একজন পূর্ণাঙ্গ ওয়েভ ডেভলপার হওয়ার ধাপ সমূহ
একজন পূর্ণাঙ্গ ওয়েভ ডেভলপার হওয়ার ধাপ সমূহ। এই আর্টিকেলে দেখানো ধাপগুলি অনুসরণ করলে একজন পূর্ণাঙ্গ ওয়েভ ডেভলপার হয়ে ওঠা সম্ভব।

বর্তমানে সারা বিশ্বে ওয়েভ ডিজাইন এবং ডেভলপমেন্ট ব্যাপক চাহিদা। একটি ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট করে একটি প্রতিষ্ঠান যেমন তাদের ব্যাবসার খুব সহজে চালাচ্ছে এবং ব্যাবসার পরিধি বাড়াচ্ছে তেমনি একটি ওয়েবসাইট ডেভলপমেন্ট করে একজন ডেভলপার অনেক অর্থ উপার্জন করে আসছে।
বর্তমানে বেশির শপিং ই হচ্ছে অনলাইন শপিং এর মাধ্যমে এবং এর বড় একটা অবদান রাখছে অনলাইন শপিং/ ই কমার্স ওয়েভসাইট। স্কুল/কলেজ, হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , অনলাইন টিকিট বুকিং , হোটেল ইত্যাদি ক্ষেত্রে ও বর্তমানে ওয়েভসাইট অতুলনীয় ভূমিকা পালন করছে।
ডিজাইন কি?
ওয়েব ডিজাইন, খুব সহজ করে বলতে গেলে বলতে হয়, ওয়েবসাইট তৈরির প্রক্রিয়া। সোজা কথায় ইন্টারনেটে আমরা একটা ওয়েবসাইটে যা দেখি তাই ওয়েব ডিজাইন।
একটা ওয়েবসাইট দেখতে কেমন হবে, কি রং ব্যবহার করলে ইউজারের কাছে ভালো লাগবে কিংবা কোন জিনিসটা কোন জায়গায় রাখলে ভালো দেখাবে, এসব এক সাথে করতে পারলে আপনিও হতে পারবেন একজন ওয়েব ডিজাইনার।
কিন্তু এসব করবেন কিভাবে? এসব করতে হলে আপনাকে যা যা শিখতে হবে, একটু নিচেই পেয়ে যাবেন সেগুলোর বর্ণনা। তার আগে ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে আরো একটু ধারণা নেওয়া যাক। ওয়েব ডিজাইনের কয়েকটা উপাদান রয়েছে। যেমন-
- লেআউটঃ একটা ওয়েবসাইট কিভাবে দেখাতে চান, কোন জিনিসটা কোন জায়গায় থাকবে যেমন-মেনুবার, টেক্ট কিংবা অন্য কোন উপাদান যা আপনার ওয়েবসাইটে আছে, এটা ঠিক করেই লেআউট তৈরী করা হয়। এটা আপনার কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট বলেও দিতে পারে কিংবা আপনি নিজের মতো করতে পারেন।
- রংঃ একটা ওয়েব সাইটের সৌন্দয্য নির্ভর করে রং নির্বাচন করার উপর। রং কাস্টমারের পছন্দমতো নেওয়া উচিত। তবে রং নির্বাচন নির্ভর করে ওয়েবসাইটের উদ্দেশ্য আর কিসের ওয়েবসাইট সেটার উপর।
- কন্টেন্টঃ কন্টেন্ট বলতে ওয়েবসাইটের ম্যাসেজ। কি বলতে চান সেটা ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা। ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট যেনো দরকারি আর গুরুত্বপূর্ণ হয়।
উপরের এই জিনিসগুলো মাথায় রাখলে একটা ভালো ওয়েব ডিজাইন সহজেই করা সম্ভব। এর বাইরেও কিছু জিনিস আমাদের জানা উচিত সেগুলো হচ্ছে-
- নেভিগেশনঃ নেভিগেশন বলতে আমরা ওয়েবসাইটে যে মেনুবার দেখি সেটা। আপনার ওয়েবসাইটের সবগুলো বিষয় যেনো সহজেই ইউজার খুঁজে পায় কিংবা সার্চ করতে পারে, এই জন্য নেভিগেশন ব্যবহার করা।
- মাল্টিমিডিয়াঃ মাল্টিমিডিয়া বলতে ভিডিও কিংবা অ্যানিমেশন ব্যবহার করা, যেন ইউজার আপনার বক্তব্য বা ম্যাসেজ সহজেই বুঝতে পারে।
- গ্রাফিক্সঃ গ্রাফিক্স বলতে লোগো, ছবি, আইকন এ-সব, যা একটা ওয়েবসাইটের সৌন্দয্য বৃদ্ধি করে । সঠিক জায়গায় সঠিক জিনিস বসাতে পারলেই হবে।
- ফন্টঃ আপনি যেই ওয়েব ডিজাইন করুন না কেন, ওই ওয়েবে যে টেক্সট্ ব্যবহার করবেন তার ফ্রন্ট যেনো ভালো হয়। কেননা, বিভিন্ন ধরণের ফন্ট বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে সুন্দর করে। ফ্রন্ট বলতে যে লেখাগুলো দেখাবেন সেগুলোর স্টাইল।
তো চলুন দেখা যাক একটা ওয়েভসাইট ডেভলপমেন্ট করতে গেলে আমাদের কী কী বিষয় শিখা প্রয়োজন:
১. এইচটিএমএল(HTML):
HTML এর পূর্ণরূপ Hyper Text Markup Language. ওয়েভসাইট শেখার প্রথম ধাপ হলো HTML. একটা ওয়েভসাইট এর স্ট্রাকচার করা হয় শুধুমাত্র HTML. এটা কোডিং করার জন্য যে কোন একটা কোড ইডিটর প্রয়োজন এবং কোড রান করার জন্য যেকোন একটা ব্রাউজার দরকার।
২. সিএসএস(CSS):
CSS এর পূর্ণরূপ Cascading Style Sheet. এটা ব্যবহার করে HTML এর স্ট্রাকচার এর ডিজাইন করা হয়।
এবং এইটার মাধ্যমে ওয়েভসাইট এর সুন্দর একটা লুক দেওয়া হয় এবং CSS ব্যবহার করে ওয়েভসাইট এ বিভিন্ন ধরনের এনিমেশন যুক্ত করা যায়।
৩.জাভাস্কিপ্ট(JavaScript):
জাভাস্কিপ্ট বলা হয় একটা ওয়েভসাইট প্রাণ। বিশ্বে জাভাস্কিপ্ট এর চাহিদা এবং ব্যবহার ব্যপক।Loop,Condition, Count, Array, Number, String ইত্যাদি ম্যাথমেটিক্যাল অপারেশন ব্যাবহার করার জন্য জাভাস্কিপ্ট ব্যাবহার করা হয়। একটি ওয়েভসাইট ডেভলপমেন্ট করার জন্য জাভাস্কিপ্ট এর ব্যাবহার অতুলনীয়।
৪.বুটস্ট্রাপ(Bootstrap):
এটি একটি CSS ফ্রেমওয়ার্ক। এটির সাহায্যে খুব অল্প সময়ে, অল্প কোডিং এর মাধ্যমে কিছু CSS class and id ব্যবহার করে আমরা একটি রেস্পন্সিভ ওয়েভসাইট বানাতে পারি।
৫.পিএইসডি টু এইচটিএমএল(PSD To HTML):
এইচটিএমএল(HTML), সিএসএস(CSS), জাভাস্কিপ্ট(JavaScript), বুটস্ট্রাপ(Bootstrap) এগুলা শেখার পর এগুলা ব্যাবহার করে একটা পূর্ণঙ্গ একটা ওয়েভসাইট এর ডিজাইন করতে পারি।
এবং এর জন্য অনলাইন থেকে অনেক PSD(Photoshop) website template Download করে হুবুহু এই PSD কে HTML এ রূপান্তর করতে পারি। যার ফলে আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ ওয়েভসাইট এর ডিজাইন সম্পন্ন করতে পারি।
৬. ওয়ার্ডপ্রেস(WordPress):
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় CMS(Content Management System) এই ওয়ার্ডপ্রেস। এটি ব্যবহার করে কোন রকম কোডিং জ্ঞান ছাড়া খুব অল্প সময়ে খুব সুন্দর একটি ওয়েভসাইট তৈরি করা যায়।
বিভিন্ন ধরনের থিম এবং প্লাগিন ব্যবহার করে এই ্ওয়েভসাইট তৈরি করা যায়। ওয়ার্ডপ্রেস সম্পুর্ন ফ্রি সোর্স । থিম এবং প্লাগিন ফ্রি ও আছে প্রিমিয়াম ও আছে। এটি খুবই জনপ্রিয় একটি ফ্রি সোর্স CMS(Content Management System)।
৭.পিএইসপি(PHP):
পিএইসপি(PHP) এর পূর্ণরূপ Hypertext Preprocessor. পিএইসপি(PHP) ব্যবহার করে ওয়েভসাইট ডেভলমেন্ট করা হয়। PHP এর ফাইল টাইপ .php হয়। Print, Variables, String , Number , Operator, Condition , Loop, Array,Function ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশন করা হয়।
এছাড়া Login , Register Page তৈরি করা হয় পিএইসপি(PHP) এর মাধ্যমে। স্কুল/কলেজ, হাসপাতাল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান , অনলাইন টিকিট বুকিং , হোটেল ইত্যাদি PHP ব্যবহার করে ডেভলপমেন্ট করা হয়।
৮.মাইএসকিউএল(MySQL):
সাধারণত একটা ওয়েভসাইট এর যে ডাটাবেস থাকে তার সকল অপারেশন যেমন Database Create, Edit, Delete, Show, Connection এগুলা মাইএসকিউএল এর মাধ্যমে করা হয়।
একটা ওয়েভসাইট এ ডেভলপমেন্ট এর জন্য এটা শেখা অনেক গুরুত্বপূণূ।
৯. লারাভেল(Laravel):
লারাভেল হচ্ছে একটি পপুলার ওয়েভ ফ্রেমওয়ার্ক। অনেক ভালো সিকিউরিটি এর মাধ্যমে একটি ওয়েভসাইট লারাভেল এর মাধ্যমে ডেভলপমেন্ট করা হয়। লারাভেল এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় MVC(Model, view , controller). এছাড়াও রয়েছে Routing, Migration, Middleware, Folder Structure ইত্যাদি শিখে নেয়ার মাধ্যমে লারাভেল শেখা যায়।
খুব সহজে একটা দুইটা কমান্ড এর মাধ্যমে লগইন সিস্টেম তৈরি করা যায়। এছাড়া আরো অনেক সুবিধা আছে এই লারাভেল এর। বড় বড় কম্পানির বেশিরভাগই এই লারাভের দিয়ে সাইট ডেভলপ করে থাকে। এটি একটি ওপেন সোর্স ফ্রি ওয়েভ ফ্রেমওয়ার্ক।
১০. একটি পূর্ণাঙ্গ প্রোজেক্ট(Full Project):
উপরোক্ত বিষয় গুলা ভালভাবে শেখা হলে কয়েকটি ভাল পূর্ণাঙ্গ প্রযেক্ট তৈরি করতে হবে এবং বেশি বেশি করে প্রাকটিস করতে হবে। তাহলে একজন পূর্ণাঙ্গ ওয়েভ ডেভলপার হয়ে ওঠা সম্ভব।