গর্ভকালীন নিদ্রাহীনতা সমস্যা দূর করতে করণীয়

গর্ভাবস্থার শেষের দিকে নিদ্রাহীনতা একটি সাধারণ সমস্যা৷ এই সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে কি করবেন তা নিয়ে আর্টিকেলটি লিখা হয়েছে।

গর্ভকালীন নিদ্রাহীনতা সমস্যা দূর করতে করণীয়
গর্ভকালীন নিদ্রাহীনতা সমস্যা দূর করতে করণীয়


গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন রকমের সমস্যা হওয়ার মধ্যে একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে নিদ্রাহীনতা। যেকোনো মানুষের যখন নিদ্রাহীনতা সমস্যা দেখা দেয় তখন সত্যিই বিরক্তিকর যন্ত্রণার উদ্যোগ হয়।


গর্ভবতী নারীদের গর্ভধারণ এর দশ মাস দশ দিনের মধ্যে প্রথম তিন মাসের পর থেকে শুরু করে শেষ দিন পর্যন্ত বিভিন্ন রকমের জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।


তন্মধ্যে গর্ভাবস্থার একেবারে শেষের দিকে নিদ্রাহীনতার মত অসস্থিকর একই সাথে বিরক্তিকর যন্ত্রণাদায়ক এই সমস্যাটির অনেক বেশি প্রভাব দেখা যায়।
 


ঠিকমতো ঘুমাতে না পারার কারণে গর্ভবতী নারীর মেজাজ খিটখিটে থাকে। কোন কাজে মন বসে না এবং হরমোনের প্রবলেম এর কারনে নানান সময় মুড সুইং হতে থাকে যা সত্যিই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 
যদিও গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এসে ঘুম বলতে গেলে নারীদের আসেই না। নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। তবুও বিশেষজ্ঞরা এই সময় কিছু পরামর্শ প্রদান করে থাকেন যার মাধ্যমে গর্ভকালীন এই সময়ের শেষের দিকে গর্ভবতী নারীরা নিদ্রাহীনতা রোধ করতে পারে।


আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা জানবো কিভাবে গর্ভাবস্থায় নিদ্রাহীনতার মতো সমস্যা দূর করা যায়। তাহলে চলুন দেরী না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করে ফেলি। এবং জেনে নেই কিভাবে গর্ভাবস্থায় নিদ্রাহীনতার সমস্যা নারীরা দূর করতে সক্ষম।

 


নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ঘুমানো

গর্ভাবস্থায় নিদ্রাহীনতার মতো সমস্যা দূর করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি আপনারা করতে পারেন তা হলো আপনার নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই বিছানায় ঘুমাতে যাওয়া।


এতে করে বিছানায় থাকার পর ঘর অন্ধকার করে আরামদায়ক পরিবেশের সৃষ্টি করলে দ্রুত তথা আপনি যে সময়টায় ঘুমাতে যেতেন সেই সময় ঘুম এসে যাওয়ার কথা। তবে সব সময় এটি কার্যকর নাও হতে পারে।


কিন্তু আপনি অবশ্যই এই পদ্ধতিটি অন্তত একবার হলেও চেষ্টা করে দেখবেন। প্রথম প্রথম হয়ত এই নিদ্রাহীনতার সমস্যা দ্রুত বিছানায় যাওয়ার সাথে সাথে কমে যাবে বরং সময় নিবে।

 


খাবারের দিকে নজর দিন

ঘুমাতে যাওয়ার কমপক্ষে 2/3 ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নেবেন। অনেক সময় দেখা যায় যে খাবার ভালো মত হজম না হতে পারার কারণে ঘুম আসতে সমস্যা দেখা যায়।


শুধু গর্ভবতী নারী নয় বরং সকল মানুষের উচিত নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাবার পূর্বে কমপক্ষে 2 অথবা 3 ঘণ্টা আগে খাবার খেয়ে নেওয়া। এতে করে ঘুমাতে যাবার পূর্বে খাবার হজম হয়ে যাবে। বদহজমের কোন সমস্যা হবে না সুতরাং ঘুমের বিপত্তি ঘটবে না।

 


উষ্ণ জলের স্নান

ঘুমাতে যাওয়ার সময় স্নান অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলা বাদে বিভিন্ন বিদেশি কালচারে দেখা যায় রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে স্নান করার রীতি প্রচলিত রয়েছে। তারা মূলত ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে স্নান করে থাকে।


যাতে তাদের একটা ভালো সুন্দর নিদ্রা আসে। একই সাথে দিনের সকল রকমের খাটাখাটুনির অবসান ঘটে যায় এই উষ্ণ জলে স্নান নেওয়ার পর। যখন কোন ব্যক্তি বিছানায় ঘুমাতে যাবেন তখন ঘুম আসতে বেশী সময় নেবে না।


আরাম আয়েশের রাজ্যে হাত-পা ছড়িয়ে খুব সুন্দর ঘুম আসবে বলে আশা করা যায়। সুতরাং গর্ভবতী নারীদের শেষের দিক দিয়ে যখন নিদ্রাহীনতার মতো সমস্যা দেখা দিবে তখন তারা চেষ্টা করবেন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পূর্বে আরামদায়ক একটি স্নান নেওয়ার ব্যবস্থা করার।


যদিও আমাদের বাংলায় এই সংস্কৃতি চলে না। কিন্তু তবুও মাঝে মাঝে সংস্কৃতি রক্ষা না করলেও চলে।

 


গরম দুধ

নিদ্রা আনতে গরম দুধের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। এই গরম দুধ গর্ভাবস্তায় নারীদের ঘুম আনতে সহায়ক।


সুতরাং সম্ভব হলে চেষ্টা করবেন ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে অন্তত এক কাপ গরম দুধ খাওয়ার। এতে করে এটা আপনার নিদ্রায় অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


ঘুমাতে যাওয়া ছাড়া বিছানায় যাবেন না

 শুধুমাত্র ঘুমানোর উদ্দেশ্য ছাড়া সারা দিনে একবারও বিছানায় যাবেন না। দরকার হলে বসে কিংবা অন্য কোনভাবে বিশ্রাম নেবেন। তবুও যেন বিছানার ব্যবহার না করে।


মনে রাখবেন বিছানাকে তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র রাতে ঘুমানোর জন্য। আপনি যদি বিছানাকে শুয়ে বসে ইচ্ছা মত কাজ কর্মে ব্যবহার করেন তবে আপনার রাতের ঘুমানোর মানসিকতাটা চলে যাবে।


যদি আপনি সকল কাজকর্ম বিছানায় করে থাকেন তবে দেখা যাবে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আপনার ঘুম আসবে না। কেননা আপনার মাথা থেকে এই বিষয়টাই চলে গিয়েছে যে বিছানাকে ঘুমানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।


সুতরাং চেষ্টা করবেন দিনের সারাক্ষণ যতবার বিশ্রাম নেবেন অন্তত বিছানায় বিশ্রাম না নিতে। এতে করে রাতে ঘুমাতে যখন আপনি বিছানায় আসবেন শোয়া মাত্রই গভীর নিদ্রায় ডুবে যাবে বলে আশা করা যায়।

 


অলস সময় কাটাবেন না

 যদি আপনার হাতে কোন কিছু করার নাও থাকে তবুও ছোটখাটো বিষয় নিয়ে কাজে লেগে পড়ুন।


আপনি কোন মুভি দেখতে পারেন অথবা বই পড়তে পারেন কিংবা গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রযোজ্য হালকা যোগব্যায়ামও করে সময় কাটাতে পারেন। যাই করুন না কেন অলস সময় কাটাবেন না।


এটা আপনার রাতে ঘুমাতে অনেক বেশি ব্যাঘাত ঘটায়।

 


চা-কফি থেকে বিরত থাকুন

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকেরা এলকোহল ও ক্যাফেইন জাতীয় তরল পান করা থেকে বিরত থাকতে বলেন। এটিকে ধারণা করা হয় গর্ভকালীন সময়ের জন্য ক্ষতিকর।


শুধু তাই নয় চা কফির মত তরল পানীয় পান করা আপনার গর্ভাবস্থায় নিদ্রাহীনতা সৃষ্টি করার অন্যতম কারণ। সুতরাং এই সময়ে চা কফি এর মত বিভিন্ন কোমল পানীয় খাওয়ার প্রয়োজন নেই।

 


আরামদায়ক ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশ বাছুন

ঘুমানোর জন্য সব সময় আরামদায়ক এবং কোলাহল মুক্ত পরিবেশ বেছে নেবেন। কেননা অতিরিক্ত কোলাহল যুক্ত পরিবেশ এবং আরাম নেই এমন জায়গায় ঘুমানো সত্যি কষ্টদায়ক।


ঘুমাতে যাওয়ার জন্য তাই এমন জায়গা বাছুন যেখানে পরিবেশটা অত্যন্ত আরামদায়ক একইসাথে কোলাহলমুক্ত।


ডাক্তারের পরামর্শ

যদি আপনার উক্ত সকল পদ্ধতি অবলম্বন করা সত্ত্বেও ঘুমের সমস্যা হয় তবে আপনি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বাধ্য।


সময় করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন এবং তাকে আপনার সমস্যার কথা জানান। অতঃপর চিকিৎসক আপনাকে যেই পরামর্শগুলো দিবেন সেটি নিয়মমতো গ্রহন করুন।


 সুপ্রিয় পাঠক, আশা করা যায় উপরোক্ত করণীয়গুলো আপনার জীবনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।