ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?

ক্রেডিট কার্ডের সম্বন্ধে আমরা অনেক বিস্তারিত জেনেছি আমাদের আগের পোস্টগুলোতে । আজ জানবো ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের কিছু পার্থক্য নিয়ে । তো চলুন দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনা শুরু করা যাক ।

ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?
ক্রেডিট কার্ড এবং ডেবিট কার্ডের মধ্যে পার্থক্য কি?


আমাদের ক্রেডিট কার্ড বিষয়ক আগের পোস্টগুলো থেকে আমরা ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদনের নিয়মাবলী, ব্যবহার বিধি, সুবিধা অসুবিধা সম্বন্ধে অনেক কিছু জেনেছি।


আজ আমরা জানবো, ডেবিট কার্ডের সাথে ক্রেডিট কার্ডের তফাত কোথায়। এই টপিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমার মনে হয়েছে এটা আসলেই খুব দরকারী। তাই আমি চাই এই বিষয়ে আপনাদের পরিষ্কার আইডিয়া থাকুক। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক। 

ডেবিট কার্ড বনাম ক্রেডিট কার্ড: একটি বিশ্লেষণ

ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ডের ফিচার বেশিরভাগ একই রকম মনে হলেও, আসলে ভিতরে অনেক তফাত আছে এবং অনেকটাই আলাদা সুযোগ সুবিধা বা নিয়ম কানুন রয়েছে দুইটি কার্ডেরই।


আমরা হয়তো টুকটাক সবাই জানি এই বিষয়ে, তবে ক্লিয়ার কনসেপ্ট হয়তো সবার নেই। তাই আমি চাই আপনাদের সম্পূর্ন ধারণা এই বিষয়ে দেয়ার জন্য যাতে আপনারা আর ভবিষ্যতে কখনো এটা নিয়ে ভুল ধারণা পোষণ না করেন।


ডেবিট কার্ড হচ্ছে মূলত ব্যাংক এর ইস্যু করা এমন কার্ড, যেখানে ব্যাংক হিসাবে টাকা থাকা সাপেক্ষে আপনারা কার্ডের মাধ্যমে সেই টাকা ব্যবহার করতে পারবেন। অর্থাৎ ধরে নিন আপনার ব্যাংক হিসাবে ৫০০০০ টাকা আছে, এবং আপনার রয়েছে ডেবিট কার্ড।


এখন আপনার ডেবিট কার্ড থেকে আপনি উক্ত ৫০০০০ টাকা ব্যবহার করতে পারবেন বা চাইলে এটিএম থেকে ক্যাশ টাকা তুলতেও পারবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, উক্ত ৫০০০০ টাকা শেষ হয়ে গেলে আপনি আর ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন না।


ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কতৃক ইস্যু করা এক প্রকার কার্ড লোন, যাতে ব্যাংক নির্দিষ্ট সীমায় একটি পরিমাণ নির্ধারণ করে থাকে, যেটা গ্রাহক ব্যবহার করতে পারেন।


ব্যাংক হিসাবে টাকা না থাকলেও এই কার্ড ব্যবহার করে লেনদেন করা যায়, কেননা এটা হচ্ছে ব্যাংকের ইস্যুকৃত একটি লোন যা ব্যাংক হিসাবে না থাকলেও নেয়া যায়।


ক্রেডিট কার্ডের লিমিট থাকা অব্দি তা ব্যবহার করে লেনদেন করা যায়, আর এখানে থাকা টাকা কখনো নগদে পাওয়া যায়না বা এটিএম থেকে তোলাও সম্ভব নয়। হ্যাঁ অবশ্যই কিছু প্রিমিয়াম ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এটিএম থেকে তোলাও সম্ভব।

ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের কিছু প্রধান পার্থক্য:

১. ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে মূলত ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কতৃক প্রদত্ত একটি লোন, কিন্তু ডেবিট কার্ড এমনটা মোটেও নয়। ডেবিট কার্ড হচ্ছে নিজেরই একাউন্টে টাকা থাকা সাপেক্ষে ব্যবহার।


২. জমাতিরিক্ত উত্তোলন করা হলে তখনি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা যায়। তবে ডেবিট কার্ড একাউন্টে টাকা থাকলেই ইস্যু করা যায় এবং ব্যবহার করা যায়।


৩. একটি ডেবিট কার্ড সাধারণত ব্যাংকের সাধারণ চলতি হিসাবের সাথে সংযুক্ত থাকে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড সংযুক্ত থাকে ব্যাংক জমাতিরিক্ত হিসাবের সাথে বা লাইন অফ ক্রেডিটের সাথে যা আসলে একটি লোন হিসাব।


৪. ডেবিট কার্ড শুধুমাত্র ব্যাংক থেকেই ইস্যু করা হয় এবং অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান এটা ইস্যু করতে পারেনা। তবে ক্রেডিট কার্ড বিভিন্ন অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকও ইস্যু করে থাকেন।


৫. ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করলে সবসময় ক্রেডিট হিস্টোরি বাড়ে অর্থাৎ দেনা বাড়তে থাকে। কিন্তু ডেবিট কার্ড নিজেরই টাকা তাই এখানে এমন কিছু হয়না। 


৬. ডেবিট কার্ডে কখনো কোনো ব্যবহারের সুদ বা চার্জ দিতে হয়না। কিন্তু ক্রেডিট কার্ডে নির্দিষ্ট টাকার উপরে অবশ্যই সুদ প্রদান করতে হয় তাও মোটামুটি চড়া আকারেই। 


৭. আপনার একাউন্টে টাকা থাকলেই কেবল আপনি ডেবিট কার্ড ব্যবহার করতে পারবেন। ফুরিয়ে গেলে আপনার ডেবিট কার্ড অচল হয়ে থাকবে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড আপনার ব্যাংক ফাকা হলেই আপনাকে লোন আকারে সেবা দেয়া শুরু করে থাকে। 


৮. আপনার ডেবিট কার্ড হারিয়ে গেলে বা কোনো ফ্রড কার্যক্রম হলে, টাকা একবার কার্ড থেকে বের হয়ে গেলে আর সমাধান করা যায়না, আর গেলেও টাকা পয়সার ক্ষতি বা অনেক সময় ব্যয় হয়ে যায়। তবে ক্রেডিট কার্ডে কোনো ফ্রড কার্যক্রম বা যদি কোনো লেনদেন হয়ে যায়, তাহলে সেটা রিপোর্ট করলে উক্ত পেমেন্ট বন্ধ করে দেয়া যায় অর্থাৎ ব্যবস্থা নেয়া যায়।


৯. ডেবিট কার্ডে কোনো বাকিতে পরিশোধের সুবিধা নেই। তবে ক্রেডিট কার্ড এক প্রকার বাকিই বলা যায়, যেহেতু সেটা কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামে বাকির খাতায় যুক্ত হয়।


১০. ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে যেহেতু নিজের হিসাবের অর্থ ব্যবহার করা হয়, এখানে কোনো সুদ বা সময় অনুযায়ী চার্জ দিতে হয়না। তবে এটিএম সেবা, জমাতিরিক্ত উত্তোলন চার্জ ইত্যাদি খরচ অবশ্যই থাকবে। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড যেহেতু লোন, তাই এখানে নির্দিষ্ট টাকার উপর সুদ, সময় অনুযায়ী আসল পরিশোধ ছাড়াও চার্জ, হিডেন কস্ট আরও অনেক ধরনের খরচ হয়ে থাকে।


১১. ইমার্জেন্সি অবস্থায় ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করাটা সবচেয়ে বেশি সুবিধাজনক। কিন্তু ডেবিট কার্ড এখানে পিছিয়ে কারণ হিসাবে টাকা না থাকা, এটিএম না পাওয়া এরকম বিবিধ সমস্যায় পড়তে হতে পারে। 


এই ছিলো ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট এর পার্থক্য নিয়ে আজকের সংক্ষিপ্ত আলোচনা।


শেষ কথা

ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড শুনতে ও কাজ আর্থিক লেনদেন হলেও, দুইটির মধ্যে যে ব্যাপক পার্থক্যও রয়েছে, এটা হয়তো আজকের আলোচনা থেকে আপনারা সবাই বুঝতে পেরেছেন।


আশা করি সবার ধারণাই আজকের পোস্ট পড়ার পর শক্ত হবে। পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করতে ভুলবেন না, প্রশ্ন বা মতামত থাকলে অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট বক্সে। আজকের মতো এখানেই শেষ করছি, সবাইকে জানাই শুভকামনা।