চ্যাটিংয়ে কেউ মিথ্যা বললে কিভাবে বুঝবেন

এই যুগে চ্যাটিং করেন না এমন মানুষ খুজে পাওয়া দায়। তবে এমন অনেক সময়ই হয় যে যার সাথে কথা বলছেন সে অদ্ভুত আচরণ করে যেগুলো খারাপ মনে হয়। আর এগুলো হচ্ছে মিথ্যা বলার লক্ষণ। আসুন সেই আচরণ বা লক্ষনগুলো আজকের পোস্টে জেনে নেই!

চ্যাটিংয়ে কেউ মিথ্যা বললে কিভাবে বুঝবেন
চ্যাটিংয়ে কেউ মিথ্যা বললে কিভাবে বুঝবেন


ইন্টারনেটের এই যুগে আমরা সবসময়ই স্যোশাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকি। বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবার সাথে বেশির ভাগ আলাপ এখন স্যোশাল মিডিয়াতেই হয়ে থাকে। মহামারীর এই আপদকালীন সময়ে স্যোশাল মিডিয়া এবং চ্যাটিং এর মাত্রা বেড়ে গিয়েছে বহুগুনে। তথ্য থেকে ছবি, লিংক থেকে ভিডিও, পিডিএফ, এটাচমেন্ট সবকিছুই শেয়ার করা হয় চ্যাটিং এ। সব ধরনের প্রয়োজনে চ্যাটিং এর বিকল্প নেই।


যদিও স্যোশাল মিডিয়ার সকল প্ল্যাটফর্মেই ভিডিও কল বা অডিও কলের ব্যবস্থা আছে, আছে ভয়েস চ্যাটিং এর সুবিধাও। কিন্তু তবুও চ্যাটিং এর প্রচলন কমেনি একটুও, বরং বেড়েছে। এর কারন সবসময় কথা বলার পরিস্থিতি না থাকা, আশেপাশে অন্যদের উপস্থিতি, নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং আরেকটি বিশেষ সমস্যা হচ্ছে ভয়েস কলে মিথ্যা বললে ধরে ফেলার সম্ভাবনা বেশী। কিন্তু চ্যাটিং এ মিথ্যা বললে ধরা পড়ার সম্ভাবনা কম। যেকোন ধরনের ঝগড়া এড়াতে প্রেমিকযুগল বা অন্য যে কেউ সহায়তা নিতে পারেন চ্যাটিং এর।


কিন্তু চ্যাটিং এ আমরা যেমন মিথ্যা বলছি, অন্যরাও কিন্তু মিথ্যা বলছে আমাদেরকে। এখন কথা হচ্ছে কিভাবে বুঝবেন চ্যাটিং এ আমাদেরকে কেউ মিথ্যা বলছে কিনা? এই চমৎকার এবং উপকারী বিষয়টি নিয়েই সাজিয়েছি আমাদের আজকের আয়োজন। চলুন প্রিয় পাঠক দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে বুঝবেন চ্যাটিং এ কেউ মিথ্যা বলছে কিনা!


চ্যাটিংয়ে মিথ্যা বললে সহজে বোঝার উপায়:


১. অতি আবেগ প্রদর্শন

সাধারণত অতি আবেগে আমরা মিথ্যা বলে থাকি। চ্যাটিং এর সময়ে যদি অপরপ্রান্তের ব্যক্তি বেশী আবেগ দিয়ে কথা বলেন, তাহলে ধরে নেবেন উনি মিথ্যা বলছেন। আপনি ভাবতে পারেন যে আবেগ দেখালেই সেটা মিথ্যা? এর যুক্তি কি? মানবচরিত্রের উপর গবেষনায় দেখা যায়, অতি আবেগ বা সহানুভূতিশীল অবস্থায় মানুষ মিথ্যা বলে থাকে।


মনে করুন, আপনার ভালবাসার মানুষটিকে আপনি নিশ্চয়ই অনেক ভালবাসেন, বিয়ে করতে চান তাকে। তাকে বলে বসলেন, শুনো বিয়ের পর কিন্তু হানিমুনে প্যারিস যাব আমরা! প্রেমের অতি আবেগীয় চ্যাটিং এ ভালবাসার মানুষটিও বলে বসলেন হ্যাঁ, অবশ্যই! আমরা সুইজারল্যান্ডেও যাব! যদিও তার এ সামর্থ্য নেই তা আপনিও জানেন, আর সে ত জানেই। তাই এই অতি আবেগ খুশি বয়ে আনলেও সিরিয়াসলি বিশ্বাস না করলেই হয়ত ভাল করবেন।


২. ইমোজির অতিরিক্ত ব্যবহার

মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশে ইমোজির কোন বিকল্প নেই। একটি বাক্য বলতে গিয়ে ঠিক কি ধরনের অনুভূতি হচ্ছে তা লিখে প্রকাশের সময় ইমোজি ঠিক সেই অনুভূতি প্রকাশে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক সময় আমরা কোন মিথ্যা ঢাকতেও ইমোজি ব্যবহার করি, এবং সেটা অতি মাত্রায়।


আপনি হয়ত কারো কাছে টাকা পান, জানতে চাইলেন কবে দেবে সেটা? সে উত্তরে জানাল কালই দিয়ে দেবে, সাথে অনেকগুলো হাসি, খুশি, সানগ্লাস, চশমা আর লাভ ইমোজি! যদি কালই ফেরত দেওয়ার হত, একটি সঠিক সাধারণ বাক্যই যথেষ্ট হত। এতগুলো ইমোজি দিয়ে আপনাকে গলানোর চেষ্টা সে করত না। এ বিষয়টির ব্যক্তিক্রম ও ঘটতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই চ্যাটিং এ এই ধরনের আলাপনগুলোতে মিথ্যা বলা হয়ে থাকে।


৩. অতি সংক্ষিপ্ত রিপ্লাই

কেউ যখন চ্যাটিং এ কোন বিষয় এড়িয়ে যেতে চায়, বা মিথ্যা বলতে চায় তখন সে সাধারণত প্রয়োজনের তুলনায় সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়ে থাকে। যেমন কাউকে হয়ত জিজ্ঞাসা করছেন কাল সে দেখা করবে কিনা, বা কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করেছেন সে যাবে কিনা? কিন্তু অপরপ্রান্তের মানুষটি এ বিষয়ে সিরিয়াস নয়, বা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।


তখন সে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আপনার লম্বা, অনেক শব্দের ম্যাসেজের রিপ্লাই হিসেবে হয়ত ছোট্ট করে"হুম", দেখি, হ্যাঁ, জানিনা জাতীয় উত্তর দেবে। যার অর্থ সে যাবেনা, কিন্তু বিষয়টি সরাসরি না বলে ঘুরিয়ে মিথ্যা বলা। তাই এ জাতীয় উত্তর দেখলে সত্যটা বোঝার চেষ্টা করুন।


৪. অনেকক্ষন যাবৎ টাইপিং

বর্তমানে স্যোশাল মিডিয়া চ্যাটিং এ কেউ মেসেজের রিপ্লাই লিখছে এমন সময়ে স্ক্রিনের উপরে টাইপিং দেখানো হয়। কিন্তু কোন মেসেজ এর রিপ্লাইয়ে যদি অনেকক্ষন যাবৎ টাইপিং দেখানো হয় তাহলে বুঝবেন মেসেজটি বারবার এডিট করা হচ্ছে, এবং যদি অনেকক্ষন টাইপিং এর পর উত্তর আসে খুবই ছোট্ট, তাহলে বুঝবেন নিশ্চিতভাবেই সে মিথ্যা বলছে। কোন একটি সত্যি সে লুকানোর চেষ্টা করছে। তাই বলতে গিয়েও চ্যাটিং এর রিপ্লাইয়ে সেটা লেখেনি।


৫. মেসেজ আনসেন্ড

চ্যাটিং অ্যাপগুলোতে প্রতিনিয়তই নতুন নতুন ফিচার যুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে ম্যাসেজ আনসেন্ড করা অন্যতম। কেউ যদি আপনাকে কোন মেসেজ সেন্ড করে তার নোটিফিকেশন আপনি পাবেন। যদি অনলাইনে থাকেন তাহলে ফোনের স্ক্রিন সোয়াইপ করে মূল মেসেজ সিন না করেও মেসেজটি দেখতে পাবেন। আর অনলাইনে না থাকলে মেসেজ এর নোটিফিকেশন নেট অন করার পর পেলেও ম্যাসেজটি দেখতে পাবেন না।


আনসেন্ড করা হয় মূলত প্রথমে যা বলা হয়েছে, তা আপনাকে দেখতে না দেওয়ার জন্য। প্রথমে যা লেখা হয়েছে সেটা অবশ্যই অপর ব্যক্তির মনের কথা, কিন্তু আপনি অন্যভাবে নিতে পারেন বা আপনার মন রক্ষার্থে মেসেজ আনসেন্ড করে পুনরায় মেসেজ করা। এমন হলে বুঝে নেবেন দ্বিতীয় মেসেজটি মিথ্যা।


৬. অনেক অজুহাত দেওয়া

বর্তমানে আমরা সবাই কর্মব্যস্ত। চ্যাটিং এ সময় কাটালেও খুব বড় মেসেজ আমরা সাধারনত দেই না। তেমন বেশী কিছু হলে কল করে কথা বলি।


কিন্তু যখন মিথ্যা বলার দরকার হয়, তখন ভয়েস কলকে এভয়েড করেন অনেকেই। তখন খুব বড় বড় মেসেজ লিখে অজুহাত দিয়্র থাকেন, যাতে মিথ্যা কথাটা অজুহাত দিয়ে সঠিক প্রমান করা যায়। সত্য কথার পিছনে আমরা কেউ ই এত সময় ব্যয় করে অজুহাত দেবনা। কিন্তু মিথ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য করতে বেশী গল্প বানানোর প্রয়োজন পড়ে।


উপসংহার 

চ্যাটিং বর্তমানে যোগাযোগের এক অপরিহার্য মাধ্যম। সবসময় ফোনে কথা বলার পরিবেশ যেমন থাকেনা, তেমনি এটা ব্যয়বহুলও বটে। তাই মনের ভাব প্রকাশে ইমোজি, ছবি, ম্যাসেজিং এত জনপ্রিয় বর্তমান সময়ে। কিন্তু চ্যাটিং এ আমরা মিথ্যাও বেশী বলি, তেমনি অন্যরাও বলে থাকে। আর মিথ্যা বোঝার কৌশল নিয়েই ছিল আমাদের আজকের পোস্টটি। আশা করি পোস্টটি আপনাদের উপকারে আসবে।


চ্যাটিং এ কেউ মিথ্যা বললে যেভাবে বুঝবেন বিষয়টি সম্পর্কে কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন। আমরা আপনার মতামত গুরুত্বসহকারে নিয়ে অবশ্যই দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। 

ধন্যবাদ সবাইকে।