কলমের আবিষ্কার, বিশ্বের দামি কলমের ইতিহাস জানুন
কলম অতি সামান্য জিনিস হলেও, সারা বিশ্বে এমন অনেক দামি কলম আছে যার দাম শুনলে মাথা ঘুরে যাবে, সাধারন একটা মানুষের কাছে একটা কলমের দাম, তার সারা জীবনের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।

কলম একটি নিত্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে ব্যবসা, সব জায়গায় এর অবদান এতটাই যে, কলম ছাড়া কোনও কাজ সম্পন্ন সম্ভব নয়। যতই আজ ইন্টারনেটের মাধ্যমে সবকিছু করা হোক না কেন তবুও কলমের ব্যবহার কিন্তু এতটুকু কমেনি।
কলমের ইতিহাস অনেক পুরনো। কলমের বিষয়ে একটা কথা জানলে আপনি অবাক হতে বাধ্য হবেন, এখন যেমন কলম সাধারণ জিনিস এবং সহজ মূল্য, অতীতের বা প্রাচীনকালে কিন্তু তেমনটা ছিলনা। কলম যেন এক বহুমূল্য সম্পদ, শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিরাই কলম ব্যবহার করতেন। আর এই কলমের কদর শুধুমাত্র ধনী ব্যক্তিরাই করতেন। আশ্চর্যের বিষয় হলো, বিলাসিতার এক অনন্য উপকরণ হিসেবে কলমকে ব্যবহার করা হতো।
ইংরেজিতে কলমকে 'pen' বলে এই পেন কথাটি একটি ল্যাটিন শব্দ "পেন্না" থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো পাখির পালক। আরো অনেক আগে লেখার জন্য পাখির পালক কে ব্যবহার করা হতো। তখন তাল পাতার উপর খাগের কলম, পাখির পালক দিয়ে লেখা হতো। সম্ভবত মনে করা যায় যে মিশরীয়রা কাঠির ডগায় তামার নিবের মতো কিছু একটা লাগিয়ে কালির দোয়াত এ ডুবিয়ে লেখার কাজ করতো। আবার অন্যদিকে গ্রিক দেশে লেখার জন্য হাতির দাঁত দিয়ে তৈরি হতো কলম। তার নাম ছিল "স্টাইলাস"। তবে বলাই বাহুল্য যে বলপেন আসার আগ পর্যন্ত এই "স্টাইলাস" এর কদর ছিল অনেক।
আর সেই জন্যই লেখার আঙ্গিককে বলা হয় "স্টাইল"। মধ্যযুগে কাগজ আবিষ্কারের পর থেকে পালকের কলম এর প্রচলন শুরু হয়। ১৮৮৩ সালে আমেরিকান লুইস ওয়াটারম্যান আবিষ্কার করলেন ফাউন্টেন বলপেন। আর এই আবিষ্কারের পর থেকে অন্যান্য দেশে ফাউন্টেন বলপেন তৈরির একেবারে ধুম লেগে যায়। এখন বর্তমানে আমরা যে বলপয়েন্ট পেন দিয়ে লেখালেখি কাজ করি তা আবিষ্কার হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতে।
১৮৯৯ সালে এক সাংবাদিকের হাতে আবিষ্কার হয় কলমের। হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে বসবাস করতেন ল্যাজলো জোসেফ বিরো নামে এই সাংবাদিক। সাংবাদিকতার কাজ করতে গিয়ে তিনি ফাউন্টেন পেনের আবিষ্কার করেন। নানা রকম নানা রঙের কালির ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত তিনি বল পয়েন্ট পেন তৈরি করতে সক্ষম হন। ১৯৩১ সালে সর্বপ্রথম তিনি আন্তর্জাতিক এক মেলাতে বল পয়েন্ট কলম এর প্রদর্শন করেন।
বল পয়েন্ট কলম গুলোর ডগায় ০.৭-১.২ মি.মি. আকারের ছোট্ট পিতল স্টিল বা টাংস্টেন কার্বাইড এর তৈরি একটি ছোট্ট শক্ত বল বা গোলক থাকে। যার কাজ হলো কলমের ভিতর থাকা কালিকে কাগজ বা যার উপরে লেখা হচ্ছে সেখানে মাখাতে সাহায্য করা। বল পয়েন্ট কলম এ যে কালি ব্যবহার করা হয় তা একটু ঘন টাইপের। তাই এই কালী কাগজের সংস্পর্শে আসতে না আসতেই শুকিয়ে যায়। আর এই কলম গুলোর দাম খুব কম তার ফলে নিত্যদিনের লেখালেখির কাজে বর্তমানে বল পয়েন্ট কলম এর চাহিদা একেবারে তুঙ্গে।
তবে হ্যাঁ বল পয়েন্ট পেন সহজলভ্য হলেও বিশ্বে নানা জায়গায় এমন অনেক পেন আছে যার দাম শুনলে চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। সেইসব দামি কলম গুলোর মধ্যে কিছু কলম নিয়ে জানা যাক-
১. গাইয়া হাই লাক্সারি : Gaia High Luxury
এই কলমটি বিশ্ব বিখ্যাত, যেমন তার গঠন তেমনি দেখতেও সুন্দর। এই কলমে ১৮ ক্যারেটের সাদা সোনা ও হলুদ সোনা ব্যবহার করা হয়েছে।
এই কলমের গায়ে ভৌগলিক বিভিন্ন চিত্র খোদাই করে আঁকা আছে। এই কলমের দাম ৪৩ হাজার ডলার।
২. মারটে : Mont Marte
এই কলমের ঢাকনায় ছোট ছোট দুই ক্যারেটের হিরে ব্যবহার করা হয়েছে। শুধু কি তাই, এই কলমে আছে সোনার নিব। যেখানে গ্রিক দেবতা মঙ্গলের চিহ্ন খোদাই করা আছে। যার দাম ৪৩ হাজার ডলার।
৩. ভিস্কোন্তি( ফারবিডন সিটি) : Visconti
কালো রঙ এর কলমটিতেও ১৮ ক্যারেট সোনা এবং হিরে ব্যবহার করা হয়েছে। এই কলমের গায়ে হারিয়ে যাওয়া শহর এইচ আর এইচ এ ভিন্ন ভিন্ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই কলমটির মূল্য সাড়ে ৫০ হাজার ডলার।
তা ছাড়াও আরো অনেক দামী দামী কলমের ব্যবহার রয়েছে সারা বিশ্বে-
৪. ভিসকোন্তি (অ্যালকেমি): এর দাম ৫৭ হাজার ডলার।
৫. ভিসকোন্তি ( রিপল): একদম ৫৭ হাজার ডলার।
৬. ওমাস ফোনিক্স প্লাটিনাম : ৬০ হাজার ডলার এর দাম।
৭. অরোরা ডায়ামানটে : এই কলমের নিবে ১৮ ক্যারেটের সোনার ব্যবহার করা হয় এই কলমটি বিশ্বের একমাত্র কলম। যে কলমে ৩০ ক্যারেটের হিরে ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই কলমটির দাম শুনলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা হবে। ১৪,৭০,৬০০ ডলার।
প্রতিবছর ১০ জুন বল পয়েন্ট পেন দিবস। কলম দিয়ে চিঠি বা কার্ড লিখে প্রিয়জনদের কাছে পাঠিয়ে এই দিবস পালন করা হয়। অনেকে প্রিয়জনদের দামি কলম উপহার দিয়েও এই দিবসটি পালন করে থাকেন।