উত্তর বঙ্গের কিছু মন্ত্রমুগ্ধ করা প্রাকৃতিক পর্যটন কেন্দ্র
উত্তরবঙ্গ, ভারতবর্ষের পশ্চিম বঙ্গের এমন এ এক জায়গায় যাতে ঘিরে আছে মন্ত্রমুগ্ধ করা প্রাকৃতিক এক দৃশ্য। শুধু পশ্চিমবঙ্গই কেন, সুদূর বিদেশ থেকেও অনেক পর্যটক পাড়ি দে শুধু মাত্র প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখবার জন্য। বন্য প্রাণী, অভয়ারণ্য, বন জঙ্গল ঘেরা এই উত্তরবঙ্গ যেন একেবারে স্বপ্নের দেশ।

এর মধ্যে দার্জিলিং খুব বেশি জনপ্রিয়, পাহাড়ের কোলে বসে চা খাওয়া ও তার সঙ্গে কানছেনজঙ্গার শৃঙ্গ চূড়া অনুভব করা যেন এক আলাদা মাত্রা এনে দে। এ দৃশ্য দর্শনে কারোরই আর মন চায় না শহরে ফিরতে, আবার কাজ এ মন দিতে। এ ছাড়া আছে কালিম্পঙ ভ্রমণ, বাঙালিদের অনেক প্রিয় জায়গা। কার্শিয়াং, এবং জলদাপারা অভয়ারণ্য প্রায় অনেকেই গেছেন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, উত্তর বঙ্গের বিস্তার অনেক দূর, অনেক সুন্দর সুন্দর পর্যটন কেন্দ্র আছে এবং নিরিবিলি সময় কাটানোর ও অবসর পাওয়া যাবে। এখানে কিছু এমনি উত্তরবঙ্গের কিছু পর্যটন কেন্দ্রের নাম দেয়া হলো যা ভ্রম প্রিয় মানুষ একবার হলেও ঘুরে দেখতে পারেন।
১) টোটোপাড়া
জলদাপাড়া অভয়ারণ্য বা ডুয়ার্স ঘুরতে গেলে ঘুরে আস্তে পারেন এই টোটোপাড়ায়। একেবারে ইন্দো ভুটান সীমান্তবর্তী এলাকায় ছোট একটা গ্রাম। শহর থেকে অনেক দূর এবং সাবতো পরিবেশ এবং অনেক নিরিবিলি জায়গা। ভারতের একমাত্র টোটো উপজাতি এখানে বসবাস করে। তিস্তা নদীর তীরে শান্ত এই গ্রাম বিশেষ আকর্ষণ। সবথেকে ভালো কথা এখানে যেকোনো বেশি পর্যটক ভিড় করে না, সুতরাং শহর এর জীবন যাত্রা থেকে দূরে শান্তি তে কিছুটা সময় কাটানোর এক মোক্ষম স্থান এটি। যদি সাংস্কৃতিক ভালো লেহে থাকে তাহলে অবসসই গ্রাম টি ঘুরে দেখে একানকার জনজাতিদের জীবন যাত্রা দেখে আস্তে পারেন। এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা হবে। এখানে রাতে থাকার জন্য ও অনেক টুরিস্ট লজ গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে এখানে ঘুরে আসা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা।
২) চারখোলা
আবারো নিরিবিলি তে সময় কাটানোর এবং সুন্দর প্রতিকৃত দৃশ্য উপভোগ করার এক সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা এক মনোরম স্থান। শহর থেকে দূরে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য এই ছোট সুন্দর সাজানো গ্রামটির কথা ভাবা যেতেই পারে। শাল গাছ, প্যানে গাছ ও বিভিন্ন পাহাড়ি গাছ এ ঘেরা এ সুন্দর গ্রাম টি। এবং এখানে বিভিন্ন প্রজাতির পশু পাখিও দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতিও এইখানে দেখতে পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে খুবই রোমাঞ্চকর স্থান। পায়ে হেটে আসে পশে গ্রাম ও ঘুরে আস্তে পারেন। দূষণ একেবারেই নেই বললেও চলে। তাই প্রাণ খুলে শ্বাস নিয়ে প্রকৃতির বুকে ঘুরে আসার জন্য এই গ্রামে একবার ঘুরে আসায় যায়।
৩) পেডং
আবারো একটি সুন্দর প্রকৃতিকে ঘেরা সাজানো সুন্দর জায়গা। পেডং বাস স্ট্যান্ড থেকে ২ কিমি দূরে অবস্থিত সাংছেন দর্জি মনাস্ট্রি, ১.৫ কি মি দূরে সুন্দর সাজানো ক্রস হিল। পেডং থেকে ৫ কি মি দূরে সাইলেন্ট ভ্যালি। সমস্ত জায়গায় সুন্দর এবং ছবির মতো স্বচ্ছ। পেডং এর আসে পশে অনেক প্রকৃতি ঘেরা দর্শনীয় স্থান আছে যা সহজে ঘুরে দেখা আসা যায়।
৪) রিসাং
পুরাকালে তিব্বত যাওয়ার সময় ব্রিটিশ ভ্রমণকারীদের থামার জায়গা হিসাবে কাজ করতে এই রিসাং। ১৯০২ সালে নির্মিত একটি পুরানো ব্রিটিশ বাংলো রয়েছে এখানে। তবে বাংলোটি এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। এখান থেকে পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা পরিসরের পাশাপাশি কালীমপং, দার্জিলিং, গাংটক, পেডং এবং অন্যান্য শহরগুলির দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে পাওয়া যায়।
৫) মালবাজার
এটি জলপাইগুড়ি শহর থেকে প্রায় 65 কিমি দূরে। এর অবস্থানগত সুবিধার জন্য মলবাজার দিন দিন পর্যটকদের আকর্ষণ অর্জন করছে। ১৯৪৭ সালের আগে মালবাজার একটি খুব ছোট জায়গা ছিল, মূলত ব্রিটিশদের মালিকানাধীন চা বাগানের জন্য এটি পরিচিত।মলবাজার শহরে বিখ্যাত "মাল পার্ক (মাল উদ্যান)" রয়েছে। এটি ডুয়ার্সের অন্যতম সেরা পার্ক। এই মাল পার্কে বহু বাংলা চলচ্চিত্রের শুটিং হয়। মাল পার্কের পাশে নবনির্মিত নির্মিত "বাজরঙ্গবলির মন্দির" এখানে দেখার জন্য রয়েছে।
৬) ফাগু
ফাগু কালিম্পঙ জেলায় অবস্থিত। এর প্রধান আকর্ষণ হলো ব্রিটিশ তৈরী হেরিটেজ এবং ব্রিটিশ টি বাংলো বা চা বাংলো। এই বাংলোর চারপাশে সুন্দর সুন্দর বাগান রয়েছে। ভ্রমণকারীরা যদি তারা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে কিছু গুণমানের সময় ব্যয় করতে চান তবে তারা একটি নদীর ধারের বসে কিছুটা সময় উপভোগ করতে পারবেন। টি বাংলো ঘুরে দেখতে পারেন। পাখি পর্যবেক্ষণ একটি জনপ্রিয় ক্রিয়াকপিলাপ পর্যটকদের কাছে।
৭) মংপং
এই গ্রামটি তিস্তা নদীর তীরে অবস্থিত। মংপং মহানন্দা বন্যজীবন অভয়ারণ্যের প্রান্তে অবস্থিত এবং এখানে শীতকালে মধ্য এশিয়া এবং লাদাখ থেকে আগত ব্রাহ্মণ্য হাঁস, পিনটাইল হাঁস, পোচার্ড, ম্যালার্ড এবং বার-মাথা হাঁস জাতীয় কয়েকটি পাখির আবাস রয়েছে। এটি তিস্তা নদী, পাহাড় এবং বনভূমির সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত, যা প্রচুর পর্যটককে আকর্ষণ করে। পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন কর্পোরেশন (ডাব্লুবিএফডিসি) দ্বারা পরিচালিত মংপং ফরেস্ট রেস্ট হাউসে আবাসন পাওয়া যায়।
৮) ডামডিম
এটি মালবাজার সাব ডিভিশনের অন্তর্গত জলপাইগুড়ি জেলায় অবস্থিত। এটি চা বাগান, প্রাকৃতিক দৃশ্য, এবং বন এর জন্য বিখ্যাত। "বুড়া সাহেব বাংলো" নামে অভিহিত দেড়শ বছরের পুরানো টি গার্ডেন বাংলো এখানের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ।
৯) ফাফার খেতি
এটি পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় ওডলবাড়ির খুব কাছে এবং জলপাইগুড়ি জেলার মালবাজার মহকুমার সাথে সংযুক্ত। এখানে দেখার বিষয় হলো একটি বড় পাথরের পাশে একটি সেতু। সেই সেতুর নীচে প্রবাহিত চেল নদী। দর্শনীয় স্থান গুলি হচ্ছে জলপ্রপাত, জঙ্গল, চেল নদী, পাখি এবং দূরবর্তী গ্রামগুলির সৌন্দর্য।
১০) কাঠামবাড়ি জঙ্গল
যদি কোনও প্রকৃত প্রকৃতি প্রেমিক হয় তবে এই জায়গা তার অবশ্য ভ্রমণ করা উচিত। এই বনটির ঘনত্ব ক্রান্তি থেকে গাজলডোবা অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে। প্রায়শই এখানে বন্য হাতি চিতাবাঘ, বন্য কুকুর প্রায়শই এই অঞ্চলে দেখা যায়। এই ঘন অরণ্যটি মালবাজার অন্তর্গত, পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলা। জলপাইগুড়ি টাউন থেকে এই অঞ্চলটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে।
জঙ্গল, বন্যপ্রাণী, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং যারা একটু শহরের জীবনের থেকে দূরে কোথাও শান্ত পরিবেশে জীবন কাটাতে চাইছেন তাদের অবশ্যই কাছে পিঠে এই সুন্দর স্থান গুলোতে যাওয়া উচিত। শরীরের ক্লান্তি কাটবে ও মন ও ভোরে উঠবে প্রকৃতির ছোয়ায়।