চট্টগ্রামের সেরা ৫টি রেস্টুরেন্টের লোভনীয় সব খাবার সম্পর্কে জানুন
এদেশের মানুষ ভীষণ ভোজনরসিক। অনাদিকাল থেকেই খাবার নিয়ে এদেশের মানুষের আগ্রহ এবং আকর্ষণ ছিল লক্ষণীয়। সিলেটী আখনী, ঢাকাই বিরিয়ানী, রাজশাহীর কলাই রুটি, নাটোরের কাঁচাগোল্লা কিংবা বগুড়ার দই প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেরই আছে জ্বিভে জল আনা সব বিখ্যাত খাবার। ঠিক তেমন চট্টগ্রামেও আছে খাবাবের সমাহার। আর ঘুরতে হলে খেতে হবে তো না কি! চলুন আজ চট্টগ্রামের ৫টি বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট সম্পর্কে জেনে আসি।

১. তাজিংডং রেস্টুরেন্ট
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর খাবারের স্বাদ এবং রন্ধনশৈলীর অভিজ্ঞতা পেতে চাইলে অবশ্যই তাজিংডং রেস্টুরেন্ট একবার হলেও খাবেন।
পাহাড়ি খাবারের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় খাবার বাঁশ কুড়ুল। বছরের সব সময় এই বাঁশ কুড়ুল পাওয়া যায় না।
কেবলমাত্র বর্ষাকালে কিছুদিনের জন্য খাবারের আয়োজনে উঠে আসে এই পাহাড়ি 'বাঁশ কুড়ুল' রেসিপি। তাই বাঁশ কুড়ুল চেখে দেখতে চাইলে বর্ষাকালে প্ল্যান করা উচিত।
এছাড়া এখানে পাওয়া যাবে পাহাড়ি স্বাদের ব্যাম্বো চিকেন। বাঁশের মধ্যে রান্না করা এই চিকেন বান্দরবন কিংবা রাঙামাটিতে বেশ বিখ্যাত হলেও এই রেসিপি এসব জায়গার বাইরে দেখা যেত না। এই রেস্টুরেন্টে বসে পাওয়া যেতে পারে এই ব্যাম্বো চিকেনের টেস্টও।
এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় আরও একটি খাবারের মধ্যে রয়েছে চিকেন ঝাল মুন্ডি স্যুপ। এছাড়া মেন্যু দেখে স্টক অনুযায়ী মাছ বেছে নিয়ে পছন্দ অনুযায়ী ফিশ ফ্রাইয়েরও ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী এসব অর্ডার করতে পারবেন।
মূল্য:
১. তাজিংডং রেস্টুরেন্টে চিকেন বাঁশ কুড়ুলের প্রতি প্লেটের মূল্য মাত্র ১০০ টাকা।
২. চিকেন ঝাল স্যুপের এক বাটির মূল্য মাত্র ১০০ টাকা।
৩. আর ফিস ফ্রাই এর মূল্য শুরু হয় ৫০ টাকা থেকে।
তবে, এখানকার পাহাড়ি খাবার জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় হলেও পাহাড়ি খাবার ছাড়া এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ভর্তা ও বিরিয়ানির সম্ভার।
আলু ভর্তা, শুটকি ভর্তা, পাহাড়ি চিকেন ভর্তা, টমেটো ভর্তা কিংবা বেগুন ভর্তার সাথে পেয়ে যাবেন ধোঁয়া ওঠা গরম ভাতও। চট্টগ্রাম ভ্রমণের প্ল্যান করলে অবশ্যই একবার আসবেন এই তাজিংডং রেস্টুরেন্টে।
২. বীর চট্টলা
বীর চট্টলার ডেকোরেশনের কথা বলতে গিয়ে অনেক সময়ই চাপা পড়ে যায় তাদের বাহারী পদের খাবার আর তার স্বাদের কথা। দেশী নানা পদের খাবার এখানে মেলে সবসময়েই।
মেনুতে যেমন আছে বিরিয়ানী, পোলাও, কোরমা, রোস্ট, বোরহানী, ঠিক তেমনি আছে সাদাভাত, ডাল, হাস বা মুরগীর রসা ভুনা, রুই, ইলিশ, লইট্টাসহ বিভিন্ন মাছ, বেগুন, টমেটো, ঢেঁড়স, শাক ভাজি কিংবা ভর্তা।
ডেকোরেশন আর আইটেম মিলিয়ে দামও যথেষ্ট ন্যায্য। আর স্বাদ? স্বাদ বুঝতে হলে আপনাকে চলে যেতে হবে বন্দরনগরীর জামালখানের এই রেস্তোরাতে।
মূল্য:
মাটন কাচ্চির মূল্য ২৮০ টাকা
শাহী মোরগ পোলাও ২২০ টাকা
এছাড়া পানীয় খাদ্য যেমন,
বোরহানী ৬০ টাকা
সল্টেড লাচ্ছি ১২০ টাকা
সাশ্রয়ী মূল্যে এমন আরও অনেক খাবার পাবেন আপনারা। অসাধারণ স্বাদের খাবার খেতে হলে অবশ্যই আসবেন এই বীর চট্টলা রেস্টুরেন্টে।
৩. মেজ্জাইন্না বাড়ি
চট্টগ্রামের খাবারের কথা হবে আর সেখানে মেজবানের কথা থাকবে না তা কী করে হয়? বিখ্যাত মেজবানী মাংসের জন্য চট্টগ্রামে রেস্টুরেন্ট আছে বেশ অনেকগুলো।
তবে আমি বলব মেজ্জাইন্না বাড়ির কথা। চট্টগ্রামের বিখ্যাত চাটগাঁইয়া মেজবানির আয়োজন এখানে বেশ জমজমাট।
চমৎকার সাজানো গোছানো এই রেস্টুরেন্টে পাওয়া যায় মেজবানী মাংস, চনার ডাল অর্থাৎ ছোলার ডাল, কালো ভুনা, আখনী বিরিয়ানি, বোরহানিসহ মুখরোচক নানান সব খাবার।
এছাড়াও চালের আটার রুটি, ভুনাখিচুড়ি, সাদা ভাত, সালাদ, মিক্সড সবজি টাইপ আইটেমও এখানে পাওয়া যায়। দামও যথাযুক্ত।
মেজ্জাইনে খিচুড়ি টা একটু ঝাল হওয়াতে এটি ঝাল প্রেমীদের কাছে অসাধারণ লেগেছে! এক কথায় যারা ঝাল খিচুড়ি লাভার তাদের জন্য এটি একটি মাস্ট ট্রাই আইটেম!
মূল্য: ১৭০ টাকা
৪. হাক্কা চাটগাঁ
ঢাকাতে ফুড কোর্টের আইডিয়া বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেখানে কয়েকটি ফুড চেইন একটি কমন স্পেস শেয়ার করে কাবার সার্ভ করার জন্য।
এতে মানুষ যেমন একটি নির্দিষ্ট স্থানে বিভিন্ন ধরণের খাবার উপভোগ করতে পারে তেমনি রেস্টুরেন্টের জন্যও এই মডেল বেশ লাভজনক।
হাক্কা চাটগাঁ অনেকটা এমনই একটি ফুড কোর্ট। এখানে তিনটি রেস্টুরেন্ট একই ছাদের নিচে খাবার সার্ভ করে। হাক্কা চাটগা ছাড়াও এখানে আছে বিখ্যাত ম্যাড সেফ এবং তারকা রেস্টুরেন্ট।
হাক্কা চাটগাঁ রেস্টুরেন্টে আপনারা পাবেন বেশ সুস্বাদু খাবার। এবং এর মূল্যও বেশ সাশ্রয়ী।
৫. বেভারলি আইল্যান্ড
জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমি এবং এর আশপাশের এলাকা তরুণ প্রজন্মের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এখানে সারাদিন তাই মানুষের ভিড় লেগেই থাকে।
শিল্পকলার কাছেই আছে চমৎকার আরেকটি রেস্টুরেন্ট বেভারলি আইল্যান্ড। তাদের ট্যাগ লাইন হল “দেশী উনুনে দেশী খাবার”।
এর সাথে মিল রেখেই আপনি এখানে পাবেন বিভিন্ন ধরণের পরটা, নান, কাবাব, সকাল, দুপুর, রাতের খাবার কিংবা বিকালের নাস্তা।
বেভারলি আইল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ হল ইনডোর অ্যারেঞ্জমেন্টের সাথে সাথে খোলা আকাশের নিচেও বসার ব্যবস্থা।
ফিস বার বি কিউ কিংবা স্পেশাল কোন কাবাব নিয়ে দোতালা ছাদের বিশাল এক গাছের নিচে বসে কোন একটা চমৎকার বিকেল আপনার কাটতেই পারে বেভারলি আইল্যান্ডে।
মূল্য:
পরটার মূল্য মাত্র ১৫ টাকা
মুগডাল ৩০ টাকা
চিকেন আফগানি কাবাব ১৬০ টাকা
প্রিয় পাঠক বন্ধুরা এই ছিলো চট্টগ্রামের ৫টি সেরা রেস্টুরেন্টের খাবার সংক্রান্ত তথ্য। আশা করি ভালো লেগেছে। আবারও নতুন কিছু নিয়ে হাজির হবো আপনাদের কাছে। সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং শুভ প্রভাতের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ।