ঝিলের জলে শাপলা শালুক
এখন নবীন শিশুরা দল বেঁধে শাপলা কুঁড়াতে যায়,সেই আগেকার মত করে। প্রকৃতি তাঁদের আশীর্বাদ করে ফুল, ফল, পাতা দেয় আর প্রকৃতি কে তাঁরা মিষ্টি হাসি দেয়। কল্পনায় ছেলেবেলার এখনো বিচরণ করি সেই ঝিলের জলের শাপলা শালুক কুঁড়ানোর দিনগুলো কে।

গ্রীষ্মের অবসনে বর্ষার আগমন মেঘের গুড়গুড় ধ্বনি। সামনের সাদা ঐ মেঘভরা আকাশ, প্রভাতের নবোদিত সোনার কিরণ সূর্যকিরণ,চারদিকে বর্ষার জল থৈ থৈ করছে। কিন্তু ঝিলের জলের রুপ ছিলো ভিন্নতর ধবধবে সাদা শাপলা ও লাল গালিচারা চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মনে হচ্ছে শতদলের মাঝখানে শতরুপা আমি।
ছোট্ট ছোট্ট ছেলেমেয়েগুলো পৃথিবীর নেমে আসছে, নীল অকূল থেকে মাটির তীরে। মুখে তাঁদের প্রাণকাড়া দুষ্টুমির হাসি, চোখে দেবদূতের সরলতা। হাসতে হাসতে দলবেঁধে তাঁরা নেমে পড়লো ঝিলের জলে শাপলা কুঁড়াতে। কেউ বা শালুক তুলছে, শালুকগাছের গোড়ায় কতগুলো গুটি একত্র হয়। সেটাই শালুক ফল।
দেবশিশুদের আনন্দ লীলায় সব প্রাণী এই যোগ দিচ্ছে। কল্পনার, আনন্দের উদ্দীপনার, সৌন্দর্যের মাধুর্যের কি বিরাট প্রান মন মাতানো, পাগল করা উদ্দাম বাধাবন্ধহীন গতি বেগ। অতঃপর শাপলা শালুক নিয়ে তাঁরা চলে আসলো প্রাণের ঝর্ণার অপার হয়ে। ফুল গুলো নিয়ে তাঁরা বাড়ির সামনে গাছের নিচে রাখলো আঁটি বেঁধে বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করবে।
হয়তো সামান্য কিছু পাবে অর্থ কিন্তু তাঁদের এই প্রাণকাড়া হাসি জগতের সবকিছু থেকে তুচ্ছ। এইসব এই দেখছিলাম আমি আর ভাই মিলে। ভাবতে লাগলাম কতগুলো শাপলা ফুল কুঁড়িয়ে মালা গাঁথবো বিনিসুতোঁর তাঁরপর আকাশী রঙের ফ্রক টা পড়ে সারা গ্রাম টই টই করবো মাথায় এবং গলায় মালা দিয়ে। এই ভাবনায় গেলো অপরাহ্ণ আর সায়াহ্নের ক্যানভাস রাতে ঘুমাবার আগে ভাই কে বললাম ভোরে ঘুম থেকে উঠবি তাহলে শাপলা কুঁড়াতে ঝিলে যেতে পারবো ওদের আগে।
আমাদের চুপিচুপি কথা মায়ের কর্ণ ঘেঁষে চলে গেলো কিভাবে টহর ও করতে পারিনি। পরদিন সকালে কি রকম করে বৃষ্টি বৃষ্টিটা এল!কাটারিয়ার দিক থেকে ভয়ানক মেঘ করে এলো। তখনই আমরা যাচ্ছিলাম পূবের ঝিলে মা বললো সকাল না হতেই পাড়া বেড়ানো শুরু হয়ে গেছে। কোথাও না গিয়ে চুপটি করে বসে থাক ঝড় আসবে এখনি।
মনভার করে বসে থাকলাম আকাশে ঘন কালো মেঘের রাশ ঘুরতে ঘুরতে ঝড়ের মুখে হু হু উড়ে আসতে লাগলো। মাটিতে জল কি মিশ কালো ছায়াটা ফেললো। বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দে ভীষণ বেগে গাছপালা লুটিয়ে নুইয়ে ফেলে দিয়েছে। মা তখন তাড়াতাড়ি করে রান্না ঘর থেকে এসে এক বাটি চিড়া আর কলা নিয়ে এসো বললো এগুলো গিল এমন বাদলা দিনে বিলে গেলে ভুতুড়ে রা ঘাড় মটকে দিবে।
আমি তো ভয় পেয়ে গেছি মা আর যাবোনা। কিন্তু যখনই বৃষ্টি কমে গেলে চারিপাশ টা সতেজ তখন এক দৌড় দিয়ে পানা পুকুরের সামনে এসে দাঁড়ালাম। হাঁপিয়ে গেলাম আমার সাথে ভাই ও চলে আসলো ঘর থেকে আমি বললাম চল যাই ঝিলের জলে। ভাই বলে শুনিসনি মা বলেছে, ভুত আছে ঘাড় মটকে দিবে তাও এখন এই ভর দূপুরবেলা।
আমি ভাইকে বললাম ভীতু কোথাকার এই সাহস নিয়ে চলিস। সে তখন বললো না আমি ও ভয় পাইনা তা দেখে মনে মনে হাসলাম সে বীরত্বের পরিচয় দিচ্ছে। সেদিন আর যাওয়া হলো না বিলের ধারে। অতঃপর রাতে ঘুমাবার আগে ভাইকে বলছি কাল সকালে উঠবি সূর্যি মামা উঠার আগে নয়তো তকে মেরেই দিবো। সকালে ভোরে উঠলাম মায়ের ঘুম ভাঙার আগেই। কেননা, মা উঠলে যেতে দিবেনা কিন্তু ভাইকে ডাকছি উঠতে সে ঘুমিয়ে কথা বলে ছক্কা আউট এটা সেটা আরো কতো কি অতঃপর বসিয়ে দিলাম তাঁর পিঠে এক কিল সে উঠে কাঁদতে লাগলো।
আমি তাঁর মুখে হাত চেপে ধরে বলছি আমায় মার তবুও কাঁদিস না,মা উঠে যাবে তাহলে, আর যেতে পারবো না বিলে। তাঁরপর তাড়াহুড়ো করে চললাম বিলের ধারে। একটু আগে যাওয়ার কারণ হলো পাশের বাড়ির মালতী,মহুয়া, তিন্নিরা চলে যাবে আমাদের আগে তখন গেলে তো ভালো শাপলা পাবোনা তাই। বিলের ধারে ওড়কলমির নোলক ফুটে আছে, তাঁরিপাশে নেত্রপল্লবের কলমী ফুল বেগুনী রঙের, আর তেলাকুচা লতার গায়ে পাকা তুলতুলে সিঁদুরের মতো তেলকুচা ফল ঝুলছে।
চারদিকে জলের টইটম্বুর দেখে আর শাপলার রাজত্বের ক্ষণিকের জন্য হারিয়ে গেলাম। ভাইকে বলছি হতচ্ছাড়া বসে থাক নেমে কাজ নেই তর পানিতে নেমে জ্বর বাঁধবি শরীরের। বসে থেকে দেখ আমি কতগুলো ফুল তুলি। নামতেই মনে হলো শাপলার রাজত্বে আমি শতদলের রাণী, হাতবাড়াতেই বড় ফুল টা তুলে মাথায় গোঁজে দিলাম। ভাই বলছে, আমায় ঐ বড় ফুল টা দে মালা গাঁথি আমি তাকে ধমক দিয়ে বললাম বসে থেকে দেখ মালতীরা আসছে কিনা।
তাঁরপর কতকগুলো ফুল তুলেছি এই পাশ টা তুলি তো ও পাশটা তে দেখি আরো বেশি ফুল। ভাইয়ের কাছে ফুল গুলো রাখতে আসলাম। ভাই বলছে শালুক নিয়ে আয় রৌদ্দুর উঠেছে খেতে বেশ লাগবে নুন দিয়ে। আমি আবার নেমে পড়লাম বিলে শালুকের খোঁজে শালুক শাপলা ফুলের গাছের নিচে থাকে তাই পানির নিচে হাত দিয়ে আনতে হয় গুটিকতক শালুক নিয়ে এসেছি। তাঁরপর বাড়ির দিকে চললাম।
ফুলগুলো পুকুরের পানির মধ্যে ভাসিয়ে রেখেছি আর শালুক গুলো বাড়িতে নিয়ে এসেছি। ঘরে ডুকতেই মায়ের বকুনি কে শুনে কার কথা। দু মুঠো খেয়ে আবার বেড়িয়ে পড়লাম, ফুল গুলো দিয়ে বিনী সুতোয় মালা গাঁথতে লাগলাম,সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো বাড়িতে চলে গেলাম। ভাইবোন মিলে দাওয়া বসে রাতে গগন পানে তাঁরা গুনতে লাগলাম। এইদিক দিয়ে তাঁরা গুনি ঐ দিকে আবার কতগুলো তাঁরা গুনে শেষ করতে পারছিনা! মা ডাকছে রান্না ঘরে আয়, রান্না ঘরে গিয়ে দেখি কতগুলো শালুক পোড়াচ্ছে মা আগুনে।
বললো যে এগুলো খেয়ে ঘুমিয়ে থাক। শালুক গুলো দেখে বুঝতে পারলাম এগুলো যে আমাদের কুঁড়ানো শালুক ঈষৎ হেসে একে একে শালুক গুলো খেতে লাগলাম। নুনতা নুনতা তবুও যেন কি মজা লাগছে বেশ করে খেয়ে নিচ্ছি ভাইবোন। তাঁরপর শুয়ে পড়েছি আমি আর ভাই ঘুম আসছে না। একটু পরে বাবা আসলো মা বলছে বাজার কিছু এনেছো ঘরে তো একমুঠো চাল ও নেই। বাবা নরম স্বরে বলছে যা বাদলা পড়েছে কোনো কাজ এই তো পাচ্ছি না দেখি কি করা যায়!মা বলছে আজ শালুক সেদ্ধ খেয়ে ঘুমিয়েছে ওরা।
সকাল হলে কি দিবো মুখে আমি! বাবা বলছে একটা কিছু ব্যবস্থা করছি। আমি আর ভাই তখন জেগে ছিলাম সব শুনেছি। তাই ভাইকে বলছি কাল খুব ভোরে উঠবো, ডাকলেই উঠবি নয়তো দিবো তকে একটা। ভাই বলছে দেখিস তর আগে উঠবো, তখন তকে দিবো মাইর। আমি তখন হেসে বলছি, আচ্ছা ঘুমা। পরদিন খুব ভোরে ভাই আর আমি উঠে গেছি ঘুম থেকে, তাঁরপর আস্তে আস্তে বিলের ধারের পথটার দিকে যেতে লাগলাম। সেদিন আমাদের আগে কেউ আর আসেনি ভাইকে বলছি আজ তুই ও নেমে যা। দুজন মিলে তুললে তাড়াতাড়ি তুলতে পারবো।
ভাই আর আমি দুজন মিলে অনেক গুলো শাপলা আর শালুক কুঁড়ালাম। ভাইকে বলছি চল বাজারে গিয়ে শাপলা গুলো বিক্রি করি ভাই বলছে এগুলো কেউ কিনবে। আমি বলছি মালতীরা যে বিক্রি করে মাঝে মধ্যে শুনিসনি। তাঁরপর ভাই আর আমি বাজারে শাপলা শালুক বিক্রি করতে গেলাম কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম সবাই দেখে চলে যাচ্ছে কেউ নিচ্ছে না। অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম কিন্তু কেউ ফুলের দাম ও জিজ্ঞেস করছে না।
কিছুক্ষণ পরে একটা লোক এসে জিজ্ঞেস করছে ফুল গুলোর দাম কতো আমি বলার আগেই ভাই বলে দিয়েছে ২০টাকা লোকটা ২টাকা দিবে বলছে আমি দিতে চেয়েছি, কিন্তু ভাই বলছে এত কষ্ট করে এতগুলো ফুল তুলেছি মাত্র ২টাকা!ফুল বিক্রি করবেনা বলে সে মনখারাপ করে বসে আছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়েছিলাম তাঁর পাশেই একটা দোকানে জিলাপি বানাচ্ছে গরম গরম জিলাপি সারি সারি করে সাজিয়ে রাখছে দোকানের একটা লোক। আমি আর ভাই ঢ্যাপ ঢ্যাপ করে থাকিয়ে দেখছি জিলাপি গুলো।
বিশেষ করে এমন লোভনীয় এর মত তাকাচ্ছিলাম আমরা যেন এখান থেকে বড় ২টা জিলাপি নিয়ে দৌড় দেই। অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম কেউ দাম করতে আসেনা ফুল আচমকা মেঘের গুড়গুড় ধ্বনি শুরু হয়ে গেলো সঙ্গে সঙ্গে এক পশলা বৃষ্টি ও শুরু হয়ে গেলো আমরা তখন সামনের জিলাপির দোকানেই আশ্রয় নিলাম। দোকানে গরম গরম জিলাপির সারি দেখে ভাই বলছে শাপলা দিয়ে জিলাপি দেন। লোকটা বলছে টাকা দিয়ে দেই শাপলা দিয়ে তো জিলাপি পাওয়া যাবেনা।
ভাইয়ের মন তখন খারাপ হয়ে গেলো আমি ভাইকে বলছি বৃষ্টি কমে গেলেই চলে যাবো কাল এসে জিলাপি কিনে খাবো দুজনে। আজকের এগুলো ভালো না,বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরেই বাড়িত চলে এলাম এক গাঁটি শাপলা নিয়ে সারাদিন কোথায় ছিলাম মা বকবে তাই ফুল গুলো দাওয়ায় রেখে আমি চললাম পুকুরে। সেদিনকার দুপুর বেলা গড়িয়ে গেলে প্রচন্ড ক্ষুধা লাগলো তাই বাড়িতে গেলাম ঘরে ডুকতেই দেখি রান্না ঘরে বসে ভাই কি জানি খাচ্ছে।
আমি বলছি তর মুখে কি?তখন মা শুনতে পেয়ে বললো সারাদিন টই টই ঘুরে কি এখন ক্ষুধা লেগেছে। সেদিন আর বকেনি মা, বললো খেতে আয়। আমার পাতের মধ্যে এক গামলা শাক দিতে লাগলো আমি বললাম এটা কি গো মা বললো শাপলার ডাঁটা বাজি খেয়ে দেখ মজা অনেক। আমি মনে মনে খুশি হলাম আমার শাপলা গুলো রান্না করেছে মা। মুখে বেশ মজা লেগেছে সারাদিন না খাওয়ার পর এটাই মনে হচ্ছে কতো সুস্বাদু মাংসের থেকেও মজা লেগেছে। যদি দুমুঠো ভাত হতো সঙ্গে আর বেশ মজা লাগতো।
মা বললো যে বাবা চাল নিয়ে আসলে খিচুড়ি রান্না করবে বাদলা দিনে। এই বলে শান্ত্বনা দিলো বুঝতে পারছি। সন্ধ্যা হতেই বৃষ্টি, মা অপেক্ষা করছে বাবা কখন আসবে! বৃষ্টি যেন সব ভাসিয়ে নেয় এমন অবস্থা সারাদিন টই টই করে ঘুরার ফলে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি আমি আর ভাই। পরদিন সকালে আগেকার মত করে ভোরে উঠে গেছি ভাইকে ডাকছি সে শুনেই না তাঁরপর বলছি সন্দেশ খাবি? উঠ নয়তো দিবোনা ভাই তো এক লাফেই উঠে বললো, কোথায় সন্দেশ দে তো দেখি।
আমি তখন হেসে বললাম, বোকা কোথাকার এটা না বললে তুই উঠতি সে বলতাছে তর আগে থেকে সজাগ আমি তখন বলছি হয়েছে। এবার চল বিলের ধারে সকালে ফুল না তুললে ফুল গুলো যে তাজা পাওয়া যাবেনা। তাই তাড়াতাড়ি করে বিলের ধারে গিয়ে অনেক গুলো ফুল তুলে আঁটি বেঁধে নিলাম ভাইকে বলছি সকাল সকাল বাজারে গেলে হয়তো বিক্রি করা যাবে তাই আমরাও তাড়াতাড়ি চলে গেলাম। যাওয়ার পথে এটা খাবো ওটা খাবো দুজন মিলে কত কি ভাবছি ভাইকে বলছি একটা কাজ করলে কেমন হয় তুই বাজারের শেষ মাথায় বসবি কিছু ফুল আর শালুক নিয়ে আর আমি প্রথম মাথায় বসবো।
কেউ যদি কিনতে আসে আমার কাছ থেকে না নিলে শেষ মাথায় গিয়ে তর কাছ থেকে নিবে। ভাই বলছে ভালো বলেছিস রে আজ যত দাম এই বলুক না কেনো দিয়ে দিবি হতচ্ছাড়া। তাঁরপর কথামত দুজন এভাবে বসলাম একটা লোক কতগুলো সবজির একসাথে নিয়ে এসে আমাকে বললো ফুল গুলোর দাম কতো আমি বলছি ২০টাকা দিলেই হবে লোকটা কোনো দামাদামি না করেই দিয়ে দিলো। ২০টাকার নোট দেখে আমি মহাখুশি মনের আনন্দ নিয়ে ভাইয়ের কাছে গেলাম ভাইয়ের ফুল গুলো ও বিক্রি হয়ে গেছে সে শালুক বিক্রি করেছে ১০টাকা, ফুল বিক্রি করেছে ২৫টাকা। সবগুলো গুণে দেখলাম ৫৫টাকা আমরা তো মহাখুশি এই সামান্য টাকা পেয়েই মনে হলো কতোটাকা।
ভাই বলছে আজ অনেক কিছু খাবো আমি বলছি আগে চাল কিনে নেই তাঁরপর সব খাবো ১কেজি চাল, তেল,আলু কিনে নিয়েছি। তাঁরপর ৫টাকা ছিলো আরো সেটা দিয়ে ঝাল চকলেট কিনলাম ১টা একটা চকলেট সমান ভাগ করে দুজনে খাবো এলাচি বিস্কিট কিনেছি এক প্যাকেট। মনের আনন্দে রাস্তায় খেতে খেতে আসলাম। আর ভাবছি আজ শাপলা বিক্রি করে কতো কিছু কিনেছি চাল,তেল,আলু এসব দেখলে মা বড্ড খুশি হবে আর আমাদের শাপলা কুঁড়াতে গেলে মা বকবে না।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই কান্নার ধ্বনি শুনতে পাচ্ছি তখন বেলা গড়িয়ে ১২টার উপরে হবে। পাশের বাড়ি জ্যাঠামশাই বলছে সারাদিন কোথায় ছিলি তদের বাবা যে কতো ডাকলো একটু দেখে যেতে। আমি আর ভাই কিছু বুঝে উঠতে পারিনি বাড়িতে এসে দেখি অনেক মানুষ মা দরজার পাশে বসে আছে চুপ করে। কোনো কথা বলছেনা আমি আর ভাই কোনোদিকে না থাকিয়ে মায়ের কাছে গেলাম বললাম মা শাপলা শালুক বিক্রি করে চাল,তেল আলু এনেছি।
মা তখন আমাদের জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছে পিছনে ফিরে দেখি বাবা মাটিতে পড়ে আছে বুঝেছি তখন এটাই বাবার লাশ। মা বললো তরা আরেকটু আগে আসতে পারলিনা তদের বাবা কত ডেকেছে। আমি আর ভাই তখন কাঁদতে লাগলাম। বড় একটা শাপলা ফুল পুকুর থেকে এনে মালা গেঁথে বাবার গলায় দিয়েছি বাবা এইতো ঝিলের জলের শাপলা দেখো কতো সুন্দর!আজ যদি না যেতাম ঝিলের ধারে শাপলা শালুক না কুঁড়াতাম তবে বোধহয় বাবাকে দেখতে পেতাম এই বলে কাঁদছি।
সেদিন হতে শাপলা শালুকের বিলের ধারে আর কখনো যাওয়া হয়নি আমাদের। কতো মাস,বছর,এক যুগ পেরিয়ে গেলো তবুও যাওয়া হলো না আর শাপলা শালুকের খোঁজে। ঝিলের ধারে শাপলা শালুক এভাবেই ফুটে কিন্তু আমাদের আর যাওয়া হয়না।
এখন নবীন শিশুরা দল বেঁধে শাপলা কুঁড়াতে যায়,সেই আগেকার মত করে। প্রকৃতি তাঁদের আশীর্বাদ করে ফুল, ফল, পাতা দেয় আর প্রকৃতি কে তাঁরা মিষ্টি হাসি দেয়। কল্পনায় ছেলেবেলার এখনো বিচরণ করি সেই ঝিলের জলের শাপলা শালুক কুঁড়ানোর দিনগুলো কে।
সেই দিনগুলো মনে হলে বুকের ভেতর আক্ষেপ জমে উঠে যদি না যেতাম সেদিন বাবাকে দেখতে পেতাম। ঝিলের জলের শাপলার পাতা গুলো আজো দর্পনের ন্যায় উজ্জ্বল, এই নক্ষত্র বিমূর্ত রাত্রি তে আমার চোখের সামনে ভাসছে।