ইন্টারনেট ব্রাউজিং নিরাপদ ও সুরক্ষিত ব্যাবহার করার সঠিক উপায়
ইন্টারনেট ব্রাউজিং আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ হয়ে দাড়িয়েছে। তাই এটার নিরাপদ ব্যবহার জানাটাও আমাদের দরকার, যাতে আমরা ডিজিটাল হতে গিয়ে নিরাপত্তা হুমকীতে না পরে যাই

বর্তমান যুগে মোবাইল, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ তথা ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস আমাদের সবার ই নিত্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সময় দেখা থেকে শুরু করে পড়াশোনা, আয়-রোজগার, বিনোদন ইত্যাদি প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই এই ডিভাইসগুলো আমাদের সহযোগী হয়ে উঠেছে। আর এইসব ডিভাইসের সাথে আছে আরেক সঙ্গী, ইন্টারনেট। দিনের কতটা সময় যে আমরা ইন্টারনেট ব্রাউজিং করে কাটাই, প্রয়োজন বা নিষ্প্রয়োজন, তা হয়তো আমরা নিজেরাই জানি না।
এই কম্পিউটার বা ইন্টারনেট যেমন আমাদের জীবন যাত্রা কে অনেক সহজ করে দেয়, তেমন ই আবার এগুলোর অসাবধান ব্যবহার ই আবার আমাদের বড় হুমকী বা ক্ষয়-ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই, এই ইন্টারনেট ব্রাউজিং এ হওয়া দরকার সচেতন, থাকতে হবে নিরাপদ।
এসব কথা ভেবেই আজকের এই নিবন্ধ, যেখানে থাকছে কিছু সুরক্ষা পরামর্শ, যেগুলো মেনে চললে আপনার ব্রাউজিং হবে নিরাপদ, আপনি থাকবেন সুরক্ষিত।
১. পাসওয়ার্ড হোক জটিল
বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন ধরনের একাউন্ট বানিয়ে থাকি ইন্টারনেটে, যেমন গুগল, ফেসবুক, টুইটার, উইকিপিডিয়া ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব একাউন্টে যদি আমরা সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার করি তাহলে অনুপ্রবেশকারীরা সহজেই সেই পাসওয়ার্ড অনুমান করে আপনার একাউন্টে ঢুকে পড়তে পারবে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারবে।
তাই এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন যা কেউ সহজে অনুমান করতে না পারে। এক্ষেত্রে আপনি পাসওয়ার্ডে বড় ও ছোট হাতের অক্ষরের মিশ্রণ, সাংকেতিক চিহ্ন বা নাম্বার ব্যবহার করতে পারেন। যত বেশি জটিল হবে পাসওয়ার্ড, তত আপনার একাউন্ট ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকবে।
আর যদি আপনার কাছে জটিল পাসওয়ার্ড মনে রাখা কষ্ট মনে হয়, তাহলে আপনি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করতে পারেন, এই ম্যানেজার গুলো আপনার সব পাসওয়ার্ড মনে রাখবে এবং যেকোনো দরকারে ব্যবহার করতে পারবেন। কিছু সুরক্ষিত পাসওয়ার্ড ম্যানেজার হলো, Truekey, 1password, dashline, lastpass ইত্যাদি।
২. আপনার নেটওয়ার্ক থাকুক সুরক্ষিত
আপনি হয়তো বাসায় বা রুমে বসে নিজস্ব রাউটার ব্যবহার করছেন যেটা মোটামুটি সুরক্ষিত। কিন্তু আপনি যখন বাইরে কোনো কাজে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন তখন হয়তো আপনি কোনো ফ্রি কানেকশন ব্যবহার করছেন বা এমন কোনো রাউটার ব্যবহার করছেন যেটাতে অনেক বেশি মানুষ বা ডিভাইস কানেক্টেড আছে।
তাই সেটা আপনার জন্য অনিরাপদ হতে পারে। তাই সুরক্ষার একটা ভালো উপায় হচ্ছে, নিজের ডিভাইসে VPN( Virtual Private Network) সেট করে রাখা। এতে করে আপনি নিজেকে একটা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখছেন যাতে করে অনুপ্রবেশকারীরা আপনাকে সহজে বশে পাবে না, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য ও থাকবে সুরক্ষিত।
৩. লিংকে ক্লিক করুন বুঝেশুনে
আজকাল সাইবার হ্যাকারদের ভালো একটা কৌশল হচ্ছে পিশিং/ফিশিং। হঠাৎ করে দেখলেন আপনার সামনে মেইলে বা ইনবক্সে একটা লোভনীয় অফার বা আপনাকে আকর্ষণ করতে পারে এমন কোনো কিছুর সাথে একটা লিংক আসলো।
আপনিও কৌতুহল বশত সেটায় ক্লিক করলেন, সাথে সাথেই আপনি আপনার ডিভাইস বা একাউন্টের এক্সেস হ্যাকারদের হাতে চলে গেলো। আবার অনেক সময় লিংকে প্রবেশের পর আপনার ইউজারনেম পাসওয়ার্ড চাইবে, সেগুলো দিয়ে দিলেই বিপদ। । তাই এধরনের লিঙ্ক এ প্রবেশের আগে যাচাই বাছাই করে নিন।
এক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন তা হলো, কোনো অফার রিলেটেড কিছু দেখলে অন্য কোনো সোর্স থেকে যাচাই করে নিন এই অফারের সত্যতা। অথবা আপনি লিংক টা ভালো করে লক্ষ্য করলে কিছু ভুল বুঝতে পারবেন, সেটা হতে পারে সাইটটার নামের বানান ভুল, বা সাইটের লিংক এর প্যাটার্ন ভুল। এই টাইপের সন্দেহজনক কিছু দেখলে সেটা এড়িয়ে চলাই নিরাপদ হবে।
৪. সোশ্যাল মিডিয়ায় পোষ্ট দিন ভেবে চিন্তে
বর্তমানে আমরা সবাই কমবেশি সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক, টুইটার ব্যবহার করি। এইসব প্লাটফর্মে এমন কোনো পোস্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকুন যা আপনার ব্যক্তিগত বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে।
যেমন আপনি যদি সপরিবারে বাইরে ঘুরতে যান, তাহলে সেটা তখনি ফেসবুকে প্রকাশ না করা ভালো, আবার নিজের আপডেট প্রতিনিয়ত দেওয়ার থেকে একটু বিরত থাকুন। এগুলোআপনার প্রাইভেসির জন্য হুমকী হতে পারে।
এছাড়া আপনার একাউন্টের তথ্য যাতে বাইরের অপরিচিত কেউ না দেখতে পারে সে ব্যাপারে সচেতন হোন। পাবলিক প্লাটফর্মে নিজের সুরক্ষা নিজের কাছেই।
৫. ডিভাইসকেও রাখুন সুরক্ষিত
আপনার ডিভাইসটিতে আপনি প্রতিনিয়ত যেকোনো কাজেই যেটা ব্যবহার করছেন সেটা হলো এপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার। এইসব সফটওয়্যার ও হতে পারে হুমকীর কারণ। এইগুলোর ব্যবহার বুঝেশুনে। এমন কোনো সোর্স থেকে এপ নামাবেন না যেগুলো নিরাপত্তায় হুমকী হতে পারে।
খুব বেশি প্রয়োজন ন হলে অথোরাইজড স্টোর ছাড়া অন্য সোর্স ব্যবহারের দরকার নেই। প্লে স্টোর, মাইক্রোসফট স্টোর এসব জায়গায় বেশির ভাগ প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার পাওয়া যায়। এগুলোই ব্যবহার করুন।
৬. ব্রাউজিং হোক নিরাপদ
আপনি হয়তো সার্ফিং করতে করতে অনেক ভিন্ন ভিন্ন ওয়েবসাইটে ঢুকে পড়ছেন,বুঝতেই পারছেন না আপনি কতক্ষণ সুরক্ষিত থাকছেন আর কখন অনুপ্রবেশকারিদের হাতে পড়ে যাচ্ছেন। তাই সার্ফিং এর ক্ষেত্রে ওয়েবয়াইটের এড্রেস টা খেয়াল রাখা জরুরী।
আপনার খেয়াল রাখতে হবে যেন ওয়েবসাইটের এড্রেসটা শুরু হয় https দিয়ে, http না। আর ওয়েবসাইটে ঢুকে যদি এড্রেসবারের কোণায় একটা তালা দেখতে পারেন তাহলে বুঝবেন এই ওয়েবসাইট সুরক্ষিত। অন্যথায় আপনি নিরাপদ না।
৭. সবসময় আপডেটেড থাকুন
আপনি যেই সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করছেন যেগুলো সর্বদা আপডেট রাখুন। যদি কোনো কারণে সফটওয়্যারে কারিগরি সমস্যা থেকেও থাকে, আপডেটে সেই সমস্যা থাকে না। এজন্য রেগুলার আপডেট চেক করুন।
৮. গার্ডকে সর্বদা সজাগ রাখুন
গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট, আপনার ব্যবহৃত এন্টি-ভাইরাস বা ফায়ারওয়াল সর্বদা এক্টিভ রাখুন। এতে করে অনুপ্রবেশকারী কিছুর মাধ্যমে ডিভাইসে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ফায়ারওয়াল আর এন্টি-ভাইরাস সেটা রুখে দিবে।
এছাড়া আপনার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বা ডকুমেন্ট গুলো সর্বদা ব্যাক আপ দিয়ে রাখুন। যাতে কোনো কারণে সেগুলো নষ্ট হলেও আপনার খুব বেশি ক্ষতি না হয়।
সর্বোপরি, সবকিছুর আগে নিরাপত্তা বেশি দিবে আপনার সচেতনতা। তাই সর্বদা সাবধানতা, সচেতনতা ব্যবহার করুন সর্বদা। এতেই আপনি থাকবেন সুরক্ষিত, আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিং হবে আনন্দময়।
শুভ হোক আপনার ইন্টারনেটের পথচলা।