কুসংস্কার শুধুই কি অন্ধ বিশ্বাস? না কি এর পেছনে আছে কোনো কারণ!

আজ সবাই সবার নিজের মতো করে চলে, যদি কোনো কিছুতে নিজের ভালো হয় তাহলে তো তাতে কোনো ক্ষতি নেই। বাকিটা সবার কাছে ব্যক্তিগত ব্যাপার।

কুসংস্কার শুধুই কি অন্ধ বিশ্বাস? না কি এর পেছনে আছে কোনো কারণ!
কুসংস্কার শুধুই কি অন্ধ বিশ্বাস? না কি এর পেছনে আছে কোনো কারণ!

অনেক আগের দিনে সমাজ এত উন্নত ছিল না, ছিল না বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ সরঞ্জাম। কোনো রকমে জীবন যাপন করতে হতো, তবে মানুষের মনে বিশ্বাস ছিলো অটুট।


সে কুসংস্কার হোক বা অন্ধবিশ্বাস। সেটার উপরেই ভিত্তি করে বছরের পর বছর ভালো থেকেছে। কিছু নিয়ম বংশ পরম্পরায় চলে আসছে পরবর্তী প্রজন্ম বাধ্য হচ্ছে সেগুলো মেনে চলতে।


বেশির ভাগই নিয়ম মানুষের সৃষ্টি। যেটার উপর তারা বিশ্বাস করতো আর নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে পারতো।


যুগের সাথে বদলাতে বদলাতে আজ আর কেউ এসবে বিশ্বাস করে না বিজ্ঞান এর যুগে। তখনকার মানুষ কুসংস্কারে বিশ্বাস করতো তার কিছু না কিছু কারণ তো ছিলই না হলে তারা এতটা বিশ্বাস করতে পারে কিভাবে?


বিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে কুসংস্কারের কিছু বিষয়ের উপর আলোকপাত করা যাক, যার পিছনে হয়তো কোনো কারণ ছিল যার জন্য আগের দিনের মানুষ এত মন থেকে মানতো -


1 . রাতে চুল না আঁচড়ানো

আগে এখনকার মতো বড়ো বাড়ি আর কম লোক ছিল না, একটাই কুঁড়ে ঘরে দু তিন জন কে থাকতে হতো। সেই ঘরেই খাওয়া দাওয়া করতে হতো।


কারেন্ট ছিল না, ছিল প্রদীপ এর আলো যার আলো কোনোরকম ঘরটাকে অন্ধকার থেকে বাঁচাতো। কারো মুখ ভালো করে দেখা যেত না। দিনের আলো থাকতে থাকতে বাইরে চুল আঁচড়ে বেঁধে নেওয়ার নিয়ম ছিল।


না হলে রাতে বাইরে তো যাওয়া যাবে না আর ঘরের ভিতর চুল বাঁধলে মেঝেতে  চুল পড়ার সম্ভাবনা থাকে, আর মৃদু আলোতে দেখাও যাবে না, খাওয়ার সময় খাবারের উপর এসে পড়তে পারে চুল।


তাই নিয়মটা তাদের অনেক উপকার করতো।


2 . সন্ধ্যার পর ঘর ঝাট দিতে নেই

এখনও অনেকেই এ কথা মেনে চলেন। আর সবার এ নিয়ম মেনে চলা ভালো। কারণ, অনেক সময় ঘরের মেঝেতে কোনো দরকারি জিনিস পড়ে থাকতে পারে, হয়তো সেটা অনেক  ছোট সহজে চোখে পড়ার মতো নয়।


অন্ধকারে দেখাও যায়না, সন্ধ্যার পর ঘর ঝাট  দিলে তা আবর্জনার সাথে বাইরে চলে যেতে পারে। দিনের আলোতে ঘর ঝাট দিলে সে ভয় টা থাকে না।


হতে পারে কোনো দরকারি ছোট চাবি বা ছোট সোনার গয়না। তাই কুসংস্কার মনে হলেও এর পিছনে কারণ টা বেশ ভালোই।


3 . বিড়ালে রাস্তা কাটা

এখন গাড়ি ছাড়া কেউ এক পাও চলতে পারে না। তবে আগে পায়ে হেঁটে যেতে হতো মাইলের পর মাইল। পরিবেশ ছিল সবুজ ঘন জঙ্গলে ঘেরা।


বন্য পশুদের মতো  বিড়াল ও থাকতো ঝোপ ঝাড়ের ভিতর। আর মেঠো পথ ওই জঙ্গলের ভিতর দিয়েই যেতো।


পথ চলতে চলতে হঠাৎ করে বিড়াল ছুটে রাস্তা পার  হলে তারা মনে করতো হয়তো বিড়ালের পিছনে কোনো হিংস্র বন্য পশু ধাওয়া করেছে তাই সে ছুটে এ ঝোপ থেকে অন্য ঝোপে পালাচ্ছে।


তাই একটু দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে, তারপর ঈশ্বর এর নাম করে পরে রওনা দেয়। বিপদের হাত থেকে  বাঁচার জন্য তারা এগুলো কে মনে প্রানে বিশ্বাস করতো।


4 . বালিশে বসতে নেই

অনেকের  মুখে শোনা যায় বালিশে বসতে নেই, তাতে অনেক শারীরিক অসুস্থতা আসতে পারে, কারণ হলো তুলোর বালিশে বসলে বালিশ চেপে যায়, আর শক্ত হয়ে যায়।


নরম জিনিসে বসতে সবারই ভালো লাগে। তাই ভয় না দেখালে সবাই সেটাই করবে। বিশেষ করে বাচ্চারা।


5 . পিছু ডাক

কোনো জায়গায় যাওয়ার জন্য অনেক আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে তবেই সেই কাজে যেতো প্রাচীন কালের মানুষ জন।


মনে মনে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে তারা কোনো শুভ কাজে বের হতো, তাদের ধারনা ছিল পিছন থেকে ডাক দিলে যাত্রাপথে একটা বাধা সৃষ্টি হয়। মনে শান্ত ভাব একটু হলেও কেটে যায়।


তাই যা বলার সেই কাজ থেকে ঘুরে আসলে বলার প্রয়োজন মনে করে তারা। তবে কোনো জিনিস ভুলে গেলে তা নিঃশব্দে তার সামনে এসে তাকে দিতে পারে।


উচ্চস্বরে পিছন থেকে ডাক দিলে মনে একটা ধাক্কা লাগে। যা হয়তো কোনো শুভ কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই এটাও খুব মেনে চলতো তারা।


6 . সন্ধ্যে বাতি

সূর্যাস্তের পর পর ঘরে আলো জ্বালাতে হয়, এটা আজও গ্রাম থেকে শহরে সবাই ভক্তি ও বিশ্বাসের সাথে মানে।


কারণ আগেই বলেছি যে আগে ঘর বাড়ি ঘন সবুজ জঙ্গলে ঘেরা থাকতো সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বন্য পশুরা আশ্রয় খোঁজে, যদি হয় বৃষ্টি তো কথাই নেই।


আর বন্যরা আগুন দেখে ভয় করে, যার ফলে কোনো ঘরে ঢোকার সাহস পেত না। বিষাক্ত পোকামাকড় ও আসতে পারতো না। সন্ধ্যায় ধুনোর গন্ধে দুর দুর পর্যন্ত বাতাস স্বচ্ছ হয়ে যেত।


7 . অমাবস্যা - পূর্ণিমা তে মাছ মাংস না খাওয়া

প্রকৃতির সাথে আমাদের শরীরের অদৃশ্য এক যোগাযোগ আছে। তাইতো ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের শরীরের উপর তার প্রভাব ফেলে।


তাই অনেকেই মনে করে অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তে মাছ মাংস তে জীবাণুর জন্ম হয়, হতে পারে মানব শরীরেও।


যার ফলে এই দিনগুলিতে অনেকেরই হাত পা যন্ত্রনা করে। এই সময় মাছ মাংস খেলে তার সাথে থাকা জীবানুও আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। শরীর অসুস্থ হতে পারে। সেই কারণে অনেকেই এটা মেনে চলে।


8 . শব্দ করে খেতে নেই

খাওয়ার সময় শব্দ করে খেলে ঘরে লক্ষ্মী  থাকে না, প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। আসল অর্থে খাওয়ার সময় শব্দ করা যেমন শ্রুতিকটু তেমনি অস্বস্তিকর।


কারো কারণে কারো অসুবিধা হবে এটা তো হতে দেওয়া যায় না। সবাই চায় তার ঘরে লক্ষ্মী সর্বদা বিরাজ করুক। তাই লক্ষ্মী হারানোর ভয়ে অনেকেই এই কু অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবে।


9 . ঘরে জুতো পরে ঢুকতে নেই

বাইরে থেকে আসলে বাইরের জুতো বাইরেই খুলতে হয়, কারণ কোথায় কোথায় যাওয়া হয় কত কিছু জুতোর নিচে লেগে যায় তার কোনো ঠিক নেই।


তা যদি ঘরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তবে কত নোংরা জীবাণু ঘরে ঢুকল তা বুঝতেও পারা যায় না। সব থেকে বেশে ক্ষতি হয় বাচ্চাদের যারা মেঝেতে খেলা করে।


কুসংস্কার হোক বা অন্ধ বিশ্বাস, মানুষের ভালো কাজে ব্যবহার হোক। এখন সমাজ অনেকটা উন্নত, তাই কোনো রোগে ডাক্তার কে বাদ দিয়ে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া অন্ধ বিশ্বাস এর চরম সীমা অতিক্রম করে।


কুসংস্কার এর যুক্তি এক একজনের কাছে সত্যি মনে হলেও অনেকের কাছে তা যুক্তিহীন।


যাই হোক না কেন যা কিছু নিয়ম আছে তা মানুষের তৈরী আর তা তাদের রক্ষা করতে যুগের পর যুগ বংশ পরম্পরায় চলে আসছে।


এসবের উপর নির্ভর করে বিশ্বাস করে তারা সুরক্ষিত, সুন্দর ও সুস্থ ছিল অনেক বছর। তাদের মেনে চলা পন্থা আজ অনেকের কাছে কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস বলেই গণ্য।


একমাত্র ভয় মানুষকে কোনো কিছু করতে বাধ্য করায়। কিছু হারানোর ভয়, প্রিয় জনের হারানোর ভয়, মৃত্যুর ভয়, সফল না হওয়ার ভয় না জানি আরো কত ভয়।


এই ভয়ের কারণে মানুষ পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। বিপদের আগে সাবধান হয়ে যায়। এই ভয় ছিল বলেই না মানুষ নিয়ম মেনে চলে। না হলে কেউ কাউকে মানতো না।


নিশ্চয় কেউ চাইবে না যে বালিশে বসে নিজের পাছায় ফোঁড়া হোক।


আজ সবাই সবার নিজের মতো করে চলে, যদি কোনো কিছুতে নিজের ভালো হয় তাহলে তো তাতে কোনো ক্ষতি নেই। বাকিটা সবার কাছে ব্যক্তিগত ব্যাপার।


আরও পড়ুনঃ জাতীয়তাবাদ কি? জাতীয়তাবাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানুন