গর্ভাবস্থায় কি কারণে রক্তপাত হয় জেনে নিন
গর্ভাবস্থায় অনেক নারীর রক্তপাত হওয়ার ব্যাপারটি দেখা যায়। কোনো ক্ষেত্রে এটি স্বাভাবিক। আবার কখনো না অস্বাভাবিক। আপনি কীভাবে বুঝবেন আপনার গর্ভাবস্থায় রক্তপাতের ব্যাপারটা স্বাভাবিক না-কি মারাত্মক? জানতে হলে আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।

গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হওয়া কারো কাছে অনেক সাধারন একটি ব্যাপার, আবার কারো কাছে বা অধিক মারাত্মক একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। আসলে ব্যাপারটি নির্ভর করছে ঠিক কোন কারণে গর্ভাবস্থায় নারীর রক্তপাত হচ্ছে সেটির উপর। আমরা জানি নারী যখন গর্ভধারণ করেন তখন তার পিরিয়ড বা মাসিক চলে না।
যেহেতু তার পিরিয়ড বা মাসিক দীর্ঘ নয় মাসের জন্য বন্ধ থাকে সুতরাং আলাদা কোনো কারণে রক্তপাত হওয়ার কারণ নেই। তবে কেন কিছু কিছু নারীর গর্ভাবস্থার অনেক সময় পরেও রক্তপাত হতে পারে? এটি কি কোনো ভালো লক্ষণ না-কি খারাপ লক্ষণ? কিংবা এটি আপনাকে অগ্রীম জানান দিচ্ছে আপনার গর্ভের সন্তান আর দুনিয়াতে পা রাখতে পারবে না?
প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন কারণে গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হতে পারে। কিন্তু কোন ক্ষেত্রে রক্তপাত স্বাভাবিক কিংবা কোনটা অস্বাভাবিক এটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে যারা নতুন নতুন মা হতে চলেছেন তারা তো না-ই। আর তাই আর্টিকেলটি তা আলোচনা করা হবে ঠিক কি কারণে গর্ভাবস্থায় পাত হয়। তো চলুন এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কারণ গুলো কি কি।
ইমপ্লান্টেশন
আপনারা ইম্প্লান্টেশন এর নাম নিশ্চয়ই শুনেছেন। ইমপ্লান্টেশন এর কারণে যদি রক্তপাত হয়ে থাকে তবে সেটাতে ভয়ের কিছু নেই। বরং সেটা বেশ স্বাভাবিক। প্রকৃতপক্ষে ইমপ্লান্টেশন ব্যাপারটা হচ্ছে, যখন কোনো নারীর অভুলেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়, এর এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে যে রক্তপাত হয় সেটাকে ইম্প্লান্টেশন বলা হয়।
কিছু কিছু নারী এই ইম্প্লান্টেশন এর ব্যাপারটাকে মাসিক বলে মনে করেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা মাসিকের রক্ত না। বরং এটা ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং। যখন জরায়ুতে ভ্রুণ স্থাপিত হয় বা ইমপ্লান্টেশন এর সময় হয় তখন এই রক্তপাতটা হতে পারে। সাধারনত ইমপ্লান্টেশন প্রক্রিয়াটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার পর পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যেই শুরু হয়।
সুতরাং আমরা বলতে পারি ইমপ্লান্টেশন ব্লিডিং হওয়া ভয়ের মতো কিছু না। এটা বরং ভ্রুণ স্থাপিত হওয়ার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। কিংবা এতে গর্ভপাতের কারণ উল্লেখ নেই।
অ্যাবরশন
প্রথম ট্রাইমিস্টারে যদি কোনো নারীর পেটে ব্যথা, একই সাথে পেটে খিল ধরা ভাব এর মত যন্ত্রণা দেখা যায় এবং সেই যন্ত্রণার সাথে যোগ দেয় রক্তপাত, তবে সেটা মিসক্যারেজ বা গর্ভপাতের লক্ষণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি এই সমস্যাটা গর্ভাবস্থার প্রথম ১২ সপ্তাহে হয় তাহলে।
বলা হয়ে থাকে গর্ভাবস্থার 12 সপ্তাহ অতিক্রম করার পর প্রায় 50 ভাগ মহিলার ক্ষেত্রে গর্ভপাত হয়ে যায়। সুতরাং প্রথম 12 সপ্তাহে যদি আপনার উক্ত লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় সেই ক্ষেত্রে আপনার গর্ভাবস্থায় রক্তপাত ব্যাপারটি স্বাভাবিক না।
তবে এখানে বলে রাখা ভালো গর্ভাবস্থায় 7 থেকে 11 সপ্তাহ অতিক্রম করার পর যদি আল্ট্রাসাউন্ড টেকনোলজিতে আপনার সন্তানের নরমাল হার্টবিট পাওয়া যায় তবে আপনার গর্ভপাত কিংবা মিসক্যারেজ হয়নি। সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে। এক্ষেত্রে বলা যায় অন্য কোন কারণে আপনার রক্তপাত হয়ে থাকে।
এমন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুত রক্ত পড়ার কারণ জানার চেষ্টা করুন এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিন।
একটোপিক প্রেগনেন্সি
প্রেগনেন্সির যত রকমের প্রক্রিয়া রয়েছে তার মধ্যে এটি সবথেকে বড় ঝুঁকিপূর্ণ। কেননা এতে করে সন্তান জরায়ুতে স্থাপিত হয় না। বরং নিষেক হওয়া ডিম্বাণু তথা সন্তানের ভ্রূণ জরায়ুর বাইরে প্রতিস্থাপিত হয়। বিশেষ করে ফেলোপিয়ান টিউব এ।
আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, সন্তান ধারণের জন্য সৃষ্টিকর্তার নারী দেহে জরায়ু সৃষ্টি করে দিয়েছেন। এবং এই জরায়ুতে সকল রকমের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দিয়েছেন যাতে করে অজন্মগ্রহণ করা শিশুটি তার সকল চাহিদা গুলো পূরণ করতে পারে।
কিন্তু কোনো নারীর ভ্রুণ যদি জরায়ুর ভিতরে স্থাপিত না হয়ে জরায়ুর বাইরে প্রতিস্থাপিত হয় সেক্ষেত্রে সেটা নারী ও শিশুর জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আর এতে করে ব্লিডিং হওয়ারও অনেক সুযোগ থাকে।
সুতরাং আপনার গর্ভাবস্থায় যদি ব্লিডিং হয়ে থাকে আপনি সবার প্রথমে জানার চেষ্টা করুন আপনিও কি একটপিক প্রেগনেন্সির উইমেনদেরর অন্তর্ভুক্ত কি-না।
আরও পড়ুনঃ অন্তঃসত্ত্বা নারীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিয়ে কিছু কথা
মোলার প্রেগনেন্সি
একটোপিক প্রেগন্যান্সির পর সবথেকে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ যে প্রেগনেন্সি প্রক্রিয়া রয়েছে সেটি হচ্ছে মোলার প্রেগনেন্সি। প্রেগনেনসি প্রক্রিয়ায় সাধারণত নিষিক্ত ডিম্বানু থেকে ভ্রুণ গঠিত হয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা হয় না বরং নিষিক্ত ডিম্বানু থেকে ভ্রুণ গঠিত হওয়ার পরিবর্তে অস্বাভাবিক সিস্ট বা টিউমারে পরিণত হয়। এবং উক্ত টিউমার গুলো দেখতে আঙ্গুরের থোকার মতো দেখা যায়।
এটা নারীকে সবথেকে বড় সমস্যার সম্মুখীন করে দেয়। এর ফলে উক্ত ভ্রুণটি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই মোলার প্রেগন্যান্সি লক্ষন হিসেবে গর্ভাবস্থায় নারীর রক্তপাত হতে পারে। ব্যাপারটি নিয়ে তাই চিন্তাভাবনা করবেন এবং সব সময় মাথায় রাখবেন।
ইনফেকশন
গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন ইনফেকশন হওয়া স্বাভাবিক। পরিষ্কার পরিছন্নতা মেইন্টেন না করলে কিংবা নিজের শরীরের সঠিক যত্ন নিতে পারলে গর্ভাবস্থায় যৌনাঙ্গের বিভিন্ন ইনফেকশন হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে যৌনাঙ্গে ইস্ট ইনফেকশন বা ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনা ইত্যাদির মতো ইনফেকশন দেখা যায়। যা থেকে পরবর্তীতে ব্লিডিং হতে পারে।
যদিও এটা জরায়ু জনিত ইনফেকশন হয় না, তবুও এ থেকে সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে থাকে। চেষ্টা করবেন সব সময় সচেতন থাকার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা। একই সাথে জননাঙ্গে ইনফেকশন হলে তা অপসারণ করার দ্রুত ব্যবস্থা করারও চেষ্টা করবেন।
আরও পড়ুনঃ প্রাকৃতিক উপায়ে মায়েরা স্তনের দুধ বৃদ্ধি করার উপায়
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করি বুঝতে পেরেছেন গর্ভাবস্থায় কত রকমের কারণে রক্তপাত হতে পারে। কোন কোন রক্তপাত স্বাভাবিক আবার কোনোটা মারাত্মক। তবে যেটাই হোক না কেন আপনি অবশ্যই মারাত্মক দিকটাকে বেশি ফোকাস করবেন এবং চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে সমস্যার সমাধান করবেন। তাহলে অনেক বড় ক্ষতি হওয়া থেকে বেঁচে যাবেন।