কেমন হবে করোনা পরবর্তী পৃথিবী? একটু ভেবে দেখেছেন কি!
করোনা পরবর্তী পৃথিবী কেমন হবে সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন। সেদিনের পৃথিবী সবার জন্য কেমন হবে?

সেদিন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়া যাবে মুক্ত বাতাসে, সেদিন গুলিস্তানে কিংবা কারওয়ানবাজারে মানুষের সাথে গাদাগাদি করে আবার সেই আগের মত কেনা যাবে নিজের পছন্দের জিনিসটি।
ফুচকা কিংবা চায়ের আড্ডায় দাঁড়িয়ে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে মাস্ক বিহীন আড্ডা দেয়া যাবে ঘন্টার পর ঘন্টা।
ক্লাসরুমে আবার সেই হট্টগোল ফিরে আসবে খেলার মাঠে আবার জমে উঠবে খেলার আসর সেদিন দর্শক সারি আর ফাঁকা থাকবে না, কৃত্রিম শব্দ দিয়ে সেদিন তৈরি করা হবে না হাততালি, নিজের পছন্দের দলের জন্য পতাকা নিয়ে দর্শকসারিতে সেদিন বুকভাঙা উল্লাস করা যাবে।
মাস্ক পড়ে থাকার অসহ্য যন্ত্রণা আর থাকবে না,আর থাকবেনা অতিরিক্ত মাত্রায় মাস্ক পড়লে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ভয়। বাংলা একাডেমিতে আবার সেই পছন্দের আসর বসবে।
মানুষে মানুষে আর থাকবে না কোন দূরত্ব, এই বুঝি অন্যের কাছ থেকে আমার শরীরে করোনা ছড়িয়ে পরলো থাকবেন এমন কোন ভয়।
সেদিনের লোকাল বাসে করে শহর ঘুরে বেড়ানো যাবে। পাশের সিটে বসা মানুষটার প্রতি থাকবে না আর কোনো বিরক্তির ভাব এই বুঝি হয়ে গেল করোনা।
প্রিয়জনের অসুস্থ শরীর নিয়ে একটি আইসিইউর জন্য হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল সেদিন আর খোঁজ করতে হবে না, সেদিন হয়তো রাস্তায় অক্সিজেনের অভাবে করোনা আর কারো প্রাণ কেড়ে নিতে পারবে না, কথা বলতে বলতে প্রিয়জনের মৃত্যু আর চোখের সামনে হয়তো দেখতে হবেনা কবরস্থানে থাকবে না লাশের সারি বাতাসে থাকবে না লাশের গন্ধ শ্মশানে থাকবেন আবার দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা লাশ পোড়ানোর আগুন।
স্বামীকে একটু অক্সিজেন দেওয়ার জন্য মুখের সাথে মুখ মিলিয়ে স্বামীকে বাঁচানোর প্রাণপণ চেষ্টা আর হাসপাতালে সম্মুখে দেখা যাবে না।
সিএনজির ভিতরে ভাইয়ের মুখের সাথে মুখ মিলিয়ে ফুসফুসে অক্সিজেন দেওয়ার চিত্র আর দেখতে পাওয়া যাবে না।
সেদিন ডাক্তারদের পিপিই পড়ে করোনা রোগীর সেবার ব্যস্ততা আর বাসায় ফিরে প্রীয়জন থেকে দূরে থাকার কষ্ট আর সহ্য করতে হবে না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা পিপিই পড়ে দাঁড়িয়ে থাকার কষ্ট হাতের উপর রোগীর মৃত্যু ডাক্তারদের আর সহ্য করতে হবে না।
মিডিয়ার সামনে এসে বলতে হবে না আমরা আজ ব্যর্থ চোখের পানি ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বলতে হবে না দুঃখিত আপনার স্বামীকে বাঁচাতে পারলাম না।
দুঃখিত আপনার সন্তানকে বাঁচাতে পারলাম না কিংবা দুঃখিত আপনার পিতা কে বাঁচাতে পারলাম না এই আর্তনাদ আর বাতাসে ভেসে বেড়াবে না।
সেদিন রমনায় আবার বৈশাখী মেলা বসবে, সেদিন রাস্তায় কোন সিএনজি ওয়ালার কান্না শোনা যাবেনা কোন রিক্সাওয়ালার কান্না শোনা যাবেনা ঘরের চাল নেই সন্তান কি খাবে?
হাহাকার মুক্ত একটি পৃথিবী হবে সেদিন।মুক্ত বাতাসে বেড়ে উঠবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সেই প্রত্যাশায়।
পাদটীকা: আমার মনে হলো একটু পিছিয়ে গিয়ে বা ফ্লাশব্যাকে ঘুরে আসাও উচিত। যে মহামারী পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে তা ভীষনই ভয়ঙ্কর। এখন আমাদের সামনে একটাই বড় চ্যালেঞ্জ নিজেদের সুস্থ রাখা, এই মহামারী জয় করা।
করোনা ভাইরাসে বিশ্বে আক্রান্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ, মৃতের সংখ্যাও লক্ষাধিক। থেমে নেই বিজ্ঞান, চলছে vaccine আবিস্কারের নিরলস প্রচেষ্টা।
প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত আসছে সতর্কবার্তা। ডাক্তার, নার্সদের জীবন, পরিবারকে তুচ্ছ করা কঠিন সংগ্রাম, পুলিশ থেকে স্বেচ্ছাসেবক সকলের তৎপরতাই চোখে পড়ার মত।
সচেতন সাধারণ মানুষও, কিভাবে রক্ষা করা যায় নিজেকে, নিজের পরিবারকে। গত একশো বছরে এমন মহামারী দেখেনি বিশ্ব।
তবে ইতিহাস বলে 1720 সালে প্লেগে বিশ্ব জুড়ে মারা যান প্রায় 20 কোটি মানুষ, 1820 তে দক্ষিণ - পূর্ব এশিয়ায় কলেরার বলি হন লক্ষ লক্ষ মানুষ, 1920 সালে স্প্যানিশ ফ্লুতে 5 কোটিরও বেশি মানুষ মারা যান সারা বিশ্বে।
তবে কি অভিশপ্ত এই 2020? হ্যাঁ প্রশ্ন চিহ্ন জাগছেই আমাদের মনে। তবে সামান্য একটু আশাও জাগে বিগত মহামারীর বছরগুলোর তুলনায় চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন অনেক এগিয়ে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে দেশে দেশে চলছে লক ডাউন। ব্যস্ততা হারিয়েছে জীবন থেকে। ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার হাতে। তবুও মন চায় আশাবাদী হতে, একদিন নিশ্চয়ই পরিবর্তন হবে এই অবস্থা।
আর তার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে আমাদেরই। প্যানিক না করে কেয়ারিং থাকাই শ্রেয়। জীবন অবশ্যই একদিন ছন্দে ফিরবে, এত মানুষের এত প্রচেষ্টা বিফলে যাওয়ার নয়।
1720, 1820, 1920 র মত একদিন 2020 ও ইতিহাস হবে। তবে এই সঙ্কট বদলে দিতে বাধ্য হবে মানুষের জীবনধারা।
চিকিৎসা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সংস্কৃতি সব বিষয়েই আসবে কিছু না কিছু পরিবর্তন। পরিবর্তন আসবে আমদের প্রতিদিনের জীবনেও।
এই মুহুর্তের নেওয়া স্বল্পমেয়াদী জরুরী অবস্থাও তখন হয়ে উঠবে আমাদের সাধারণ জীবনের অঙ্গ। পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দ্রুত কিন্তু যার ফল হতে হবে সুদূরপ্রসারী। সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের লড়াই হয়ে উঠবে আরও কঠিন।
অস্তিত্বের সংকট নেমে এসেছে পুরো পৃথিবীতেই। একদিন কাটবেই এই সংকটকাল। আবার হাঁটতে শুরু করবে থমকে যাওয়া সভ্যতা।
একদিন হারবেই এই মারণব্যাধি। জয় হবে মনুষ্যত্বের, জয় হবে প্রচেষ্টার। এই অবরুদ্ধ পৃথিবী আবার মুক্ত হবে।
ক্রান্তিকাল কেটে গিয়ে বেঁচে থাকবে বেশিরভাগ মানুষই, কিন্তু বেঁচে থাকবে এক ভিন্ন পৃথিবীতে। মনে আশা রাখি আবার দেখা হবে দূষণমুক্ত পৃথিবীতে, আসুন সকলে সেই অঙ্গীকার করি।
Please wash your hand, stay home stay safe and maintain social distance.
সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সাবধানতা অবলম্বন করুন।