এই প্যাচপ্যাচে বর্ষায় আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে? রইলো কিছু টিপস

বর্ষাকাল এবং করোনার প্রকোপ থেকে শিশুকে রক্ষা করার জন্য বাবা-মায়েদের হতে হবে অতিরিক্ত সচেতন। কিছু বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে শিশুর যত্ন নিন, অসুখ থেকে দূরে থাকবে আপনার শিশু।

এই প্যাচপ্যাচে বর্ষায় আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে? রইলো কিছু টিপস
এই প্যাচপ্যাচে বর্ষায় আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবেন কিভাবে? রইলো কিছু টিপস


কয়েকদিন আগে বৃষ্টির দেখা পাওয়ার জন্য মানুষ একেবারে কাতর হয়ে উঠেছিল। আষাঢ় মাস পড়তে না পড়তেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। যেন থামার নামই নিচ্ছেনা। বর্ষাকাল দেখতে যতই ভালো লাগুক না কেন, এই সময়টা অসুখ-বিসুখ হওয়ার জন্য একেবারে উপযুক্ত সময়। বিশেষ করে শিশুদের পক্ষে একেবারেই ভালো সময় নয়।


সামান্য একটু বৃষ্টিতে ভিজলে তাদের কাবু করে ফেলছে এই বর্ষাকাল। বর্ষাকালে বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ এতটাই বেশি থাকে যে ব্যাকটেরিয়া এবং জীবানুর উপদ্রব অতিমাত্রায় বেড়ে যায়। বিভিন্ন ধরনের পোকা মাকড় এবং মশার উপদ্রব এই সময়ে বেশি বাড়ে। তাই বড়রা এই সময়টাকে কোনরকমে সামাল দিতে পারলেও, শিশুরা কিন্তু এই সময়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। শিশু বিশেষজ্ঞ এবং চিকিত্সকেরা এই সময়টাতে শিশুদের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 


শিশু যেন কোন রকম ভাবে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সেই দিকটা খেয়াল রাখতে হবে বাবা মাকেই। তবে শিশুদের নিয়ে বড়ই চিন্তায় রয়েছেন তাদের বাবা-মা। এই বর্ষা থেকে তাদেরকে কিভাবে রক্ষা করা যায়? বাচ্চাদের কিভাবে এই বর্ষাকালের অসুখ-বিসুখ থেকে রক্ষা করবেন? যত্ন নেবেন? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক -


১. শরীর শুকনো রাখা :

শিশুরা যেন কোন রকম ভাবে এই সময় তার জামাকাপড় বা তার হাত-পা ভিজিয়ে না ফেলে, যদিওবা খেলার ছলে ভিজিয়ে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল রেখে তা মুছে ফেলে হাত পা গরম করে রাখা ভালো।


সবসময় গরম জামা কাপড় এবং শুকনো জামা কাপড় যেন পরে থাকে সেই দিকটা খেয়াল রাখা জরুরী।


২. জল ফুটিয়ে খাওয়ানো :

শিশুর শরীরে যথাযথ হাইড্রেশন এর প্রয়োজন হয়। তাই জলকে ফুটিয়ে ব্যবহার করুন। সাধারণত বর্ষাকালে ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়। সেই জন্য বাচ্চাদের হজম শক্তি অনেকটাই কম থাকে এবং যেকোন অসুখ বাচ্চাদের আগে আক্রমণ করে।


তাই জলকে ভালো করে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে তবে তাকে খাওয়ানো ভালো। তার যদি কোন খাবার তৈরি করা হয় তাহলে ফোটানো জল দিয়ে তৈরি করা উচিত।


৩. শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন :

যতটা সম্ভব শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে পরিষ্কার জায়গায় রাখতে চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের প্রতিদিন স্নান করান। শরীরের সাথে সাথে শরীরের সমস্ত ভাঁজযুক্ত জায়গাগুলোকে সুন্দর করে পরিষ্কার করে শুকনো রাখার চেষ্টা করুন।


শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে স্নানের আগে হাতের তালুতে তেল নিয়ে ঘষে সেই গরমে সারা শরীরে তেল ম্যাসাজ করুন। গা মোছার জন্য পরিষ্কার নরম তোয়ালে ব্যবহার করুন। যেটা শুধুমাত্র তার গা মোছাতেই যেন ব্যবহৃত হয়। বেশি চাপাচাপি না করে আলতো করে গা মোছান।


৪. হালকা পোশাক পরানো :

এই সময় পোশাক অবশ্যই শুকনো এবং হালকা হওয়া জরুরী। বর্ষাকালে গরম এবং তার সাথে স্যাঁতস্যাঁতে অস্বস্তিকর পরিবেশ থাকে। তাই শিশুকে হালকা সুতির জামা পরিয়ে রাখুন।


বাচ্চার গায়ে কখনো স্যাঁতস্যাঁতে পোশাক রাখবেন না। বাচ্চাদের ত্বক সেনসিটিভ হয়, সেই কারণে ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে।


৫. বাড়ি ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন :

অপরিচ্ছন্নতা, ধুলোবালি, নোংরা পরিবেশ, এগুলো কিন্তু বাচ্চাদের অসুস্থ হওয়ার মূল কারণ। তাই অন্যান্য সময়ের পাশাপাশি বর্ষাকালে বিশেষ করে বাড়ীর ভেতর এবং বাইরে সব দিকটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন। প্রাকৃতিক উপাদান যুক্ত কীটনাশক ব্যবহার করুন আগাছা পরিষ্কার করতে এবং আশেপাশের মশা যাতে না আসে সেইজন্য।


বাগান, বাথরুম, এবং আশেপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। ঘরের ছাদ টাও পরিষ্কার করতে ভুলবেন না যেন। যেখানে সেখানে বড়রা থুথু ফেলবেন না, যেখান থেকে বাচ্চারা হয়তো চলাফেরা করতে পারে। যেখানে সেখানে জল জমতে দেবেন না এবং স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন বাচ্চা এবং মা।


৬. ডায়াপার কম ব্যবহার করুন :

যেখানে সেখানে প্রস্রাব করার ভয়তে বাচ্চাকে সবসময়ের জন্য বাড়ির ভিতরেও ডায়াপার পরিয়ে রাখবেন না। এতে তাদের ত্বকে ইনফেকশন হতে পারে। তাদের ত্বকে হাওয়া বাতাস লাগানোর প্রয়োজন আছে, তবে বাইরে যখন বেরোবেন তখন ডায়াপার ব্যবহার করতেই পারেন।


তবে বাড়ির ভিতরে তাকে ডায়াপার ছাড়াই রাখুন। এটা তাদের ত্বক এর পাশাপাশি শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর সারাক্ষণ ডায়াপার ব্যবহার।


৭. মশা ও কীটপতঙ্গ থেকে সাবধান :

বিশেষ করে এই মশা, কীটপতঙ্গ এই বর্ষাকালে একেবারে যেন বংশবিস্তার করে ফেলে। এর প্রকোপে মানুষ একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। জমা জলে মশা ডিম পাড়ে, তাই যেখানে সেখানে জল জমতে দেবেন না।


প্রয়োজনে মশারি অবশ্যই ব্যবহার করবেন, এবং কীটপতঙ্গ থেকে বাচ্চাকে সাবধানে রাখার চেষ্টা করবেন। এমনকি বর্ষার শুরুর আগেই বাড়িতে পেস্ট কন্ট্রোল ট্রিটমেন্টও করিয়ে নিতে পারেন।


৮. ঘরের তাপমাত্রা ঠিক রাখার চেষ্টা করুন :

ঘরের তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। খুব বেশি ঠান্ডা খুব বেশি গরম যাতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরী।


বিশেষ করে খুব শিশু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে। বাচ্চার বিছানাতে হালকা সুতির চাদর ব্যবহার করুন। ঠান্ডা ও গরম অনুযায়ী বাচ্চার গায়ে কোন কিছু ঢাকা অথবা খুলে রাখতে পারেন।


৯. ভিড় বা অতিরিক্ত লোকজন এড়িয়ে চলুন :

যেকোনো শিশু কিন্তু অতিরিক্ত লোকজন পছন্দ করে না। তারা ভিড় থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করে। বেশি কথাবার্তা, লোকজন তাদের কে চমকে উঠতে বাধ্য করে।


তার উপরে তো একে বর্ষাকাল, সাথে আছে করোনা সংক্রমনের ভয়। তাই সবদিক থেকে চিন্তা করে বাচ্চাদের ভিড় থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। বিশেষ করে প্রয়োজন না থাকলে বাচ্চাদের বাড়ি থেকে বের করার কোনো প্রয়োজন নেই।


অনেক মায়েরাই হয়তো এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল, তবে অনেক মায়েরাই এসব সম্বন্ধে হয়তো নাও জানতে পারেন। তাই বাচ্চাকে এই স্যাঁতস্যাঁতে অসুখ যুক্ত বর্ষাকালের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে এই টিপসগুলো কাজে লাগাতেই পারেন। আপনার শিশু সুন্দর ও সুস্থ থাকুক।