ঘরেতেই করতে পারেন পার্লারের মত নিবিড় রূপচর্চা, রইলো কিছু টিপস
ঘরে বসেই নিজের সৌন্দর্য এর বিকাশ ঘটাতে পারেন আপনি নিজেই। কিছু ঘরোয়া উপাদান ও প্রাকৃতিক ভাবে করিয়ে নিন পার্লারের মত রূপচর্চা।

রূপচর্চা করার জন্য সবসময় পার্লারে ছুটতে কার ভালো লাগে বলুন তো! তাছাড়া এত এত টাকা দিয়ে পার্লারে গিয়ে রূপচর্চা করতে মাঝে মাঝে সত্যি ভীষন গায়ে লাগে। তারপরও যদি বিউটি পার্লার বন্ধ থাকে, তাহলে তো আপনার ত্বকের দফারফা। এই ধরুন না, কতদিন লকডাউন এ সবকিছু বন্ধ থাকার পাশাপাশি বিউটি পার্লার একভাবে বন্ধ ছিল বহুদিন।
তাহলে নিজের রূপচর্চার জন্য এতদিন কার উপর ভরসা করেছেন? নিশ্চয়ই নিজের উপরে ভরসা করেছেন! তাহলে সেটা সারা সময় যদি বজায় রাখেন তাহলে আর অতিরিক্ত রূপচর্চার টেনশনে ভুগতে হয় না। যদি আপনার ইচ্ছা থাকে তাহলে হাজারো উপায় আপনার ঘরেই উপস্থিত আছে।
যার ফলে আপনার রূপচর্চা কোনভাবেই পার্লারে থেকে কম হবে না। বরং রাসায়নিক পদার্থের পরিবর্তে প্রাকৃতিক উপাদানে স্বস্তি পাবে আপনার ত্বক। মেকআপ ছাড়াই সুন্দর দেখতে লাগবেন আপনি।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু ঘরোয়া টিপস যা দিয়ে পার্লারের মত রূপচর্চা করতে পারেন -
টোনার কি? টোনার ব্যবহারের ৫টি উপকারিতা জেনে নিন
১) মনটাকে ভালো রাখুন :
মনই তো মুখের আয়না, তাইনা। তাই যত আপনার মন ভালো থাকবে ততবেশি আপনার রূপ ফুটে বেরোবে বাইরে। মনের সৌন্দর্য আসল সৌন্দর্য। সেটাকে যত বেশি সুন্দর করে রাখতে পারবেন তত বেশি আপনার উজ্জ্বলতা বাড়বে।
সুন্দর দেখাতে গেলে আগে মনটাকে সুন্দর রাখার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আপনি যদি সব দিক থেকে সুস্থ থাকেন, তাহলে কিন্তু আপনার ত্বক এমনিতেই ঝলমল করে উঠবে। সময় অনুযায়ী খাওয়া, সঠিক পরিমাণে খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং শারীরিক পরিশ্রম আপনার সুন্দর ত্বকের আসল চাবিকাঠি।
২) ত্বকের যত্নে রুটিন :
সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যে ত্বকের খেয়াল রাখা হয় না একেবারেই। তাই সকালে এবং রাতে রুটিন অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করুন। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং, করুন নিয়মিতভাবে।
সপ্তাহে কমপক্ষে এক বার স্ক্রাব করে মুখের মরা কোষ গুলি তুলে ফেলার চেষ্টা করুন। তবে হ্যাঁ, আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রোডাক্ট বাছতে ভুলবেন না।
৩) ফেসিয়াল করুন :
ঘরোয়া উপায়ে অন্ততপক্ষে মাসে একবার ফেসিয়াল করাটা ত্বকের পক্ষে খুব জরুরী। পার্লারে যেতে না পারলে ঘরোয়া উপায়ে বানিয়ে নিন ফেসপ্যাক।
৪) ভ্রুর গুরুত্ব :
মুখের মধ্যে ভ্রু, চোখ, ঠোঁট, এগুলো তে সবচেয়ে বেশি আগে নজর পড়ে। তাই এগুলো যত সুন্দর হবে ততো বেশী আপনার সৌন্দর্য প্রকাশ পাবে। তাই মুখের আকার অনুযায়ী ভ্রু দুটোকে সেপ করার চেষ্টা করুন।
আর যেহেতু এখন মোটা ভ্রু একেবারে ট্রেন্ডিং এ চলছে। চোখের নিচে যাতে ফুলে না যায় কালি না পরে সেদিকটা কিন্তু বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। না হলে মুখে ক্লান্তির ভাব বজায় থাকবে।
৫) মুখে মৃদু হাসি বজায় রাখুন :
যত বেশি সাজগোজ করেন না কেন মুখে যদি হালকা হাসি না থাকে সমস্ত সাজটাই মাটি হয়ে যায়। আপনাকে দেখতে অতটাও সুন্দর লাগবে না।
তাই মুখে হাসি বজায় রাখার জন্য ঠোঁট এবং দাঁতের আলাদা করে যত্ন নেওয়াটা জরুরি। দাঁতের বিশেষ যত্ন নিন। না হলে ঠোট চেপে হাসতে হবে, যদি দাঁতের হলুদ দাগ থেকে থাকে। মুক্তোর মতো সাদা দাঁতের প্রাণ-খোলা-হাসি সবার নজর কাড়ে।
৬) চুলের যত্ন :
বাজার চলত বিভিন্ন রকমের কসমেটিকস ও কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্ট নয়, ঘরোয়া উপায়ে খেয়াল রাখুন চুলের। মুখের সাথে মানাবে এমন হেয়ার কাট করুন। বারবার স্টেট করা, কারলি করা, চুলের পক্ষে কিন্তু ব্যাপক হারে ক্ষতি করে। হিট প্রয়োগ করলে চুলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়।
৭) পোশাক এর বদল :
বাড়িতে আছেন বলে সব সময় বাড়ির পোশাক পরতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। মাঝে মধ্যে বাইরের পোশাক পরতে পারেন। তার সাথে আপনার লুক চেঞ্জ হওয়ার পাশাপাশি মনটাও ফ্রি হতে সাহায্য করবে।
৮) ডায়েট মেনে চলুন :
অতিরিক্ত জাঙ্কফুড, ফাস্টফুড, খাওয়ার ফলে ত্বকে তার প্রভাব পড়ে অনেক। তাই এসবের বদলে ডায়েট চার্টে রাখুন তাজা ফলমূল। তার সাথে সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমান জল খেতে ভুলবেন না।
৯) পর্যাপ্ত ঘুম :
অতিরিক্ত রাত জাগা, তাড়াতাড়ি বয়সের ছাপ ফেলতে পারে আপনার ত্বকে। তাই কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানোর প্রয়োজন এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে ঘুমাতে যাওয়া উচিত।
১০) শারীরিক পরিশ্রম :
সকালে কমপক্ষে আধ ঘন্টা শরীরটাকে কসরত করার জন্য ছেড়ে দিন। তার জন্য করতে পারেন সাইকেলিং, হাঁটাচলা, কিছু ব্যায়াম অথবা নাচের মাধ্যমে করে নিতে পারেন শরীরচর্চা।
১১) যতটা সম্ভব চাপমুক্ত থাকা :
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে চাপমুক্ত থাকা একেবারে অসম্ভব ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও সুস্থ-সবল ও ত্বকের যত্ন নিতে যতটা সম্ভব চাপ মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। অতিরিক্ত টেনশন ত্বকের বয়স দ্রুত বাড়িয়ে তোলে। তাই ত্বকের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে গেলে অহেতুক দুশ্চিন্তা থেকে দূরত্ব বজায় রাখাটা জরুরি।
সময় যতই খারাপ হোক না কেন, নিজের জন্য কিছুটা সময় পার করে তা যত্নের পিছনে লাগালে অনেক সমস্যার সমাধান আপনি নিজে হাতেই করতে পারবেন।
শুধু একটুখানি আপনার সদিচ্ছা এবং নিজের প্রতি যত্ন নেওয়ার মানসিকতা থাকলেই হবে।