ছাপা শাড়ী ও সেই সাদা পায়রা

কিন্তু আজ দু দিন থেকে যখন সাদা পায়টা দেখি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া পায়রাটার কথা খুব করে মনে পরে। মনে হয় ওই পায়রাটা কি ফিরে এলো! জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে।

ছাপা শাড়ী ও সেই সাদা পায়রা
ছাপা শাড়ী ও সেই সাদা পায়রা


দু দিন থেকেই দেখছি একটা ধপধপে সাদা পায়রা এসে ছাদের উত্তর দিকের রেলিংটায় বসচ্ছে। এই সূর্য ডুবার আধ ঘন্টা আগে এসে বসে থাকে। আমি প্রতিদিন না হলেও দু এক দিন পরপর ছাদে একটু নিশ্বাস নিতে যাই আর কি। তবে ধবধবে সাদা পায়রাটা দু দিন থেকেই বেশ কিছুটা সময় নিয়ে এসে বসে থাকে।


এখন ছাদে রোজ উঠছি বলতে গেলে এই পায়রাটার টানেই। আজ ছাদে এসেছি একটা বিশেষ কাজে। এই যাহ আজ বড্ড তারাতাড়ি উড়ে গেলো পায়রাটা! কেনো? আমি তো ওকে বিরক্ত করিনি। তবে পশু,পাখি কোনো নিয়ম মানে না, কোনো বাঁধও মানে না বলতে গেলে ওদের মধ্যে  চুক্তি বলে কিছু নেই। হয়তো এ কারণেই মানুষ যখন উদাস হয়ে ঘুরে তখন বলা হয় বনে গিয়ে থাক।


দায় বন্ধতা কি সব অদ্ভুত নিয়ম সমাজের। একটা জোরে চিৎকার করলে কেমন হয় আশেপাশে বাড়ি গুলো বেশ দূরে দূরে।


আমি নকশীকাঁথাআআআআআআআআআ মানুষ সচারাচর নিজের নাম বলেই চিৎকার করে আমিও করলাম।


ছাদে কেনো উঠেছি আমার বিশেষ কারণ গুলো আর দশ জনের কাছে খুব অকারণ মনে হবে অনেক সময় নিজেরও মনে হয়। যাক গে উঠেছি সামনের আম গাছটা দেখতে অনেক কাঁচা আম! কিন্তু একটাও খেতে পারি না গাছটা পাশের বাড়ির তাই দেখেই সাদ মিটাই।


আমি চাকরি সূত্রে একটা মফস্বল শহরে এসেছি অদ্ভুত  একটা বাড়িতে ভাড়া উঠেছি বেশি না এক মাসের জন্য বলতে গেলে ঠেকার কাজ। যেই সন্ধ্যে হয় বিদ্যুৎ চলে যায়। তারপর আমি একটা মোমবাতি নিয়ে মৃত আত্মার মতো ঘুরে বেরাই। অনেক সময় নিজেই নিজের ছায়াকে ভয় পাই।


এই যা চলে গেলো বিদ্যুৎ মোমবাতিটা কোথায় এই তো আমার বিছানার কাছের টেবিলটার উপর। আপাতত নতুন চাকরি কাজ শিখছি একদম নতুন বলে গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে আমাকে রাখা হচ্ছে না টুকটাক কাজ চাপ কম।


কি করি! কি করি! হুম আজ একটা গল্প লিখি। কি নাম হবে গল্পটার! হুুম পেয়েছি


আজ অনেক রোদ মিথুন একাই শহরের ওলি গলি ঘুরছে ওর একটা ধবধবে সাদা পায়রা আছে ওটা হারিয়ে গেছে খুঁজে পাচ্ছে না। কিন্তু ওটা ও না খুঁজে পেলে কিছুতেই বাড়ি ফিরবে না।  কিন্তু আজও খুঁজে পেলো নাহ। অন্ধকার নেমে এসেছে। এখন তো ঘরে ফিরতেই হবে তাকে দু চোখ গড়িয়ে পানি পরছে ও চোখ মুছে বাড়িতে গেলো। মা কে বললো আজ রাতে সে খাবে না শরীরটা ভালো নাহ। রাত ১০ বাজতেই ঘরের বাতি নিভিয়ে দিলো। চিৎকার করে কান্না করছে মিথুন কিন্তু শব্দ হচ্ছে না ওর মুখো ভঙ্গি চিৎকার করে কান্না করার মতোই শুধু শব্দ হচ্ছে নাহ।


মিথুন কলেজে পরে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। কুন্তল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র খুব ভালো বন্ধুত্ব ওদের মধ্যে। বলতে গেলে ভালো লাগা ভালোবাসা সবটা মিলিয়েই বন্ধুত্ব ওদের।মিথুন একটা পায়রা কিনে আর মনে মনে ঠিক করে যদি কখনো পায়রাটা হারিয়ে যায় তার মানে দাঁড়াবে কুন্তল ও হারিয়ে যাবে।


মিথুন জানতে চায় ও কতোটা ভালোবাসে কুন্তলকে। তার উত্তর দিবে এই পায়রাটা। কারণ পাখি প্রকৃতির একটা অংশ আর প্রকৃতি যেটা করে সেটা সত্য। কিন্তু মিথুন দিন দিন পায়রাটার প্রতি যত্ন ভালোবাসা সবটা বারিয়ে দিলো তার মানে কুন্তলের প্রতি ওর ভালোবাসা বাড়চ্ছে। মিথুন রোজ পায়রাটার সাথে অনেক গল্প করতো তাকে সব বলতো। এভাবে চললো তিন-চার মাস।


পায়রাটাও বড় হচ্ছে আর খুব বাদ্ধ মিথুনের। কুন্তলের সাথেও বন্ধুত্বটা আরো গভীর হলো মিথুনের।


একদিন কলেজ থেকে ফিরার পথে মিথুন দেখলো পায়রাটা কোথায় যেনো উড়ে গেলো। অবাক হয়নি দেখে কারণ পায়রাটা প্রায়ই আকাশ ভ্রমণে বের হয় আবার ঠিক সময়ে ফিরে আসে।  সে দিন পায়রাটা আর ফিরলো না। মিথুনের ভিতরে চাপা ভয় জন্ম নিচ্ছে এমন তো হয়নি কখনো! দু দিন অপেক্ষা করলো পায়রাটা তাও ফিরে এলো নাহ। এখন মিথুনের মধ্যে সন্দেহ তাহলে কি কুন্তল ওকে ছেড়ে চলে যাবে। এখন ও ঠিক মত কলেজেও যায় না আর কুন্তলের সাথে দেখাও করে না। দিন রাত এক করে শুধু পায়রাটাকেই খুঁজে বেরোয়।


টেলিফোনটা নষ্ট ছিলো বেশ ছিলো এখন এই অন্ধকারে ফোন ধরতে যেতে হবে পাশের রুমে!


তবে গল্পের শেষটা লিখবো একমাস পরে।


কুন্তল আমাকে নকশিকাঁথা বলে ডাকে। ও তো প্রায়ই বলে তোমার পায়রাটা সুখের ঘর বাঁধতে না বলে পালিয়ে গেলো! তোমার আদর যত্ন তার আর সাইলো না। ও বলে পায়রাটা মেয়ে ছিলো তাই ঘর বাঁধতে শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। আমাকে আজও খেপায়। আর এক মাস পরে আমার আর কুন্তলের বিয়ে। চাকরি করবো এটা ওর মোটেই পছন্দ নাহ। তারপরেও বিয়ের আগে এক মাস আমাকে চাকরি করার জন্য সমর্থন করেছে কুন্তল। ওর কথা বিয়ের আগের শখের মধ্যে চাকরি করা একটা শখ আমার ও চায় এটা পূরণ হোক।


কিন্তু আজ দু দিন থেকে যখন সাদা পায়টা দেখি আমার সেই হারিয়ে যাওয়া পায়রাটার কথা খুব করে মনে পরে। মনে হয় ওই পায়রাটা কি ফিরে এলো! জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে।


এই ধবধবে আমার ফেলে আসা দিন তুই কেমন আছিস রে! তুই কি সে?
যে হারিয়ে গেছিস! আমার গল্প গুলো কাকে কাকে বললি বলতো! না কি নীল আকাশের মেঘে মেঘে আমার ফেলে আসা দিনগুলো তুই বিলিয়ে দিয়েছিস।


কুন্তলের ফোনটা ধরতে পারলাম না ও আবার ফোন দিলে এই পায়রাটার কথা ওকে বলবোই।