ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি দুনিয়া নিয়ে আমাদের কিছু ভুল ধারণা
আপনারা কি জানেন আমরা প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট সম্বন্ধে কত ভুল ধারণা পোষণ করে থাকি? হয়তো জানেন না তবে আজ আপনাদের এমন কিছু বিষয় সম্বন্ধে জানাবো যেগুলো আমরা ভুল ভেবে থাকি।

আমরা মানবসমাজ বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল টেকনোলজির উপর এতটাই নির্ভরশীল যে, আমরা অনেক কিছুই এগুলো সম্বন্ধে ধারণা করতে পারি বা আন্দাজ করি। কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে এগুলো ঠিক হলেও, ভালোভাবে বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, সকল আন্দাজ বা ধারণাগুলো আসলে আমরা সঠিকভাবে করিনা।
এগুলোর মধ্যে অনেক ভুল বা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, যেগুলো আমাদের জানা জরুরী। আমরা হয়তো দুইটি আলাদা জিনিসকে এক ভাবি, বা একই রকম দুইটি আলাদা জিনিসকে এক ভাবি, কিন্তু আসলে যে সেটা সেরকম নয়, এটা বুঝতে আমাদের ভুল হয়।
আসলে এটা আমাদের একার দোষ নয়, সমাজের দোষ, অথবা প্রযুক্তিকে ভালোভাবে অনুধাবন না করার ফল এটা।
কিন্তু আমাদের উচিত এসব ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসা ও সঠিক তথ্য জেনে নেয়া। আর এই কারণেই, আমরা আজকে এখনকার সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়বস্তু সম্বন্ধেই আলোচনা করবো।
আমরা জানব, ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি সম্বন্ধে মানুষের কিছু ভুল ধারণা সম্বন্ধে। এগুলো জানার পর আপনাদের সবার এসকল ভুল ধারণা কেটে যাবে ও আপনারা এই সকল ক্ষেত্রে আরও ভেবে চিনতে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তো চলুন আর দেরি না করে, আমাদের মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
আরোও পড়ুনঃ অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসে কার্টুন ভিডিও বানিয়ে আয় করার জন্য সেরা এপ্লিকেশন
ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি বিষয়ে মানবসমাজের কিছু ভুল ধারণা -
১. একজন প্রোগ্রামার ও ফ্রিল্যান্সার কি একই?
আমরা সচরাচর এই ভুলটি করে থাকি। আমরা সবাই এই দুইটি পেশাকে একই ভেবে থাকি। অর্থাৎ যদি কেউ বলেন যে তিনি ফ্রিল্যান্সিং করেন, তাহলে আমরা ধরেই নেই যে তিনি একজন প্রোগ্রামারও। তবে বিষয়টি মোটেই এরকম নয়। আমরা সবাই, আসুন বিষয়টি খোলাসা করে নেই।
ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে, কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য লেখা, কোনো ছবি এডিট করা, মার্কেটিং করা, জরিপ করা ইত্যাদি। এই কাজটি প্রোগ্রামিংও হতে পারে, তবে সেক্ষেত্রে মূল কথা হলো, প্রোগ্রামিং হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর একটি অংশ মাত্র। আর ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে আয়ের সকল উৎসের নামকরণ।
প্রোগ্রামিং হতে পারে কোনো সফটওয়্যার এর জন্য, কোনো ব্লগ সাইটের ডিজাইনিং এর জন্য, বা অন্য যে কোনো কিছু। তবে এমনটা কখনই নয় যে, একজন ফ্রিল্যান্সার ও প্রোগ্রামার একই পেশার, বা তাদের কাজ এক। মনে রাখবেন, প্রোগামিং একটি মাত্র নির্দিষ্ট পেশা, যা ফ্রিল্যান্সিং এর অংশবিশেষ।
২. ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং এপ্লিকেশন ক্লিয়ার করলে কি ফোন ফাস্ট হয়? গরম কম হয়?
আমরা ৯০% শতাংশ মানু্ষ এর ধারণা, এমনকি আমারও এই ধারণা ছিলো যে, ব্যাকগ্রাউন্ডের এপ্লিকেশন ক্লিয়ার করলে ফোন ফাস্ট হয়, গরম কম হয় এবং র্যাম ফাঁকা হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার এই ধারণা সম্পূর্ন ভুল?
হয়তো শুনে আপনার চোখ কপালে উঠবে, কিন্তু আসলেই বিষয়টি সত্য। এখন আর ব্যাকগ্রাউন্ড এপ্লিকেশন ক্লিয়ার করলে র্যামের কোনো সুবিধা হয়না বা ফোনও ফাস্ট হয়না।
এর কারণ হচ্ছে, বর্তমানের সব স্মার্টফোনের সিপিইউ এবং র্যাম প্রযুক্তি এতটাই উন্নত যে, এগুলো মানুষের চেয়েও বেশি চালাকির সহিত অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম সম্পাদন করে। ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে যতই এপ্লিকেশন থাকুক না কেনো, ফোন এর র্যাম সেখানে নিয়মমতোই পাওয়ার সাপ্লাই দেয় এবং সেইমতো রিসোর্স শেয়ার করে।
অর্থাৎ আপনার চেয়েও ভালো আপনার ফোনের সিস্টেম আপনার জন্য কাজ করে। ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ডে যে সকল এপ্লিকেশন থাকে, এগুলো সবসময় ডাটা লোডেড অবস্থায় থাকে। এখানে আপনি যতবার ঢুকবেন ও ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে দেবেন, ততবার আপনার ডাটা লোড থাকবে এবং বারবার এগুলো সময় নিয়ে রিলোড হবে না।
র্যামে এগুলো লোডেড অবস্থায় থাকবে যা আপনার ফোনের অতিরিক্ত গরম হওয়া বা কাজ করানো থেকে বিরত রাখবে। কিন্তু যদি আপনি প্রতিবার এপ্লিকেশন ক্লিয়ার করেন এবং বারবার নতুন করে চালু করেন, সেক্ষেত্রে আপনার ফোনের কাজ করার আরও বেশি দরকার হবে এবং ক্ষতি সবশেষে আপনারই।
আরোও পড়ুনঃ শিক্ষিত গৃহিণীরা কিভাবে ঘরে বসেই স্বাবলম্বী হতে পারেন জেনে নিন
৩. কোনো ডাটা ডিলিট ও রিসাইকেল বিন থেকে সরালেই কি তা ধ্বংস হয়ে যায়?
আসলেই কি ফোন বা কম্পিউটার থেকে কোনো ডাটা ডিলিট ও রিসাইকেল বিন থেকে ক্লিয়ার করলেই তা ধ্বংস হয়ে যায়?
না, মোটেই না। কারণ, একটি ডাটা শুধুমাত্র ডিলিট করলেই যদি তা ধ্বংস হতো, তাহলে কোনোভাবেই কোনো ব্যাকআপ এপ্লিকেশন দিয়ে আর কোনো ডাটা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হতো না। আসলে ডিলিট করলে তথ্য ফোন বা কম্পিউটার থেকে মুছে যায় ঠিকই, তবুও অজানা জায়গায় তা থেকেই যায়।
সম্পূর্ন ধ্বংস করতে হলে এখানে অবশ্যই একটি বিশেষ বাইনারী কোডিং দ্বারা ওভাররাইট করতে হয়, যা আমরা হয়তো সবাই জানিনা বা বুঝবো না। কিন্তু যদি তাই হয় তাহলে ভেবে দেখুন, আমরা কি এসব কোডিং করে আমাদের ফাইল ডিলিট করি?
মোটেইনা, আমরা শুধু আমাদের ডিভাইস থেকে এগুলো মুছে দিয়েই সন্তুষ্ট থাকি।
৪. Incognito ব্রাউজারে ব্রাউজ করলেই কি আপনি আর ট্রেস হবেন না?
আমরা অধিকাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ভেবে থাকি যে, Incognito ব্রাউজারে ব্রাউজ করলে আমাদের কখনো ট্র্যাক করা যাবেনা বা কেউ ট্রেস করতে পারবেনা। কিন্তু আসলে এরকম মোটেই না।
আমরা যখন এই ব্রাউজিং মোডে ব্রাউজ করি, তখন শুধু আমাদের ব্রাউজিং ডাটা, ক্যাচ বা হিস্টোরি, ব্রাউজারে সেভ করা হয়না। Incognito ব্রাউজিং থেকে বের হলেই ওগুলো আর কেউ দেখতে পায় না। তবে এর মানে এই না যে, অন্য ব্যবহারকারীরা সহ, আপনার এই ডাটাগুলো আর কোনোভাবে ট্রেস করাই সম্ভব না।
অবশ্যই চাইলে ব্রাউজিং সাইটগুলো, আপনার ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী আপনাকে ব্রাউজিং দেখে ট্র্যাক করতে পারবে। তবে শুধু সেটা আপনার ব্রাউজার থেকে মুছে দেয় Incognito। এছাড়া কিছুই নয়।
আরো পড়ুনঃ ফেসবুক মার্কেটিং শিখে করুন মাসিক ৮০০০-৪০০০০টাকা উপার্জন অনলাইন থেকে
মুল কথা
সুপ্রিয় পাঠকগণ, এই ছিলো ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভুল ধারণা নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট এর যাবতীয় আলোচনা।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং আপনারা সবাই এসব ধারণাগুলো এখন থেকে বর্জন করবেন। চাইলে পোস্টটি সেভ করে রাখতে পারেন ও শেয়ার দিতে পারেন। এছাড়া যদি আজকের পোস্ট নিয়ে আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে জানাতে পারেন কমেন্ট সেকশনে।
খুব দ্রুত আবার দেখা হবে সামনের কোনো নতুন পোস্টে, নিয়ে আসবো নতুন কোনো তথ্য আপনাদের কাছে। ততক্ষণ অব্দি, সবাইকে জানাই বিদায় ও শুভকামনা!