কনটেন্ট মার্কেটিং কি এবং কেন ?
কনটেন্ট মার্কেটিং এর খুঁটিনাটি জানতে পড়ুন কনটেন্ট মার্কেটিং কি এবং কেন ? সম্পূর্ণ বাংলায়

কনটেন্ট একটি ইংলিশ শব্দ, সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ডিজিটাল মার্কেটিং এ কাস্টমার এর সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য যা কিছুই ব্যবহার করা হয় তাই কনটেন্ট। এই যেমন ধরুন, আপনার ব্যবসা কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে একটি ভিডিও বানালেন, তাহলে তা হবে ভিডিও কনটেন্ট।
আপনার ক্রেতাকে বোঝানোর জন্য একটি লেখা লিখলেন, পণ্যের বিবরণ দিয়ে, তার উপকারিতা নিয়ে, তাহলে তা হবে লিখিত কনটেন্ট, আবার কোনো গ্রাফিক্স শেয়ার করলেন, তাহলে তা হবে গ্রাফিকাল কনটেন্ট। এবংকি পণ্যের কথা বলার জন্য আপনি যে ক্যাপশনটি ব্যবহার করলেন তাও কিন্তু কনটেন্ট।
তাহলে কনটেন্ট হচ্ছে সেই সব কিছু যা আমরা ডিজিটাল পৃথিবীতে শেয়ার করি বা পাবলিশ করি।
কনটেন্ট মার্কেটিং কেন?
মার্কেটিং এর প্রধান কাজ হচ্ছে ক্রেতাকে আপনার পণ্য বা সেবার প্রতি আগ্রহ তৈরী করা, যেন তারা বার বার আপনার কাছে ফিরে আসে আপনার পণ্য বা সেবাটি গ্রহণ করার জন্য। কিন্তু কাজটা কি এতটাই সহজ ? একজন ক্রেতা বেশ কিছু ধাপ পার করে একটি ব্র্যান্ডকে চিনতে পারেন। ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এই ধাপ গুলোকে ৫টি ভাগে ভাগ করেছে, এই ধাপ গুলো হলো
১. সমস্যা চিহ্নিত করুন :
কোনো কিছু ক্রয় করার ক্ষেত্রে এই পর্যায়টি হচ্ছে ক্রেতার জন্য প্রথম ধাপ। এই পর্যায়ে একজন ক্রেতা কোনো একটি সমস্যার মুখোমুখি হন, কিন্তু তিনি জানেন না কিভাবে তার সমাধান করবেন।
২. তথ্য অনুসন্ধান :
বুঝতেই পারছেন, এই পর্যায়ে এসে ক্রেতা তথ্য সংগ্রহ করেন, মূলত খুঁজতে চান, কিভাবে তার সমস্যার সমাধান করা যায়। এই পর্যায়ে কাস্টমার তার বন্ধদের জিজ্ঞাসা করে, বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা পেপার পত্রিকা খুঁজে তথ্য সংগ্রহ করে।
৩. বিকল্পের মূল্যায়ন :
এই পর্যায়ে কাস্টমার বেশ কিছু বিকল্পের সন্ধান পেয়ে যান। যেমন ধরুন আপনি টিভি কিনবেন, এই পর্যায়ে এসে আপনি তিনটা টিভি কে তালিকায় রাখলেন। ঠিক করলেন এই তিনটার মধ্যে যে কোনো একটিকে কিনবেন। তো এই পর্যায়ে এসে ঠিক যাচাই বাছাই করতে লাগলেন কোনটা কিনলে ভালো হবে। কোনটা বেশি ভালো ?
৪. ক্রয়ের সিদ্ধান্ত
বুঝতেই পারছেন, সব কিছু চিন্তা ভাবনা করে এই পর্যায়ে এসে একজন কাস্টমার পণ্য ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেন।
৫. বিক্রয় পরবর্তী আচরণ
এই ধাপটি হচ্ছে সর্ব শেষ ধাপ। এই ধাপে এসে আপনি পণ্যের গুণগান গাইবেন অথবা বদনাম করবেন, নির্ভর করছে পণ্য বা সেবাটি নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার উপর।
এই যে ৫টি ধাপ, এই ৫টি ধাপ নিয়েই মূলত কনটেন্ট মার্কেটিং। কারণ এই ৫টি ধাপেই আপনার কাস্টমার ইন্টারনেট এর সাহায্য নিবে, ইন্টারনেট এর মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। অর্থাৎ এটাই মোক্ষম সুযোগ আপনার কাস্টমার এর সাথে সক্ষতা করে নেয়া।
আর এই সক্ষতাটি করতে পারেন ঠিক এইভাবে :
১. সমস্যা চিহ্নিত করুন :
আপনার কাস্টমার যখন এই পর্যায় আছে তার মানে সে এখনো আপনার ব্র্যান্ড সম্পর্কে জানে না। সে জানে না এই সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায় কি। মনে করুন আপনি একজন পোশাক বিক্রেতা, আপনি বিয়ের পোশাক, পার্টি এর জন্য পোশাক ইত্যাদি বিক্রয় করে থাকেন। এখন ধরুন রুপা নামে একজন তার বন্ধুর বিয়েতে যাবে, কিন্তু সে জানে না, সে কি পরবে, সুতরাং সে গুগল কে জিজ্ঞাসা করলো, বিয়েতে কি পোশাক পরে যাওয়া যায়। অথবা, বিয়ের পোশাক, অথবা লিখলো বিয়েতে পরে যাবার জন্য সুন্দর পোশাক।
একটু লক্ষ্য করলে দেখবেন তার এই জিজ্ঞাসাগুলোর একটিতেও কোনো ব্র্যান্ড এর নাম নেই। কারণ সে জানে না কোন ব্র্যান্ড এর পোশাক ভালো। সুতরাং আপনি একটি কনটেন্ট লিখে ফেললেন , " বাংলাদেশিদের জন্য বিয়ের ট্রেন্ডিং পোশাক " বুঝতেই পারছেন রুপা কিন্তু আপনার কনটেন্ট টিতেই ক্লিক করবে। অথবা আপনি একটি চ্যানেল খুললেন যেখানটায় ফ্যাশন ট্রেন্ডিং নিয়ে আলোচনা করেন, সেখানটায় ও কিন্তু রুপার মতো কাস্টমাররা ভিড় জমাবে। কিন্তু কথা হচ্ছে তারা কি পড়েই বা দেখেই কিনে ফেলবে ?
একদম না, কিন্তু এইভাবে তারা আপনার ব্যবসায়ের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ পাবে। আপনার ওয়েবসাইটটি ঘুরে দেখবে। অর্থাৎ আপনার দোকানটি দেখবে, এর কালেকশন দেখবে।
২. তথ্য অনুসন্ধান :
মনে করুন রুপা আপনার কনটেন্ট পরে বুঝলো বিয়েতে এখন সবাই শাড়ি পরে যায়। তার মানে রুপা জেনে গেছে তার সমস্যার সমাধানটি কি। এখন সে এই সমাধানটি নিয়ে বিভিন্ন তথ্য অনুসন্ধান করবে। যেমন সে জানতে চাইবে, ভালো বিয়ের শাড়ি, ভালো সিল্ক এর শাড়ি, নজরকাড়া সিল্কের শাড়ি।
খেয়াল করলে, দেখবেন এই পর্যায়ে এসে তার অনুসন্ধানটি কিছুটা নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। সে জানে তাকে শাড়ি পড়তে হবে, কিন্তু জানে না, কোন কোম্পানি এর শাড়ি পড়া ভালো, বা ভালো হবে। তার উদ্দেশ হচ্ছে একটি ভালো কোম্পানির শাড়ি খুঁজে বের করা যাদের কাছে বিয়ে অথবা পার্টিতে পরে যাবার জন্য ভালো শাড়ির কালেকশন আছে।
ধরে নিন আপনার ব্যবসায়ের নাম নিলাজ। তো আপনার যে কাস্টমার এই ধাপে আছে তাদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য আপনি লিখলেন, " নিরাজের নজর কাড়া বিয়ের শাড়ি ", "নিরাজের শাড়ির কালেকশন" ইত্যাদি।
৩. বিকল্পের মূল্যায়ন :
এই ধাপে এসে আপনার কাস্টমার জেনে গেছে কোন কোম্পানি এর কাছে ভালো শাড়ির কালেকশন আছে আর কার কাছে নেই। সে অনেক ঘাটাঘাটি, রিসার্চ আর বিভিন্ন মানুষের পরামর্শ নিয়ে অনেকগুলো কোম্পানি থেকে তিনটি কোম্পানিকে নির্বাচন করেছে। এখন তার কাজ হচ্ছে এই তিনটি কোম্পানির মধ্যে থেকে একটিকে বাছাই করা।
তো আপনি যদি এই পর্যায়ে আপনার কাষ্টমেরকে ধরতে চান তাহলে আপনাকে হতে হবে অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত। বুঝতে হবে এই ধাপটিতে এসে কাস্টমার জানতে চায় কেন বা কোন কোন কারণে সে আপনার ব্র্যান্ড এর শাড়িটা কিনবে। তাই এই কাষ্টমেরকে আকৃষ্ট করার জন্য কাস্টমারদের ভালো রিভিউ, যে কাস্টমাররা শাড়ি কিনেছে তাদের অভিজ্ঞতা ইত্যাদি নিয়ে কনটেন্ট তৈরী করতে পারেন। এই ক্ষেত্রে আপনার কনটেন্টটি হতে পারে ভিডিও অথবা লিখিত।
৪. ক্রয়ের সিদ্ধান্ত
মূলত এই ধাপের জন্য আলাদা করে কোনো কনটেন্ট লিখার প্রয়োজন পরে না, কিন্তু অনলাইনে আপনার ওয়েবসাইটটি এমন হয় চাই যেন কাস্টমার অতি সহজে আপনার কাছ থেকে কাপড় কিনতে পারে। যেমন, চ্যাট বট ফিক্সড করে দিলেন যার মাধ্যমে কাস্টমার সহজে শাড়ির অর্ডার দিয়ে দিলো। কিংবা ভালো করে ঠিকানা দিয়ে দিলেন বা ফোন নম্বর যেন কাস্টমার আপনার কাছে পৌঁছাতে পারে।
৫. বিক্রয় পরবর্তী আচরণ
Vogue এই ব্র্যান্ডটির নাম হয়তো সবাই শুনেছেন। এই ব্রান্ডটি তাদের কাস্টমারদের জন্য একটি ফেইসবুক পেজ খুলে, যার নাম দেয় Vogue by Prince - #LoveVogue <3, পেজটিতে তাদের কাষ্টমেররা Vogue থেকে কেনা জামা পরে ছবি শেয়ার করে।
বুঝতেই পারছেন, এটাও একটা রিভিউ। আর এটাই হচ্ছে তাদের কাস্টমার এর বিক্রয় পরবর্তী আচরণ। কেবল এই আচরণের মাধ্যমেই তারা খুব অল্প সময়ের মাঝেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কারণ কাস্টমারদের শেয়ার করা ছবি দেখেই
- যারা সম্ভাব্য ক্রেতা তাদের একটি ধারণা হয়ে যায় Vogue এর কালেকশন সম্পর্কে
- যেহেতু ছবিগুলো সাধারণ কাস্টমাররা শেয়ার করেছে ফলে সাধারণভাবেই একটা সহজাত বিশ্বাস সৃষ্টি হয়
তো বুঝতেই পারছেন, ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড এ আপনার ব্যবসায়ের উন্নয়ের জন্য কনটেন্ট মার্কেটিইং অত্যাবশক। তবে তা হওয়া চাই বুঝে শুনে, কাষ্টমেরকে মাথায় রেখে, তাহলেই কেবল কনটেন্ট মার্কেটিং দিয়েই ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে আসা সম্ভব।