কপাল পোড়া সেই মেয়েটি

ছেলে হারিয়ে বিনোদিনী একবারে একা হইয়া গেল এ সংসারে! তার পরে কত বছরের পর বছর কেটে গেল এই বাড়িতে! নিয়তির নিয়মে কানাই দাসের মা বাবা পরপারে চলে গেলেন না ফেরার দেশে!

কপাল পোড়া সেই মেয়েটি
কপাল পোড়া সেই মেয়েটি


১. সীতাকে যখন লংকার রাজা রাবন হরণ করিয়া তার অন্ধর মহলে দিকে লইয়া যাইতেছিল, রাম কুঠিরে ফিরে এসে সীতাকে না দেখিতে পেয়ে কুঠিরের বাইরে জঙ্গলে এসে লক্ষণ তখন সীতাকে বৌঠান বলিয়া চিৎকার করিয়া ডাকিতে লাগিল,, কিন্তুু ততক্ষণ লংকার রাজা রাবণ তার রথে করে প্রসাদের দিকে গমন করিতেছেন!

রাম লক্ষণ দুই ভাই মিলে গভীর জঙলে সীতাকে খুঁজিতে লাগিল!


তেমনি লখাই বাড়িতে এসে মা, কে না দেখিকে পেয়ে নদীর দিকে আসিয়া গলা ছেড়ে ডাকছিল!
লখাইয়ের গলার আওয়াজ প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসছিল লখাইয়ের কানে "


দ্বি প্রহর রাতে নদীর কলকল ধ্বনি শুনিতে পারা যায়! 
আঁকাশে ভরা তারা মনে হইল জোৎস্নার রাত, চাঁদের আলো হারিয়ে যখন অন্ধকার নেমে আসে নদীর বুকে! ওখানে দেখিতে পাই নদীর বুক জুড়ে শত শত জাহাজের আলো, মিটমিট করে জ্বলে ভোর রাত পর্যন্ত! গভীর রাতের বেলায় নদী দিয়ে বড় বড় জাহাজ গুলি চলাচল করিয়া থাকে? জাহাজ গুলো এক ঘাট থাকিয়া মাল বোঝাই করিয়া আরেক বন্দরে গিয়ে নামিয়ে দেয়! সুচন্দা দেবী নদী থাকিয়া স্রান করিয়া গৃহ গমন করিতেছেন অদ্ধ লগ্ন পরিধানে!

এখন অব্দি সুচন্দা দেবীর গা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল "
কাপড়ের আঁচল দিয়ে মাথা বাধিয়া তার পর নদী থাকিয়া ধীরগতিে বাড়িতে আসিতেছিল জল :কলসি কাঁকনের করিয়া! সুচন্দা দেবীর ছেলে লখাই দুর থাকিয়া মা, মা, বলিয়া তার কাছে আসিয়া স্থির হইল!


কিছুক্ষণ মায়ের দিকে লখাই চেয়ে রহিল অবাক দৃষ্টিতে, দেখিল লখাই দুই নয়ন ভরিয়া! অতঃপর লখাই মা, কে বলিল মা আমাকে কোলে নে!


সুচন্দা দেবী লখাইয়ের মুখের বাক্য শুনে অবাক হইল না, এমন বায়না সে নিত্য দিন করিয়া থাকে, তার কথা সুচন্দা দেবী কানেই নিল না!


লখাই তার মা, কে আবার জিজ্ঞেস করিল মা, আমারে কোলে নে আর হাঁটতে পারছি না!
সুচন্দা দেবী লখাই কে বলিল, দেখ বাপ আমার সর্ব অঙ্গ যে ভেজা, এখনো চুল বেয়ে জল পড়ছে কোমরে!
শীতের সকালে স্রান করিয়া সুচন্দা দেবী ঠান্ডায় কাঁপছে,
লখাই সেই দৃশ্য কিছুক্ষণ উপভোগ করিল! অতঃপর লখাই মাকে বলিতেছে মা, আমি নদীর জলে স্রান করব ''


সুচন্দা দেবী কহিল, কি তুই নদীর জলে স্রান করবি! লখাই আগ্রহ দেখিয়া মাথা নেড়ে জবাব দিল? বলিল, হ্যাঁ আমি নদীর জলে স্রান করব!
সুচন্দা দেবী লখাই কে বলিল, ঐ দেখ নদীর জল হইতে কেমন করিয়া ধোঁয়া উড়ছে!
লখাই নদীর জলের দিকে চেয়ে রহিল, সাদা বকের দল উড়ে গেল নদীর ও পারে!


লখাই মা,কে প্রশ্ন করিল মা তোর ঠান্ডা লাগে না শীতের সকালে স্রান করলে!
সুচন্দা দেবী কহিলেন, ঠান্ডা লাগে রে বাপ অল্প '
লখাই মায়ের কষ্টের কথা শুনিয়া মন টা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল!


লখাই মা, কে বলিল, মা তাড়াতাড়ি বাড়ি চলো নইলে ঠান্ডা বেশি লাগবে! সুচন্দা দেবী লখাইকে কোলে নিয়ে বাড়ির দিকে রহনা হইল!


পথে বিশুর বাপের সহিত সুচন্দা দেবীর দেখা, বিশুর বাপকে দেখে সুচন্দা দেবী গায়ের ভেজা কাপড় দিয়ে দেহ ঢাকতে লাগল। সুচন্দা দেবী বিশুকে জিজ্ঞেস করল, বিশু নদীতে মাছ ধরিতে যাস!
বিশুর গায়ে ছেঁড়া গেঞ্জি আর পরনে একটা সাদা 
ধুতির মত উহা দিয়ে ন্যাংটি মেরে এসেছে নদীতে মাছ ধরিতে!


বিশু কহিল, জি কাকি মা, নদীতে মাছ ধরিতে যাই!
সুচন্দা দেবী বিশুর বাপ কে প্রশ্ন করে যে আপনার ভাইয়ের কোন খবর পাইছেন!
বিশুর বাপ জালটা কাঁধে আটোসাটো করে নিয়ে বলিল, আর কয়েক টা দিন লাগব!


কালকে মহাজনের কাছে গিয়েছিলাম সঞ্জয় ভাইকে জেল থেকে ছাড়ার কথা বলিতে! মহাজন কহিলেন, মামলটা জটিল তো তাই সময় একটু বেশি লাগবে, আর মহাজন আরো কইলো সঞ্জয় কে জেল থাকিয়া ছাড়াতে গেলে টাকা পয়সার দরকার আছে!


এমন বাক্য শুনিয়া মহাজন আমাকে ফিরে দিল, বলিল সময় হইলে লোকের মাধ্যমে খবর পাঠাব যা বাড়ি চিন্তা করিস না! সঞ্জয়ের বউকে একবার পাঠিয়ে দিস তো আমার কাছে!

সুবল কহিল, বউ দি যাইবেন কি একবার মহাজনের কাছে! সুচন্দা দেবী বলিল, আচ্ছা দেখি কাল কে যাইতে পারি নাকি! সুবল কইলো আচ্ছা বউ দি বাড়িতে যাও নদীতে যাই মাছ ধরিতে! এই কথা বলিয়া সুবল পথ হাঁটা শুরু করল। বিশু বলিল, লখাই যাইবি নদীতে মাছ ধরিতে!


লখাই মা, কে বলিল তা আমি বিশু দাদার সাথে নদীতে মাছ ধরিতে যাই!
সুচন্দা দেবী লখাইকে বলিল, না বাড়ি চল : লখাই মায়ের কথা অবাধ্য হইয়া সুচন্দা দেবীর কোল থাকিয়া নামার আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছে! সুচন্দা দেবী কোন ভাবে
লখাই কে কোল থাকিয়া নামতে দিবে না!


যদি নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে লখাই জলে পড়িয়া মারা যায়!
তখন সুচন্দা দেবী কেমন করিয়া একা থাকিবে, স্বামীকে পুলিশ জেলে নিয়ে গেছে এই শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারে নাই!


২.বর্ষার শেষ সময়, কিছু দিন ধরিয়া অবিরাম বৃষ্টি হইতেছে! রাস্তা ঘাট বৃষ্টির জলে এক বারে পিচ্ছিল হইয়া গেছে! ঘর থাকিয়া বের হইলেই এক পা ফেলতে মনে লাগে ভয়!


কাঁদাযুক্ত পথ হাঁটা কষ্ট দায়ক হইয়া পড়িয়াছে ! কিন্তুু যতই কষ্ট হোক না বাইরে তো যেতে হবে! ঘর থাকিয়া বাইরে বের না হইলে যে পরিবার সহ না খেয়ে উপোস থাকিতে হইবে!


কেহ কৃপা করিয়া এক মুঠো অন্নদান করিয়া যাইবে না! ঘরের মধ্যে গুমটি মেরে বসে থাকলে যে রাজার রাজ্য ফুরিয়ে যাবে! রাজার মত বসিয়া খাওয়া কয় জনের ভাগ্যে জোটে! সোনার চামচ মুখে দিয়ে তো জন্ম গ্রহণ করি নাই!


গ্রামের নাম হরিপুর ! গ্রাম খানি লোকজনে ভরপুর!
বেশি ভাগ লোক জেলে! এ গ্রামের জেলেরা  মাঝির কাজ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করে! পেটের দায়ে জেলেরা ভোর রাতে নদীতে মাছ ধরিতে যায়!


যখন কিনা ধরনীর পাখ পাখালি জেঁগে উঠে নাই! সারাদিন জেলেরা নদীতে মাছ ধরে খাওয়ার সময় টুকু পায় না! না খেয়ে নদীতে মাছ ধরে জেলেরা, সারাদিন নদীতে যা মাছ পায় বিকেল বেলা বাজারে গিয়ে বিক্রি করে!


মাছ বিক্রি করে যে টাকা পায় তা দিয়ে ডাল ভাত দুই বেলা পেট ভরে খায়! এই হরিপুর গ্রামের লোকেরা অনেক শান্তি পুর্ণ ভাবে বসবাস করে সবাই মিলে! 
গ্রামের মধ্যে বেশি ভাগ লোক জেলেরাই গরীব, 
গরীবের মধ্যে জেলেরা একবারে গরীব!


এবং নিচু জাত বলিয়া সমাজের লোকেরা আড় চোখে দেখে! যাহারা গ্রামের বড় জমিদার বা বড় লোক বাবু বলিয়া সম্বধন করিয়া থাকে তারা জেলেদের দুই চোখের বিষ! বর্ষার সময় হরিপুর গ্রামের জেলেদের দুঃখ কষ্টের সীমা থাকে না!


খড়ের ঘর বৃষ্টির জলে ভিজে ঘরের ভিতরে চুয়ে চুয়ে পড়ে! সারাদিন কাজ করার পর রাত টুকু শান্তিতে বিশ্রাম নিবে জেলেরা, একটু সুখে ঘুম দিবে! কিন্তুু নিষ্ঠুর বৃষ্টি সেই সুখ টুকু কেড়ে নেয় রাতের বেলা! 
বৃষ্টি আসিলেই বউ বাচ্চা নিয়ে বসে থাকিতে হয় , যতক্ষণ না বৃষ্টি কমে যায়!


৩.এমন ভাবে কত যে রাত কেটে যায় বৃষ্টির মাঝে সারারাত ঘুমে ঢুলুঢুলু অবস্থা!


তাহাতেই লোকজন বউ বাচ্চা নিয়ে অনেক সুখে দিন কাটায়! গ্রামের বেশি ভাগ লোকই গরীব! গরীরের মধ্যে তাহারা একবারে গরীব নিচু জাত বলিয়া লোকে জানে! যারা গ্রামের বড় গেরস্ত জমিদার তারা জেলেদের দেখলে দুর দুর করিয়া তাড়িয়ে দেয়!


বর্ষার সময় গরীব জেলেদের কষ্টের সীমা থাকে না! কারন গরীব জেলেদের ঘরের ছাউনি বছরে এক বার যে মেরামত করিবে সে সাধ্য কাহারো নেই!
জেলেরা কি করিয়া ঘরের ছাউনি মেরামত করিবে,


পেটের ভাত জোগাড় করিতে হিমসিম গায়! বছরে যে একবার ঘর মেরামত করিবে অত টাকা তাদের নাই নিরুপায় হইয়া হরিপুর গ্রামের জেলেরা কষ্ট শিকার করিয়া জীবন পার করিয়া দেয়!


এমন করিয়া চলিতেছে হরিপুর গ্রামের জেলেদের দুর্দশার জীবন কাল! যুগের পর যুগ পার হইয়া গেল কত কিছু পাল্টে গেছে মরা বৃক্ষে পত্র গজিয়ছে ফুল ফুটে ফল হয়েছে! কিন্তুু জেলেদের সেই কষ্ট এখন পর্যন্ত আছে, হয়ত তাদের জীবনের কষ্ট মরনের আগ পর্যন্ত থাকবে!


কানাই দাস চিৎকার করিয়া তার পিসি মা'কে ডাকিল!
পিসি কই গেলি তাড়াতাড়ি এ দিকে আয়! কানাই দাস ও তার পিসির ঘর একই আঙিনায় আস্তে করিয়া ডাকলেই শুনতে পারবে তার পিসি!


কানাই দাসের পিসি অনেক বছর ধরে তাদের বাড়িতে আছে! বিয়ের পর একটা বাচ্চা হয়েছিল তার কয়েক মাস পরেই তার স্বামী ইহকাল ত্যাগ করে !


স্বামী বেঁচে না থাকলে একজন নারীর স্বামীর বাড়িতে কোন মূল্য থাকে না! যে কোন কথা নিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দেয় শ্বাশুড়ী!


৪.স্বামী মারা যাওয়ার দুই দিন মাস ছিল স্বামীর বাড়ি, পরে ছেলেটারে নিয়ে চলে আসে বাপের বাড়ি!
তখন ও কানাই দাসের মা বাবা সবাই বেঁচে ছিল!


সকাল বেলা কানাই দাসের পিসি বিনোদিনী এসে হাজির হইল! কানাই দাসের বাপ তার বোন কে দেখিয়া অবাক হইল না! সে জানত বিনোদিনী ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে!


কোলো তার ছোট ছেলেটাকে নামিয়ে দিয়ে বারান্দায় বসে কাঁন্না শুরু করিয়া দিল!
তার ভাই সুবল ও তার বউ দাঁড়িয়ে রইল আঙিনায় কোন কথা বলিতে পারছে না!


কি বলিবে সে ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না সুবল বাবু!


সুবল বাবুর বউ কাছে আসিয়া কহিলেন কি ননোদি কাঁন্না করছিস ক্যান কি হয়েছেন ক আমাদের!
ছোট বাচ্চাটা কাঁন্না করছে মায়ের কাঁন্না দেখে, সুবল বাবু তার ভাগ্নে কে কোলে নিয়ে চোখের জল মুছে দিল!


তার কিছুক্ষণ পরে সব খুলে বলল, বিনোদিনীকে তার শ্বাশুড়ী অল্প একটু কথা নিয়ে ঝগড়া বাধিয়ে দেয়!
আর অকর্থ ভাষায় গালিগালাজ করিয়া থাকে সব সময়!
অনেক সহ্য করেছি কিন্তুু তার ব্যাবহার দিন দিন বেশি খারাপ হইয়া যাইতেছে!


সহ্য করিতে না পেয়ে চলে এলাম বাপের বাড়ি, দেখ ভাই 
তোরা যদি আমারে আশ্রয় না দিস তাহল মোর মরন ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না! সুবল বাবু কোন কথা বলিতেছে না গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে রইল!
সুবল বাবুর বউ কহিল, না গো ননদি এমন কথা বলিতে নেই 
অমঙ্গল হইবে! নিজের জন্য না হইলে পোলাটার জন্য হইলে তোমারে বেঁচে থাকতে হবে!


সুবল বাবু রাগ হইয়া কহিলেন, আগে বলিস নি ক্যান আমারে তুই তোর সাথে খারাপ ব্যাবহার করতেছে!
স্বামী মরে গেছে বলে তাই কি পোলার বউয়ের সাথে এমন খারাপ আচরণ করবে!


সুবল বাবু তার বউকে বলিল, ঘরে নিয়ে যা বিনোদিনী কে! স্বামীর কথার সাথে সাথে বিনোদিনীকে বলিল আসেন ননদি ঘরে আসেন,
এই কথা বলিয়া বিনোদিনী কে ঘরে নিয়ে গেল!
সুবল বাবু তার ভাগ্নে কে নিয়ে বাহিরে চলিয়া গেল!


৫.এমন করিয়া পার হইয়া যাইতে লাগল বিনোদিনী দিন কাল! ভাল ভাবেই কাটতে লাগল দিন, সুখ বুঝি তার কপালে সইলো না এক বছর পরে তার ছেলে কলেরা রোগে মারা গেল!


ছেলে হারিয়ে বিনোদিনী একবারে একা হইয়া গেল এ সংসারে! তার পরে কত বছরের পর বছর কেটে গেল এই বাড়িতে! নিয়তির নিয়মে কানাই দাসের মা বাবা পরপারে চলে গেলেন না ফেরার দেশে!


সে অনেক বছরের কথা কত কিছু হারিয়ে গিয়েছে কখনো নদীর জলে ঘর বাড়ি কখনো বা কাল বৈশাখী ঝড়ে সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এ গ্রাম বাসি,


কানাই দাসের ডাক শুনিয়া তার পিসি ঘর থাকিয়া বাহিরে বের হইলেন! কানাই দাসের পিসি বিধবা অনেক বছর হইল স্বামী মারা গিয়েছে! সাদা কাপড়ের আঁচল খানি কাঁধে ফেলিয়া বলিতেছে কি রে কানাই কি হয়েছে তোর অমন করিয়া কেউ চিৎকার করে!


কানাই দাস তার পিসিকে বলিল জালটা কোথায় যে রেখেছি খুঁজে পাইতেছি না! কানাই দাস একবারে বোকা ধরনের লোক কিছু মনে রাখতে পারে না! তার পিসি কইতাছে জাল কোথায় রাখছিস মনে না তোর কানাই! কানাই দাস কহিল, জানিলে কি আর তোরে ডাকি এই সকাল বেলায়!


কানাই দাসের পিসি কহিল, দাঁড়া দেখি কোথায় রেখেছিস!
কানাই দাসের বউ ঘর থাকিয়া বলিতে লাগিল যে ঘরের পিছনে আছে বাঁশের উপরে কাল রাতের বেলায় রেখেছে!
কিন্তুু কানাই দাসের বউয়ের কথা কেউ কারনেই নিল না বরং কানাই দাস রাগ হইয়া বলিল, কি হয়েছে তোর আবার।


তোরে নিয়ে আর পারি নে জীবনটা শেষ হইয়া গেল এখন তো মরন টুকু বাকি রইল! কানাই দাসের এমন অলক্ষ্যি কথা শুনিয়া কানাই দাসের বউ নিশ্চুপ হইয়া গেল! আর একটি বাক্য কহিল না নিরবে সব কথা শুনিল কানাই দাসের! 
কিছুক্ষণ পরে কানাই দাসের পিসি বিনোদিনী জাল আনিয়া দিল ঘরের পিছনে থাকিয়া! কানাই দাস কহিল, পিসি পুরবীর দিকে একটু খেয়াল রাখিস, আর পোলাটারে সময় মত দুধ খাওয়াস!


এমন আদেশ কানাই দাস তার পিসিকে করিল, তারপর সে জাল কাঁধে নিয়ে গুনগুন করিয়া গান গাইতে গাইতে নদীর দিকে চলিয়া গেল!
কয়েক দিন হইল কানাই দাসের বউ পুরবী প্রথম সন্তান প্রসব করিয়াছে! কানাই দাস ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করিয়াছিল পুত্র সন্তানের জন্য! ঈশ্বর তাহার মনের আশা পূরণ করিয়াছে, এখন ঠিক মত লালন পালন করিয়া বড় করতে পারলে হয়!


কিন্তুু এমন সময় পূরবীর দেখাশোনা করা ভালোমন্দ খাওয়া উচিত! দেখাশোনা করার জন্য না হয় পিসি আছে কিন্তুু ভাল খাওয়ানোর ক্ষমতা তো আমার নাই! কানাই দাস হত ভাগা তার বাপ মা কেউ বেঁচে নেই অনেক বছর হইলে মারা গিয়েছে!


কানাই দাসের বাড়ি নদী থাকিয়া কিছুদূরে অবস্থিত! একটি মাত্র ঘর সেখানেই তার বউ পুরবীকে নিয়ে বসবাস করিয়া আসিতেছে দুই বছর হইল! পাশে আর এক টি ঘর আছে তার পিসি সেই ঘরে থাকে একা মানুষ!​