কম সময়ে ও সাশ্রয়ে চুলের যত্নে কাঠের চিরুনি

সাশ্রয়ী উপায়ে কম সময়ে কীভাবে চুলের যত্ন নেওয়া যায় কাঠের চিরুনি দিয়ে তা বর্নিত হয়েছে। সেই সাথে ব্যবহৃত চিরুনিটি কীভাবে দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী রাখা যাবে তাও উল্লেখ করা হয়েছে।

কম সময়ে ও সাশ্রয়ে চুলের যত্নে কাঠের চিরুনি
কম সময়ে ও সাশ্রয়ে চুলের যত্নে কাঠের চিরুনি

চুলের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে খুবই সহজ একটি উপায় আজকে বলবো, যেটি আমরা প্রতিদিনই করি, কিন্তু আজ একটু অন্যভাবে করার কথা বলবো। তার আগে জেনে নেওয়া যাক বিজ্ঞানের ভাষায় চুলকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

চুল হলো ভিতরের ত্বক বা বাইরের ত্বকে থাকা ফলিকল থেকে উৎপন্ন হওয়া প্রোটিন তন্তু বা সুতো। এর প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরটিন। অর্থাৎ, প্রকৃতপক্ষে প্রোটিন নির্মিত সুতোই হচ্ছে একেকটি চুল।

সুন্দর, ঘন, লম্বা চুল আমাদের সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে তোলে। সবাই ই চায় তার কেশরাজি হোক যেমন লম্বা তেমনি কালো আর ঘন। তবে সেটা এমনি এমনি তো হবার নয়। চুলের যত্ন যথাযথ ভাবে করলে, চুল কে ভালবাসলে, তবেই চুল নিজ সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে এবং তাতে আমরাও হয়ে উঠবো আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমরা ত্বকের যত্ন নিয়ে যতটা সচেতন, সেই তুলনায় চুলের যত্ন নেওয়ার প্রবণতা খুব কম মানুষেরই আছে। বাড়ীতে বা পার্লারে যে কোনো জায়গাতেই ত্বকের যত্ন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ফেসিয়াল, পেডিকিওর, মেনিকিওর, ব্লিচ ইত্যাদি করা হয়ে থাকে। 

সান প্রোটেকশন ক্রীম, নাইট ক্রীম, ফেসওয়াশ এই সবকিছুই ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়। আবার বাড়ীতেও বিভিন্ন হোমমেড ফেসপ্যাক ব্যবহার করা হয় যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে। ঠিক একইভাবে চুলের দিকেও নজর দিতে হবে। 

সেইজন্য ব্যবহার করা যেতে পারে হোমমেড হেয়ার প্যাক, হোমমেড অরগানিক অয়েল বা হোমমেড অরগানিক শ্যাম্পু ইত্যাদি। কিংবা পার্লারেও চুলের যত্নে যেসব সার্ভিস দেওয়া হয় সেসব নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এইসব উপায়ে চুলের যত্ন করা টা চাট্টিখানি কথা নয়।

কারণ এগুলো যথেষ্ট সময়সাধ্য এবং ব্যয়সাপেক্ষ। অনেকেই হয়তো সময় করে উঠতে পারবেন না হেয়ার প্যাক লাগানোর কিংবা পার্লারে যাওয়ার। আবার এইসব প্রক্রিয়া প্রয়োগ করার মত ব্যয়ও সবাই করতে পারবেন না। কেউ কেউ হয়তো সময় বা অর্থ কোনোটাই দিতে পারবেন না।

তার মানে কি চুলের যত্ন হবে না? চিন্তার কোনো কারণ নেই। ব্যয়সাধ্য এবং সময়বহুল প্রক্রিয়াগুলো বাদ দিয়েই খুব সহজে এবং সাশ্রয়ে চুলের যত্ন নেওয়া সম্ভব। কারণ যত্ন ব্যতীত কাঙ্খিত চুল পাওয়া এক প্রকার অসম্ভবই বটে।

সহজে, সাশ্রয়ে এবং কম সময়ে আমরা যেই কাজটি করবো তা হলো নিয়মিত চুল আঁচড়ানো। খুবই সাধারণ একটি কাজ। কিন্তু এই সাধারণ কাজটি আমরা করবো একটি অসাধারণ হাতিয়ার দিয়ে, সেটি হলো কাঠের চিরুনি। এখন প্রশ্ন হলো কেন আমরা প্লাস্টিকের চিরুনির জায়গায় কাঠের চিরুনি ব্যবহার করবো। 

আগেই বলেছি, আমরা প্রতিদিন যেভাবে কাজটা করি তার চেয়ে ভিন্নভাবে করবো। তাই ভিন্নতা আনতে কাঠের চিরুনি প্রয়োজন। কিন্তু কাঠের চিরুনি যে ব্যবহার করা হবে, তার পেছনে রয়েছে কিছু উপকার। কাঠের চিরুনি ব্যবহারে যে যে উপকার পাওয়া যাবে তা হলোঃ
  • কাঠের চিরুনি ব্যবহারের ফলে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে, ফলে চুলের গোড়া শক্ত হবে।

  • কাঠের চিরুনি দিয়ে ভেজা চুল আঁচড়ালেও চুল কম ভাঙবে তুলনামূলক।

  • কাঠের চিরুনির দাঁড়াগুলো গোলাকার আর মসৃণ হওয়ায় আঁচড়ানোর সময় স্ক্যাল্পের তেল সারা চুলে সমান ভাবে ছড়িয়ে পরবে, ফলে চুল থাকবে মসৃণ আর নরম।

  • প্লাস্টিক বা ধাতব চিরুনি দিয়ে চুল আচড়ানোর সময় স্হির বিদ্যুত উৎপন্ন হয় যা কাঠের চিরুনির ক্ষেত্রে হয় না। ফলে চুলের ক্ষতি হবে না।

  • কয়েক মিনিট কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে ক্লান্তি দূর করে মস্তিষ্ককে সতেজ করতে সাহায্য করবে।

  • কাঠের চিরুনি চুলের ভলিউমও বৃদ্ধি করবে।কারণ এটি কোনো তড়িৎ উৎপন্ন করে না আর কাঠ হলো তড়িৎ অপরিবাহী। তাই চুলগুলো একত্রে জড়িয়ে যাবে না। তাই চুলের ভলিউম বেশি দেখাবে।

  • স্হিরবিদ্যুতের আকর্ষণে চুলে জট পাকিয়ে যায় না, ফলে চুল ভেঙে যাবে না জট ছাড়াতে গিয়ে।

  • চুলের বৃদ্ধি তরান্বিত করবে আর খুশকিও প্রতিরোধ করবে এই কাঠের চিরুনি।

  • কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে বেশ আরাম অনুভূত হবে

  • শুধু চুলের যত্ন করলেই হবে? কাঠের চিরুনিটারও তো যত্নের প্রয়োজন আছে। চলুন দেখে নিই কাঠের চিরুনি দীর্ঘদিন ব্যবহার উপযোগী রাখার উপায়।

  • কাঠের চিরুনি কখনো পানিতে ভেজানো যাবে না।

  • পরিষ্কার করার জন্য চিরুনিতে ভেসলিন মাখিয়ে রেখে নরম সুতি কাপড় বা টিস্যু দিয়ে মুছে নিতে হবে।

  • কখনো ভিজে গেলে চিরুনি রোদে শুকিয়ে নিতে হবে। 

সম্ভব হলে চিরুনিতে বাহারী নকশা ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে এক্রিলিক রঙ দিয়ে। তাতে বেশিদিন ভাল থাকবে চিরুনি। আর চিরুনি দেখতেও সুন্দর লাগবে সাথে চিরুনি ব্যবহারকারীর নান্দনিক মানসিকতাও ফুটে উঠবে।

কাঠের চিরুনি কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে শৌখিনতা আর রুচিশীলতারও বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। প্রাচীনকালে বাহারী নকশা করা কাঠের চিরুনি বা হাতির দাঁতের চিরুনি ব্যবহার হতো। কালক্রমে সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক এবং ধাতব চিরুনি যা চুলের স্বাস্হ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।

তবে, আশার কথা এই, হাতির দাঁতের চিরুনি বিলুপ্তপ্রায় হলেও, কাঠের চিরুনি এখনো পাওয়া যায়। সবচেয়ে ভাল হলো নিমকাঠের তৈরী চিরুনি। কাঠের চিরুনির মূল্য সাইজ এবং নকশা ভেদে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। আমদানীকৃত চাইনিজ কাঠের চিরুনি পাইকারী ৩০ টাকা থেকে ৬০ টাকা এবং খুচরা ৭০ টাকা থেকে ১২০ টাকার ভিতর পাওয়া যায়।

চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য শুধু চিরুনি পরিবর্তন করেই অর্ধেকের বেশি সমস্যা কমিয়ে ফেলা সম্ভব। আর কাঠের চিরুনির বিনিময় মূল্য প্লাস্টিকের চিরুনির চেয়ে বেশি হলেও, উপকার যে কত বেশি হবে সেটা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। একটি কাঠের চিরুনি যত্নের সাথে ব্যবহার করলে বেশ কয়েক বছর চলে যাবে। 

তাই চুলের যত্নের সহজ ও সাশ্রয়ী উপায়ে যত দ্রুত সম্ভব সংগ্রহ করতে হবে কাঠের চিরুনি এবং ব্যবহার করতে হবে প্রতিদিন। উল্লিখিত পরিবর্তনগুলো নিজের দৃষ্টিতেই ধরা পড়বে।