এই কারণে বিয়ের অনেক সময় পরেও সন্তান হয় না
বিয়ের পরে অনেক সময় পার হয়ে গেলেও কিছু দম্পতি সন্তান নিতে পারেন না। কেন পারেন না তা নিয়েই আজকের আর্টিকেলটি আলোচনা করা হয়েছে।

সন্তান বাবা মায়ের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। বিয়ের কিছু সময় স্বামী স্ত্রী একসাথে কাটানোর পর উভয়ই সন্তান নেওয়ার জন্য আগ্রহ পোষণ করেন। সন্তান জন্ম নেওয়ার মাধ্যমে শুধু যে একটা বংশ কে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করে তা নয়।
বরং সন্তান স্বামী স্ত্রীর পরস্পরের উভয়ের প্রতি ভালবাসার চিহ্ন। পৃথিবীতে দুজন নারী ও পুরুষ একে অপরকে কতটা ভালোবেসে ছিলেন সে ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে এই পৃথিবীতে তারা সন্তান নিয়ে আসেন। সন্তানের চেহারা দেখে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের প্রতি টান অনুভব করে।
সুতরাং আমরা বলতে পারি যে সন্তান শুধুমাত্র একটা বংশের পরম্পরা আগাতেই সহায়তা করে তা নয় বরং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ভালোবাসা অটুট রাখতে সহায়তা করে।
তাছাড়া সন্তান জন্ম নিলে দেখা যায় নারী কিংবা পুরুষ অথবা উভয়েই নিজেদের মনের ভেতরটা খালি খালি ব্যক্ত করতে থাকেন। তাদের মতে সন্তান ছাড়া সংসার পরিপূর্ণ হয় না।
সুতরাং বিয়ের পর নারী-পুরুষ উভয়েই সন্তান নেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন ঠিক তেমনি সন্তান লালন-পালন করার সকল রকমের দায়িত্ব নিতেও দ্বিধাবোধ করে না।
সন্তান বললেই শুধু নেওয়া যায় না। কেননা সন্তান নিতে গেলেও বাবা-মায়ের অনেক বেশি সাহসের প্রয়োজন হয়। একটা সন্তানকে ছোটবেলা থেকে শুরু করে বড় হওয়া পর্যন্ত বাবা-মাকে অনেক কিছুই উৎসর্গ করতে হয়।
সন্তানের লেখাপড়ার খরচ থেকে শুরু করে খাবার-দাবার, পোশাক-আশাক ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাদ মেটানোর জন্য, বিনোদনের ব্যবস্থা করার জন্য বাবা মাকে প্রচুর পরিমাণে খাটাখাটুনির মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
প্রকৃতপক্ষে নারী কিংবা পুরুষ একটা জিনিসের প্রতি অনেক বেশি আকৃষ্ট না হলে কেউ এত খাটাখাটুনি করতে রাজি হবেন না।
সুতরাং বুঝতেই পারছেন সন্তান স্বামী-স্ত্রীর জীবনে কত বড় একটা আশীর্বাদ যে এই সন্তানকে লালন-পালন করার জন্য পিতা-মাতারা যেকোন কিছুই ত্যাগ করতে প্রস্তুত থাকে।
তবে যাই হোক না কেন সন্তান নেওয়া সকল নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে কথাটা যেমন সত্যি তেমনি আরেকটি তিতা সত্যি কথা হচ্ছে বিয়ের অনেক সময় পার হয়ে গেলেও দেখা যায় কিছু দম্পতি সন্তান নিতে পারেন না।
তারা যেন অনেক চেষ্টা করেও নিজেদের পৃথিবীতে আলো করে আরেকজন সদস্যকে নিয়ে আসতে পারেন না। যখন তাদের সংসারে কোন নতুন অতিথির আগমন ঘটে না তখন তারা নিজেদের দোষ দিতে থাকে।
প্রকৃতপক্ষে সবসময় যে সন্তান না হওয়ার কারণে বাবা কিংবা মায়ের দোষ থাকে তাও না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নারী কিংবা পুরুষ এর কোনো রকমের শারীরিক সমস্যা নেই তবুও বাচ্চা নিতে অক্ষম হন। এর কারণ হয়তো বা সৃষ্টিকর্তার অনিচ্ছা।
যাইহোক এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে আজকের আর্টিকেলটিতে। আজকে মূলত আলোচনা করা হবে ঠিক কি কারণে বিয়ের অনেক সময় পার হয়ে গেলেও কিছু কিছু দম্পতির ঘরে সন্তান জন্ম হয় না।
তাহলে চলুন দেরি না করে আমরা আর্টিকেলটি শুরু করে দি।
কারণ নং ১
বর্তমান প্রজন্মের দেখা যায় যে নারীরা স্বাবলম্বী হয়ে তারপরে বিয়ে করতে চান। এটা তাদের অধিকার অবশ্যই। স্বাবলম্বী হওয়া নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার রয়েছে।
কিন্তু দেখা যায় যে একটা পুরুষের স্বাবলম্বী হওয়ার সাথে একজন নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার বয়সসীমা তুলনা করা হলে দেখা যায় যে একজন নারী স্বাবলম্বী হতে হতে 35 বছরের বেশি সময় লাগে।
আমরা জানি একটা নারীর সাধারণত প্রথম বাচ্চা 21 থেকে 25/ 26 বছরের মধ্যে নিয়ে নেওয়া উচিত। পরবর্তী সন্তান ধীরে ধীরে নেওয়াই ভাল।
কিন্ত যেই জায়গায় একজন নারী স্বাবলম্বী হতে গিয়ে 35 বছর পার করে ফেলে এবং তাঁর দীর্ঘ 35 বছরের জীবনে তিনি বিবাহ না করে বাচ্চা নেওয়ার চেষ্টা না করে থাকে তবে তার বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি দেখা যায়।
এটাই স্বাভাবিক একজন নারীর বয়স যত বেশী বাড়তে থাকে তত বেশি মেনোপজ বা মাসিক ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দেয়। আর এ কারনেই কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে স্বাবলম্বী হতে গিয়ে নিজেদের বন্দ্ব্যাত্ব টেনে আনেন।
এই ক্ষেত্রে একটা সমাধান আপনারা গ্রহণ করতে পারেন এবং সেটা হল বিয়ে আগে করুন স্বাবলম্বী হন। কিন্তু যথাসময়ে যদি আপনি আপনার সন্তানকে নিজের চোখে দেখতে না পারেন আপনার কিন্তু স্বাবলম্বী হওয়ার পরেও বুকের ভেতরটা সন্তানের জন্য হাহাকার করবে।
তাই সময়ের কাজ সময়ে করা ভালো। আপনি সন্তান রেখেও চাইলে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। আপনার ইচ্ছাশক্তি থাকলে পৃথিবীর অন্য কোনো বস্তুই আপনাকে আটকাতে পারবে না।
কারণ নং ২
বিয়ের অনেক সময় পরেও যথাযথ চেষ্টা করার পরও দেখা যায় দম্পতিরা প্রায় সময় বাচ্চা নিতে অক্ষম হয়ে থাকেন। এই ক্ষেত্রে পুরুষের সাধারণ একটি সমস্যা হলো অতিরিক্ত ওজন।
বেশির ভাগ পুরুষ যারা সন্তান জন্মদানে অক্ষম হয়ে থাকেন তাদের সন্তান জন্ম না দেওয়ার পেছনে যে প্রধান কারণটি কাজ করে তা হলো অতিরিক্ত ওজন। কেননা তার শরীরের অতিরিক্ত ওজন স্পার্মের ওপর চাপ ফেলে।
আর এর কারণে তার ভেতরকার স্পার্মের সংখ্যা অনেক কমে যায়। উক্ত স্পার্ম কমে যাওয়া কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে সেটা ডিম্বাণুর সাথে নিষেকক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে না।
তাই এই ক্ষেত্রে বিয়ের অনেক সময় পরেও যে কারণে একটা পুরুষের জন্য সন্তান নেওয়ার অক্ষমতা দাঁড়ায় তা হলো তার অতিরিক্ত ওজন।এই ক্ষেত্রে সকল পুরুষদের জন্য পরামর্শ থাকবে আপনারা অবশ্যই নিজেদের ওজন নিয়ন্ত্রণ করবেন।
যেহেতু আপনার অতিরিক্ত ওজন আপনার শুক্রাণুর ওপর চাপ ফেলে শুক্রাণু নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কারণ নং ৩
যদি কোন নারীর জরায়ুতে কোন রকমের টিউমার হয়ে থাকে তখন সুস্থ স্পার্ম জরায়ুতে প্রবেশ করলেও টিউমারের কারণে ডিম্বাণুকে নিষেকক্রিয়া অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হন না।
তাই নারীদের জন্য পরামর্শ থাকবে আপনারা যদি কোন কারনে বন্ধ্যাত্বের শিকার হয়ে থাকেন, তবে সর্বপ্রথম জরায়ুর ভেতর কোনো রকমের টিউমারের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা তা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করবেন।
যদি জরায়ুতে টিউমার থেকে থাকে তবে অবশ্যই তা অপারেশন কিংবা ওষুধপত্রের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করবেন।টিউমারের কারণে আপনি যে শুধু সন্তান নিতে সক্ষম হবেন তা কিন্তু নয়।
এই টিউমার পরবর্তীতে ক্যান্সার থেকে শুরু করে আপনার মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
কারণ নং ৪
নারী পুরুষ কিংবা উভয়ের যদি ধূমপানের অভ্যাস থাকে, তবে এই ধূমপানের কারণেও তারা সন্তান জন্মদান করতে অক্ষমতা প্রকাশ করবেন। কেননা ধূমপান আমাদের শরীরের জন্য অবশ্যই অনেক বেশি ক্ষতি করে।
এটি যে শুধু ফুসফুস ক্যান্সার কিংবা ফুসফুস জনিত বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে তা কিন্তু নয়।
এই ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের যৌন হরমোন ক্ষরণের মাত্রা কমিয়ে দেয়।আর আমরা সকলেই জানি যদি যৌনক্রিয়া ঠিকমত না হয়ে থাকে তবে সন্তান এর ভ্রূণ অবশ্যই সৃষ্টি হবে না।
কারণ নং ৫
ধূমপানের মত অ্যালকোহল বন্ধ্যাত্ব গ্রহণের অন্যতম কারণ। নারী কিংবা পুরুষ অথবা উভয় যদি মাদকদ্রব্য অ্যালকোহল ইত্যাদিতে আসক্ত হয়ে থাকেন, তবে তারা সন্তান নিতে অক্ষমতা প্রদর্শন করে থাকেন।
কেননা দেহে যে টেস্টোস্টেরন হরমোন রয়েছে, অতিরিক্ত এলকোহল সেবনের কারণে উক্ত টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা কমে যায়। আর এই হরমোনের মাত্রা কমে গেলে সন্তান নেওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য হয়ে যায়।
কারণ নং ৬
পুরুষের অতিরিক্ত অসস্তি, মানসিক চাপ, স্ট্রেস ইত্যাদির কারণেও তাদের কর্মের ওপর প্রভাব পড়ে থাকে। এই সকল টেনশন কিংবা উত্তেজিত হয়ে যাওয়া অথবা মানসিক অসুস্থতার কারণে তাদের স্পার্ম নষ্ট হয়ে যায়।
যার ফলে ডিম্বাণু ঠিকমত নিষেক ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণ করতে পারে না। তাই সকল রকমের মানসিক অসুস্থতা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করার পরামর্শ হল চেষ্টা করবেন সময় পেলে মেদিটেশন করতে।
প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে, নিজের যা ভালো লাগে সে সকল কাজ করতে, কোন অসহায় ব্যক্তিকে সাহায্য করতে এবং সর্বোপরি নিজ নিজ সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনায় মনোনিবেশ করতে।
যাতে করে মানসিক সকল রকমের অস্বস্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। মনে রাখবেন আপনার মানসিক অসুস্থতার কারণে আপনি আপনার সন্তানের মুখ কখনো না-ও দেখতে পারেন।
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করা যায় আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে উপভোগ্য ছিল। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।