গর্ভাবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ

গর্ভাবস্থায় বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। তার মধ্যে ক্লান্তি আসা একটি প্রধান সমস্যা। আজ এই আর্টিকেলে আপনাদের গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন সমস্যা যেভাবে সামলাবেন তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শেষ অবধি অনুচ্ছেদটি পড়ার জন্য অনুরোধ করছি।

গর্ভাবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
গর্ভাবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করার ৫টি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ


গর্ভধারণ একজন নারীর জন্য সবথেকে সুখের মুহূর্তগুলোর একটি। নারী তার মাতৃত্বের অনুভূতি অনুভব করতে থাকে। সে সময়টা হয় তার জন্য সবচাইতে বেশি সুখের।


একজন নারী যখন প্রথমবার জানতে পারে সে গর্ভবতী হয়ে মা হতে চলেছেন তখন তার ভেতর দু'রকমের অনুভূতি কাজ করে। যার মধ্যে সুখের অনুভূতি থাকে  শতাংশ ৯০% এবং বাকি ১০% থাকে যে কোনো রকমের বিপত্তি সন্তান ও নিজের প্রাণ হারানোর ভয়।


তবুও যাই হোক না কেন সুখের শতাংশটা অধিক থাকার কারণে সাধারণত নেতিবাচক চিন্তাটাকে আর পাত্তা দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না তিনি। তাই সব কিছু মিলিয়ে গর্ভাবস্থায় একজন নারীর জন্য স্বর্গীয় অনুভূতির সমান।


একজন নারী সন্তান জন্মদানের মাধ্যমে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবতে থাকে। যদি কোন নারী অনিচ্ছায় বন্ধ্যাত্ব গ্রহণ করে এবং সন্তান ধারণে অক্ষম হয় তখন তার সামনে যেন সম্পূর্ণ পৃথিবীর কালো হয়ে যায়। সন্তানহীন জীবন যেন কোন মেয়ে যাপন করতে চায় না।


গর্ভাবস্থায় কিন্তু শুধুমাত্র একটা সুখের খবর হলেও প্রকৃতপক্ষে এই সময়টায় গর্ভবতী নারীকে এবং তার পরিবারের সদস্যদের কে নানা রকমের জটিল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়।


সবথেকে বেশি এই সময়টায় ভোগান্তি ভুগতে হয় নারীকে এবং তার স্বামীকে। শুধুমাত্র সন্তানের চিন্তা যে নারীর হয়ে থাকে তা নয় বরং হবু পিতার মাথাতেও নানা রকমের শারীরিক ও মানসিক চাপ এসে ভর করে।


এই সময়টায় তাই স্বামী এবং স্ত্রী উভয়েকেই তাদের ভবিষ্যত সন্তানের কথা মাথায় রেখে সামনে আগানোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।


গর্ভাবস্থায় নানা রকমের জটিলতার মধ্যে একজন নারীকে যেতে হয়। সবথেকে বেশি সমস্যা যেটা হয় সেটা হল কোন কাজ না করে প্রচুর পরিমাণে ক্লান্ত অনুভব করা। এই ক্লান্ত অনুভব করা থেকে কিভাবে রেহাই পেতে হয় সেই সম্পর্কে আর্টিকেলটি আজকে আলোচনা করা হয়েছে।


গর্ভাবস্থায় এরকম ক্লান্তি থেকে রক্ষা পেতে আপনি নিজেও এই পদ্ধতি গুলো মেনে চলুন এবং আপনার স্বামীকেও বলুন তিনি যেন আপনাকে এই সময়টায় সহযোগিতা করেন।


তাহলে চলুন আমরা আর দেরি না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করে ফেলি।


করণীয় নং ১

গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে। তন্মধ্যে একটি কারণ হচ্ছে থাইরয়েড কিংবা রক্তশূন্যতা অথবা হরমোনের বিভিন্ন সমস্যা। এগুলো অবশ্যই তেমন একটা মারাত্মক না হলেও প্রচুর পরিমাণে অস্বস্তিকর এবং একই সাথে জটিল।


গর্ভাবস্থায় রক্তশূন্যতা সত্যিই মারাত্মক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা এই সময় একজন নারীর রক্তের প্রয়োজন অনেক বেশি।


সুতরাং যদি কোন নারী শরীরে গর্ভাবস্থাকালীন রক্তশূন্যতার মতো সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

সিজার হওয়ার পরবর্তীতে নরমাল ডেলিভারির উপকারিতা

গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে যে লক্ষণ প্রকাশ পায়

গর্ভাবস্থায় যে সকল খাবার খাওয়া ক্ষতিকর

কখন সিজারের পর নরমাল ডেলিভারি সম্ভব?

অন্তঃসত্ত্বা নারীর শারীরিক ও মানসিক যত্ন নিয়ে কিছু কথা


করণীয় নং ২

এই সময়টায় একজন নারীকে বেশি বেশি সুষম খাবার গ্রহণ করা উচিত। কেননা তার ভেতর আরো একটি প্রাণের সঞ্চার হতে যাচ্ছে যার পুষ্টির প্রয়োজন। আর এই পুষ্টি সন্তান হয়ে থাকে তার মায়ের দেহ থেকে।


সুতরাং মা যে পরিমাণ পুষ্টি সংগ্রহ করবে তার অর্ধেক উক্ত সন্তানের দেহ তৈরিতে চলে যাবে। গর্ভবতী নারীর খাবারের পরিমাণ হওয়া উচিত দুজন মানুষের সমান।


কিন্তু তিনি যদি শুধুমাত্র তার সন্তানের জন্য কিংবা তার নিজের পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে থাকেন। তবে তিনি গর্ভাবস্থায় ক্লান্তি অনুভব করতে পারেন। তাই চেষ্টা করবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে সুষম খাদ্য খাওয়ার।


একইসাথে তিন-চার ঘণ্টা পরপর জল পান করা প্রয়োজন। এতে করে হজমে সহায়তা করবে। একই সাথে এসিডিটি প্রতিরোধ করতে কাজে দিবে।


আরও পড়ুনঃ অতিরিক্ত সাদা স্রাব নিয়ন্ত্রণে আনতে যা খাওয়া জরুরি


করণীয় নং ৩

গর্ভাবস্থায় ক্লান্ত অনুভব হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঘুমের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। কেননা মানুষ তখনই ক্লান্ত অনুভব করে যখন তার মস্তিস্ক ক্লান্ত হয়ে যায়।


মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিতে পারলে মানুষের শরীর ঘুমিয়ে থাকে। তাই মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়ার জন্য গর্ভবতী নারীর ঘুমানো অনেক প্রয়োজন।


এক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীকে দিনে কমপক্ষে দুই ঘণ্টা এবং রাতে কমপক্ষে আট ঘণ্টার মতো বিশ্রামে থাকতে হবে। অর্থাৎ ঘুমিয়ে কাটাতে হবে। এতে করে ক্লান্ত লাগার অনুভূতিটা অনেকটাই কমে যাবে।


আরও পড়ুনঃ স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে কি কি করণীয়


করণীয় নং ৪

গর্ভকালীন সময় সাধারণত ক্যাফেইন জাতীয় তরল খাওয়া উচিত নয়। একই সাথে এলকোহল এবং ধূমপান পরিহার করা উচিত।


যদি কোনো নারীর অ্যালকোহল সেবনের বা ধূমপান কিংবা ক্যাফেইন সেবনের অভ্যাস থেকে থাকে তবে চেষ্টা করবেন গর্ভকালীন এই সময়ে উক্ত বিষয় গুলো থেকে বের হয়ে আসার।


কেননা এটা যে শুধু আপনার শরীরের ক্ষতি করবে তা কিন্তু নয়। ভবিষ্যত সন্তানের জন্য বিষয়টা অনেক ক্ষতিকর।


বিশেষ করে যদি আপনার চা কফি খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তবে দিনে এক বেলা চা কফি খাওয়া যায়। কিন্তু সব সময় চেষ্টা করবেন লাঞ্চ টাইম এর পর ক্যাফেইন না খেতে।


করণীয় নং ৫

এ সময় শারীরিক ক্লান্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বডি মাসাজের আশ্রয় গ্রহণ করতে পারেন। সম্ভব হলে আপনার স্বামী কিংবা বাড়ির অন্য কোনো ব্যক্তির সাহায্য নিন আপনার বডি মাসাজ করে দেওয়ার জন্য।


মাসাজ সত্যি অনেক ভালো একটা পদ্ধতি গর্ভাবস্থাসহ সকল রকমের শারিরীক অস্বস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।


তাই পরিবারের আপন কোনো সদস্যদের বা নিজের স্বামীকে বলে হালকা একটু বডি মাসাজ নিতেই পারলেই আপনার শারিরীক ক্লান্তি অনেক দ্রুত কমে যাবে।


আরও পড়ুনঃ মা হওয়ার জন্য এই কাজগুলি অবশ্যই করবেন


সুপ্রিয় পাঠক মন্ডলী, এভাবে উপরোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে আপনারা গর্ভাবস্থায় সকল রকমের ক্লান্তি থেকে রক্ষা পাবেন। আজ তাহলে এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।