ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার সঠিক পদক্ষেপ? আবেদন পদ্ধতি ও যোগ্যতা
আমরা ক্রেডিট কার্ড সম্বন্ধে হয়তো সবাই কিছু না কিছু ধারণা পোষণ করে থাকি । তবে সঠিক ধারণা অনেক কম মানুষেরই আছে । কিন্তু আমরা চাই আপনাদের সবসময় আপডেট রাখতে । তাই আজ আপনাদের ক্রেডিট কার্ড সম্বন্ধে আরো বিস্তারিত জানাবো।

ক্রেডিট কার্ড সম্বন্ধে কম বেশি সকলেই জানেন, আমাদের সমাজে খুব কম সংখ্যক আছে যারা এই বিষয়ে জানেন না। ব্যাংক বা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর ইস্যুকৃত এই কার্ড সম্পর্কে আমার মনে হয় সবাই শুনেছেন, তবে কিছু ভ্রান্ত ধারণা বা অপরিচ্ছন্ন বিষয় আপনাদের মধ্যে হয়তো থেকেই গিয়েছে।
যেমন ধরে নিন, ক্রেডিট কার্ড আসলে কি কাজে আসে, কিভাবে পাওয়া যাবে, ব্যবহার করার নিয়ম কি, ডেবিট কার্ডের সাথে এর তফাত কি, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধা কি বা অসুবিধা কি এমন অনেক রকম ধারণা।
আমরা আমাদের আগের ক্রেডিট কার্ড বিষয়ক পোস্টে, ক্রেডিট কার্ডের বেসিক কিছু বিষয় সম্বন্ধে জেনেছি। আজ আমরা জানবো, কিভাবে ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে হয় এবং কি কি পদক্ষেপ বা জিনিসপত্রের প্রয়োজন হয়।
এছাড়াও আমরা আরেকটি দরকারী বিষয় জানবো, সেটা হলো ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য সম্বন্ধে। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
ক্রেডিট কার্ড পেতে কি কি দরকার? কোন পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করবেন?
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য কিছু বিশেষ জিনিস বা যোগ্যতার প্রয়োজন হয় যার কয়েকটি আমরা আমাদের ক্রেডিট কার্ড বিষয়ক প্রথম পোস্টে সাধারণভাবে উল্লেখ করেছি। তবে আজকের পোস্টে একটু বিশদ আলোচনা করবো। আসুন বিস্তারিত জেনে নিন।
১. বয়স:
একজন গ্রাহকের বয়স অবশ্যই কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে এবং তার অবশ্যই একটি স্থায়ী আয়ের উৎস থাকতে হবে নতুবা তিনি কার্ডের জন্য মনোনীত হবেন না।
এছাড়া ১৮ বছর বয়স হলেও আবেদন করা সম্ভব তবে এক্ষেত্রে আয়ের উৎস যাচাই বা বাবা মায়ের অনুমতি নিতে হবে এবং তা প্রমাণ করতে হবে।
২. ন্যাশনাল আইডি কার্ড নাম্বার বা সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার:
যদি একজন ব্যাংকের গ্রাহক ক্রেডিট কার্ডের জন্য এপ্লাই করতে চান, তাহলে অবশ্যই তার ভোটার আইডি কার্ড বা সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার থাকা বাধ্যতামূলক।
কারণ আপনার আইডি কার্ড আপনার দেশীয় বাসিন্দা হওয়ার একটি প্রমাণস্বরূপ। আর এটি ছাড়া কেউ ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক একাউন্টও খুলতে পারবেন না।
৩. আয়ের উৎস থাকা এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ থাকা:
একজন গ্রাহকের অবশ্যই আয়ের উৎস মনোনীত করতে হবে। কেননা, আপনার যদি লোন পরিশোধের সক্ষমতা বা সেরকম আয় না থাকে, তাহলে আপনাকে কোনো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করবে না।
এছাড়াও আপনার আয় অবশ্যই নির্দিষ্ট পরিমাণ হওয়াটাও বাঞ্ছনীয়, কারণ অতিরিক্ত কম আয় হলে নিশ্চয়ই আপনি লোন পরিশোধ করতে পারবেন না। যেমন- ধরে নিন আপনি একটি ব্যাংকে ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে চান।
আপনাকে বলা হলো আপনার মাসিক আয় সর্বনিম্ন ৩০ হাজার টাকা হতে হবে। যদি এর সমান বা উপরে হয়, তাহলেই আপনি ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে পারবেন।
৪. পজিটিভ ক্রেডিট হিস্টোরি:
একজন গ্রাহকের ক্রেডিট হিস্টোরি হচ্ছে তার আয় ও ব্যয়ের একটি অনুপাত, যেটা একটি স্কোরের মাধ্যমে বোঝানো হয়। এই সম্বন্ধে আপনাদের বিস্তারিত জানাবো অন্য কোনো পোস্টে।
তবে, এখন বলি, ক্রেডিট স্কোর ৭০০ বা এর উপরে হলে, তবেই আপনি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। কিছু ব্যাংকের কথা ব্যতিক্রম, তবে অধিকাংশই এই লিমিট অনুযায়ী কার্ড ইস্যু করে থাকে।
এইটুকু ছিলো কার্ডের জন্য আবেদন করার কিছু প্রাথমিক যোগ্যতা বা উপাদান। এখন আসুন জেনে নেয়া যাক, আপনার যদি এই যোগ্যতাগুলো থেকে থাকে, তাহলে আবেদনের পদক্ষেপ কি হবে।
Paypal বেশি নিরাপদ নাকি Credit Card? কোনটি ব্যবহার করা উচিত?
ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদনের পদক্ষেপ:
কাগজ পত্রাদি বা সার্টিফিকেট
I) চাকুরীজিবির ক্ষেত্রে
একজন চাকুরীজিবি যদি ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করতে চান, সেক্ষেত্রে তার কিছু বিশেষ কাগজ পত্র বা সার্টিফিকেট এর প্রয়োজন হবে।
যেমন - স্যালারি সার্টিফিকেট, ব্যাংক স্টেটমেন্টের কপি, কোনো প্রতিষ্ঠানে টানা কমপক্ষে ৬ মাস কাজ করার প্রমাণপত্র হতে হবে।
এছাড়া বেতন সর্বনিম্ন ২৫০০০/৩০০০০ টাকা হতে হবে, আত্নীয় বা বন্ধু বান্ধব বা পরিচিত কোনো ব্যাংক ক্লায়েন্টের রেফারেন্সেও প্রয়োজন হতে পারে।
ii) ব্যবসায়ী কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে
একজন ব্যবসায়ী গ্রাহকের ক্ষেত্রে আলাদা কিছু জিনিসপত্র লেগে থাকে যেগুলো চাকুরীজিবির সাথে মিলবে না।
যদি একজন ব্যবসায়ী ক্রেডিট কার্ড পেতে চান, সেক্ষেত্রে তাকে ১ বছরের ব্যাংকের ফুল স্টেটমেন্ট, তার ব্যবসায়ের লাইসেন্স, ইনকাম সার্টিফিকেট মনোনীত করতে হবে।
এছাড়াও, ব্যবসায়িক কমপক্ষে ৫-১০ লাখ টাকার লেনদেনের প্রমাণপত্রও জমা দিতে হয়।
iii) যে জিনিসগুলো সব আবেদনকারীর লাগবে
এমন কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলো সব ধরনের আবেদনকারীর প্রয়োজন হয়। এগুলো হচ্ছে, ছবি, রেফারকারীর ছবি ও আইডির ফটোকপি, আবেদনকারীর বাসার কাগজপত্র, বিদ্যুৎ বিলের কপি, ইত্যাদি।
এসব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, ব্যাংকের একজন প্রতিনিধি, গ্রাহকের সাথে দেখা করে ক্রেডিট কার্ড আবেদনের একটি KYC(Know Your Customer) ফর্ম পূরণ করে নিয়ে যায়।
এছাড়াও আরো কিছু রিপোর্ট লাগে যেগুলো ব্যাংক থেকে তুলে ব্যবহার করা যায়। আপনি চাইলে, প্রতিনিধির মাধ্যমে কাজটি না করে, সরাসরি ব্যাংকে গিয়েও কাজ সম্পাদন করতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার বিকল্প নিয়ম:
ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার জন্য উপরের এতো সব যোগ্যতা যদি আপনার পছন্দ না হয়ে থাকে, বা আপনি যদি সহজে ক্রেডিট কার্ড পেতে চান, তাহলেও আপনার জন্য রয়েছে সুবিধাজনক ব্যবস্থা।
ব্যাংকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফিক্সড ডিপোজিট করলে, সেখানে একটি ক্রেডিট কার্ড আপনি পেতে পারবেন। সাধারণত এই ফিক্সড ডিপোজিট ৫০০০০ টাকা থেকে শুরু হয়।
আপনি যদি এই পরিমাণ বা এর বেশি টাকা ব্যাংকে ডিপোজিট করেন, তাহলে ব্যাংক আপনাকে ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করবে।
আমাদের শেষ কথা
এই ছিলো ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করার প্রাথমিক যোগ্যতা এবং আবেদনের পদক্ষেপ বা নিয়মাবলী নিয়ে আমাদের আজকের পোস্ট। আশা করি পোস্টটি আপনাদের সবার ভাল লাগবে এবং কাজে আসবে।
আপনাদের আজকের পোস্ট সম্বন্ধীয় যেকোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকলে আমাকে জানাতে পারেন কমেন্ট বক্সে। আমি যত দ্রুত সম্ভব উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।
সবাইকে শুভকামনা জানিয়ে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি!