জরায়ু জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হলে কীভাবে বুঝবেন? মহিলাদের জন্য জরুরী
জরায়ুর নানা রকম সমস্যার মধ্যে এই জরায়ু জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হওয়া অন্যতম সমস্যা। আজকের আর্টিকেলটিতে জরায়ু জীবানু দ্বারা সংক্রমিত হলে কি কি লক্ষন প্রকাশ করে তা নিয়ে বিস্তারিত লিখা হয়েছে

নারীর শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ টি হচ্ছে তার জরায়ু। এই জরায়ুটি তার নারীত্বের প্রধান কারণ। এই অঙ্গটি যতটা না নারীত্ব ধরে রাখতে সবথেকে বেশি ভূমিকা পালন করে তার থেকেও বড় সমস্যা হচ্ছে এটি অনেক বেশি সংবেদনশীল অঙ্গ।
খুব সহজেই এটি বড় কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে যেতে পারে। আবার এমনও হতে পারে তেমন জটিল কিছু হয়নি অথচ জরায়ুর ছোট একটা সমস্যার কারণে নারী মৃত্যুবরণ পর্যন্ত করে ফেলেছে। তাই এই জরায়ুর হেফাজত করা কষ্টসাধ্য হলেও তেমন অসম্ভব কিছু নয়।
মনে রাখবেন আপনি যদি আপনার জরায়ুর যত্ন করতে অবহেলা করেন, তবে বিশ্বের বিভিন্ন জরায়ু রোগে আক্রান্ত নারীদের মতো আপনাকেও মৃত্যুবরণ করতে হবে। শুধু তাই নয় মৃত্যুবরণ করার পূর্বে আপনাকে সহ্য করতে হবে নানা রকমের অপ্রীতিকর যন্ত্রণা।
আপনি নিশ্চয়ই জরায়ু জনিত কোন কারণে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কষ্ট পেতে চান না। তাই জরায়ুকে সব রকমের জটিলতা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
জরায়ু টিউমার, জরায়ু ক্যান্সার সহ গর্ভধারণে অসুবিধার মতো বিভিন্ন রকমের সমস্যা জরায়ুতে হয়ে থাকে। এছাড়াও ঘন ঘন জীবাণুর সংক্রমণ জরায়ুকে নাজুক করে দিতে পারে যা পরবর্তীতে জরায়ুর বিভিন্ন জটিলতার কারণ।
আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হবে আপনার জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে কি না সেটা কীভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন। তাহলে চলুন দেরী না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করা যাক।
তলপেটে ব্যথা
নারীদের জরায়ু সাধারণত তার তলপেটে অবস্থিত। এই কারণে জরায়ু জনিত যে কোনো রকমের সমস্যার প্রধান লক্ষণ হিসেবে তলপেটের ব্যথা হওয়া কে চিহ্নিত করা হয়।
পিরিওড এর ব্যথা থেকে শুরু করে গর্ভধারণে বিভিন্ন রকমের জটিলতার জন্যও এই তলপেটে ব্যথা করে থাকে। সুতরাং জরায়ুতে যদি কখনো কোনো কারনে জীবাণুর সংক্রমণ হয় তবে এই জীবাণু সংক্রমণের লক্ষণ হিসেবে প্রথম বিষয় যেটা দেখা যায় সেটা হলো তলপেটে ব্যথা করা।
তাই আমরা বলতে পারি যে আপনার জরায়ুতে জীবাণু সংক্রমণ করেছে কি না সেটা যাচাই করার জন্য তল পেটে ব্যথা হওয়ার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে পারেন।
যদিও সব সময় তলপেটে ব্যথা জরায়ুর জীবাণু সংক্রমণের লক্ষণ হিসেবে নাও থাকতে পারে। কিন্তু যাচাই করে নিতে দোষ কি!
জ্বর হওয়া
জরায়ুতে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার অন্য আরেকটি লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। যদি আপনার তলপেটে ব্যথার সাথে সাথে অল্প অল্প জ্বর থেকে অনেক বেশি জ্বর হয়ে থাকে তবে আপনি কিছুটা নিশ্চিত হতে পারেন আপনার জরায়ু জীবাণুদের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে।
এক্ষেত্রে আপনার দেরি করা ঠিক হবে না। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত এবং চিকিৎসক আপনাকে যা যা পরামর্শ প্রদান করবেন সেগুলো যথাসাধ্য ভাবে মেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
অনিয়মিত স্রাব
পিরিওডের কিছু সময় আগে এবং পরে সাধারণত জরায়ুর মুখ থেকে হোয়াইট ডিসচার্জ তথা সাদা স্রাব নির্গত হতে থাকে। এইসব সাধারণত পিরিয়ডের আগে ও পরে অনেক বেশি পরিমাণে নির্গত হয়।
কিন্তু যদি আপনি দেখেন আপনার পিরিয়ড হবার সম্ভাবনা নেই অথচ প্রতিনিয়ত বারবার করে সাদা স্রাব নির্গত হতে থাকছে তবে বুঝে নিতে পারেন আপনার জরায়ুতে কোনো না কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হয়েছে।
এ্যাবনরমাল স্রাব তথা অনিয়মিত সাদা স্রাব নির্গত হওয়ার ঘটনাটি যদি আপনার প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলতে থাকে তখন আপনার দেরি করা উচিত হবে না।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব ছুটে যাবে কেননা এই অনিয়মিত সাদা স্রাব নির্গত হওয়ার বিষয়টিকে জরায়ুর জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার অন্যতম লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
অনিয়মিত মাসিক
বিভিন্ন কারণে নারীদের মাসিক অনিয়মিত হতে থাকে। যদিও মাসিক বা পিরিয়ড এর নিয়ম হলো 28 দিন পর পর হওয়া। কিছু কিছু মেয়েদের এই পিরিয়ড 4/5 দিনের মতো অবস্থান করে।
আবার কারো কারো বা দশ দিন পর্যন্ত পেরিয়ে যায় তবুও পিরিয়ড শেষ হয় না। সেটা কোন অস্বাভাবিক বিষয় নয়। যার যার শারিরীক গ্রোথ অনুযায়ী পিরিওডের রক্তপাত দেখা দেয়।
সমস্যাটা তখনই ঘটে যখন সেটা অনিয়মিত হতে থাকে। অনিয়মিত পিরিয়ড জরায়ু জনিত বিভিন্ন রকমের সমস্যার লক্ষণ। কোন সমস্যার লক্ষণ সেটা হয়তো চিকিৎসকেরা চিকিৎসা করার পর ভালো বলতে পারবে।
যদি একমাস কিংবা তারও বেশী আপনার পিরিওডে অনিয়মিত বিষয়বস্তু লক্ষ্য করে থাকেন তবে বুঝতে হবে আপনার জরায়ু ভালো অবস্থায় নেই। এই ক্ষেত্রে জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সমস্যা সবথেকে বেশি বলে বিবেচনায় আনা হয়।
শুধুমাত্র অনিয়মিত মাসিকে নয়, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ কিংবা অতি কম রক্তক্ষরণ সেই সাথে পেটে প্রচুর পরিমাণে ব্যথা হওয়াও জরায়ুর জীবানু দ্বারা সংক্রমণ হওয়ার লক্ষণ।
সহবাসে ব্যথা অনুভূত হওয়া
সহবাসের সময়টা সাধারণত নারী এবং পুরুষের জন্য সবথেকে আনন্দদায়ক মুহূর্ত হলেও যদি কোন নারীর জরায়ু জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে থাকে তবে তিনি সহবাসে ব্যথা অনুভূত করতে পারেন এবং এটাও জ্বরায়ু জীবাণু সংক্রমণ হওয়ার অন্যতম একটি লক্ষণ।
তাই এই অবস্থায় দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া অনেক বেশি জরুরী।
উপরোক্ত লক্ষণ গুলো সাধারণত জরায়ুর জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার। কিন্তু সবসময় লক্ষণ এর তীব্রতা একই রকম থাকবে না। কখনো কখনো এই লক্ষণ এর তীব্রতা কম কিংবা বেশী ও হতে পারে।
আবার এমনও হতে পারে যে কোনো লক্ষণ প্রকাশ করা ছাড়াই জরায়ু জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গেছে। কারণ জীবাণু লক্ষণ প্রকাশ করা ছাড়াও সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে।
জরায়ুর জীবাণু পরীক্ষা সাধারণত হাসপাতালে চিকিৎসকদের দ্বারা করাতে হয়। এই ক্ষেত্রে জরায়ুর মুখ থেকে ডিসচার্জ নিয়ে পরীক্ষা করে জীবাণুর উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়।
সুপ্রিয় পাঠক, আশা করা যায় আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে তথ্যবহুল লেগেছে। আজ এখানেই ইতি টানছি, ধন্যবাদ।