জলের খরচ কমাতে চাইছেন? তবে সম্ভব হচ্ছে না? কিছু প্রয়োজনীয় উপায়
জলের অপচয় আমাদের ভবিষ্যতকে কিন্তু অন্ধকারে পরিণত করতে পারে। তাই সময় থাকতে এখন থেকে যদি সচেতন হওয়া যায় তাহলে কিন্তু এই জলের অপচয় বন্ধ করা সম্ভব। আপন করে নিতে পারেন কিছু প্রয়োজনীয় উপায় কে।

কিছুদিন আগে যখন বৃষ্টির দেখা ছিল না, তখন সব জায়গা থেকে জলের অভাবের কথা কানে এসে ছিল। এমনকি চোখের সামনেও দেখা গিয়েছিল টিউবওয়েল গুলো তে জল উঠছিল না। কত জায়গায় মানুষ শুধুমাত্র পানীয় জলের জন্য লম্বা লাইনে সারাটা দিন দাঁড়িয়ে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভূগর্ভের ভিতরে জলের অভাব ঘটেছে সেই খবর টাও কিন্তু সকলের কানে এসে পৌঁছে ছিল।
আমরা সবাই মিলে যদি অতিরিক্ত জল খরচ কমাতে পারি, প্রয়োজনমতো জল খরচ করি। তাহলে কিন্তু এই সমস্যা আর ভবিষ্যতে দেখা যাবে না। যে কোন কাজে যদি সীমিত এবং পরিমাণমতো জল খরচ করি সে ক্ষেত্রে কিন্তু জলের অভাব নাও হতে পারে। আমাদের বেপরোয়া চলাফেরার জন্য আজ এই পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়াতে হয়েছে আমাদের। জলই জীবন, জল ছাড়া কোন কাজ সম্ভব নয় তেমনি জল ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না।
তাই প্রকৃতি রক্ষার্থে এবং নিজেদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুস্থ-স্বাভাবিক একটা পরিবেশ উপহার দিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের আজ থেকে কিছু নিয়ম পালন করা অবশ্যই জরুরি, সবথেকে বড় বিষয় হলো অহেতুক জল খরচ না করে শুধুমাত্র কাজের ক্ষেত্রে জল খরচ করে যদি সেই জল কে আমরা বাঁচিয়ে রাখি সেটা পরবর্তীতে আমাদের কাজে আসে।
অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন আমি একা এটা করে কি করবো, একা কেন? আমাদের সবাইকে এটা করতে হবে। বিন্দু বিন্দু জমে তবেই না সিন্ধু হয়। একজনের দেখাদেখি আর একজনের উৎসব হতে পারে। এটা একটা ভাল কাজ, তাই ভালো কাজে সবার উৎসাহটা একটু আলাদা রকমের।
ঘরোয়া কাজ আরও দ্রুত ও সহজে করার কিছু দারুন টিপস
তবে আপনি কিন্তু মন চাইলেই এই সমস্যার সমাধান করার কাজটা শুরু করে দিতে পারেন। এমন কিছু উপায় অবলম্বন করা যায় যাতে কিনা জল কম খরচ হতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু উপায়-
১. অকারনে কল খুলে রাখবেন না :
শহর অঞ্চলের পাশাপাশি আজ গ্রামেও কিন্তু পাম্পের মাধ্যমে জল তুলে রেখে সেটা পরে ব্যবহার করার জন্য রাখা হয়। সেই জন্য অহেতুক কল খুলে রেখে কাজ করলে পরিমাণের চেয়েও বেশি জল অপচয় হয়। মুখ ধোয়া, বাসন মাজা, কাপড় কাচা, এইসব নিত্য দৈনন্দিন জীবনের কাজ করার সময় আগে থেকেই কল খুলে রাখার অভ্যাস অনেকের আছে।
সেটা না করে যতটা পারবেন অল্প জলে কাজ করার চেষ্টা করুন। যতটুকু সময় প্রয়োজন ততটুকুই সময়ে কল খুলে রাখুন। অনেকে কল খুলে রেখে ব্রাশ করে কিন্তু আপনি জানেন কি! এই অভ্যেস যদি ত্যাগ করা যায়, তাহলে আপনি প্রতিদিন ১০ লিটার মত জল বাঁচাতে পারবেন।
২. অল্প করে বাসন মাজা ও কাপড় কাচার অভ্যাস ত্যাগ করুন :
যাদের বাড়িতে ওয়াশিং মেশিন আছে একসাথে অনেক ময়লা কাপড় ওয়াশিং মেশিনে দিয়ে ধুয়ে নিতে পারেন। এতে কিন্তু আপনার অনেকটাই জল বেঁচে যাবে। আর যারা এমনিতে কাপড় কাচন তারা অল্প অল্প, দফায় দফায়, কাপড় না কেচে একসাথে বেশি পরিমাণে জামাকাপড় কাচার উপকারিতা হলো জল অনেকটাই কম খরচ হয়।
তাছাড়া বাসন মাজার ক্ষেত্রেও তাই, একটা বাসন নোংরা হলো সেটা গিয়ে ধুয়ে আসলেন এতে কিন্তু ধাপে ধাপে অনেকটাই জল খরচ হয়। তাই এই কাজগুলো করার ক্ষেত্রে একটু বিশেষ খেয়াল রাখবেন। তাহলে দেখবেন অনেকটাই জল বেঁচে যাচ্ছে।
৩. গাছে জল দিন রোদ ওঠার আগে অথবা বিকেলে :
এমনিতে যারা গাছপালা ভালোবাসেন তাদেরকে প্রায়ই দেখতে পাওয়া যায় ভোরে কিংবা রোদ পড়ে যাওয়ার পর বিকেলে গাছে জল দিতে, কারণটা হলো অতিরিক্ত রোদে যখন আপনি গাছে জল দেবেন গাছের ক্ষতির সাথে সাথে জল কিন্তু বেশির ভাগটাই বাষ্পীভূত হয়ে যায়। রোদ থাকাকালীন গাছে জল দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। তাতে গাছেরও ভালো, জলও আপনি অনেকটা বাঁচাতে পারবেন।
৪. যতটা সম্ভব শাওয়ার এড়িয়ে চলুন, পরিবর্তে বালতি ব্যবহার করুন :
শাওয়রে স্নান করতে ভীষণ মজা লাগে তাই না, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এটা সবারই পছন্দ, তবে জলের অপচয় কমাতে গেলে এই বিষয়টা একটু এড়িয়ে চলতে হবে। তার পরিবর্তে বালতিতে জল ভরে স্নান করা ভালো, জল বাঁচানোর ক্ষেত্রে।
শাওয়ারে স্নান করতে ভালো লাগে সেই জন্য সময়ের কোনো খেয়াল থাকে না, শাওয়ার এর নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে মন চায় অনেকক্ষণ। তাই অযথা অনেকটা জল অপচয় হয়ে যায়। আপনি যদি একটু হিসাব করে চলেন তাহলে প্রতিদিন শুধুমাত্র স্নানের কারণে আপনি কিন্তু ২০ লিটার জল বাঁচাতে পারবেন।
৫. গাড়ি ধোয়ার ক্ষেত্রে হোস পাইপ নয়, বালতি ব্যবহার করুন :
হোস পাইপ দিয়ে গাড়ি ধুইলে জলের প্রচুর অপচয় হয়। তার পরিবর্তে সাবান, দিয়ে গাড়ি পরিষ্কার করুন এবং বালতিতে করে জল নিয়ে গাড়ি ধোয়ার কাজ করুন। তাহলে দেখবেন দিনে কিন্তু ৩০ লিটার জল আপনি বাঁচাতে পারবেন।
৬. প্লাম্বিং এর কাজটা টুকিটাকি শিখে রাখতে পারেন :
অনেক সময় কল থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে জল অনবরত পড়তে থাকে, আপনি যদি এই প্লাম্বিং এর কাজ একটু আদ্দু জেনে থাকেন বা আপনার ঘরে যদি এসব সরঞ্জাম টুকটাক থেকে থাকে তাহলে কিন্তু আপনি নিজেই এর মেরামতি টা করে নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার টাকাটাও বাচলো এবং অনেকটা জল অপচয় থেকে বেঁচে গেল।
রাস্তাঘাটে চলাফেরা করার সময় যদি কোন কল খোলা দেখেন সেটা অবশ্যই বন্ধ করার চেষ্টা করুন। আশেপাশের মানুষকে সচেতন করুন, এভাবে অপচয় থেকে বাঁচতে। এই উদ্যোগটা কিন্তু আপনাকেই নিতে হবে। আর আপনার দেখাদেখি আশেপাশে অনেকেই উৎসাহিত হয়ে এই উদ্যোগটা নিজে থেকে নিয়ে নেবে।
৭. খাবার নষ্ট না করা :
শুধুমাত্র জলের অপচয় বন্ধ করার জন্য নয়, খাবার অপচয় একটা বাজে অভ্যাস, খাবার তৈরি করতে যেমন প্রচুর জল এর প্রয়োজন হয় তেমনি অনেক টাকা পয়সাও খরচ হয় এই খাবার তৈরি করতে। সে ক্ষেত্রে আপনার যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খাবার তৈরি করুন। অযথা বেশি খাবার তৈরি করে সেটা পরে আপনি ফেলে দিলেন, তাতে কিন্তু জল, টাকা, খাবার সামগ্রী, সব একসাথে নষ্ট হল।
এসবের পাশাপাশি আরও অনেক বিষয় আপনি যদি একটু খেয়াল করে চলেন তাহলে কিন্তু জলের অপচয় বন্ধ করা সম্ভব। জাপানিরা হাত মুখ ধোয়ার বেসিন বাথরুমের মধ্যে টয়লেটে ফ্লাস বক্সের উপরে সেট করে রেখেছে। তার কারণ, অতিরিক্ত যে হাত মুখ ধোয়ার জল সেটা গিয়ে ওই বক্সে জমা হয় তারপর সেটা ফ্লাশ করলে কোমটের ভেতর দিয়ে চলে যায়।
এর কারণে আলাদা করে আপনাকে ফ্লাশ করার জন্য জল খরচ করতে হচ্ছে না। আপনার কাজ হয়ে গেল অথচ আপনি কল টাই বন্ধ করলেন না। সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এতটাই জল অপচয় হলো যে, সেই জলটা যদি বেঁচে থাকতো তাহলে আপনার আগামীদিনের কাজটা অনেকাংশে উদ্ধার হয়ে যেত।
জল খরচ কমাতে এসবের পাশাপাশি আপনি কিন্তু কারেন্টের বিল টাও কমিয়ে নিতে পারবেন অনেকটাই। আপনার পরিমাণমতো জল আপনি একদিনে তুলে নিলেন, তারপর সেটা নিয়মমতো, পরিমাণ মতো, খরচ করলেন। তাহলে আর বারবার আপনাকে দিনে পাম্প চালিয়ে জল ট্রাংক ভর্তি করতে হবে না। সে ক্ষেত্রে জলটাও বাঁচল, আপনার কারেন্ট টাও বাঁচল।
পরিমিত ব্যবহার আপনাকে সবদিক থেকে সুবিধা দেবে। আপনি চাইলেই এটা কিন্তু করতে পারেন। শুধু প্রয়োজন, আপনার সদিচ্ছা এবং একটু উৎসাহ আর আগামী প্রজন্মকে সুন্দর একটা পৃথিবী উপহার দেওয়ার মতো মনোভাব। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদেরকেই তো উদ্যোগ নিতে হবে তাইনা।