জীবনে শান্তি পেতে চাইলে যা অবশ্যই করতে হবে
শান্তির খোঁজ করেন অথচ শান্তি কীভাবে পাওয়া যায় তা সম্পর্কে জানেন না? যদি না জেনে থাকেন তবে জীবন শান্তিময় করে গড়ে তোলার এই আর্টিকেলটি পড়ে ফেলুন।

আপনি সুখী হতে চান। অথচ প্রতিনিয়ত এমন সকল কাজ করে বেড়ান, যা আপনার সুখী হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কি ঠিক বলেছি?
আপনি হয়তো নিজেও জানেন না যে কি এমন কাজ আপনি করে বেড়ান যার কারণে আপনি জীবনের সুখের সোনার হরিণের দেখা পেতে থাকেন না এবং প্রতিনিয়ত আপনার জীবনে অশান্তি আর অশান্তি লেগেই থাকে।
সুখী শব্দটা প্রকৃতপক্ষে দুঃখী হবার বিপরীত। একজন মানুষের জীবনের সব সময় দুখী জিনিসে ভরপুর থাকে না। দুঃখী জিনিসটা যদি না থাকে তবে সুখের স্বাদ অনুভব করা যায় না।
একটা উদাহরন দিলে বুঝা যাবে আমাদের জীবনে যদি অন্ধকার না থাকত তবে আমরা আলো কি জিনিস সেটা বুঝতে পারতাম না। ঠিক একইভাবে দুঃখ বলে যদি কিছু না থাকে তবে সুখ কি জিনিস এটাও অনুধাবন করতে পারতাম না।
তাই জীবনে সুখ কি জিনিস, এগুলো বুঝতে হলেও আপনার দুঃখ হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রচুর পরিমাণে দুঃখী মানুষ একটা সময়ে গিয়ে সুখী নিশ্চয়ই হয়।
সুখী হতে হলে সর্বপ্রথম যে জিনিসের প্রয়োজন তা হলো শান্তি। আর আপনার কাজকর্ম আপনার শান্তি কিংবা অশান্তি হওয়ার ফলাফল এর ওপর নির্ভর করে।
কিন্তু বিষয়টা তখনই বোকামি হয়ে যায় যখন আপনি নিজের হাতে আপনার পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করে দেন এবং অশান্তি কে স্বাগত জানান। আপনি হয়তো অবশ্যই অশান্তি করতে চান না। আপনি নিজেও শান্তি প্রিয় একজন মানুষ।
কিন্তু মনে রাখবেন আপনার নিজেরই কিছু বোকামির কারণে আপনার সংসারে ব্যক্তিগত জীবনের সব জায়গায় কোন না কোন ভাবে অশান্তি লেগেই থাকে। আর এই অশান্তি লেগে থাকার কারণে আপনি কখনো সুখী হতে পারছেন না।
আজকের আর্টিকেলটিতে সেরকম কিছু অশান্তি হওয়ার কারণ সম্পর্কে উল্লেখ করে দেওয়া হবে, যা আপনি আপনার নিজের অজান্তে করে থাকেন। তাহলে চলুন দেরী না করে আর্টিকেলটির মূল অংশে প্রবেশ করে ফেলি।
কথা ছড়ানো
মনে রাখবেন যখন অনেকগুলো মানুষ একত্রে গল্প করে, তখন নানা ধরনের গল্পগুজবের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির পরিবারের সাংসারিক, ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়েও কথা উঠে থাকে।
এই সকল কথা নিয়ে গল্পগুজবের মধ্যে প্রত্যেকেই অন্যের জীবনের ব্যাপারে বিভিন্ন গোপন তথ্য জেনে গেল এবং তা আবার আরেকজনের কাছে বলে ছড়াছড়ি করতে লাগলো।
প্রকৃতপক্ষে কথা লাগানো জিনিসটা অনেক বেশী জঘন্য কাজ। এই কাজ করার মাধ্যমে শুধু যে আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তাকে অসন্তুষ্ট করে থাকবেন তা নয় বরং এই কাজটা করার মাধ্যমে আপনি আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্কের ইতি টানতে পারেন।
যখন আপনার একজনের কথা আর একজনের কাছে ছড়ানোর অভ্যাসে থেকে থাকে, তবে খেয়াল করে দেখবেন আপনাকে অনেকে বাহ্যিকভাবে প্রিয় মানুষ হিসেবে পরিচয় দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আপনাকে কেউ পছন্দ করে না।
কেননা আপনি একজনের কথা আরেকজনের কাছে লাগিয়ে দেন। আর আপনার এই সমস্যাটির কারণে কেউ আপনাকে তার মন খুলে কোন কথা বলতে পারে না। মনেপ্রাণে ঘৃণা করে। আপনি অবশ্যই কারো ঘৃণার পাত্র হতে চান না।
তাই না তাই আপনার যদি এরকম কথা লাগানোর অভ্যাস থেকে থাকে, তবে এবার এখনই পরিত্যাগ করুন। অন্যথায় পরবর্তীতে অনেক পস্তাবেন। না, দেখা গেছে পুরুষের তুলনায় নারীরা এই কথা স্মরণে কাজটি অনেক বেশি করে থাকেন।
সাধারণত তারা কোন কথা পেটে রাখতে পারেন না। একইসাথে কোন মজলিশে বসলে দুনিয়ার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিগত কথা নিয়ে উঠে আসে এবং মহিলারা একজনের কথা আরেকজনকে ছড়াতে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে কাজ করে থাকে।
তাই আপনার কাছে অনুরোধ করব, এই বাজে অভ্যাস ত্যাগ করলেই কিন্তু আপনি জীবনে সুখী হতে পারবেন।
দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া
আপনার দাম্পত্য জীবনের ঝগড়া হতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো এই যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার ঝগড়া বাইরের মানুষকে জানাতে হয় না। এতে করে বাইরের মানুষ আপনার জীবনে আরো অশান্তি লাগিয়ে দেবে।
উদাহরণস্বরূপ আপনি মনে করতে পারেন কোন একদিন আপনার স্ত্রী আপনার সাথে এসে খুব বাজে ব্যবহার করল এবং আপনাকে অনেক কষ্ট দিল। আপনিও প্রচুর কষ্ট পেয়েছেন। সেই সাথে তার ওপর খুব রাগ করেছেন।
এরপর আপনি গিয়ে আপনার পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আপনার স্ত্রীর এই বাজে আচরণের কথা বলে বেড়ালেন। এতে করে আপনার স্ত্রীকে সবাই অপছন্দ করতে শুরু করল। আপনার স্ত্রীকে নিয়ে প্রত্যেকের একটি বাজে ধারণা সৃষ্টি হয়ে গেল।
এরপর অন্য একদিন আপনার স্ত্রী আপনার কাছে এসে বলল ঐদিন সে অনেক স্ট্রেসে থাকার কারণে মাথা ঠিক ছিল না। তাই উল্টোপাল্টা অনেক কিছুই বলে দিয়েছে। সে তার কাজের জন্য অনুতপ্ত। এদিকে আপনার স্ত্রীর মাফ চাওয়ার পর কিন্তু আপনার মন ঠিকই গলে যাবে। আপনি মাফ করে দিবেন।
কিন্তু ওই যে আপনাদের দাম্পত্য জীবনের ব্যক্তিগত ঝগড়া সম্পর্কে পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের আপনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, তারা তো আপনার স্ত্রীকে এখন থেকে মনে মনে অপছন্দ করা শুরু করবে। তাই এধরনের কাজ কখনো করবেন না।
দাম্পত্য জীবনে ঝগড়াঝাটি হয়ে থাকে। চেষ্টা করবেন এসব ব্যাপার নিজেদের মধ্যে রাখতে এবং অন্য কোন ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার না করতে। মনে রাখবেন আপনি যখন আপনার কষ্টের কথা আরেক জন ব্যক্তিকে বলবেন, সে ব্যক্তি আপনার কষ্টের কারণ কখনই কমাবে না বরং আরো বাড়িয়ে দেবে।
কাউকে নেগেটিভ কমপ্লিমেন্ট করা
কোন ব্যক্তিকে তার কাজের পথে অথবা সাফল্যের পর কোনো রকমের নেগেটিভ কমপ্লিমেন্ট করতে যাবেন না। কারণ যখন কেউ ভালো কিছু করছে কিংবা করতে যাচ্ছে এবং আপনি যদি প্রথম তাকে নেগেটিভ কথাবার্তা বলেন, তার আত্মবিশ্বাস কে নিচে নামিয়ে দেন, তবে কিন্তু সে আপনাকে কখনোই পছন্দ করবে না।
আপনাকে মনে মনে ঘৃণা করতে থাকবে এবং কখনো কোন দরকারে আপনার কাজে আসবে না বরং সবসময় আপনার থেকে 100 হাত দূরে থাকবে। আপনাকে প্রচুর ঘৃণা করবেন।
কেননা আপনি মানুষকে নেগেটিভ কথাবার্তা বলে প্রথমেই তার ইতিবাচক ভাবনাগুলোকে অনেক নিচে নামিয়ে দেন। তাই আপনার যদি এই বদ অভ্যাস থেকে থাকে কাউকে নেগেটিভ কমেন্ট করে তার আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার, তা এখনই ত্যাগ করুন।
আপনি হয়তো জীবনে সেরকম কিছু করতে পারেননি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনার আশেপাশের কোন ব্যক্তিবর্গরা এরকম কাজ করতে পারবে না। যখন দেখবেন আপনার আশেপাশে কেউ কোনো ভালো কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে আপনি প্রশংসা করতে না পারেন।
অন্তত আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেওয়ার মতো কাজ করবেন না। যখন আপনি তাদেরকে তাদের কাজের জন্য উৎসাহ দিবেন, দেখবেন তারা আপনাকে খুব পছন্দ করতে শুরু করবে এবং প্রায়ই আপনার কাছে এসে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ যাবে এবং আপনাকে মনেপ্রাণে অনেক পছন্দ করবে।
সুপ্রিয় পাঠক এভাবেই কিন্তু আপনি আপনার জীবনের সকল অশান্তির সমস্যা সমাধান করতে পারেন। আজকের আর্টিকেলটি কেমন ছিল? আজ এখানেই ইতি টানছি। পরবর্তীতে অন্য একটি আর্টিকেল নিয়ে হাজির হব আপনাদের সামনে। ধন্যবাদ।