কম খাবার খেয়ে, ব্যায়াম করেও কোনমতেই ওজন কমছে না? ভুলটা আসলে কোথায়?
শুধুমাত্র খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিলেই ওজন কমে না উল্টে শরীরে আরো ক্ষতি হয়। তবে এমন কিছু ভুল হয় ডায়েট চার্টে, যা সব কিছু মেনে চলার পরও ওজন কমে না।

রোগা বা স্লিম ফিগার সব নারীরই স্বপ্ন। তবে এই ব্যস্ত জীবনে নিজের প্রতি অতটা খেয়াল রাখা হয় না। তার কারণেই বেড়ে চলেছে শরীরের মেদ। ধীরে ধীরে শরীর মোটার দিকে চলে যাচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি হতাশায় ভুগছেন অনেক নারী।
পছন্দমত ড্রেস পরা থেকে শারীরিক সুস্থতা সবকিছু যেন এই মোটা হওয়া কেড়ে নিয়েছে। ওজন কমানোর জন্য অনেকেই অনেক অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই এর উপকার মনমতো পাননা। তাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনে।
শুধুমাত্র শারীরিক সৌন্দর্যের জন্য ওজন কমাতে বলা হয় না, শারীরিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে থাকা যায় কম ওজনের ফলে। শরীরে যত বেশি মেদ জমা হবে ততবেশি শরীরের কষ্ট, আর এই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে অনেক নারীরাই ওজন কমানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন।
যে যা বলে তাই করে চলেন, একটু ওজন কম করার আশায়, কিন্তু দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ বিষয় হলো কি যে, কম খাবার খেলে ওজন কমে যাবে, তার সাথে করতে হবে ব্যায়াম। এমন ধারণা অনেকের মধ্যেই আছে তবে এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয়, কম খাবার খাওয়া ওজন কমানোর মতো পরিস্থিতিকে আরো ভয়ঙ্কর করে তোলে। অন্যান্য অন্যকোন নতুন আশঙ্কার সম্মুখীন হতে পারেন।
অনেকেই সপ্তাহ দুয়েক কঠোর পরিশ্রম রুটিন মত চলে যখন আশা অনুরূপ ওজন কমে না, তখন অনেকের মধ্যে হতাশার জন্ম হয়। ওজন কমানো শুধুমাত্র কম খাওয়া ও অতিরিক্ত ব্যায়াম করার ফলাফল নয়। তবে ওজন একবার বেড়ে গেলে তা কমানোর যে যাত্রাটা, ওটার শুরুটা কিন্তু এতটা সহজ নয়।
তাই শরীরের যত্ন নিতে ওজন যাতে না বৃদ্ধি পায়, সেই জন্য ওজন কম থাকতে থাকতেই সে দিকটা খেয়াল রাখাটা সবচেয়ে জরুরি। আর নিজের শরীরের ওজন কমিয়ে রাখার এই জার্নিটা অনেকটাই ধৈর্য, সহ্য, আর সংকল্প যুক্ত একটা কাজ।
অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে তখন আপনাকে কিলো কিলো ওজন কমাতে হবে, তার সাথে করতে হবে কঠিন ডায়েট প্ল্যান। তার সাথে সাথে মেনে চলতে হবে একটা সুন্দর ওয়ার্কআউট রুটিন। অনেকেই ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন রকম প্রোডাক্ট, বিভিন্ন রকমের ওষুধ, পোশাক ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকেন কিন্তু আদৌ কি এই সবে অতটাও এফেক্ট পরে বলে মনে হয় না। সবার শরীরের ধরন, গঠন, একরকম হয় না।
তাই কারো কোন নিজস্ব ডায়েট চার্ট মেনে চললে সেটা হয়তো নিজের শরীরে এফেক্ট নাও ফেলতে পারে। নিজের শরীর অনুযায়ী ডায়েট প্ল্যান তৈরি করতে হবে, এবং ওয়ার্ক আউট করতে হবে নিয়মিত। অনেক সময় দেখা যায় এতকিছু কঠোর পরিশ্রম করার পরও ওজন একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে।
এই বিষয়ে ঠিক কোথায় ভুলটা হচ্ছে?
এতকিছু কষ্ট করার পরও যখন মন মত রেজাল্ট না মেলে, তখন কিন্তু হতাশায় ভুগতে হয় অনেককেই। এমনকি এসব ছেড়েছুড়ে আবার স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ফিরে যান। ওজন কমা তো দূরের কথা আবার ওজন বাড়তে শুরু করে। এমন কিছু ভুল, যা ওজন কমতে বাধা সৃষ্টি করে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক সেই ভুলগুলো আসলে কি-
অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণের সর্বোত্তম উপায়
১. খুব কম ক্যালরিযুক্ত ডায়েট প্ল্যান করা :
"খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিন, তো ওজন কমে যাবে"। এটা একটা স্বাভাবিক ধারণা, অনেকের মতে বেশি যারা খায় তাদের ই একমাত্র ওজন বাড়ে। তবে অনেকেই এই কম খাওয়া বিষয়টাকে আয়ত্ত করে ওজন কমানোতে আলোকপাত করে থাকেন, কিন্তু প্রথম দিকে হয়তো শরীর একটু হলেও কমতে থাকবে কিন্তু তারপর এর মুহূর্ত থেকেই তরতরিয়ে বাড়তে থাকবে শরীরের ওজন।
এমনটা কেন হয়? এটার কারণ হলো শরীরে যত টুকু ক্যালরি প্রয়োজন হয় কম খাওয়া দেওয়ার কারনে সে ক্যালরির এর মাত্রা কমতে থাকে। তার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়, তাই সব সময় এমন ডায়েট চার্ট ফলো করা দরকার, যাতে প্রয়োজনীয় ক্যালরির পরিমাণ সবসময় বজায় থাকে।
২. হঠাৎ করে ডায়েট বন্ধ করা :
এই ক্ষেত্রে ডক্টর ভাস্কর বলেছেন যে, যদি ওজন না কমে তবে সে ক্ষেত্রে সেই বিষয়টা আমাদেরকে ডিমোটিভেশন এর দিকে নিয়ে যায়।
এ সময় হঠাৎ করে আমরা ডায়েট এর বাইরে গিয়ে ক্যালরির পরিমাণ টা বাড়িয়ে দিই। আর সেই জন্যই হঠাৎ করে ওজনটা বেড়ে যায়। আর এই পুষ্টির ঘাটতি গুলি আমাদেরকে অলসতার দিকে পরিচালিত করে।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার ও প্রোটিন গ্রহণ না করা :
শরীরকে সুন্দর ভাবে গঠন করতে সবকিছুর সঠিক মাত্রার প্রয়োজন থাকে। আর এক্ষেত্রে আমরা নিজের থেকে যদি ডায়েট মেনে চলি তখন কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার ও প্রোটিনের অভাব হয় আমাদের শরীরে। খাবারের পরিমাণটা কমিয়ে দিয়েছেন কিন্তু একবার ভেবে দেখেছেন সেই খাবারের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার বা প্রোটিন আছে কিনা! যা শরীরে শক্তির যোগান দেয় এবং শরীরকে ফিট রাখে।
প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার বেশি পরিমাণে আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে কাজ করে।কারণটা হলো, এই পুষ্টি গুলো আমাদের খাবারগুলোকে হজম করানোর জন্য শরীরকে বেশি পরিমাণে ক্যালোরি পোড়াতে হয়। আর সে ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণে খাবার খাওয়ার ইচ্ছাটা সেটাও কিন্তু অনেকটাই কমে যায়।
৪. শুধুমাত্র হেলথ প্রোডাক্ট এর উপর নির্ভর করা :
অনেকে কাজের ব্যস্ততা এবং অলসতার জন্য পরিশ্রম করার বদলে বিভিন্ন রকম হেলথ প্রোডাক্ট এর উপর নির্ভর হয়ে পড়েন। এতকিছু ঝামেলা নিতে পারবেন না, তাই কোনো হেলথ প্রোডাক্ট এর সাহায্যে ওজন কমানোর চেষ্টা করে থাকেন।
এগুলো যেমন ব্যয়বহুল, তেমনি শরীরের ওপর ততটাও প্রভাব ফেলে না, এগুলোর পরিবর্তে নিয়মিত প্রতিদিন ২ থেকে ৩ কাপ গ্রিন টি, ডিটক্স চা, অথবা ডিটক্স ওয়াটার, তার সাথে সাথে অ্যালকালাইন ওয়াটার, খাওয়া ফ্যাটকে ঝরিয়ে ফেলার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর হবে। একটু কষ্ট করে প্রাকৃতিক জিনিসের উপর নির্ভর করাটা কিন্তু শরীরের সুস্থ থাকার দিকটাও খেয়াল রাখে।
এমন অনেক ছোটখাটো বিষয়ের উপরে নজর দিলে নিয়মিত সেই ভাবে চলাফেরা করলে ওজন কমতে বাধ্য। তবে অল্পেতে হতাশ হলে হবে না। ধৈর্য রেখে সেগুলো মেনে চললে তার ফলাফল পাওয়াটা অসম্ভব কিছু নয়। শুধুমাত্র হেলথ প্রোডাক্ট এর উপর নির্ভর করে খাওয়া-দাওয়া সবকিছু মেন্টন করলেন অথচ আপনি এক পা-ও হাঁটলেন না, সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনার ওজন কমাটা স্বপ্ন হয়ে থাকবে।
যত বেশি শরীরে ক্যালোরি পুড়বে ততবেশি শরীর হালকা হবে। তবে ডায়েট চার্টে খাবারের গুণমান দেখে নেওয়া টাও জরুরী। না হলে মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা, অলসতা এগুলো কিন্তু চেপে বসতে পারে আপনাকে। চাইলে নিজের শরীরের উপর খেয়াল রেখে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে পারেন। ওজন কমানো শুধুমাত্র মোটা থেকে রোগা হওয়া নয়, এর ফলে আপনি সব দিক থেকেই উপকারিতা পাবেন। তবে হেলদি ফিগার অনেকেরই পছন্দ। নিয়মিত শরীরের যত্ন নিন, সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।