ঈদের সময়ে অনলাইন বিজনেসের ৫ টি সেরা আইডিয়া
ঈদকে সামনে রেখে সুন্দর কোনো অনলাইন বিজনেস করতে চাচ্ছেন? ভালো আইডিয়া মাথায় আসছে না? চিন্তা নেই, আজ আমি আপনাদের জানাবো ঈদকে সামনে রেখ কোন অনলাইন বিজনেসগুলো আপনারা করতে পারেন।

অনলাইন বিজনেস বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আগে অনলাইন শপিং করতে অনেকেই আগ্রহী ছিলেন না, কিন্তু এখন তা নির্ভরযোগ্য হয়েছে অনেকটাই।
আগে সবাই চাইত উৎসব পার্বণের কেনাকাটা বাজার বা মল থেকে অনেক যাচাই-বাছাই করে কিনতে। কিন্তু যারা কর্মজীবী বা যারা ভীষণ ব্যস্ত তাদের জন্য এত সময় বের করে শপিং করা আসলেই অনেক কষ্টসাধ্য।
তাছাড়া অনলাইনে আজকাল সব ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, হতে পারে সেটা দেশী, বিদেশী, হাতে তৈরি বা যেকোন কিছু। সার্চ করলেই রিলেটেড পেজগুলো পেয়ে যাচ্ছেন।
আর এই প্যানডেমিকে বাইরে যাওয়াও নিরাপদ নয়। তাই বলে তো প্রয়োজন আর উৎসব থেমে থাকে না। আর এটা অনলাইন বিজনেসের জন্য খুবই ইতিবাচক দিক।
ঈদকে সামনে রেখে আজ অনলাইন বিজনেসের নতুন ৫ টি টিপস নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন সাজানো হয়েছে। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।
ঈদকে সামনে রেখে অনলাইন বিজনেসের ৫ টি টিপস:-
১. মেহেদী সেল ও ডিজাইন ভিডিও
ঈদ মানেই মেয়েদের হাতে মেহেদী দেওয়া চাই ই চাই। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই চলে হাতে মেহেদী দেওয়ার ধুম। বাজারে যেসব নামীদামী মেহেদী পাওয়া যায়, সেগুলোর রেপ্লিকাতে সয়লাব হয়ে যায় কসমেটিকসের দোকানগুলো।
এজন্য ঈদে হাতভর্তি গাঢ় রঙের মেহেদীর ইচ্ছা অপূর্ণই থেকে যায় অনেকের। আর ঈদের আগে-পরে বিয়ের ধুম চলে। তখন নতুন কনেদের সাথে বাকিদেরও মেহেদী দেওয়ার উৎসব শুরু হয়।
কিন্তু রেপ্লিকা মেহেদী ব্যবহারে হাতে চুলকানি, র্যাশ, এমনকি স্কিন পুড়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটে থাকে। এজন্য আমাদেরকে মেহেদী কেনার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। আর ঈদে মেহেদী হতে পারে অনলাইন বিজনেসের অন্যতম উপাদান।
বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের অরিজিনাল মেহেদী বিক্রয় করলে এ সময় প্রচুর ক্রেতা পাবেন। আর লকডাউন বা করোনাকালীন সতর্কতায় পার্লারে বা বাসায় গিয়ে মেহেদী দেওয়ার যে ট্রেন্ড সেটা এ মুহূর্তে পালন না করাই উচিত।
তাই যারা মেহেদী সেল করবেন তারা নিজেদের পেজ এ সুন্দর আকর্ষণীয় ডিজাইনের মেহেদী কিভাবে সহজে দেওয়া যায় সেটার উপর ভিডিও টিউটোরিয়াল করলে ক্রেতারা যেমন উপকৃত হবেন তেমনি বিক্রয়ও প্রচুর বেড়ে যাবে।
২. বিভিন্ন ধরনের মশলা ও রান্নার ভিডিও
ঈদ মানেই হরেক রকম রান্নার আয়োজন। যতই লকডাউন হোক বা অসুস্থতার চিন্তায় থাকা হোক না কেন রান্নার আয়োজনে আমরা কার্পণ্য করতে চাইনা।
কিন্তু অনলাইন বা বিভিন্ন ই-কমার্স সাইট থেকে মশলা কেনায় এ সময় ঠকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী। বেশিরভাগ পণ্যের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, বা পণ্যের নতুন চালান আসতে সমস্যা হচ্ছে। তাই গুণগতমান সম্পন্ন মশলা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
এজন্য নিজস্ব পরিচালনায় গুড়া মশলা, বাটা মশলা, গরম মশলা বিক্রয় এই সময়ে খুবই জনপ্রিয় একটি বিজনেস আইডিয়া হতে পারে। কারণ গুড়া মশলা আমাদের সময় বাচালেও ভেজাল মশলার রান্না স্বাদ যেমন হয়না তেমনি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর।
তাই গুনগত মান ঠিক রেখে মশলার বিক্রয় এ সময়ে ক্রেতাদের জন্য যেমন নির্ভরযোগ্য হতে পারে তেমনি বিজনেস হিসেবে খুবই লাভজনক হবে।
এই সাথে উক্ত মশলা দিয়ে কিভাবে সুন্দর করে বিভিন্ন আইটেম রান্না করা যায় এ ধরনের ভিডিও পেজে আপলোড করা হলে তা ক্রেতাদের মশলা ক্রয়ে আরও আগ্রহী করে তুলবে।
৩. বিভিন্ন ধরনের সেমাই ও ফ্রোজেন আইটেম
ঈদে সেমাই হচ্ছে সবচেয়ে অপরিহার্য মিষ্টি খাবার। বাইরের খোলা সেমাই বা লাচ্চা সেমাই সবসময় গুণেমানে ভাল হয়না। এজন্য উন্নতমানের হাতে তৈরি সেমাই বা নিজস্ব তত্ত্বাবধানে উৎপাদিত সেমাইয়ের চাহিদা এ সময় অনেক বেশী থাকবে।
এছাড়া সেমাই রান্নার অন্যান্য উপাদান যেমন বাদাম, পেস্তা, কাজু, কাঠবাদাম, কিসমিস, চেরী, কাচাদুধ এগুলোও অপরিহার্য। সবগুলো উপাদানই একসাথে বিক্রয় করা যেতে পারে।
আর এ সময়ে পরোটা, সিঙারা, এবং অন্যান্য ফ্রোজেন আইটেমগুলোও বিজনেসের অন্তর্ভুক্ত রাখা যায় কারণ এ সময়ে সব পরিবারেই প্রচুর নাস্তা আইটেম প্রয়োজন হয়। কিন্তু সময়ের অভাবে সব আইটেম অনেকেই তৈরি করতে পারেন না।
আর এসব আইটেমগুলি তৈরি করা, নাস্তার নতুন রেসিপি তৈরির ভিডিও ও ছবি যদি নিজের পেজে আপলোড করেন তাহলে তা আরও অনেক ক্রেতাকে আকৃষ্ট করবে। সেইসাথে পণ্য স্পন্সর করতে হবে যাতে প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি পায়।
৪. ভারী কাজের ড্রেস ও জুয়েলারী
ঈদে মেয়েরা একটু ভারী কাজের ড্রেস এবং সাথে ম্যাচিং জুয়েলারী পছন্দ করে। এবার যেহেতু করোনার জন্য মার্কেটে ঘুরে নিজের পছন্দের সকল জুয়েলারী ও ড্রেস পছন্দ করে কেনা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হবে না, তাই অনলাইনই ভরসা।
আর তাই ভারী কাজের রেডিমেড ড্রেস আর সাথে ম্যাচিং জুয়েলারী আইটেম নিয়ে বিজনেস করা যেতে পারে। একজন ভাল পেজ প্রোমোটার যদি ড্রেস এবং জুয়েলারীর মডেল হন তাহলে তা ক্রেতাদের আরও বিশেষভাবে আকর্ষন করবে।
সেক্ষেত্রে ড্রেস ও জুয়েলারীর দাম, গুনগত মান, রঙ, সাইজ এগুলো মাথায় রাখতে হবে। কারণ দাম অত্যধিক বেশী বা গুনগত মান খারাপ হওয়া এই দুইয়ের যেকোন সমস্যা বিক্রয় এবং ব্যবসায়ের সুনামে সমস্যা করবে।
৫. সুগন্ধী আতর ও পারফিউম
ঈদে সুগন্ধী আতর, পারমিউমড সোপ, পারফিউম, এসবের অনেক চাহিদা থাকে। সুগন্ধী আতরকে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
এজন্য বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অরিজিনাল আতর, ইম্পোর্টেড পারফিউম এবং সুগন্ধী পারফিউমড সাবান অনলাইন বিজনেসের পণ্যের তালিকায় রাখা যায়। আপনাকে পণ্যের প্রচারের বেলায় অবশ্যই এর গুনগতমানকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে।
কারণ ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ের সময় দাম বেশী দিতেও ইচ্ছুক থাকে যদি সে ভালমানের নিশ্চয়তা পায়। তবে সব ধরনের ক্রেতা চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন মূল্যের পণ্যের স্টক রাখতে হবে।
এসব পণ্যের প্রচারের জন্য বিভিন্ন বিজনেস গ্রুপে নিয়মিত পোস্ট ও পরিচিতি দিতে হবে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্র পরিসরে স্পন্সর করতে হবে। যাতে পজেটিভ রিভিউ এবং রেটিং আসে। তাতে ব্যবসায়ের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি পাবে।
শেষ কথা
এমনকিছু প্রোডাক্ট রয়েছে যেগুলোর একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে যখন এসব প্রোডাক্টের চাহিদা অনেক বেশী থাকে। অনলাইন প্রোডাক্টের বিজনেস করতে হলে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকা দরকার।
যেহেতু অধিক পণ্য স্টোর করে রাখা, দোকান বা স্থান ভাড়া নেওয়ার প্রয়োজন বেশিরভাগ বিজনেসেই দরকার হয়না তাই কোন সময়ে কোন প্রোডাক্টের চাহিদা বেশী তা নিয়ে রিসার্চ করে পণ্য সরবরাহ করা উচিত।
এতে করে বিক্রয়, প্রসার এবং ব্যবসায়িক লাভ সবকিছুতেই আপনি এগিয়ে থাকবেন। সুপ্রিয় পাঠক আশা করি ঈদকে সামনে রেখে অনলাইন বিজনেসের ৫ টি টিপস আপনাদের উপকারে আসবে।
এ ধরনের আরও কোন টপিক নিয়ে লেখা চাইলে অথবা যেকোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। পরবর্তীতে হাজির হব নতুন কোন টপিক নিয়ে। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।