জিম করার পর যেসব খাবার খাওয়া অত্যন্ত আবশ্যক

আপনারা কি কেউ নতুন জিমে যাওয়া শুরু করেছেন? খাদ্যাভাস কেমন হবে তা নিয়ে কি দ্বিধায় আছেন? কোনো চিন্তা নেই, আজ আমি আপনাদের জানাবো কীভাবে আপনারা জিমের পর সুন্দর খাবার খাবেন? ও কি কি খাবার খাবেন?

জিম করার পর যেসব খাবার খাওয়া অত্যন্ত আবশ্যক
জিম করার পর যেসব খাবার খাওয়া অত্যন্ত আবশ্যক, জানুন


শরীর সুস্থ ও শরীরের কাঠামো সুন্দর করতে জিম করা খুবই প্রয়োজন। দিনে দিনে আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ছে, আমরা এখন ফিট থাকাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি।


আগের মত চিকন থাকলে চিকনই থাকব, বা মোটা হলেও করণীয় কিছুই নেই এমন ধ্যান ধারণা এখন আর আমরা পোষন করিনা।


শরীরের মোটা, চিকন বা গঠন আপনি জিম করার মাধ্যমে ঠিক করতে পারবেন।


সঠিক উপায় উপকরণ ব্যবহারে জিম করলে শরীরের বেশীরভাগ অংশের গঠনই সুন্দর করা সম্ভব, যেমন কাঁধ, বাহু, পেট, কোমর, পিঠ, উরু, হাতের কবজি, গলা, বুক, নিতম্ব, ইত্যাদি।


নিয়ম মেনে জিম করলে সেখানে প্রচুর পরিশ্রম হয়। শারীরিক কষ্ট ও পরিশ্রমের কারণে শরীর থেকে জল ও ক্যালরি খরচ হয়ে যায়। যা পূরণ করতে পুষ্টিকর এবং উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন খাবার খেতে হবে।


আজ আমরা এমন কিছু খাবার সম্পর্কেই কথা বলব যেগুলো জিম করার পর খাওয়া আবশ্যক, না হলে উপকারের পরিবর্তে পেশী ক্ষয় ও দূর্বলতা দেখা দেবে। চলুন দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক।


জিম করার পর যে খাবারগুলো খাওয়া আবশ্যক -


১. প্রোটিন শেক

জিম করার পর শরীর থেকে অনেক ক্যালরি খরচ হয়ে যায়। কিন্তু জিম করার সাথে সাথে কোন ভারী খাবার,ফল বা অন্য কিছু খাওয়া ঠিক নয়।


এ সময় যেহেতু শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর জল বের হয়ে যায়, সেহেতু আগে সেই জলের ঘাটতি পূরণ করা উচিত। সেই সাথে লিকুইড জাতীয় খাবারের মাধ্যমে হারানো শক্তি ফিরে পেতে প্রোটিন শেক খান।


বাজারে বিভিন্ন ফ্লেভারের প্রোটিন শেক কিনতে পাওয়া যায়। এটা পাউডার আকারে থাকে। আপনাকে জল বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।


এর উপাদান হচ্ছে চিকেন গুড়া, চাল-ডাল, এবং অন্যান্য দানাদার শস্যের গুড়া একসাথে মিশিয়ে বানানো হয় প্রোটিন পাউডার। আপনি চাইলে এসব উপাদান বাড়িতে গুড়া করেও প্রোটিন পাউডার তৈরি করতে পারেন।


এছাড়া যেকোন সুপার শপ বা মেডিসিন শপে প্রোটিন পাউডার কিনতে পাবেন। চাইলে অনলাইনে অর্ডার দিয়েও নিতে পারেন।

এখন যৌবনেও বাড়বে উচ্চতা! জেনে নিন কিভাবে

ঘুম থেকে দেরি করে উঠা আর নয়! জানুন কিছু কার্যকরী উপায়

কম্পালসিভ এক্সারসাইজঃ অধিক ব্যয়াম করা কি ক্ষতিকারক?

হাইট বাড়ানোর কিছু সহজ ও কার্যকর কৌশল

শরীর সুস্থ রাখতে হলে এই কাজগুলি একদম করবেন না


২. ডিম

ডিম অন্যতম শক্তিশালী একটি খাদ্য, যা আমাদের হারানো শক্তি খুব দ্রুত ফিরিয়ে দেয়। জিম থেকে ফেরার ঘন্টা খানেকের মধ্যে একটি বা দুটি ডিম সেদ্ধ খেয়ে নিন।


এতে পেশীর ক্ষয়পূরণ হবে এবং শরীরে ক্যালরি যোগ হবে। জিম করতে হলে প্রতিদিন আপনাকে ২-৩ টি ডিম অবশ্যই খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে৷ ডিমে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে।


পোচ ডিমে রয়েছে ২০০ ক্যালরি এবং একটি সেদ্ধ ডিমে থাকে ৭০ ক্যালরি। জিম করলে শরীরের ক্যালরি খরচ হয়, বিভিন্ন মাংশপেশীর ক্ষয় দেখা দিতে পারে এজন্য প্রতিদিন সেই ঘাটতি পূরণে প্রচুর প্রোটিন দরকার।


আর ডিমে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন ও ভিটামিন 'ডি', যা হারানো শক্তি হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করবে।


৩. কাঁচা বাদাম ও ছোলা

জিম করার পর শরীর ক্লান্ত ও অবসন্ন লাগে। শরীর থেকে অনেক ক্যালরি খরচ হয়ে যায় বিধায় এই হারানো শক্তি ফিরে পেতে কাঁচা বাদাম ও ছোলা ভিজিয়ে রেখে তারপর খেতে হবে।


প্রথমত অনেকের হজমশক্তি দূর্বল, তারা প্রথমদিকে পরিমাণে কম করে ছোলা ও বাদাম ভিজিয়ে খেতে পারেন। প্রতিদিন ৩০ গ্রাম করে কাঁচা বাদাম ও ছোলা ভিজিয়ে রাখতে পারেন।


এতে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন, ফ্যাট, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং ভিটামিন বি১ ও বি২ আছে। যেদিনই জিমে যাবেন, সেদিনই এই দুইটি খাদ্য উপাদান অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখবেন। এই দুইটি উপাদান হারানো শক্তি খুব দ্রুত ফিরিয়ে দেয়।


আরও পড়ুনঃ ত্বকের কালচেভাব ও রঙের অসামঞ্জস্যতা দূর করার ঘরোয়া কিছু উপায়


৪. ফলজাতীয় খাদ্য

জিম করলে শরীরে যে ঘাটতি দেখা দেয় তা পূরণ করতে প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন। এজন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুটি ফল অবশ্যই রাখতে হবে।


সব ফলেই সমান ভিটামিন থাকেনা। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম বিবেচনায় প্রতিদিন কলা ও খেজুর খাদ্য তালিকায় রাখুন।


এই দুটি ফলে প্রচুর ক্যালরি ও ফাইবার রয়েছে যা শরীর গঠনের পাশাপাশি হারানো শক্তি ফিরিয়ে দেবে। ফল দুইটি সহজলভ্য এবং দামও হাতের নাগালে।


তাই এই দুটি ফল অবশ্যই মিস করবেন না। এছাড়া খেতে পারেন, আপেল, আম, আঙুর, লিচু, বেদানা,আনারস, কমলা, মাল্টা, জাম, সফেদা ইত্যাদি যেকোন মৌসুমী ও বারমাসী ফল।


৫. কার্বোহাইড্রেট

আমরা শরীরে শক্তি পাই মূলত শর্করাজাতীয় খাবার থেকে। এরমধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, বনরুটি, চিড়া, মুড়ি, চালের পিঠা, আলু ইত্যাদিতে।


প্রতিদিন একই সময়ে দুপুর ও রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। কারণ সময়ের এদিক ওদিক হলেই সেটার ক্যালরি শরীরের তেমন কোন কাজে আসেনা বরং এসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়।


তাই নিয়ম করে ভাত, রুটি, লাল আলু, চালের গুড়ার তৈরি খাবার ইত্যাদি প্রতিদিন গ্রহণ করুন। কারণ আমাদের শরীর মূলত শক্তি পায় শর্করা থেকে।


কিন্তু অতিরিক্ত শর্করা শরীরের স্থূলতা বৃদ্ধি করে। তাই প্রয়োজনানুযায়ী শর্করা গ্রহণ করুন।


৬. প্রোটিন

প্রোটিন শরীরের মাংসপেশী গঠন করতে সাহায্য করে। দেহের পুষ্টি ও বৃদ্ধি নির্ভর করে প্রোটিনের উপর, ঠিকভাবে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না খেলে জিম করার পর যে ক্যালরি খরচ হয় তা পূরণ হবেনা।


ফলে হাড় ও মাংশপেশীতে ক্ষয় দেখা দেবে। জিম করা হয় ফ্যাট কমিয়ে মাংশপেশী ও হাড়ের গঠন মজবুত করতে।


কিন্তু প্রোটিন বেশী না খেলে উল্টো ক্ষতি হয় এবং হাড়ের জয়েন্টে ব্যথাসহ রোগা এবং দূর্বল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


এজন্য খাদ্যতালিকায় নিয়মিত মাছ, মাংস, ডিম,দুধ, ঘি,পনির এসব খাদ্য রাখুন। বাড়তি প্রোটিনের জন্য প্রোটিন পাউডার দিয়ে প্রোটিন শেক বানিয়ে জিম করার পর খেতে পারেন।


জিম থেকে খাবারের যে চার্ট দেওয়া হয় সেটা অনুযায়ী প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট এবং অন্যান্য খাদ্য উপাদান গ্রহন করলে আপনি সুন্দর ও সুগঠিত শরীরের অধিকারী হতে পারবেন।


আরও পড়ুনঃ হিজাব পরিধানে কি চুল পড়ে? জেনে নিন কীভাবে রোধ করবেন


শেষ কথা

সুন্দর ও সুগঠিত স্বাস্থ্য পেতে জিম করা আবশ্যক। তবে শুধু জিম করলেই শরীর সুস্থ থাকবে না, এরসাথে প্রয়োজনীয় সব ধরনের খাদ্য উপাদান খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।


যাতে করে জিমে গিয়ে যে ক্যালরি খরচ হচ্ছে তা পূরণ হয়ে যায় এবং শরীর সুগঠিত ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এছাড়া জিম করাকালীন ট্রেইনারের নির্দেশমত নিয়ম নীতি ও জীবন-যাপন করলে আপনি সবসময়ই ফিট থাকতে পারবেন।


পোস্টটির বিষয়ে কোন তথ্য জানানোর হলে বা কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করুন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি।


ধন্যবাদ সবাইকে।