গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাওয়া ক্ষতিকর

গর্ভাবস্থায় সব রকমের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। অন্যথায় মিসক্যারেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আজকের আর্টিকেলটিতে গর্ভবতী নারীর কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাওয়া ক্ষতিকর
গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাওয়া ক্ষতিকর


গর্ভাবস্থায একজন নারীর জন্য স্বর্গীয় অভিজ্ঞতা। কেননা এই সময়টা এমন যে তখন একজন নারী তার ভেতর আরেকটি জীবনকে ধারণ করছেন। এই সময় তার নিজের সুস্থতার জন্য যতটা সচেতন হওয়া উচিত তার থেকে বেশি তার সন্তানের জন্য বেশি সচেতন হওয়া উচিত।


এই সময়টা একজন নারীকে সবচেয়ে বেশি যত্নের মধ্যে রাখতে হয়। ভালো মন্দ, যত্নআত্তি না পেলে নারীর বিভিন্ন শারীরিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে থাকে। শুধু তাই নয় গর্ভের শিশুর সুস্থতার জন্য নারীর অনেক বেশি যত্নের প্রয়োজন। এমন কোন কাজ করা যাবে না যাতে নারী কিংবা তাঁর গর্ভস্থ শিশুর কোন রকমের ক্ষতি হয়।


একজন গর্ভবতী নারীর গর্ভকালীন সময়ের প্রথম তিন মাস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত মানব ভ্রুণ 9 মাসের মধ্যেই পরিস্ফুটিত হয়ে যায়। এবং সর্বোচ্চ 10 মাস 10 দিনের ভেতরে নবজাতক এই দুনিয়ায় পদার্পণ করে।


কিন্তু ভ্রুণ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রথম তিন মাস সবচেয়ে বেশি সন্তান মিসক্যারেজ হওয়ার ঘটনা ঘটে থাকে। তাই এ সময় নারীদের সবচেয়ে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথম তিন মাস এবং শেষের তিন মাস নারীকে সর্বোচ্চ যত্নের উপর রাখতে হবে।


অনেক ক্ষেত্রে নারীরা প্রথমবার গর্ভধারণ করে এবং এ সময় পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে না। বিধায় জানে না কোন কাজ করলে কি হবে। তাই তারা বিভিন্ন রকমের ভুলভ্রান্তি করে থাকে। ফলে হারাতে হয় তাদের গর্ভের সন্তান। দম্পতিদের মাঝে লাগে ঝগড়া। সংসারে আসে অশান্তি।


তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার খাওয়া ক্ষতিকর। তথা মিসক্যারেজের মত ঝামেলার সৃষ্টি করতে পারে। তাই চলুন দেরী না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করা যাক।

 
আরও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে যে লক্ষণ প্রকাশ পায়


বিভিন্ন ধরনের জাঙ্ক ফুড বা স্ট্রীট ফুড

গর্ভাবস্থায় যেসকল খাবার খাওয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তার মধ্যে জাঙ্ক ফুড বা স্ট্রীট ফুড অন্যতম। এই সময়ে এমন সকল খাবার খাওয়া উচিত যা শরীরে পুষ্টি দান করে ও সন্তানের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। জাঙ্ক ফুড বা স্ট্রীট ফুডের মতো খাবার শরীরে মেদ জমাতে অনেক বেশি সহায়ক।


সুতরাং চেষ্টা করতে হবে গর্ভাবস্থায় কোন রকমের জাঙ্ক ফুড বা স্ট্রিটফুড সেবন করা থেকে দূরে থাকার। কেননা স্বাভাবিকভাবেই এই সকল খাদ্য খাওয়া একদমই উচিত নয়। এরা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। তন্মধ্যে গর্ভাবস্থায় কোন নারী যদি অধিক পরিমাণে জাঙ্কফুড খেতে থাকেন তবে তা তার গর্ভাবস্থায় সন্তানের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।

 


অ্যালকোহল কিংবা ধূমপান

মানবদেহের জন্য যত রকমের বাজে নেশা রয়েছে তার মধ্যে অ্যালকোহল বা ধুমপান অন্যতিম। মাদকের আসক্তি মানুষের শরীরের জন্য অনেক বেশি ক্ষতিকর। একবার মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে গেলে খুব সহজে মাদক ছেড়ে দেওয়া যায় না। ধূমপানের ব্যাপারটাও সেরকম।


সাময়িক মস্তিষ্কের আরামের জন্য মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাদক সেবন করে থাকে। তাছাড়া মাদকের সহজলভ্যতা এত বেশি হওয়ায় মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কোনও নারী যদি মদ্যপান কিংবা ধূমপানে আসক্ত হয়ে থাকে, তার শরীরে নানা রকমের ক্ষতি হতে পারে।


সেই সাথে তাঁর গর্ভস্থ সন্তানের ওপরও বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। সুতরাং কোনো নারী গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে চেষ্টা করবেন সকল রকমের অ্যালকোহল ধূমপান ইত্যাদি থেকে দূরে থাকার। কেননা অ্যালকোহল ধূমপান অতিরিক্ত সেবনের ফলে খুব বেশি পরিমাণে ডোপামিন হরমোন ক্ষরণ হয় যা শিশুর ক্ষতি করে।

 
আরও পড়ুনঃ অন্তঃসত্ত্বা নারীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিয়ে কিছু কথা


বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ

যদিও সামুদ্রিক মাছ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। কেননা এতে খনিজ লবণ আয়রন ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান পাওয়া যায়। তবুও গর্ভাবস্থায় হাঙ্গর সওয়াডফিশ টুনা কিংমেকার এবং টাইল ফিস খাওয়া উচিত নয়। এগুলো গর্ভস্থ সন্তানকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়।

 


কাচা স্প্রাউটস না খাওয়া

স্প্রাউটস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। এটি নির্দ্বিধায় বেশ স্বাস্থ্যকর একটি খাবার। কিন্তু রান্না না করে এই স্প্রাউটস গর্ভবতী নারীদের খাওয়াতে দেওয়া উচিত নয়। কেননা কাঁচা স্প্রাউটস এ বিভিন্ন রকমের ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যা গর্ভবতী নারীর গর্ভস্থ সন্তানকে ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে পারে।


সুতরাং কাঁচা স্প্রাউটস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো হলেও গর্ভবতী নারীরা কাঁচা স্প্রাউটস খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন। প্রয়োজনে রান্না করে খেতে পারেন।

 
এছাড়াও কোন গর্ভবতী নারীকে অতিরিক্ত পরিমাণে তৈলাক্ত খাবার খেতে দেওয়া উচিত নয়। এমন কোন খাবার খাওয়া উচিত নয় যেখানে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা উক্ত সকল রকমের খাদ্যে প্রিজারভেটিভ কেমিক্যাল এর উপস্থিতি থাকে।


এই সকল প্রিজারভেটিভ কেমিক্যাল এর উপস্থিতি নারীর গর্ভস্থ সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। যা মিসক্যারেজের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং চেষ্টা করবেন এ সকল খাবার থেকে দূরে থাকার।

 
আরও পড়ুনঃ সিজার হওয়ার পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা


নারীর গর্ভস্থ সন্তানের সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে পদার্পণ করুক সকলেই তাই চায়। কিন্তু নিয়তি সাথে না থাকায় এবং বিভিন্ন রকমের দুর্ঘটনার শিকার হবার ফলে অনেক নারী তাঁর গর্ভস্থ সন্তানকে ভূমিষ্ঠ করতে সক্ষম হোন না। সন্তানকে জন্ম হওয়ার আগেই যেন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়। তারমধ্যে ভুলক্রমে বিভিন্ন খাবার সেবন করা একটি মূল কারণ।


তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে গর্ভাবস্থায় কোন কোন খাবার গর্ভস্থ সন্তানের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আশা করি আপনারা আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েছেন এবং সকল গর্ভবতী নারীর উক্ত খাদ্যগুলো গ্রহন করা থেকে দূরে থাকবেন। চেষ্টা করবেন এই সময়ে আনারস এর মতো ফল এড়িয়ে চলতে। তাহলে সুপ্রিয় পাঠক, আজকে এখানেই ইতি টানছি। ধন্যবাদ।