‘ওরা’ এখানে এখনো আসে

কিছু সত্য ঘটনা অবলম্বনে ভৌতিক গল্প। এখানে কিছু সত্য আর কাল্পনিক ঘটনা নিয়ে গল্পটি রচিত। গল্পটা শুরু হয় উমাকে দিয়ে। কিছু অলৌকিক ঘটনা তার সাথে ঘটে থাকে। তারপর তার পরিবারের সাথেও। গল্পের গভীরে জানা যায় ওরা নামের এক আত্মার। কেন এরকম ঘটনা ঘটেছে সেটা জানা যায় গল্পের শেষের দিকে।

‘ওরা’ এখানে এখনো আসে
‘ওরা’ এখানে এখনো আসে


গল্পটা
কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না যতো বার ঘটনাটা মনে করি গা শিউরে উঠে আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। সবার সাথে বসে টিভি দেখছিলাম। টিভিতে তখন ভুতের মুভি চলছিলো। আমি আবার ভৌতিক গল্প, মুভি এইসব একটু বেশি পছন্দ করি। তাই ভুতের মুভি শুরু হলেই খুব কৌতূহল নিয়েই দেখি। সেদিন রাত নয়টা বাজে আমরা সবাই মিলে মুভিটা দেখছিলাম। ভুতের মুভিতে তখন ভয়ানক দৃশ্য চলছিলো।


ঠিক 
তখনই আমাদের ঘরের দরজা হঠাৎ করে খুলে গেলো। সবাই ভয় পেয়ে উঠলো। অবশ্য ঘরের দরজা হাল্কাভাবে লাগানো ছিলো। সবাই ভাবলো বাতাসে হয়তো খুলে গেছে। তারা আবার মুভি দেখায় মনোযোগী হলো। কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হয়নি। আমি দরজার দিকেই গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। তখন দেখতে পেলাম কুচকুচে কালো রঙের একটা বিড়াল ঘড়ে ঢুকলো। আমি বিড়ালটাকে হুস হুর করে তাড়াতে গেলে।

আম্মু বললো: উমা কি করছিস? আওয়াজ করছিস কেন। তোর জন্য ভালোভাবে একটা মুভিও দেখতে পারি না

উমা: আম্মু আমি এটা কালো বিড়াকে রুমে যেতে দেখছি।

আম্মু: যা তাহলে তাড়ায় দিয়ে আয়।

উমা: না আম্মু আমি একা যাবো না। আমার ভয় করে।

আম্মু: উফফ! এই মেয়েকে নিয়ে পারি না। চল আমার সাথে।

(আমি আর আম্মু মিলে সব রুম চেক করলাম , বিড়ালকে দেখলাম না। পালাবেই বা কিভাবে রুমে জানালা গুলোও বন্ধ ছিলো )

আম্মু: কই বিড়াল? তুই না বিড়াল দেখলি ? কই বিড়াল? সারাদিন ধরে ভুতের মুভি দেখিস আর এইরকম উল্টা পাল্টা কল্পনা করিস।

( আমি বকা শুনে আমার রুমে চলে গেলাম )

কিন্তু কে জানতো এখান থেকেই সব শুরু।


আমি
ওই ঘটনাটা পুরোপুরি ভুলে গেলাম। ভাবলাম হয়তো আমার হ্যালুসুলেশন হয়েছে

কিন্তু

এক সপ্তাহ পর ,

আম্মু: উমা ঘুমাস না কেন ? শরীর খারাপ করবে তো। রাত ২টা বাজে তুই এখনো ঘুমাস নাই।

উমা: আম্মু এইতো এই রচনাটা লিখা শেষ হলেই ঘুমাতে যাবো।

(রচনা লিখা শেষ হলে , ফ্রেশ হয়ে আসলাম ঘুমাতে শীতের রাতে এমনেতেই একটু রাতকে অনেক রাত মনে হয় , আর তখন তো গভীর রাত ছিলো। আমার কেন যেন একটু ভয় করলো। আমি শুয়ে পড়লাম। সেদিন প্রচন্ড শীত ছিলো। কেন যেন ঘুম আসছিলো না। হয়তো শীতের জন্য। আমার রুমে আমি একাই ঘুমাই। আমার পড়ার টেবিলের পাশেই কম্পিউটার টেবিল।


মনিটরের
ব্লু লাইটা জ্বলছিলো আর নিভছিলো। আস্তে আস্তে ঘরটা কুয়াশায় ভরে যাচ্ছে আর মনিটরের লাইটের আলো আমার মুখের উপর এসে পড়ছে। আমি সেটার দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ একটা ছায়া বাতাসের গতিতে আমার চোখের সামনে দিয়ে গেলো। আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। আমার হাত পা ভয়ে অবশ হয়ে আসলো। আমার হৃদপিন্ড ধুক ধুক করছে। আমি চিৎকার করতে পারছিলাম না।


মনে
হচ্ছে কে যেন আমার মুখ চেপে ধরে আছে। তখন দেখলাম আমার খাটে কে যেন উঠছে। আস্তে আস্তে আমার পা থেকে আমার মাথার দিকে আসছে। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। এমন ভান করলাম যেন ঘুমাচ্ছি। সেই ছায়ার মতো একটা আমার কানে এসে কি জানি বললো। তার শ্বাস আমার কানে গরম বাতাসের মতোন লাগলো। কি বললো আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই। এমন শব্দ যেটার ব্যাখ্যা আমি কাউকে বুঝাতে পারবো না। এইভাবেই রাত কেটে আজানের আওয়াজ ভেসে আসছে। আর আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম।


পরদিন
সকালে স্কুলে যেতে দেরি হলো। ছুটির পর বান্ধবীকে বললাম গতকাল রাতে আমার সাথে কি ঘটেছিলো। তারা ঘটনা শুনে বেশি একটা গুরুত্ব দিলো না। বরং মজা করলো আর বললো তুই কাল রাতে অনেক রাত জেগে পড়েছিস তাই হয়তো এমনটা হয়েছে। আমি বললাম হয়তোবা।


মনে মনে ভাবলামমানলাম সব হ্যালুসুলেশন কিন্তু সেই কথা , গরম বাতাস আমি সব নিজে অনুভব করেছি। তাহলে কি সব মিথ্যা নাকি সত্যি।

কিছুদিন পর,

আম্মু: উমা তুই রাতে কার সাথে কথা বলিস?

উমা: ( অবাক হয়ে) মানে কি আম্মু আমি আবার কার সাথে কথা বলবো। আমার তো ফোনও নাই যে কারো সাথে কথা বলবো। হুহ!

আম্মু: তাহলে রাতে ঘুমের তালে বিড় বিড় করিস বুজেছি।

উমা: হুম হয়তো।

সেদিন রাতে আম্মু আবার শুনতে পায় বিড় বিড় আওয়াজ।

আম্মু: আমার মেয়েটাকে নিয়ে সত্যি আর পারিনা। ঘুমের মধ্যেও আমাকে যন্ত্রনা দেয়। নাহ যেয়ে থামাই ওঁকে।

( উমার রুমে যেতেই দেখলো আওয়াজটা উমা করছে না অন্য কোথাও থেকে হচ্ছে। উমার মা তার রুমের জানালা লাগিয়ে দিলো। তখন আওয়াজ টাবন্ধ হয়ে গেলো।

আম্মু: এই মেয়েটাকে যে কে বিয়ে করবে। এতো অবহেলা করে চলে যে রুমের জানালা পর্যন্ত বন্ধ করে ঘুমায় না। চুরি হলে তখন বুঝবে।

( উমার মা রুম থেকে চলে যাবার পর পর আবার আওয়াজ শুরু হয়)

আম্মু: ওই যে আবার শুরু করেছে বুঝি বিড় বিড় করা।

(উমার মা উমার রুমে ঢুকতেই দেখলো কেউ উমার পাশে বসে আছে। সাথে সাথে উমার মা চিৎকার করে ওঠে। চিৎকার শুনে উমা ঘুম থেকে জেগে উঠে,উমার বাবাও চলে আসে। )

আব্বু: কি হয়েছে। এতো রাতে কেন চিৎকার করছো।

আম্মু: .. ..আমি ..আমি দেখলাম কি যেন একটা উমার মাথার পাশে বসে বিড় বিড় করছে। আমি তো ভাবতাম উমা ঘুমের মধ্যে বিড় বিড় করে। কিন্তু না গো না আমার উমা এমনটা করে না। এমন করে ওই জিনিসটা।

ওই ঘটনার পর থেকে আম্মু একটু অসু্স্থ হয়ে পড়ে। ওইদিনের পর আর বিড় বিড় আওয়াজটা শুনি না। গল্পটা এখানেই শেষ নয়। এর পর যে ঘটনা ঘটেছে সেটার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।

আম্মু: উমা টেবিলে খাবার দেওয়া আছে খেয়ে যা।

আমি না খেয়ে চলে গেলাম স্কুলে। আম্মু সেটা খেয়াল করেনি।

আম্মু: উমা এই উমা নাস্তা করতে আয়। খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলো তো। কিরে তোর চুল এত এলোমেলো কেন। স্কুলে যাবি না। আয় নে এই ডিম খা। আমি রান্নাঘর থেকে তোর জন্য জুস নিয়ে আসছি।


কিরে
মেয়েটা গেলো কই। মাত্রই দেখলাম টেবিলে বসে ছিলো। দেখতে দেখতে গায়েব হয়ে গেলো।


মার
আর বুঝতে বাকি রইলো না এটা কে ছিলো। পরদিনই আব্বুর সাথে কথা বললো বাসায় হুজুরকে আনার জন্য। আমিও শুনলাম সে কথা। তারপর রাতে ঘুমানোর আগে আম্মু আমার রুম চেক করলো , দোয়া দুরূদ শরিফ পড়ে আমাকে ফু দিলো। হাজার হোক মার মন তো।

সেদিন আমি একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।


কি
সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে তুমি। কি নাম তোমার?


আমার
নাম ?


হ্যাঁ
তোমার নাম। তোমার নাম কি ?

আমার নাম ওরা।

কি সুন্দর নাম। কই থাকো তুমি?

আমি তো তোমার সাথে থাকি। এটাই তো আমার বাড়ি।

আমার সাথে থাকো মানে . আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তুমি আমাকে মেরেছো। আমি তোমাকেও মেরে ফেলবো।

ছাড়ো ছাড়ো আমার গলা ছাড়ো। আহ! আমি শ্বাস নিতে পারছিনা। আম্মু আম্মু আম্মু……..


আম্মু
:
অন্য রুম থেকে ছুটে এসে উমা.. উমা.. কি হয়েছে মা। উঠ ঘুম থেকে উঠ। ভয় পাস না মা। এই যে আমি।

উমা: মাহ ! মাওরা .. ওরা আমাকে মেরে ফেলবে মা।

আম্মু: খারাপ স্বপ্ন দেখছিস মা। এমন কিছু হবে না। এই যে মা আছি না। ভয় পায় না বাচ্চা আমার।

উমার বাবা আগামীকালের মধ্যেই তুমি হুজুর নিয়ে আসবে। আমার মেয়ের কিছু হলে আমি শেষ হয়ে যাবো (কান্না)


পরদিন
সকালে বড় হুজুরকে নিয়ে আসা হলো।

হুজুর: এই বাড়িটা দেখেই মনে হচ্ছে এর সাথে ভুল কিছু ঘটেছে।

আপনারা সবাই অন্য রুমে যান। এই রুমে কেউ আসবেন না। আমি কথা বলে দেখতে চাই কি ঘটেছে এই বাড়িতে।


সবাই
অন্য রুমে চলে গেলে হুজুর আমার রুমে যেয়ে দরজা লক করে দিলো।

হুজুর: কে তুই ?

ওরা: আমি ওরা।

হুজুর: কি চাই তোর ? সবাইকে এমন বিরক্ত করছিস কেন?


ওরা
:
এইটা আমার বাড়ি। আমার বাবা জমিদার বিশ্বনাথের বাড়ি। আমি তখন ছোট। আমার মা বাবা জরুরি কাজে একদিন বাসার বাইরে যায়। আমাকে রেখে যায় বিস্বস্ত কাজের লোকদের কাছে। তারা টাকার লোভে পড়ে আমাকে হত্যা করে আর পুঁতে রাখে এই বাগানে। এইটা আমার বাড়ি। আমি যাবো না।

হুজুর: এই ঘটনা ঘটেছে অনেক আগে। এখন আর জমিদারী নাই। সেই বাগান এখন বাড়ি হয়ে গেছে। তুই চলে যা।

ওরা: না আমি যাবো না।

হুজুর: তুই কি করলে এই বাড়ি ছাড়বি?

ওরা: আমার আত্মার শান্তি। একশত কাপড় আর দুইটা ছাগল বলি দিয়ে অসহায়দের মাঝে দান করলে আমার আত্মা শান্তি পাবে।

হুজুর: বেশ তাই হবে। তবে আমাকে কথা দে তুই এখান থেকে চলে যাবি। আর কাউকে কোনো ক্ষতি করবি না।

ওরা: হা! হা! হা! কথা দিলাম।

তারপর হুজুরের কথা মতো সব হলো। ওরাকেও আর দেখলাম না। সব স্বাভাবিক চললো।


দুই বছর পর,

ঘুমের মধ্যে আমার কানের পাশে কে যেন গুন গুন করছে।

তৎক্ষণাৎ বুঝে ফেললাম এটা কার কাজ।

হ্যাঁ

ওরাএখানে এখনো আসে।