব ভালভাবে পরিচিত। ১৯৭৫ সালের ৪ এপ্রিল মাইক্রোসফট এর জন্ম দুই বাল্যবন্ধু বিল গেট্‌স এবং পল জি এলেনের হাত ধরে।


মাইক্রোসফটনামটি রাখা হয়েছিল যথাক্রমে মাইক্রো কম্পিউটারসফটওয়্যারএই দুটির সমন্বয়ে। মাইক্রোসফট প্রায় ৯০% এরও বেশি কম্পিউটারের বাজার দখল করতে সক্ষম হয়েছে।


কিন্তু একটি অদ্ভুত বিষয় লক্ষ কার যায়। কম্পিউটিংয়ের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেও, তৎকালীন ইন্টারনেটের ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া বা ইন্টারনেটের উপযোগিতার বিষয়টি নিয়ে তার উদাসিন ছিলেন।


পরবর্তীতে বিল গেটসের প্রধান সহকারী স্টিভ বলমারের কাছে গ্রাহকদের কাছে থেকে এই বিষয়ে নানান অভিযোগ আসতে থাকে। এরই মধ্যে মার্ক অ্যান্ড্রেসেন ও তাঁর সহকর্মীরা
নেটস্কেপনামে একটি নতুন ব্রাউজার তৈরি করে সেটিকে ‘নেটস্কেপ নেভিগেটর’ নামে সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন।


ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তখন গণ মাধ্যম এবং পপ সংস্কৃতির দুনিয়ায় হু হু করে জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। নেটস্কেপ নেভিগেটর মুহূর্তের মধ্যেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল এবং জনপ্রিয়তা লাভ করল।


নেটস্কেপের সফলতা মাইক্রোসফটের চোখ খুলে দিল। নতুন একটি ব্রাউজার তৈরি করে নেটস্কেপকে বাজার থেকে সরাতে একপ্রকার যুদ্ধই ঘোষণা করলেন বিল গেটস ও তার মাইক্রোসফট।

স্যামসাং কোম্পানীর ইতিহাসঃ উন্নয়ন, অগ্রগতি ও আওতা

গুগলের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ কিছু না জানা তথ্য

ইন্টারনেটের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ বিশ্ব বদলানো আবিষ্কার

ফেসবুকের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ বৃহৎ সামাজিক পরিবর্তন

কম্পিউটারের আবিষ্কার ও ইতিহাসঃ এক ক্রান্তিকারী আবিষ্কার


এভাবেই একদিন উত্থান হয়েছিল
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’ (আই ই)-র। এতদিন ব্রাউজার কিনে ব্যবহার করতে হত। নেটস্কেপের সঙ্গে পাল্লা দিতে উইন্ডোজের সঙ্গে এই ব্রাউজারটিকে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল বিনামূল্যে। বলা বাহুল্য মাইক্রোসফটের পরিকল্পনা সেদিন সফল হয়েছিল।


১৯৯৫ সালে
মোজাইক’-এর লাইসেন্স নিয়ে বিল গেটসের মাইক্রোসফট বানিয়ে ফেলল বিশ্বের প্রথম ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। বিনামূল্যে ডাউনলোড ও ব্যবহার করতে পারবেন সকলে। সহজ কথায় বলতে গেলে সাধারণ মানুষকে ইন্টারনটের মায়াবী দুনিয়ায় প্রথম নিয়ে আসে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারই।


নেটস্কেপ নেভিগেটর-কে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিল দিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার এবং সেই সাথে তৈরি করল তার একক আধিপত্য। ২০০০ সাল নাগাদ প্রায় ৯৫
% বাজার দখল করে নিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার। 'ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার’ -এই নামটি তখন একপ্রকার ইন্টারনেটের সমর্থক হয়ে উঠেছিল।


১৯৯৫ সালে উইন্ডোজ ৯৫ নাম নিয়ে তার আত্মপ্রকাশ। এরপর আর পিছনে ফিরে দেখতে হয়নি। তৎকালীন অন্যান্য দামী ব্রাউজারকে টেক্কা দিয়ে অফিস হোক কিংবা বাড়ি, সব কম্পিউটারই মাতিয়ে রেখেছিল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার।


১৯৯৭ সালে আবার এল ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে নতুন একটি ভার্সন। সান ফ্রান্সিসকোর অফিসের সামনে ১০ ফুট লম্বা একটি লোগো
‘e’ বানিয়ে সেদিন সকলে উৎসব পালন করেছিলেন।


আজও পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের মতে সেই লোগোটাই ছিল সেরা লোগো।
সাফল্যের পাশাপাশি এল ঔদ্ধত্য ও অবজ্ঞার মনোভাবও।


পিসি অপারেটিং সিস্টেম ও অফিস সফটওয়্যারের উপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের জন্য কম্পিউটার শিল্পের জগতে আর কি পরীক্ষা চলছে বা কি ধরনের পরিবর্তন ঘটছে তা নিয়ে মাইক্রোসফটের আর কোন উৎসাহ ছিল না।


নিজেদের আশাতীত সাফল্য তাদের একপ্রকার অন্ধ করে রেখেছিল বলা চলে। ইন্টারনেটের প্রথম যুগে যেমন তারা ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে কাজ করতে অনেক দেরী করেছিল তেমনি আবারও ভুল করল প্রতিষ্ঠানটি।


বর্তমানে সর্বাধিক জনপ্রিয় ক্লাউড কম্পিউটিং কিংবা আধুনিক মোবাইল প্রযুক্তির সাথে নিজেদের যুক্ত করতে অনেক দেরি করে ফেলল তারা।


বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কখনও থেমে থাকে না। নিত্যনতুন চাহিদার ভিড়ে প্রযুক্তিকে সমান তালে তাল মিলিয়ে চলতে হয় সবসময়। ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার তখন সাফল্যের চুড়ায়।


কিন্তু পাশাপাশি বিনামূল্যে বাজারে আসতে শুরু করল আরও অধিক সুবিধাসম্পন্ন কিছু ব্রাউজার। এদের মধ্যে ফায়ারফক্স
, গুগল ক্রোম, অপেরা অতি দ্রুততার সাথে প্রথম সারিতে উঠে এল।


ফল স্বরূপ ২০০৫ সালের পর থেকে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমতে শুরু করেছিল। ২০১৩ সালের একটি সমীক্ষায় জানা গেছে সম্প্রতি পৃথিবীর মাত্র ৩.৮
% মানুষ ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার করতেন। যেখানে গুগল ক্রোম ব্যবহারকারীর সংখ্যা পৌছেছিল ৭০%


বর্তমান যুগের জনপ্রিয় নতুন ব্রাউজারগুলোর সঙ্গে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের তুলনা করতে গেলে এখন ইন্টারনেট ব্রাউজারকে অনেক পুরোনো আর ক্লান্তই মনে হবে। প্রথম দিকে মজিলা ফাউন্ডেশনের তৈরি মোজিলা ফায়ার ফক্স ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারকে জোর ধাক্কা দেয়।


এখানে একটা কথা বলে রাখি, ধীরে ধীরে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরের ধ্বংস ডেকে আনল যে ফায়ার ফক্স, সেটি কিন্তু পুরোনো নেটস্কেপের ধ্বংসাবশেষ থেকেই তৈরি হওয়া একটি প্রতিষ্ঠান। নেটস্কেপ তার পুরানো অবিচারের প্রতিশোধ নিল অনেক বছর পরে হলেও!


প্রতিযোগীতায় টিকে থাকতে ২০১৫ সালে মাইক্রোসফট নিয়ে এসেছে তাদের নতুন ‘এজ ব্রাউজার
। আর নতুন কে জায়গা করে দিতে হলে পুরানোকে দূরে সরে যেতেই হবে। এটাই নিয়ম। কাজেই নতুন এই ব্রাউজারকে নিজের স্থান ছেড়ে দিতে সরে যাওয়াটা শুধু সময়ের অপেক্ষা।


আমরা যারা পুরানো দিনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, তাদের মনে হয়ত আরও কিছুদিন থেকে যাবে ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের নাম। নতুন এজ ব্রাউজার কতটা সেই জায়গা নিতে পারবে এই উত্তরের জন্য আরও কিছুদিন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।


আরও পড়ুনঃ বিশ্বসেরা ৪টি অ্যান্ড্রয়েড কাস্টম রমের তালিকা