কম্পালসিভ এক্সারসাইজঃ অধিক ব্যয়াম করা কি ক্ষতিকারক?
ব্যায়াম করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এটি আমরা সবসময় শুনে আসছি। তবে এই ব্যায়াম করার পরিমাণ যেদিন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তবে কি হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন অধিক ব্যায়াম করার প্রতি আসক্তি ও এক ধরনের মানসিক ডিজঅর্ডার। যার ফলে তৈরি হতে পারে নানান ধরনের সমস্যা।

ব্যায়াম করা সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একথা কারোরই অজানা নয়। তবে অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়। অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যায়াম করার ফলে হতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। সম্প্রতি ব্রিটিশ তরুণী লিসার কথা জানা যায়।
উনিশ বছর বয়সী এই তরুণী ব্যায়াম করার প্রতি এতটাই আসক্ত ছিলো যে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ম্যারাথন দৌড়ের অর্ধেকটা দৌড়াতেন এবং বাথরুমের লুকিয়ে জগিং করতেন। যাতে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়েন এই তরুণী।
পরবর্তীতে তাকে কাউন্সেলিং পর্যন্ত করতে হয়েছিল। কিন্তু আমাদের দেশে মূলত ব্যায়ামের প্রতি এ ধরনের আসক্তি খুব কমই দেখা যায়।
কিন্তু বর্তমান সময়ে তরুণ মেয়েদের মধ্যে নিজেদের সুস্বাস্থ্য এবং শারীরিক গঠন ধরে রাখার প্রবণতা ছড়িয়ে পড়েছে তাই উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যায়াম করার প্রতি আসক্তি। তবে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক বাণী দিয়েছেন।
তারা বলছেন যে অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যায়াম করা বা ব্যায়ামের প্রতি আসক্তি মানসিক সমস্যার শামিল এবং এটি বয়ে আনে নানাবিধ শারীরিক জটিলতা।
আজকের আয়োজনে আমি অতিরিক্ত ব্যায়াম করা এবং এর প্রতি আসক্তির সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করব।
কম্পালসিভ এক্সারসাইজ কি?
অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে জানার পূর্বে আমাদের জানা থাকা প্রয়োজন যে কম্পালসিভ এক্সারসাইজ বলতে কী বোঝায়। কম্পলসিভ এক্সারসাইজ হচ্ছে এক ধরনের মানসিক ডিজঅর্ডার।
যার আওতায় একজন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ব্যায়াম করতে চায় বা এর প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠে। সাধারনত আমরা বিভিন্ন কারণে ব্যায়াম করে থাকি। যার মধ্যে সুস্বাস্থ্য ও শারীরিক গঠন ধরে রাখাটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ।
তবে অনেককেই দেখা যায় যে শারীরিক ব্যথার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে অথবা বিষন্নতা জাতীয় মানসিক সমস্যা এড়াতে এর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ব্যায়াম করা অবশ্যই স্বাস্থ্যকর তবে তা হতে হবে আপনার শারীরিক প্রয়োজন অনুযায়ী।
যখন একজন ব্যক্তি ব্যায়ামের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির ফলে শারীরিক প্রয়োজনকে অবহেলা করতে শুরু করে তখন মূলত সে এই কম্পালসিভ এক্সারসাইজ জনিত সমস্যায় ভোগে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম মেয়ের প্রতি আসক্তি কি ধরনের ক্ষতি বয়ে আনে?
কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার এর প্রথম দুটি নিয়ামক হচ্ছে স্লিম ফিগার ধরে রাখার প্রবণতা এবং মানসিক চাপ কমানো।
এই বিষয়গুলো আবার পরোক্ষভাবে খাদ্য গ্রহণের ভারসাম্যহীনতা বা ইটিং ডিজঅর্ডার এর সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই যেমন এটি সুস্বাস্থ্যের অন্তরায় তেমনি জন্ম দেয় নতুন নতুন শারীরিক ও মানসিক জটিলতা।
অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রতি আসক্তি বা কম্পালসিভ এক্স এক্স সাইজের কিছু ক্ষতিকারক দিক নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো।
১. শরীরে চোট লাগতে পারে
যখন কেউ অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে তখন তিনি শরীরের প্রতি অবহেলা করতে শুরু করেন। এতে করে ব্যক্তি তার ওজন কমানো বা স্লিম ফিগারের ওপরই অধিক মনোযোগ দেয়।
ফলে সে এমন সব কঠিন কঠিন ব্যায়ামগুলো করতে থাকে যা তার শরীর নিতে পারে না। এতে হরহামেশাই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের চোট লাগার সম্ভাবনা থেকে যায়।
মাঝে মাঝে এই চোটগুলো এতটাই মারাত্মক হয় যে অস্ত্রোপচার বা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়।
২. শারীরিক দুর্বলতা
অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রতি আসক্তি বা কম্পালসিভ এক্সারসাইজের আরেকটি বিষয় হচ্ছে এটি শারীরিক দুর্বলতার কারণ হয়ে যায়।
কারণ এ সময় ব্যক্তি তার ব্যায়াম করা কেই প্রাধান্য দেয়। অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে।
শরীরের প্রচুর এনার্জি খরচ হয় ফলে দুর্বলতা অনুভূত হয়। যার দরুন মাথা ঘোরা বমি বমি ভাব ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।
৩. হার্ট অ্যাটাক হতে পারে
অতিরিক্ত মাত্রায় এক্সারসাইজ করলে অনেক সময় হৃদপিণ্ডের স্পন্দন বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কারণ ব্যায়াম করার সময় এটি সবথেকে বেশি আমাদের হৃদপিন্ডের ওপর চাপ তৈরি করে।
ব্যায়াম করার সময় মূলত আমাদের শরীরের রক্ত প্রবাহ দ্রুত হতে শুরু করে যার দরুন হৃদপিন্ডের ওপর অতিরিক্ত চাপের তৈরি হয়। অনেকসময়ই হৃদপিণ্ড তা নিতে পারেনা এবং হৃদয়ে ব্যথা অনুভূত হতে শুরু করে।
এরকম পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যায়াম করা বন্ধ করে দেওয়া উচিত কিন্তু যারা কম্পালসিভ এক্সারসাইজ এর আসক্ত তারা ব্যায়াম করা বন্ধ করেন না ফলে তা ক্ষতির কারণ হয়।
৪. শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি তৈরি হয়
যারা অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যায়াম করেন তাদের শরীরের ফ্যাট অতি দ্রুত বার্ন হয়ে যায়। এতে শরীর দুর্বল হতে শুরু করে।
অনেকেই আবার ব্যায়ামের আসক্তি থেকে খাবার-দাবারের প্রতিও অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করে এতে করে শরীরে অপুষ্টি দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে নানাবিধ শারীরিক সমস্যার জন্ম দিতে পারে।
৫. মানসিক জটিলতা তৈরি করে
অনেকেই মানসিক চাপ কমাতে ব্যায়াম করা কে বেছে নেয় তবে অতিরিক্ত ব্যায়ামের প্রতি আসক্তির আপনাকে এক জটিল মানসিক সমস্যায় পতিত করে।
প্রায়শই দেখা গেছে যে যারা ব্যায়াম করার প্রতি আসক্ত হয়ে গিয়েছেন তারা আর ব্যায়াম করা ব্যতীত থাকতে পারেনা।
ফলে একদিন যদি কোনো কারণবশত তারা ব্যায়াম না করে তবে পরবর্তী দিন দ্বিগুণ মাত্রায় ব্যায়াম করতে শুরু করে। যা তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
আবার কিছুদিন যদি ওই ব্যক্তি ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকে তবে তার মানসিক বিপর্যয় ঘটতে শুরু করে এবং এর ফলশ্রুতিতে ব্যক্তি আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারে।
তাই এরূপ পরিস্থিতিতে পড়বার আগেই আপনাকে কম্পালসিভ এক্সারসাইজ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এ ধরনের যে কোন লক্ষণ নিজের মধ্যে অনুভব করলে দ্রুততার সহিত কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন।