গল্প : বাবা তোমাকে মিস করি
একটা কথায় বলবো আপনাদের যাদের বাবা-মা আছে প্লিজ তাদের খেয়াল রাখুন যত্ন নিন। বড়জনরা বলেন, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝেনা হারিয়ে গেলেই খোঁজে

বাবা দুটো শব্দের একটি নাম যার বিশালতা অত্যধিক। বাবা আমাদের জীবনের একটি অক্সিজেন। যার নিজের কোন চাহিদা নেই, যে নিজে ছেঁড়া জুতা পরে আমাদের দামি জুতা কিনে দেয় তার নাম বাবা।
হ্যাঁ, আমার বাবার কথা বলছি যিনি ছিলেন সামান্য একজন বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষক। তার সীমিত আয় দিয়ে বেশ চলছিলো আমাদের জীবন।
আমরা পাঁচ ভাইবোন সবার ছোট আমি তাই হয়তো বাবা নামক শব্দকেই আমি অনেক বেশি মিস করি। কারণ আমার বাবা যে আমার চাহিদা পূরণ করতে নিজের জীবন দিতেও ভাবেনা।
হ্যাঁ আমার বাবা যে আমার সুবিধা অসুবিধার জন্য নিজের কথা ভাবতোনা। আমি ছোট বেলায় আমার বাবার কাছে থাকতাম।
তিনি আমার পড়াশোনা, খাওয়া থেকে শুরু করে সব কাজ নিজে করতেন। "মা" আজও বাবাকে মিস করে তার মতো মানুষ পৃথিবীর বুকে আছে কিনা জানা নেই।
আমি আমার বাবার সেই অবাধ্য সন্তান নানা বাইনা করে কতনা বাবাকে জালিয়েছি। আহ! বাবা সত্যি এখনো প্রতি রাতে কান্না করি। বুকের ভেতর তীব্র কষ্ট কাউকে বুঝতে দি না। তোমাকে হারানোর বেদনা আমাকে কুড়ে কুড়ে খাই।
আমার বাবা মারা গিয়েছে প্রায় ১১ বছর। একটা দিন ও নেই আমি বাবাকে মিস করিনি। আমার প্রতিটা মূহুর্ত জানে বাবা তোমাকে আমার কতটা প্রয়োজন।
বাবা তুমি জানো, আমি আজও না কারো বাবা তার সন্তানকে আদর করতে দেখলে মুখ লুকিয়ে কাঁদি। কারণ আমার বাবাও আমাকে এভাবে আদর করতো।
বাবা জানো, এই শহরের মানুষগুলো এখনো তোমাকে মিস করে তারা নাকি তোমার মত মানুষ খোঁজে পাইনা।
বাবা জানো, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো তাই আমাকে কতটা অপমান লাঞ্চনা সহ্য করতে হয়েছে। কেন বাবা এভাবে আমাকে একা করে দিলে? আমাকে শুনতে হয় তোর বাবা নেই তোর বাড়ি নেই।
বাবা তুমি ছাড়া আমি বড় অসহায়। আজ হয়তো আমার সব আছে শুধু বাবা তুমি নেই। আমার নামের পাশে একটা নাম আকড়ে বসেছে এতিম। এই নামটা শুনতে বড্ড তেতো লাগে বাবা।
বাবা তুমি চলে যাওয়ার পর নিয়ম করে প্রতিদিন ডায়েরি লিখতাম। আমার ডায়েরি লিখার অভ্যাসটা ক্লাস ফাইভ থেকেই।
তুমি তো ক্লাস ফাইভ এর শেষের দিকে মারা গিয়েছিলে আমি ফাইনাল পরীক্ষা দেওয়ার আগেই। সেই থেকেই তোমার মেয়ে ছোট খাটো ডায়েরি লিখে। ডায়েরিতে তোমার গল্প লিখতে লিখতে এখন আমি ছোট খাটো লেখক হয়েছি।
দু'একটা বই বের হয়েছে বড় লেখক এখনো হতে পারিনি। বাবা জানো, তোমার আর মায়ের দোয়া আছে বলেই আমি এতদূর আসতে পেরেছি।
সে যাইহোক এভাবে ডায়েরিতে রোজ তোমার কথা লিখতাম। যখন কেউ কষ্ট দিতো কান্না করে লিখতাম বাবা তুমি বোধহয় এভাবে ছেড়ে না গেলেই পারতে।
ভুলেই গিয়েছিলাম ছেড়ে যাওয়াটা তোমার নিজের ইচ্ছে ছিলোনা বিধাতার পছন্দ হয়েছে তাই তোমায় নিয়েছে তার কাছে।
তুমি যাখন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার সময় বারবার আমাকে ডেকেছিলে মনে হয়েছে যেন সেদিন আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান মানুষকে হারিয়ে পেলেছি।
জীবনের নির্মম পরিহাস সেই মুহুর্তটা খুব বেদনা দ্বায়ক ছিলো। আজকের আমি সেদিন ছোট ছিলাম বুঝতে শিখিনি তখন জীবনের মানে টা কেমন।
যখন ধীরে ধীরে বড়ে উঠতে লাগলাম বুঝতে শিখলাম বাবা ছাড়া পৃথিবীটা অর্থহীন।
পৃথিবীর বুকে আর কারো বাবা এভাবে হারিয়ে না যাক। কারো বুক আমার মতো খা খা না করুক। এতিম বলে কারো পরিচয় না হোক।
যাদের বাবা নেই তাদের জীবনের সব রঙ মুছে যায়। তাদের মুখ জোড়ে হাসি ভেতরটা কষ্টের পাহাড়।
বাবা নামক ছায়াটা যার জীবন থেকে হারিয়ে যায় সে বুঝতে পারে তার পৃথিবীটা অন্ধকার।
প্রচণ্ড রৌদ্র তাপে যেমন আমরা বৃক্ষের ছায়া খোঁজি আমাদের জীবনের কঠোর মুহুর্তে আমরা বাবার ছায়া খুঁজি।
আহ! আরও কত বাবা আছেন যারা দিনের পর দিন নিজের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খেটে যাচ্ছেন শুধু সন্তানের মুখে দু' মুঠো ভাত এনে দিবে বলে।
আহ! আমরা সন্তানেরা আমরা কি বুঝি বাবার সেই অগাধ পরিশ্রম। দেয়েছি কি কখনো মূল্য। কে জানে?
কতজনের বাবা দেখেছি বুড়ো বয়সে এখনো রিক্সা চালায়।
দোয়া করি ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা। ভালো থাকুক আমার বাবা।বাবা মিস করে যাব তোমাকে এভাবে সারাজীবন। উপরওয়ালা তোমাকে জান্নাতবাসী করুক।
পরিশেষে একটা কথায় বলবো আপনাদের যাদের বাবা-মা আছে প্লিজ তাদের খেয়াল রাখুন যত্ন নিন। বড়জনরা বলেন, দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝেনা হারিয়ে গেলেই খোঁজে।